চাষি আর বীজ জমিয়ে রাখেনা। দোকানে যায় বীজ কিনতে। সেখানে অনেক ফলন, অনেক লাভের হাতছানি। সেই বীজের চরিত্রের হদিস জানা নেই কৃষকের। বীজ কোম্পানি, সার কোম্পানি, কীটনাশক কোম্পানির মাতব্বরির খপ্পরে পড়ে জগদ্দলের ওজন বাড়ে চাষির ঘাড়ে। এবারে বাজারে আলুর দাম উঠেছিল কেজি প্রতি চল্লিশ পঞ্চাশ। অথচ চাষি পায় পাঁচ বা ছয় টাকা। জানা গেল এই সব। চাষির ছেলে কেন চাষি হতে চায় না, তার হিসেব নিকেশ খুঁটিনাটি।
গ্রামে বাড়ছে অভাবী বিক্রি। কৃষক মান্ডির হ্যাপার চাইতে চাষির ভরসা কাছের আড়ৎ।
কৃষিমান্ডিতে ধান দেব বললে তো হবে না। গেলে তো নিবে না। স্লিপ ধরে দিবে। তাও গেলেই যে স্লিপ পাবে, তা’ও না। তারপর কবে ডাক আসবে, কবে টাকা পাব, তার ঠাঁইঠিকানা নেই। যার জন্য বাধ্য হয়ে চরণবাবুদের আড়তে দিয়ে এলাম সাড়ে বারশো কুইন্টালে। তারপর ধলতা কেটে নিল। কুইন্টালে চার কেজি, মানে পঞ্চাশ টাকা বাদ।
নয়া কৃষি আইন রদের অনড় দাবীতে আন্দোলনকারীরা নিজেরাই নিজেদের মিডিয়া হয়ে উঠছেন
দুই পরিবারের উল্লেখ করি। রমেশ বেরওয়া কলেজের শিক্ষক এবং তাঁর সাথি রাইসা ওঁদের ছেলে, দেওর ও তাঁর স্ত্রী সহ পুরো পরিবার নিয়ে এই আন্দোলনে এলেন। দু-বছরের একটা বাচ্চাও ওঁদের সঙ্গে আছে। ওকে কিছুক্ষণ কোলে নিয়ে খেলা করলাম। আমার নাতি লিচ্চির কথা মনে পড়ল। গত আঠারো দিন ভিডিও কলে মাঝে মাঝে ওর সঙ্গে কথা বলেছি। দ্বিতীয় পরিবারে এসেছে যোধপুরের আইনজীবী কিসন মেঘওয়াল, ওঁর স্ত্রী আর বাচ্চা।
দিনের শেষে চাষি তার ফসলের দাম বলতে পারবে না বুক ঠুকে। ব্যবসাদারই সব ঠিক করবে
আলু খুব যত্নের গাছ তো। একটা জমিতে ধসা লাগলে আশেপাশের সব জমিতে ছড়িয়ে যায়। করোনার মত। ওষুধের খরচাটা বিশাল। এমনিতেই এবার আলুবীজের দাম চড়া। ফার্স্ট-কাট চার-পাঁচ হাজার টাকা বস্তা। বিঘাতে দুটো থেকে আড়াইটা লাগে। সার বিষ সব কিছু দিয়ে এবছর বিঘাপ্রতি খরচ তিরিশ হাজার টাকা। গতবছর যেটা ছিল কুড়ি-বাইশ হাজারের মধ্যে। এবার সবাই এত আলুর দিকে মন দিয়েছে, যে অন্যান্য সবজির দামও বাড়বে। আর সামনের বার আলুর প্রোডাকশানও বেশি হবে। ফলে চাষি দাম পাবে না। সাধারণ মানুষেরও ফাটবে বাজারে গিয়ে।
বাকি পথটুকু সাবধানে সাইকেল চালাতে চালাতে কানে বাজছিল চা দোকানের আরো নানারকম ছেঁড়া ছেঁড়া কথাবার্তা। — চাষ কারা করে বলুন তো?—হয় যাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে, তারা; নয়তো বোকারা’।
হালটা সর্বত্র এক না। সরকারের গাফিলতি ধরিয়ে দেবে, এখানে সংগঠন কই?
আদিবাসী লেবার ছিল — এখন ফ্যামিলি প্ল্যানিং হয়ে গেছে, আদিবাসীদেরও একটা কি দুটোর বেশি বাচ্চা নাই। তাদের ছেলেরা এখন বড়ো হয়েছে, তারা আর লেবার দিতে চায় না। সোনার কাজে চলে যাচ্ছে, আমাদের এখানে সব কেরল-টেরল কাজে চলে যায়। জমির কাজ হয়তো কিছু করে, রাজমিস্ত্রি বা জোগাড়ের কাজে ওখানে বেতনটা বেশি। কেরলে শুনেছি, আমাদের বাড়িতে একজন মাছ দিতে আসত, আমার বড়দার খুব প্রিয় ছিল, মাছ বাড়িতে এসে কেটে দিয়ে যেত। হঠাৎ আমার সঙ্গে দেখা হল, মাস ছয়েক দেখা পাইনি, বলল, আমি কেরল গিয়েছিলাম লেবারের কাজে। ওই কাজে পাঁচশো টাকা মজুরি। একস্ট্রা কাজ করলে তার ওপর আবার একটা টাকা। বলল, ওখানে সরু চালের ভাত খাই, একটু আলু ভাতে দিলাম, হয়ে গেল।
- 1
- 2
- 3
- …
- 26
- Next Page »
সাম্প্রতিক মন্তব্য