শমীক সরকার, কলকাতা, ৩০ মে#
যে ঘটনার জন্য ছত্রধর মাহাতো সহ ছ-জনের বিরুদ্ধে মামলা — তার তিনজন সাক্ষী পুলিশ ওই ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে পরস্পর বিরোধী বয়ান দেয়। চতুর্থ সাক্ষী ছিলেন বিনপুর-১ ব্লকের বিডিও সৌরভ বারিক। তিনি ঘটনার সাক্ষ্য ছাড়াও অতীতের একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করেন রাষ্ট্রের হয়ে — যখন তাঁর অফিসের কর্মচারীরা জনসাধারণের কমিটির অত্যাচারের বিরুদ্ধে নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগ জানিয়ে তাঁকে চিঠি দিয়েছিল। তিনি আরও উল্লেখ করেন, জনসাধারণের কমিটির কয়েকজন তাঁর অফিসে চড়াও হয়েছিল এবং তারপর ছত্রধর সহ জনসাধারণের কমিটির লোকজন, বিডিও অফিসের কর্মী এবং ঝাড়গ্রামের এসডিও-র মধ্যে একটি মিটিং-ও হয়েছিল। কিন্তু এর কোনো নথি তিনি দেখাতে পারেননি।
পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম সাক্ষীকে বিরূপ বলে জানায় বাদীপক্ষ। অষ্টম সাক্ষী ফটিক মণ্ডল স্বীকার করেন যে তিনি সিপিআইএম দলের সমর্থক। তিনি ঘটনার দিন অভিযুক্তদের কাছ থেকে যা যা আটক করা হয়েছিল, তার অন্যতম সাক্ষী ছিলেন এবং সেই সিজার লিস্টে স্বাক্ষর করেছিলেন। তিনি এও বলেন যে ওই সময় সিপিআইএম এবং জনসাধারণের কমিটির মধ্যে লড়াই হচ্ছিল।
নবম এবং দশম সাক্ষীকে বিরূপ বলে জানায় বাদী পক্ষ। এগারো নম্বর সাক্ষী সুমন চক্রবর্তী সিআইডি অফিসার। তিনি রাষ্ট্রের বয়ান এবং প্রমাণাদির পক্ষে সবচেয়ে জোরালোভাবে দাঁড়ান। দ্বাদশ সাক্ষী বিনপুর-১ ব্লকের ভূমি সংস্কার দপ্তরের একজন অফিসার সৌমিত্র সেনগুপ্ত সিজার লিস্টে সই করেছিলেন। কিন্তু সিজার লিস্টে যা যা ছিল সেগুলি ঠিক কী ধরনের জিনিসপত্র — সে সম্পর্কে অজ্ঞতা প্রকাশ করেন। নির্মল মাহাতো চৌদ্দ নম্বর সাক্ষী, তিনিও সিজার লিস্টে সই করেছিলেন। কিন্তু জেরার মুখে তিনি বলেন, মেদিনীপুরে পুলিশ তাঁকে দিয়ে ওই সিজার লিস্টে সই করিয়েছিল এবং তাঁর সঙ্গেই সই করেছিল দুর্যোধন নামে একজন।
ভাউদি গ্রামের সনৎ মাহাতো সাক্ষী দিতে উঠে বলেন, তাঁর গ্রামে ২০০৪-০৯ পর্যন্ত জনসাধারণের কমিটি এবং মাওবাদী আন্দোলনের কারণে অনেক লোক মারা গেছে। তিনিও ভয়ে পালিয়েছিলেন গ্রাম ছেড়ে। ছত্রধর মাহাতো গ্রেপ্তার হওয়ার খবর শুনে গ্রামে ফেরেন, কিন্তু ভয়ে গ্রামে রাত কাটাতে পারেননি। ভয়ে পুলিশের কাছে রিপোর্টও করতে পারেননি। কিন্তু তিনি এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে রাজি হননি। রাষ্ট্র তাঁকে বিরূপ সাক্ষী বলে জানায়। একইভাবে আঠারো, উনিশ এবং কুড়ি নম্বর সাক্ষীকেও বিরূপ ঘোষণা করে পুলিশ। এর মধ্যে বন দপ্তরের অফিসার পাঁচুগোপাল বৈরাগীও একজন। অবশ্য জেরায় তিনি স্বীকার করেন, জনসাধারণের কমিটি তাদের কাছ থেকে একমাসের মাইনে দাবি করেছিল, এবং তিনি অসহায় হয়ে সুখশান্তি বাস্কের স্মরণাপন্ন হন।
অরুণ কুমার পাল এবং ডি কে কুইলা ছিলেন ষোলো এবং সতেরো নম্বর সাক্ষী, তাঁরা ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ। সাক্ষ্য দিতে গিয়ে ডিভিডি-র ভেতরে থাকা জিনিসের ব্যাপারে তাঁরা বলেন। তবে জেরার মুখে অরুণবাবু স্বীকার করেন, তিনি জানেন না বাজেয়াপ্ত হওয়া বলে যে ডিভিডিগুলির ভেতরের জিনিসপত্র তাঁকে উদ্ধার করতে বলা হয়েছিল — সেগুলি কতদিনের পুরোনো। তবে সেগুলি ১৫-২০ দিনের পুরোনো হতে পারে। তিনি বলেন, তিনি এও জানেন না যে ডিভিডি-র মধ্যে যে তথ্যাদি ছিল, সেগুলি তৈরির তারিখ বলে যা আছে, তা তখনই তৈরি নাকি তা কোনো সফটওয়ার ব্যবহার করে বসানো হয়েছে। ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ বিস্ফোরকের সত্যতা প্রমাণ করেন। একুশ নম্বর সাক্ষী পার্থ দত্ত কাঁটাপাহাড়ি বিট অফিসের কর্মী, তিনি ২০০৮ সালের জুলাই মাসে জনসাধারণের কমিটি যে তাদের কাছে চাঁদা দাবি করেছিল, তার বয়ান দেন। কিন্তু পুলিশের কাছে অভিযোগ করার সময় তিনি সুখশান্তি বাস্কের নাম করেছিলেন কি না, তা মনে করতে পারেননি। এরপর পুলিশ এবং সিআইডি-র দুই কর্মী অজিত কুমার পইরা এবং দীপক সরকার সাক্ষ্য দেন। এরা দুজনের কেউই ঘটনাটির সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। এরপরের সাক্ষী কাঁটাপাহাড়ি ক্যাম্পের পুলিশ কর্মী মণিশঙ্কর মহন্ত ১ অক্টোবর ২০০৯ সুখশান্তি বাস্কের গ্রেপ্তারের ঘটনার বর্ণনা দেন। গ্রেপ্তারের সময় সুখশান্তির পকেট থেকে সতেরো হাজার টাকা এবং কার কার কাছ থেকে তা তোলা হয়েছিল তার তালিকা, জিলেটিন স্টিক এবং ডেটোনেটর পাওয়ার কথা বলেন। তবে ওগুলো বাজেয়াপ্ত করার সময় যে স্থানীয় কোনো প্রত্যক্ষদর্শীর সই নেওয়া হয়নি সিজার লিস্টে, তা স্বীকার করেন জেরার সময়। এরপর সিআইডির রঞ্জিত চ্যাটার্জি ৫ অক্টোবর ২০০৯ সালে যাদবপুর এইট বি বাসস্ট্যান্ড থেকে রাজা সরখেলকে গ্রেপ্তার করার ঘটনার বর্ণনা দেন। পরের সাক্ষী লালগড় থানার আইসি অশোক বোস ঘটনার দিনের, বিশেষত ছত্রধর মাহাতো, শম্ভু সোরেন, রঞ্জিত মুর্মু, সাগুন মুর্মুর গ্রেপ্তারের ঘটনার বর্ণনা করেন এবং ঠিক কোন কোন সময়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল — তার বর্ণনা দেন। তিনি বলেন, পুলিশ কোনো অপারেশনে গেলে আগে থেকে তার কথা থানার জিডি বুক-এ লিখে রাখে। কিন্তু তিনি থানায় একইসাথে দুটি জিডি বুক রাখার কথা অস্বীকার করেন।
বিচারপতির এখানে পর্যবেক্ষণ, দুটি জিডি বুক রাখার কথা পুলিশ আইনেই বলা আছে। একজন পুলিশ অফিসারের তা না জানার মাধ্যমে তার অনুপস্থিতির প্রমাণ হয়ে যায় না। ২৬ সেপ্টেম্বর ২০০৯ লালগড় পুলিশ থানায় দুটি জিডি বুক-এ কার্বন কপি করে পুলিশ রেড, সিজার প্রভৃতির কথা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে আছে।
সাক্ষী কঙ্কর প্রসাদ বারুই সিআইডির অফিসার, তিনি প্রসূন চ্যাটার্জির গ্রেপ্তারের বর্ণনা দেন। সাক্ষী পূর্ণ চন্দ্র মাহাতো সিপিআইএম-এর সদস্য, তিনি ১৯৯৮ থেকে ধরমপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ছিলেন। তিনি বলেন, তাঁর এলাকায় ছত্রধরের একটি মিটিং তিনি নিজে শুনেছেন এবং তিনি জিতু সিং প্রভৃতিদের কাছ থেকে শুনেছেন, ২০০৭ সালে পূর্ণাপাণি গ্রামে একটি মিটিং হয়েছিল ছত্রধর, কিষেনজি, শশধর মাহাতো, সুচিত্রা মাহাতো, সুসেন মাহাতো, লালমোহন টুডু, বিকাশ মাহাতো এবং অন্যান্যদের নিয়ে। তিনি বলেন, শশধর মাহাতো জনসাধারণের কমিটি নামে একটি সংগঠন তৈরি করেছিল, কিন্তু তিনি জানেন না তার উদ্দেশ্য কী। তবে তিনি জেরার মুখে স্বীকার করেন, তাদের রাস্তা কাটা, গাছ ফেলা, রাস্তা অবরোধের ঘটনাগুলি তিনি নিজে চোখে দেখেছেন। এবং তিনি বলেন, ২০০৯ সালের ১৪ জুন তাদের এলাকা থেকে কেশব মান্না, ধীরাজ মান্না, সঞ্জয় মাহাতো, মোহন সিং, দেবব্রত সোরেন, প্রবীর মাহাতো প্রভৃতি আটজনকে অপহরণ করা হয় এবং আর কখনো তাদের খোঁজ পাওয়া যায়নি। এবং এই অপহরণের পরই সাক্ষী এলাকা ছেড়ে আত্মগোপন করেন ভয়ে। তিনি আরও বলেন, ২০০৯- এর সংসদীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে প্রশাসনের সামনেই বিস্তর মিটিং করেছেন ছত্রধর। সুনীল মাহাতো সাক্ষ্য দিতে উঠে বলেন, তাঁর বাবা মতিলাল মাহাতোকে ৪ সেপ্টেম্বর ২০০৯ শালবনী গ্রাম থেকে অপহরণ করে জনসাধারণের কমিটি এবং মাওবাদীরা। সেই থেকে তিনি নিখোঁজ। শালবনী থেকে ওই সময় আরও আট দশজন নিখোঁজ হয়, এখনো তাদের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। এই সাক্ষীকে বিরূপ বলে ঘোষণা করে বাদী পক্ষ। দুর্যোধন মাহাতো, ছত্রধরের খুড়তুতো ভাই, সাক্ষ্য দিতে উঠে জানায়, মেদিনীপুর পুলিশ লাইনে ডেকে এনে তাকে সই করায় পুলিশ, কিন্তু সে কীসে সই করেছিল তা জানে না। শেষে সাক্ষ্য দেন রঞ্জিত চক্রবর্তী, এই মামলার শেষ আই ও। তিনি স্বীকার করেন, দলিলপুর গ্রামের কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি।
বিবাদী পক্ষ তদন্ত প্রক্রিয়ার গাফিলতি, রাষ্ট্রের পক্ষের সাক্ষীদেরই পরস্পরবিরোধী সাক্ষ্য প্রভৃতির কথা তুলে অভিযুক্তদের খালাসের দাবি জানালেও বিচারপতি তাঁর পর্যবেক্ষণে জানান, তিনি বিবাদী পক্ষের এই যুক্তি মানছেন না। এইসব ছোটোখাটো গলতির জন্য প্রমাণগুলি মিথ্যে হয়ে যায় না। বিচারপতি সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ বিরোধী ইউএপি আইনের কথা উল্লেখ করেন, এবং আইপিসি-র ১২১, ১২১এ, ১২৩, ১২৪এ, ১২৪বি অর্থাৎ রাষ্ট্রদ্রোহিতার ধারার (এবং তার দায়ে যাবজ্জীবন অথবা মৃত্যুদণ্ডের শাস্তির) কথা তুলে তিনি বলেন, প্রমাণ হিসেবে জমা দেওয়া দশটি ডিভিডিতে দেখা যাচ্ছে, ছত্রধর মাহাতো যে ভাষণগুলো দিচ্ছেন, তা রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে এবং কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে ঘৃণা, এবং তাতে তাদের নাকচ করার কথা বলছেন। এটা তাঁর রাষ্ট্রদ্রোহিতার প্রমাণ এবং জনসাধারণের কমিটি বা তিনি যে আদিবাসী মানুষদের ন্যূনতম অধিকারের দাবির সংগঠন, তা নয়। ডিভিডিতে যে ছবিগুলো দেখা যাচ্ছে, তাতে দেখা যাচ্ছে অভিযুক্ত প্রসূন এবং রাজা সরখেল সিধু সোরেন, ছত্রধর মাহাতো সহ অন্যদের সঙ্গে জনসাধারণের কমিটির মিটিঙে। যদিও কিছু ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ছত্রধর মাহাতোর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, সৌগত রায়, সুব্রত বক্সি, পার্থ চট্টোপাধ্যায় প্রভৃতিরা কথাবার্তায় বা মিটিঙে মগ্ন। এই পর্যবেক্ষণের কথা তুললেও তাই নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি বিচারপতি। বিচারপতি আরও বলেন, যে সমস্ত ম্যাগাজিন ও কাগজপত্র রাজা সরখেল ও প্রসূনের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে, তার অনেকগুলির নিচে ছত্রধরের সই রয়েছে। কিন্তু সেগুলির নিচে কোনো প্রেসের নাম নেই। যা থেকে প্রমাণ হয়, সেগুলি মাওবাদী ডকুমেন্ট। এমনকী কিছু কিছু কাগজের নিচে লেখা রয়েছে, ‘সিপিএম ও পুলিশের ভয়ে প্রেসের নাম দিতে পারছি না’। এছাড়া আরও একটি দিক উল্লেখ করেন বিচারপতি, তা হল, সুখশান্তি বাস্কে এবং ছত্রধর পুলিশের কাছে স্বাক্ষরের নমুনা দিতে অস্বীকার করেন, যা তাদের কুমতলবের পরিচয়। অভিযুক্তরা বলছেন যে পুলিশ জোর করে তাদের দিয়ে সই করিয়ে নিয়েছে বিভিন্ন কাগজে, কিন্তু তার বিরুদ্ধে তারা কোনো এফআইআর করেননি।
বিচারপতি আরও বলেন, শম্ভু সোরেন এবং সাগুন মুর্মুকে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল বিস্ফোরণস্থল থেকে। তা থেকেই প্রমাণ হয়, তারা মাওবাদী কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত।
বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, বিস্ফোরক আইনের যে অভিযোগ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আনা হয়েছিল, তার সপক্ষে তেমন কোনো প্রমাণ নেই। কিন্তু বাইরে থেকে বিশেষ ধরনের বন্দুক এনে তা যে নারচা জঙ্গলের মধ্যে মাটির নিচে লুকিয়ে রেখেছিল ছত্রধর এবং তা তাকে পুলিশ হেফাজতে থাকাকালীন জিজ্ঞাসাবাদ করে পাওয়া গেছিল — রাষ্ট্রের এই অভিযোগ সত্য। বিবাদী পক্ষ সিজার লিস্টে লেখার ওপর লেখা বা ঠিক কোথায় অস্ত্রটি উদ্ধার হল তার জিডি বুক-এ নথিভুক্তিকরণের দুই রকম বয়ান নিয়ে প্রশ্ন তুললেও মূল অভিযোগটি অপ্রমাণিত হয়নি। অতএব ছত্রধরের বিরুদ্ধে বেআইনিভাবে অস্ত্র রাখার অভিযোগ প্রমাণিত।
বিচারপতির এই রায়ে ছত্রধরের বিরুদ্ধে বেআইনিভাবে অস্ত্র রাখার প্রমাণিত অভিযোগ ছাড়া, অভিযুক্ত ছয়জনের বিরুদ্ধে প্রমাণিত অভিযোগের ধরন একেবারে রাজনৈতিক। একটি হল রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ। অন্যটি হল সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগ। এবং এই সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগের মূল সূত্রটি হল, সন্ত্রাসবাদ বিরোধী ইউএপি আইনে কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ সন্ত্রাসবাদী সংগঠন সিপিআই মাওবাদী পার্টি এবং তাদের গণসংগঠনগুলি, যেমন জনসাধারণের কমিটি। অভিযুক্তরা সবাই সেই জনসাধারণের কমিটির প্রত্যক্ষ সদস্য, সমর্থক এবং কর্মী। তবে শাস্তি নির্ধারণের সময় রাষ্ট্রদ্রোহিতার ধারাগুলিই মুখ্য হয়ে ওঠে এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা হয় ছ-জনেরই।
প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যায়, সংবিধানের রাষ্ট্রদ্রোহিতার ধারাগুলি ব্রিটিশ আমলের এবং সেই সময় ব্রিটিশ রাজশক্তির বিরুদ্ধে কার্যকলাপ করা স্বাধীনতা সংগ্রামীদের এই ধারায় অভিযুক্ত করা হত এবং এই চ্ছ্রঔপনিবেশিক’ ধারাগুলি সংবিধান থেকে বাতিল করার জন্য দেশের গণতান্ত্রিক অধিকারের কর্মীরা দাবি জানিয়ে আসছে। একইসাথে সন্ত্রাসবাদ বিরোধী আইনগুলিও অগণতান্ত্রিক এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রয়োগের কারণে কুখ্যাত। গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা আন্দোলনের কর্মীরা দাবি করে, এই আইনগুলির মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদ বিষয়টিকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা না করে অপরাধমূলক কার্যকলাপ হিসেবে মোকাবিলার ঝোঁক বাড়ে এবং এর মাধ্যমে প্রকারান্তরে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপই উৎসাহ পায়। তাছাড়া এই দুটি আইনই ক্ষমতাসীন সরকারগুলির বিরোধী রাজনীতির কর্মীদের ওপর চাপানো হয়ে থাকে মাঝেমাঝেই।
অপরদিকে অভিযুক্ত সাজাপ্রাপ্তদের আইনজীবীরা আদালতে প্রমাণ করতে চেয়েছে তদন্ত প্রক্রিয়াটি ত্রুটিপূর্ণ। এছাড়াও তারা বরাবর প্রমাণ করতে চেয়েছে, জনসাধারণের কমিটি একটি আদিবাসী মানুষদের অধিকারের সংগঠন এবং মূলত তদানীন্তন বিরোধী ও বর্তমান সরকারে আসীন তৃণমূল দলটির সর্বোচ্চ নেতৃত্বের সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তরগুলির সঙ্গেও তাদের কথাবার্তা হয়েছে বারবার, এমনকী গ্রেফতারির কিছুদিন আগেই, এবং অনেক সময় প্রশাসন তাদের সুরক্ষাও দিয়েছে। তাই রাষ্ট্রবিরোধী নয়, সরকারবিরোধী রাজনীতির অংশ তারা, তাই তাদের রাষ্ট্রদ্রোহিতা বা সন্ত্রাসবাদী ধারাগুলিতে অভিযুক্ত করা যায় না।
Leave a Reply