অলোক দত্ত, বেলিয়া, ঝাড়গ্রাম, ৫ সেপ্টেম্বর#
১৯৮০ সালে প্রয়াত হয়েছেন এই অঞ্চলের তৎকালীন আদর্শ শিক্ষক মানিক চন্দ্র পাল। তাঁর একটা ছবিও উদ্যোক্তারা জোগাড় করতে পারেননি, হাজার চেষ্টা করেও। তবু তাঁকে স্মরণ করেই ঝাড়গ্রাম শহর থেকে কমবেশি বারো কিমি দূরে জঙ্গলমহলের বেলিয়া গ্রামের মানুষজনেরা শিক্ষকদিবস আজ পালন করলেন বেলিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে। আন্তরিকতার ও শ্রদ্ধার বিনম্রতায়, আর জাঁকজমকের অপ্রতুলতায়।
অতি সাধারণ মঞ্চ। শতরঞ্চি, চেয়ার ও বৈদ্যুতিক আলোর যথেষ্ট জোগাড় নেই। এই সমস্ত বাধা উপেক্ষা করে বেলিয়া গ্রামের ও সন্নিহিত অঞ্চলের মানুষজন গাছের তলার বেদি, ইঁটের পাঁজা আর স্কুল প্রাঙ্গণের মধ্যে চলাচলের জন্য যে একফুট উঁচু রাস্তা আছে, সেই সব জায়গায় বসে দাঁড়িয়ে সকাল থেকে শুরু করে রাত সাড়ে দশটা-এগারোটা পর্যন্ত উপভোগ করলেন, সক্রিয় যোগদান করে কানায় কানায় ভরিয়ে তুললেন এই অনুষ্ঠানটিকে।
যা যা অনুষ্ঠিত হয়েছে :
- রক্তদান করেছেন একান্ন জন। (এতদ অঞ্চলের এখনও পর্যন্ত সবথেকে বেশি সংখ্যক রক্তদাতা)
- শিশুরা ও অঙ্গনওয়ারির আবালবৃদ্ধবনিতা দুপুরের পংক্তি ভোজনে বসে সানন্দে জমিয়ে গরম গরম খিচুড়ি খেয়েছেন।
- প্রয়াত মাণিক চন্দ্র পালের সমসাময়িক ও পরবর্তীকালের শিক্ষকগণ, তাঁর ছাত্র-গুণমুগ্ধরা এই আদর্শ শিক্ষকের পাঠদান পদ্ধতি, ছাত্রদের প্রতি দায়িত্ববোধ, আন্তরিকতা ও তাঁর জীবনযাত্রার সরল ও পরোপকারী দিকগুলি আলোচনা করে।
- পাইক-নৃত্যগুরু শ্রী কালীপদ কালিন্দী ও ‘মন্থন’ পত্রিকার সম্পাদক শ্রী জিতেন নন্দীকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে।
- কলকাতা থেকে আসা শিল্পীদের পাশাপাশি আঞ্চলিক কবি-শিল্পীরাও গান ও আবৃত্তি করেছেন। এ অঞ্চলের যে সমস্ত গীতিকার ও শিল্পী রয়েছে, তাদের সৃষ্ট গান বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে পরিবেশিত হয়েছে।
- ঝাড়গ্রাম শহরের আনন্দম নাট্যদল তাদের ‘অরণ্য-সংবাদ’ নাটকটি উপস্থাপনা করেছে।
লোকগান শিল্পী শ্রী হারাধন জালের সুযোগ্য নেতৃত্বে বেলিয়া গ্রাম তিরিশ বছর পরে এত সুন্দর অনুষ্ঠান উপভোগ করল।
Leave a Reply