• প্রথম পাতা
  • আন্দোলন
  • কৃষি ও গ্রাম
  • খবরে দুনিয়া
  • চলতে চলতে
  • পরিবেশ
  • শিক্ষা ও স্বাস্থ্য
  • শিল্প ও বাণিজ্য
  • নাবালকথা

সংবাদমন্থন

পাতি লোকের পাতি খবর

  • আমাদের কথা
    • যোগাযোগ
  • পত্রিকার কথা
    • পাক্ষিক কাগজ
    • জানুয়ারি ২০০৯ – এপ্রিল ২০১২
  • মন্থন সাময়িকী
    • মন্থন সাময়িকী নভেম্বর ডিসেম্বর ২০১৪
    • মন্থন সাময়িকী সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ২০১৪
    • সাম্প্রতিক সংখ্যাগুলি
    • সাম্প্রতিক পিডিএফ
    • পুরনো সংখ্যাগুলি
  • সংবাদ সংলাপ
  • বিষয়ের আলোচনা

পশ্চিম মেদিনীপুর আদালতে ছত্রধর সহ ছ’জনের বিচার ও যাবজ্জীবনের রায়ের বর্ণনা (প্রথম পর্ব)

May 16, 2015 admin Leave a Comment

শমীক সরকার, কলকাতা, ১৫ মে#

j
লালগড় থানার সাব ইন্সপেক্টর প্রশান্ত কুমার পাঠকের করা এফআইএর-এ বলা হয়, ২০০৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর লালগড়ের বীরকাঁড় গ্রামে ৬/৭ জনের একটি মিটিং চলছিল। সেখান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ছত্রধর মাহাতোকে। তার সঙ্গে মিটিং করছিল যারা, সেই কিষেনজি, শশধর মাহাতো, সিধু সোরেন, লালমোহন টুডু, বিকাশ আর সন্তোষ পাত্র — সবাই পালিয়েছিল গুলি চালাতে চালাতে। পরে জেরায় নাকি ছত্রধর স্বীকার করেছিল, কিষেনজি বিস্ফোরক কিনে দিয়েছিল ছত্রধরকে, সেগুলো সাগুন মুর্মু, শম্ভু সোরেন আর রঞ্জিত মুর্মুকে সরবরাহ করার জন্য। সেই বিস্ফোরক নিয়ে দলিলপুরে রাস্তায় লুকিয়েছিল তারা। পুলিশ পার্টিকে আসতে দেখে সাগুন মুর্মু-রা বিস্ফোরণ ঘটায়, কিন্তু একটুর জন্য বেঁচে যায় পুলিশ পার্টি। সেখান থেকেই গ্রেপ্তার করা হয় সাগুন মুর্মু, শম্ভু সোরেন আর রঞ্জিত মুর্মুকে। একজন পালায়। সাগুন মুর্মুর কাছ থেকে একটি ফ্ল্যাশ গান উদ্ধার করে পুলিশ। তারপর পুলিশ বীরকাঁড় গ্রামে গিয়ে ছত্রধরকে ধরে। পথ দেখায় সাগুন মুর্মু। সেখানে ছত্রধরের হাতে পাওয়া যায় সিপিআই মাওবাদী পার্টির পত্রিকা বিপ্লবী যুগ এবং গেরিলা বার্তা। সেখান থেকেই শুরু হয়েছিল ছত্রধর, সাগুন, রঞ্জিত, আর শম্ভু সোরেনদের বিরুদ্ধে মামলা। ধৃতদের পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে ঘটনায় জড়িত আরেকজন, সুখশান্তি বাস্কে-কে গ্রেপ্তার করা হয়।
দিন কয়েকের মধ্যেই মামলা চলে যায় পুলিশ থেকে সিআইডির হাতে। সিআইডি এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত বলে আরও দু-জন, কলকাতার প্রসূন চ্যাটার্জি আর রাজা সরখেল-কে গ্রেপ্তার করে এবং এই মামলায় যুক্ত করে।
পুলিশের প্রাথমিক অভিযোগ ছিল — ছত্রধর সহ সমস্ত ধৃত-রা কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ সংগঠন সিপিআই মাওবাদী দলের সঙ্গে যুক্ত এবং তাদের প্রভাব বিস্তারে সচেষ্ট। এই মাওবাদী দল পুলিশ খুন, রাজনৈতিক নেতা খুন, পুলিশের কাছ থেকে অস্ত্র লুঠ, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে তোলা আদায়ের মধ্যে দিয়ে সন্ত্রাসের পরিমণ্ডল কায়েম করেছিল জঙ্গলমহলে। ছত্রধর, লালমোহন, সিধু সোরেন, সন্তোষ পাত্ররা পুলিশি সন্ত্রাস বিরোধী জনসাধারণের কমিটি তৈরি করেছিল, যা ছিল মাওবাদী পার্টির গণসংগঠন। কমিটি জঙ্গলমহলে জঙ্গী মিটিং করে, রাস্তা কেটে, গাছ ফেলে রাস্তা আটকে, বনধ্‌ করে, পুলিশ বয়কট করে, সরকারি সম্পত্তির ক্ষতি করে কিছু মানুষকে নিজের পক্ষে এনেছিল শেষ পর্যন্ত তাদের মাওবাদী পার্টির বিদ্রোহী ভাবধারায় দীক্ষিত করার জন্য। এসব করার জন্য এইসব ব্যক্তিগুলির বিরুদ্ধে বেশ কিছু মামলাও হয়েছে এর আগে। এসবের মাধ্যমে এদের আসল উদ্দেশ্য ছিল রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে ঘৃণার সঞ্চার করা এবং ষড়যন্ত্র ও অপরাধমূলক কার্যকলাপের মাধ্যমে এই সাংবিধানিক সরকারগুলিকে উৎখাত করা।
২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এদের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ হয়। রঞ্জিত মুর্মু তার আগেই মারা যায় বন্দী অবস্থায়। চার্জশিটে পেনাল কোড-এর ১২১, ১২১এ, ১২২, ১২৩, ১২৪এ, ৩০৭, ১২০বি (৩৪ নং সেকশন) দেওয়া হয়। এছাড়া উয়াপা আইনের ১৮, ৩৮ (২), ৩৯ (২) এবং ৪০ (২) ধারা দেওয়া হয়। জঙ্গলমহলের চারজনের ওপর আলাদা করে উয়াপা আইনের ১৬(১বি), ১৭ এবং ২০ ধারা দেওয়া হয়। শম্ভু সোরেন এবং সাগুন মুর্মুর বিরুদ্ধে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের ৩ নম্বর সেকশন এবং সুখশান্তির বিরুদ্ধে ৪বি ধারা দেওয়া হয়। ছত্রধরের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের ৪বি এবং অস্ত্র আইনের ২৫(১)এ ধারা দেওয়া হয়।
বিচারপর্বে ছত্রধর মাহাতো দাবি করেন, জনসাধারণের কমিটি তৈরি হয়েছিল ২০০৮ সালে। ওটা কোনো মাওবাদী সংগঠন নয় এবং বিভিন্ন সময় এর মিটিং হয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে, যেমন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, পার্থ (চ্যাটার্জি), মমতা (বন্দ্যোপাধ্যায়)। মমতা নিজেই ঘোষণা করেছিলেন, হাজার হাজার মানুষের অধিকারের জন্য যদি তাকে মাওবাদী তকমা দেওয়া হয়, তাতে তার আপত্তি নেই। এবং তিনি দিল্লি যাবেন মানুষের ন্যুনতম অধিকার নিশ্চিত করতে। ছত্রধররা কোনো মাওবাদী কার্যকলাপে জড়িত নয়, তাদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, সেগুলোও সব মিথ্যে। রাজনৈতিক কারণে তৎকালীন সরকার তাদের ফাঁসিয়েছে।
রাষ্ট্রের প্রতিনিধি হিসেবে প্রশাসন ৩২ জন সাক্ষীকে পেশ করে ছত্রধরদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করার জন্য। এদের মধ্যে বেশ কিছু প্রশাসনিক ব্যক্তিত্ব, সিআরপি, এবং সরকারি কর্মচারী। বাকিরা গ্রামবাসী। দশজন সাক্ষী বিচার চলাকালীন বিরূপ হয়। রাষ্ট্রের তরফে ৩৪টি প্রমাণ হাজির করা হয়, তার মধ্যে পত্রিকা, অস্ত্র, বিস্ফোরক, অস্ত্রশস্ত্র, সিডি/ডিভিডি ছিল। কিন্তু অভিযুক্তদের তরফে কোনো সাক্ষী বা কোনো প্রমাণ হাজির করা হয়নি। তারা কেবল তদন্তকারী দলের প্রক্রিয়াগত গলদ তুলে ধরেছে তাদের বক্তব্য পেশ করার সময়।
রাষ্ট্রের তরফ থেকে বলা হয়, গ্রেপ্তারের সময় অ্যারেস্ট মেমোতে হয়ত অভিযুক্তদের নিকটাত্মীয়দের সই নেই, কারণ তখন তাদের কাউকে পাওয়া যায়নি; কিছু কিছু সাক্ষী অন্য সাক্ষীদের চিনতে পারছে না, কারণ ঘটনার চারবছর পরে বিচারের সময় তারা হয়ত ভুলে গেছে; কিছু প্রামাণিক তথ্যে এবং সাক্ষ্যতে হয়তো কিছু ভুল আছে; কিন্তু এগুলো সামান্য ব্যাপার। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যে এফআইআর করা হয়েছিল সেটাতেই পরিষ্কার যে অভিযুক্তরা পেনাল কোড, উয়াপা আইন, বিস্ফোরক দ্রব্য আইন এবং অস্ত্র আইনে দোষী। সাক্ষীরাও সাজানো নয়।
চার্জশিট বা অভিযোগ তালিকাকে চ্যালেঞ্জ করে অভিযুক্তদের সবার পক্ষ থেকেই বলা হয়, ১) উয়াপা আইন, অস্ত্র আইন এবং বিস্ফোরক দ্রব্য আইন লাগু করার জন্য যে পদ্ধতির সাহায্য নিতে হয় তা মান্য করা হয়নি। অস্ত্র আইন এবং বিস্ফোরক দ্রব্য আইন লাগুর অনুমতি পত্রদুটির কোনো আইনগত মূল্য নেই। আর উয়াপা আইন লাগুর অনুমতি পত্রের আবেদনের সময়ও তদন্তকারী অফিসার পূর্ণাঙ্গ কেস ডায়েরি পেশ না করে আংশিক কেস ডায়েরি পেশ করেছিলেন। ফলে তিনটি অনুমতি পত্রই গ্রাহ্য নয়। উয়াপা আইনে অভিযোগের তদন্ত করার জন্য রিভিউ কমিটি গঠন করে তদন্ত করা দরকার, কিন্তু এক্ষেত্রে তা করা হয়নি। ২) অভিযুক্তকে কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া সিজার লিস্টে যেসব জিনিসের বিবরণ আছে, আর যেগুলো পেশ করা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে ফারাক আছে। মালখানায় ওই জিনিসগুলি রাখার সময় যথাযথ রসিদ নেওয়া হয়নি। মালখানা রেজিস্ট্রারও দেখানো হয়নি। ৩) রাজা সরখেল এবং প্রসূন চ্যাটার্জির বিরুদ্ধে অভিযোগের কোনো প্রমাণই নেই। ৪) ঘটনার সময় যেসব সিআরপিএফ ও আইআরবিএন উপস্থিত ছিল, তাদের বেশিরভাগকেই চার্জ-শিটের সাক্ষী হিসেবে বা বিচারে সাক্ষী হিসেবে রাখা হয়নি। দলিলপুর, বীরকাঁড় বা নারচা গ্রামের কোনো গ্রামবাসীকেও প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে ডাকা হয়নি। লালগড় থানায় দুটি জেনারেল ডায়েরি বই ছিল, যাতে একই তারিখে একই ক্রমাঙ্কে দুটি ভিন্ন কথা আছে। অর্থাৎ জিডি এন্ট্রিগুলো রাষ্ট্রের সঙ্গে যোগসাজোশে করা হয়েছে। ৫) প্রত্যক্ষদর্শীদের এবং অভিযুক্তদের বিবৃতি রেকর্ড করা হয়নি। ৬)  সিজার লিস্টে লেখার ওপর লেখা হয়েছে, যাতে প্রমাণ হয় এগুলো বিকৃত করা হয়েছে সরকারের তরফে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য। ৭) বিস্ফোরণের জায়গাটি মানচিত্রে দেখানোর বদলে অভিযোগকারী অফিসারের মুখের কথা হিসেবে রাখা হয়েছে অভিযোগ তালিকায়। ৮) সিডি/ডিভিডি রাখা হয়েছে প্রমাণ স্বরূপ, কিন্তু তদন্তকারী অফিসার নিজে স্বীকার করেছেন, সিডি এবং ডিভিডির মধ্যে ফারাক আছে এবং এগুলোর ওপর নির্ভর করা যায় না। ৯) আমাদের দেশের যেকোনো নাগরিকের কোনো পত্রিকা বা লিফলেট ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য নিজের কাছে রাখার অধিকার রয়েছে, তাতে কখনোই প্রমাণ হয় না যে সে কোনো রাষ্টবিরোধী কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত।
ফলে অভিযুক্তদের সবারই মুক্তি পাওয়া উচিত বলে অভিযুক্তদের পক্ষ থেকে বলা হয়।
এর উত্তর দিতে গিয়ে রাষ্ট্রের তরফে বলা হয়, ১) জনসাধারণের কমিটি মাওবাদীদের একটি গণসংগঠন। ২) অভিযুক্তদের পক্ষ থেকে উয়াপা, অস্ত্র আইন প্রভৃতির জন্য যে অনুমতিপত্র, সেগুলোকে আগে জামিনের আবেদনের সময় বা চার্জশিট গঠনের পরেও এমনকি চ্যালেঞ্জ করা হয়নি। ৩) সিডি/ডিভিডি বিষয়ে নির্ধারক মন্তব্য করতে পারে ফরেন্সিক এক্সপার্ট, তদন্তকারী অফিসার নয়। ৪) কোর্টের আদেশ থাকা সত্ত্বেও ছত্রধর এবং সুখশান্তি তাদের হস্তাক্ষরের নমুনা তদন্তকারী অফিসারকে দেয়নি। তাদের সই করার জন্য পুলিশ চাপ দিয়েছে, একথা বিচারের সময় জানালেও সাক্ষীরা তাতে সায় দেয়নি, অথবা এই মর্মে তারা আগে কোনো অভিযোগও করেনি। সিজার লিস্টে বিকৃতির অভিযোগও তারা কোথাও করেনি। রাষ্ট্রের তরফে আরো বলা হয়, অভিযুক্তদের বেআইনি কার্যকলাপের ভয়ে লালগড় বিডিও অফিসের সমস্ত কর্মীরা গণ স্বাক্ষর করে ওই অফিস থেকে গণ ট্রান্সফার দাবি করেছিল।
বিচারপতি তার পর্যবেক্ষনে বলেন, যদিও উয়াপা প্রভৃতি আইনের অনুমতি যারা দিয়েছে, তাদের এই কোর্ট পরীক্ষা করেনি কাগজেকলমে, কিন্তু এই অনুমতি পত্রগুলোকে যখন প্রমাণ হিসেবে রাখা হয়েছে চার্জশিটে, তাতে অভিযুক্তদের তরফে আপত্তি করা হয়নি। আর উয়াপা আইন লাগুর অনুমতি পত্রটি কেন্দ্রীয় সরকারের স্বরাষ্ট্র দফতর ও রাজ্যের রাজ্যপালের পক্ষ থেকে যথাযথভাবে নেওয়া। আংশিক কেস ডায়েরি পেশ করা হলেও রাজ্যপালের অফিস সেই কেস ডায়েরিতেই সন্তুষ্টি ব্যক্ত করেছে। অভিযুক্তদের পক্ষ থেকে বারবার তদন্তকারী অফিসারের মুখের বয়ানকে উল্লেখ করা হয়েছে নিজেদের কথা প্রমাণ করতে। কিন্তু তদন্তকারী অফিসার বলেছেন যে তিনি এমন কোনো সরকারি আদেশনামা দেখাতে পারবেন না যেখানে বলা আছে যে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব-ই সেই কর্তৃপক্ষ যে এই অনুমতি সুপারিশ করতে পারে, বা এই মর্মে যে সিডি দেওয়া হয়েছে প্রমাণ স্বরূপ সেখানেও এমন কোনো কিছু নেই। তিনি আরও বলেন, রাজ্য সরকার এনআইএ আইন ২০০৮ অনুযায়ী কেন্দ্র সরকারের কাছে কোনো আবেদন করেছিল কি না তিনি জানেন না। তিনি আরো স্বীকার করেন যে অনুমতি পত্রে কোথাও অভিযুক্তদের কাছ থেকে কী কী পাওয়া গেছে তার উল্লেখ নেই। কিন্তু বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, তদন্তকারী অফিসারের কথাগুলির এক্ষেত্রে খুব গুরুত্ব নেই, কারণ অনুমতিপত্রগুলো তিনি লেখেননি। তাছাড়া যে অনুমতিপত্রগুলো নিয়ে এত আপত্তি এখন বিচারপর্বের শেষে তুলছে অভিযুক্তরা, সেগুলি নিয়ে আগে এখানে বা হাইকোর্টে যখন অভিযুক্তরা এই কোর্টের কোনও আদেশ নাকচ করানোর জন্য গেছে, তখনো কোনো আপত্তি জানায়নি। এছাড়া বিচারপতি মনে করেন, উয়াপা বা এনআইএ আইন লাগু করায় নীতিগত কোনো সমস্যা এখানে নেই।
প্রথম সাক্ষী হিসেবে সেদিনের ঘটনায় যার নেতৃত্বে রেইড হয়েছিল, সেই পুলিশ সাব ইন্সপেক্টর বলেন, সেদিন তার সঙ্গে ছিল সিআরপিএফ-এর কাঁটাপাহাড়ি ক্যাম্প থেকে আসা ৫০-৫৫ জন সিআরপিএফ জওয়ান। তারা জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে দলিলপুরের যান। সেখান থেকে তিনজনকে গ্রেফতার করার পর পুলিশ অফিসার এবং গ্রেফতার হওয়া অভিযুক্তরা ছাড়া আর একজন, তারক ব্যানার্জি, অ্যারেস্ট মেমোতে সই করেন। কিন্তু অভিযুক্তদের পরিবারের কেউ স্বাক্ষর করেনি। অভিযুক্তদের পক্ষের উকিলের জেরার উত্তরে তিনি বলেন, অকুস্থল থেকে পাওয়া ইলেকট্রিক তারের দুটি কুণ্ডলী ছিল, কিন্তু সিজার লিস্টে দুটি কুণ্ডলীর কথা বলা হয়নি। তিনি আরও বলেন, সাগুন মুর্মুর কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া ফ্ল্যাশ গানটি সিআরপিএফের হেফাজতে রাখতে দিয়েছিলেন, এবং সেটির সঙ্গে কোনো তার লাগানো ছিল না। এবং তিনি নিজে মালখানাতে বিস্ফোরণ স্থল থেকে উদ্ধার হওয়া জিনিসপত্র রাখেননি, তিনি আইসি-র কাছে জমা করে দিয়েছিলেন। অভিযুক্তদের পক্ষের আইনজীবী বারবার বলতে থাকে, উদ্ধার হওয়ার পর এবং ফরেনসিক ল্যাবে যাওয়ার আগের মাঝের সময়টিতে উদ্ধার হওয়া জিনিসপত্রের কোনো হদিশ পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু বিচারপতি তার পর্যবেক্ষণে বলেন, তিনি কাগজপত্র খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে উদ্ধার হওয়া মালপত্র যথাযথভাবেই মালখানায় রাখা হয়েছিল। সওয়াল জবাবের সময় সাব ইন্সপেকটর জানান, উদ্ধার হওয়া পাইপটির একটি দিক হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে বেঁকিয়ে বুঁজিয়ে দেওয়া ছিল। কিন্তু তিনি স্বীকার করেন, এগুলো বোঝার মতো বিশেষজ্ঞতা তার নেই, তিনি তার বিশেষ ট্রেনিং নেওয়া আছে। তিনি আরো বলেন, তিনি এফআইআর করার সময় ছত্রধর মাহাতোকে জনসাধারণের কমিটির নেতা বলে উল্লেখ করেন। কিন্তু সে সময় তার ওপর কোনো ওয়ারেন্ট ছিল না।
এএসআই সমীর বেরা সামগ্রিকভাবে রাষ্ট্রের বক্তব্যের সঙ্গে সহমত পোষণ করেন। কিন্তু তিনি জেরায় জানান, ফ্ল্যাশগানটিতে ইলেকট্রিক তার, সুইচ ও প্লাগ লাগানো ছিল। তিনি আরো বলেন, লোহার পাইপের একটি দিকে লোহার রড ঢুকিয়ে বন্ধ করা ছিল। কিন্তু আসলে তা ছিল না, বাঁকিয়ে বন্ধ করা ছিল একটি দিক। জেরার মুখে তিনি আরো বলেন, বিস্ফোরণস্থল থেকে তিনজনকে গ্রেপ্তার করার সময় পুলিশ অফিসাররা এবং অভিযুক্তরা ছাড়া আর কেউ অ্যারেস্ট মেমোতে সই করেনি। জেরাতে তিনি আরো জানান, বিস্ফোরণটা হয়েছিল রাস্তার ঠিক ধারের গড়ান-এ এবং গ্রেপ্তারের ঘটনার কয়েকদিন আগেই তিনি শুনেছিলেন, ছত্রধরের সাথে সরকারের পুলিশের বড়ো কর্তাদের কথাবার্তা চলছে। তিনি জানান, সেদিন তাদের সঙ্গী ৫০-৫৫ জন সিআরপিএফ জওয়ানের কারোর নাম তিনি জানেন না এবং সেদিন সিআরপিএফ টিমকে যে অফিসার নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন, তার র‍্যাঙ্ক-ও তিনি জানেন না।
আরেক পুলিশ কর্মী শেখ চাঁদ সামগ্রিকভাবে রাষ্ট্রের বক্তব্যের সঙ্গে সহমত পোষণ করেন। কিন্তু তিনি জেরায় জানান, বিস্ফোরণস্থল থেকে অভিযুক্তদের তিনজনকে গ্রেপ্তার করার সময় তাদের কাছ থেকে কোনো কিছুই বাজেয়াপ্ত করা হয়নি। তাঁকে প্রমাণ স্বরূপ সেখান থেকে উদ্ধার হওয়া জিনিসপত্রের সিজার লিস্টে তার স্বাক্ষর দেখালে তিনি সেটি তাঁর স্বাক্ষর হিসেবেই বলেন। কিন্তু উদ্ধার হওয়া জিনিসটির নাম তিনি বলতে পারেননি এবং সেটিকে ল্যান্ড মাইন বিস্ফোরণের কাজে ব্যবহৃত কোনো কিছু বলে জানান। জেরায় তিনি জানান, বিস্ফোরণটা হয়েছিল রাস্তা থেকে ২০-২৫ মিটার দূরে এবং তিনি বোম ও ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণের আওয়াজের পার্থক্য করতে পারেন না।
ক্রমশ:

মানবাধিকার ছত্রধর মাহাতো, জঙ্গলমহল, জনসাধারণের কমিটি, পশ্চিম মেদিনীপুর, মাওবাদী, যাবজ্জীবন

এই প্রতিবেদনটি প্রিন্ট করুন এই প্রতিবেদনটি প্রিন্ট করুন

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অনুসন্ধান করুন

সংবাদ মন্থন

  • ছিটমহল
  • মাতৃভূমি লোকাল

খবরের মাসিক সূচী

মেটা

  • Log in
  • Entries feed
  • Comments feed
  • WordPress.org

সাম্প্রতিক মন্তব্য

  • TG Roy on লোককবি গুরুদাস পালের আত্মজীবনী : জীবন ও শিল্প
  • Subrata Ghosh on স্বনির্ভরতায় উজ্জ্বল ‘শিশু কিশোর বিকাশ মেলা’
  • সুমিত চক্রবর্তী on ‘গুণগত মেশিন একটা মানুষকে মানসিক রোগী বানিয়ে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দিচ্ছে’
  • তীর্থরাজ ত্রিবেদী on লোককবি গুরুদাস পালের আত্মজীবনী : জীবন ও শিল্প

ফোরাম

  • আড্ডা
  • বিষয়ের আলোচনা
  • সংবাদ সংলাপ
  • সাংগঠনিক আলাপ

লে-আউট সহায়তা

সংবাদমন্থন প্রিন্ট >>
 
নমুনা ল্যাটেক>>

songbadmanthanweb [at the rate] gmail.com · যোগাযোগ · দায়দায়িত্ব · Log in