উপাসনা চক্রবর্তী, কলকাতা, ২৭ সেপ্টেম্বর#
কিছুদিন আগে প্রেসিডেন্সি কলেজে ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন আনন্দবাজারে বেরোনো নিজের ছবির সৌজন্যে তমোঘ্ন হালদারের নামে ছিছিকার পড়ে যায়। অশালীনতার অভিযোগ যেমন ছাত্র আন্দোলনকে তাড়া করেছিল, তেমনি ব্যক্তি তমোঘ্নকেও তাড়িয়েছে। গতকাল তমোঘ্ন-র একটি চিঠি পেয়েছেন তার এক বন্ধু। প্রাপক অতীন্দ্রিয় চিঠিটিতে একটু সংযোজন করেছেন। চিঠিটি এরকম :
===========================
জনৈক অশালীনের চিঠি (তৎসহ চিঠির প্রাপক জনৈক বুরুবকের সংযোজন)
মানেসরের মারুতি কারখানায় শ্রমিক বিক্ষোভ মাথাচাড়া দেওয়ায় কমরেড খুশিরাম এবং জিতেন্দরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁদের রেড কার্ড দেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু পুলিশের কাছে লাল রঙের কোনো কার্ড না থাকায় তাদের গ্রেফতার করে হেফাজতে রাখা হয়েছে। এছাড়াও পাঁচশোজনকে হলুদ কার্ড দেখিয়েছে স্থানীয় পুলিশ, আশা করা হচ্ছে তারা শুধরে যাবে। শুধরে যাতে যায় সেই আশায় হাজারের উপর পুলিশকর্মী মোতায়েন করা হয়েছে কারখানা চত্বরে কারণ শ্রমিকরা শুধরে না গেলে নির্বিঘ্নে কাজ চলতে পারেনা। কাজ, অর্থাৎ উৎপাদন।
তবে কিনা আন্দোলনকারীদের দাবী (পূর্ণ সময়ের শ্রমিকদের সঙ্গে সমানুপাতে মজুরী বৃদ্ধি) মানার ইঙ্গিত ইতিমধ্যে পাওয়া গেছে মারুতি কর্তৃপক্ষের তরফে। সোমবার এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। ভাবতে ভালো লাগে, কিছু হতে না হতেই পুলিশ লেলিয়ে দেওয়া মারুতি কর্তৃপক্ষ আসলে কিন্তু ভিতরে ভিতরে ভয় পায়। ভয় পাচ্ছে। মুখে যাই বলুক, দু-হাজার বারো তারা ভোলেনি। তবে ভয় না পেয়ে কিছু করার নেই- অনেকগুলো চোখ তাকিয়ে আছে মানেসরের দিকে। কর্তৃপক্ষ হুঁশিয়ার। চোখগুলো ইতিমধ্যে লালচে, জ্বলে উঠতে সময় লাগবেনা কিন্তু!
সংযোজন – কালকে কমরেড খুশিরাম ও কমরেড জিতেন্দরের সাথে আরো ত্রিশ জনাকে পুলিশ ভালোবেসে তুলে নিয়ে গেস্লো। তুলে নেওয়ার সময় পুলিশের সঙ্গে অকুস্থলে উপস্থিত ছিলেন কিছু মাসল-ও-বাইকময় সুনাগরিক, যাঁদের চলতি পরিভাষায় বাউন্সার বলা হয়ে থাকে। ছাড়া পেয়েছেন সকলেই, কিন্তু তিনজন শ্রমিক, শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, আই-সি-ইউ-তে। কোন হাসপাতালের আই-সি-ইউ তা এখনো জানা যাচ্ছে না কারণ এইসব সহজে জানা যায় না।
পুনশ্চঃ ‘এইসময়’-এ এই খবর খুঁজে পাওয়া যাবেনা।
========================
হরিয়ানার মানেসরের মারুতি কারখানায় ঠিকা শ্রমিকরা ধর্নায় বসেছিল। প্রতিবেদকের কাছে শেষ খবর : গতকাল ২৬ সেপ্টেম্বর বিকেলবেলা জিতেন্দর এবং খুশিরাম কোর্ট থেকে জামিন পেয়েছেন। ২৫ সেপ্টেম্বর গুরগাঁও-এর মারুতি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ইউনিয়নের তিন বছরের চুক্তি হয়। কিন্তু সেখানে ঠিকা শ্রমিকদের কোনো দাবিদাওয়ার ঠাঁই হয়নি। ক্ষুদ্ধ ঠিকা শ্রমিকরা, সংখ্যায় যারা প্রায় তিন হাজার, সঙ্গে সঙ্গে গেটে বসে পড়েন। কিন্তু কারখানা ম্যানেজমেন্টের আশ্বাসে ধর্না উঠে যায়। গত কাল সকাল থেকেই ফের ধর্না শুরু হলে সকাল সাড়ে আটটার মধ্যেই পুলিশ বাহিনী ও বাউন্সার বাহিনী মিলে ধর্না তুলে দেয়, বহু শ্রমিক আহত হয়, বেশ কয়েকজন গ্রেফতার হন। আহতদের রকল্যান্ড হাসপাতালে চিকিৎসা হয়।
প্রসঙ্গত, তমোঘ্ন হালদার লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যাওয়ার আগে শেষ যে নোটটি ফেসবুকে রেখে গেছিল (২২ আগস্ট ২০১৫), তা এইরকম :
“গতকাল সন্ধ্যেবেলার ঘটনার প্রেক্ষিতে কিছু কথা। যা আমার মনে হয় জরুরী। এবং এটাই আমার শেষ প্রতিক্রিয়া সম্পূর্ণ ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে।
গতকাল এফটিআইআইএর আন্দোলনকারী ছাত্রদের সমর্থনে যে জমায়েত হয় কলেজ স্কোয়ারে, সেটি মিছিল করে বেরোয় এবং যায় বিজেপি দফতরের দিকে। আমি সেই মিছিলে ছিলাম। আমাদের আটকানো হয় কলকাতা ইউনিভার্সিটি এবং মেডিকাল কলেজের মাঝের বড় রাস্তায়। সেখানে খানিক ধস্তাধস্তি হয় পুলিশের সাথে, ব্যারিকেড নিয়ে। শুভ আমাদের বন্ধু, আহত হয়। তাকে নিয়ে একদল মেডিকেল কলেজ ছুটলে আমরা ব্যারিকেড ভাঙ্গার চেষ্টা বন্ধ করি। ওখানেই পোড়ানো হয় গেরুয়া স্বস্তিক চিহ্ন।
ইতিমধ্যে, আমি হাঁটছিলাম শরীর জুড়ে ফিল্মের রোল লাগিয়ে, যখন ওদিকে পূড়ছে স্বস্তিক, তখন এদিকে আমার গা থেকে সবাই মিলে দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণের মত খুলে ন্যায় ফিল্মের রোল। পড়ে থাকে জাঙ্গিয়া এবং একটি সাদা ব্রা। সেই সাদা ব্রা তে লেখা, খুলি খিড়কি। খুলি খিড়কি গজেন্দ্র চৌহান অভিনীত একটি ছবির নাম, এ কথা অনেকেই জানেন এখন। এরপরেই মিছিল করে যাওয়া হয় প্রেসিডেন্সীর দিকে। স্বাভাবিক ভাবেই আমার ব্যাগ আমার কাছে ছিলনা। ছিল এফটিআইআই এর একজন ছাত্রের কাছে। তাকে আমি আর এখন দেখতে পাইনা। জানিনা সে কোথায়। আমরা হাঁটতে থাকি। আমার গায়ে সেই সাদা ব্রা এবং জাঙ্গিয়া এবং তাতে আমি একটুও লজ্জিত বোধ করিনা, কারণ নগ্নতা আমার রাজনোইতিক স্টেটমেন্ট, বরাবর। আমি এর আগেও এই মাত্রায় নগ্ন হয়েছি প্রকাশ্যে।
যাই হক। প্রেসির গেট খোলার মুহূর্তে আমার হাতে শৌনক ব্যাগটি ধরিয়ে দ্যায়। যে কিনা এফটিআইআইএর ঐ ছাত্রের হাত থেকে ব্যাগটি আগেই নিয়েছিল কিন্তু আমার সাথে শৌণকের দেখা হয়নি এতক্ষণ কারণ আমরা সম্ভবত মিছিলের দুই প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছিলাম। হুহু করে গেট খোলা হয় এবং ঢুকে পড়া হয় প্রেসিতে, এরকম একটি মুহূর্তে ব্যাগ থেকে পোষাক বের করে পরা সম্ভব ছিলনা, ঐ সময়ে দাঁড়িয়ে। আমি ব্যাগটি সুচেতাকে দিই। প্রেসিতে ঢুকে যাওয়া হয়, আমরা প্রেসির সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠি এবং স্লোগানিং হতে থাকে। হ্যাঁ, আমি ওই পোষাকেই উঠি এবং উঠে একটি অঞ্চল অব্দি এগোনোর পরে পিছিয়ে আসি, সুচেতার থেকে ব্যাগ নিই। পোষাক পাল্টাই এবং নেমে আসি।
যদি এর জন্যে কারোর কাছে ক্ষমা চাইতে হয় তবে আমি এক এবং একমাত্র প্রেসির ছাত্রদের কাছে চাইতে পারি। তার কারণ আমি মনে করি মিডীয়া একধরণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে আমার ছবিটিকে এবং একধরণের অ্যালিয়েনেশন ঘটছে। যা আন্দোলনের ক্ষতি করছে হয়তো। আমি কি অসম্ভব মানসিক চাপে গত আঠারো ঘন্টা কাটিয়েছি তা আমিই জানি।
এই শেষ প্যারাগ্রাফ টি মিডিয়ার লোকেদের জন্যে, তাঁরা আমায় যোগাযোগের চেষ্টা করছেন। তাঁদের আমার যাবতীয় ডিটেলস দিলাম। আমার নাম তমোঘ্ন হালদার। আমি আই এস আই এর প্রাক্তন ছাত্র। আমার আগামী সপ্তাহের শুক্রবার ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া ডেভিসে অর্থনীতির পি এইচ ডি স্টুডেন্ট হিসেবে যোগ দেওয়ার কথা। আমার মা বাবা এই মুহূর্তে আমার সাথে কথা বলছেন না। আমি কিভাবে বাড়িতে রয়েছি সেটা আমিই জানি সুতরাং ফোনে কথা বলা সম্ভব নয়। ফেসবুকের এই বিবৃতিটিই আমার প্রতিক্রিয়া। আপনারা ভালো থাকবেন। টাটা।“
মুচিরাম মেথর says
লড়াই চলেছে, চলছে এবং চলবে। বিজয় সামনে।