• প্রথম পাতা
  • আন্দোলন
  • কৃষি ও গ্রাম
  • খবরে দুনিয়া
  • চলতে চলতে
  • পরিবেশ
  • শিক্ষা ও স্বাস্থ্য
  • শিল্প ও বাণিজ্য
  • নাবালকথা

সংবাদমন্থন

পাতি লোকের পাতি খবর

  • আমাদের কথা
    • যোগাযোগ
  • পত্রিকার কথা
    • পাক্ষিক কাগজ
    • জানুয়ারি ২০০৯ – এপ্রিল ২০১২
  • মন্থন সাময়িকী
    • মন্থন সাময়িকী নভেম্বর ডিসেম্বর ২০১৪
    • মন্থন সাময়িকী সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ২০১৪
    • সাম্প্রতিক সংখ্যাগুলি
    • সাম্প্রতিক পিডিএফ
    • পুরনো সংখ্যাগুলি
  • সংবাদ সংলাপ
  • বিষয়ের আলোচনা

আর নয়, পুরনো জায়গা থেকে কেউ কাজের খবর দিলেই পা তুলে দেবে তারা

September 14, 2020 admin Leave a Comment

বাবর আলী। বাগদিয়া, শান্তিপুর। ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০।#

রাত পোহালেই চোখ রগড়াতে রগড়াতে মাঠের পথে বেড়িয়ে পরা কিংবা পথের ধারের বেড়া থেকে কচার ডাল ভেঙে অথবা পিটালি ও নিমের সরু ডাল দিয়ে দাঁত ঘষতে ঘষতে চৌরাস্তার টিউবয়েলে মুখ ধুয়ে এপাড়ার নইম, ওপাড়ার সুলতান বা ফকিরের চায়ের দোকানের সামনে ঘাসের উপর গোল হয়ে অথবা ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে বসে চা-বিস্কুট খাওয়া এবং কার ফসল কেমন হচ্ছে কিংবা  কে কত টাকায় বেগুন, বরবটি, শিম বিক্রি করলো অথবা সারাদিনের কাজের হালহকিকত নিয়ে পরস্পরে কথা বলা, চিৎকার, চেঁচামেচি করা – এই ছিল একসময়ে এই গ্রামগুলোর সকালবেলার খুব চেনা ছবি। সেই মাঠ, পথ, চায়ের দোকান  এখনও আছে কিন্তু দৃশ্যতঃ বদলে গেছে অনেককিছুই । সেই মেঠোরাস্তা আর মেঠোপথ , পথের দু’ধারে কচাগাছের বেড়া, ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসার ঘাস-বিছানো চওড়া জায়গাটুকুও নেই আর। চায়ের দোকানে এখন ২৮ কিংবা ৩২ ইঞ্চি রঙিন টিভি চলে। মানুষ কথা বলে কম, শোনে বেশি। যা বা বলে তাও ওই টিভির মধ্যে থেকে ছেদচিহ্নহীন হয়ে বাণের  মতো ছুটে এসে মস্তিষ্কে বিঁধে যাওয়া আলংকারিকসত্য-মিথ্যা সব উচ্চারণ।  গ্রামে বসে বসেই দেশ বিদেশের কত সব খবরা খবর সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মগজে ভ’রে নিয়ে ঘরে ফিরছে বুড়ো -আধবুড়ো সব মানুষজন। মাঠ-ঘাট-ঘর-গেরস্থলির অনেক কিছু নিয়ে কারোর সাথে দু-দণ্ড কথা বলা আর হয়ে ওঠে না সেরকম । মনে হয় গাঁয়ের সাথে, মাঠের সাথে, মানুষের সাথে পারস্পরিক যোগটাই যেন ক্রমশ কমে গেছে । ফজর কিংবা মাগরিবের নামাজ শেষ করে চায়ের দোকানে চা খেতে গিয়ে বৃদ্ধ নইমুদ্দিন শেখ, সিরাজুল শেখ, আলফা শেখরা সেদিন  প্রথম শুনেছিলেন ‘সোস্যাল ডিসট্যান্সিং’ আর ‘লকডাউন’ শব্দদুটি । কেউ কাউকে ছোঁবে না,  বিপদে আপদে পাশে বা কাছে থেকে সাহায্য করবে না। যা গাঁয়ের সরল সহজিয়া জীবন ধারার  সম্পূর্ণ বিপরীত এক অনুশাসন। তাই সরকার লক ডাউন চালু করছে।পরস্পরের মধ্যে যত দূরত্ব তৈরি হবে তত মানুষ সুস্থ থাকবে। টিভির মধ্যে কালো কালো কোট পরে খবর বলা লোকগুলো দিনরাত চিৎকার ক’রে এইসব কথাই বারবার বলছে। আগামীকাল থেকে নাকি তাই সারাদেশে লকডাউন। লরি বাস ট্রেন  দোকান পাট বাজার  হাট সব বন্ধ। প্রথম প্রথম ব্যাপারটা অনুধাবন করতে পারেননি নইমুদ্দিনরা । তারপর যত দিন গেছে, তত বুঝতে পেরেছেন লকডাউন কাকে বলে। পাড়ায় পাড়ায় পুলিশ ঢুকেছে, যাকে সামনে পেয়েছে তাকে বেদম মেরেছে।  এটাই নাকি করোনা ঠেকানোর মহা ওষুধ !  সাবান সর্দারের ছেলে সফিকের তো বাঁ হাতটা এখনও জখম হয়ে আছে। সে টোটো চালায়। কোন এক প্যাসেঞ্জার একশো টাকার নোট দিলে তা একটু দূরে এক মুদিখানার দোকানে খুচরো করতে গিয়ে পুলিশের সামনে পড়েছিল। মার খাওয়ার প্রথম ছয়-সাতদিন তো উঠতেই পারে নি। তারপর সেই ব্যথা নিয়েই কাজে বেরোতে হয়েছে। নইলে খাবে কী ? কিছুদিন পরে অবশ্য আলফা শেখের ছেলে আমিন যখন হায়দ্রাবাদ থেকে বাড়িতে ফোন করে জানায় যে, কাজ পুরোপুরি বন্ধ। মাইনে বন্ধ, খাবার-দাবারের ভীষণ অসুবিধা হচ্ছে। ওরা যেখানে থাকে সেখান থেকে বাজারে গিয়ে কেনাকাটা করার কোন সুযোগ পাচ্ছে না। গত দু মাসে কাজ করে যা পেমেন্ট পেয়েছিল মার্চের প্রথম সপ্তাহেই  বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছে। তার কাছেও টাকা পয়সা তেমন কিছু নেই। আর সিরাজুল শেখ এবার পঞ্চায়েত থেকে সরকারি ঘর পেয়েছিল এক লাখ পঁয়ত্রিশ হাজার টাকার। ছেলে নস্করের সাথে পরামর্শ করে স্থানীয় বালি সিমেন্টের দোকানদারকে বলে কিছু ধার বাকি রেখে দুটো ঘরের পরিকল্পনা করেছিল।  দোকানদার অনেক টাকা একসাথে ধার দিতে রাজি না হলে  ওর সাথেই কাজ করে বন্ধু ফিরোজের কাছে পঁচিশ হাজার টাকা ধার করে নস্কর বাবাকে পাঠিয়েছিল কদিন আগে দোকানে দেওয়ার জন্য। কিন্তু  হঠাৎ-ই কাজ বন্ধ। বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা, অসুস্থ মা, স্ত্রী আর তিন-চার বছরের এক সন্তান। মাসে মাসে সংসারের খরচাপাতির টাকা পাঠানো, ঘরের জন্য বন্ধুর এবং দোকানদারের ধার শোধ করা – সব নিয়ে এক চরম সমস্যার মধ্যে  পড়ে। এ শুধু নস্করের ক্ষেত্রে নয়, বাগদিয়া, পাঁচপোতা,  বেলডাঙা, আড়পাড়া, ডংখিরা, বাথানগাছি, হিজুলি, ভোলাডাঙা,  গোয়ালপাড়া, বাগ আঁচড়া, হরিপুর প্রায় প্রত্যেকটা গ্রামে   ভিনরাজ্যে কাজ করতে যাওয়া প্রায় সব শ্রমিকদের সব পরিবারের ক্ষেত্রেই কমবেশি একই রকম ছবি। পাঁচপোতা গ্রামের
হোটেলে কাজ করা শামিজুল সর্দার, সানোয়ার মণ্ডলের সেই অসুবিধা ছিল না। ওদেরকে মালিক চাল, সবজি, মশলার যোগান দিয়েছিল বটে কিন্তু বেতন দেয় নি। মালিক বলেছিল, “কোথা থেকে মাইনে দেব বল, হোটেল বন্ধ। আমদানি নেই। কষ্ট করে থাক, কদিন পরে চালু হলে আবার আগের মতো সব কিছু দিয়ে দেব।”

কিন্তু ওরা নানা কারণে ক্রমশ অসহায় হয়ে পড়ে। ওরা বাইরে থাকে মূলত দু’পয়সা রোজগার করে বাড়িতে পাঠানোর জন্য। সেইটাই যখন বন্ধ হয়ে গেল, তখন আর থাকতে মন চাইল না। তাই শ্রমিক ট্রেন চালু হলে মুম্বাই থেকে ওরা চলে আসে বাড়িতে।
অন্যান্য বছরেও ওরা বাড়িতে আসে বটে। তখন তো কতরকম সব বাহাদুরি চলে। রঙ-বেরঙের সব জুতো পরে জিন্স আর নানা ধরণের ছাপ দেওয়া টি-শার্ট পরে বিকেল বেলায় রাস্তা ধরে এপাড়া সেপাড়ায় ঘুরে বেরানো চাই। ঈদের আগে আগে বাড়ি এসে সারা গাঁয়ের রাস্তা আলোকমালায় সাজিয়ে তোলার সে এক ইলাহি ব্যাপার! তারপর নতুন জামা পরে কচি কাচাদের নিয়ে পুকুরপাড়ের ছোট্ট মেলাটিতে ভিড় করে। দেদার খরচা দেখে তাদের উপার্জনের বহর বোঝা যায়।

বাগদিয়া গ্রাম থেকে হায়দ্রাবাদের কাজে ফিরে যাচ্ছেন শ্রমিকরা। ১৯ অগাস্ট প্রতিবেদকের তোলা ছবি।

এক দিন নয়, প্রতি ঈদে টানা তিন-চারদিন ধরে সেই মেলায় ভিড় কমে না। তার উপর আবার নাচ গানের আসর বসা। ভিন রাজ্য ও ভিন দেশ থেকে ফিরে সস্তা আমোদের এই বিচিত্র বাহারেও গাঁয়ের চিরকালীন সংস্কৃতির কোনো মিল কয়েকবছর থেকে চোখে পড়ছিল না। কেবলই মনে হচ্ছিল বাইরে থেকে কাঁচা পয়সা রোজগার করে এ এক ভোগের জগতে নিজেকে ডুবিয়ে রাখার চেষ্টা। তবে এ উপলব্ধি কেবল পুজো-পরবের সময়েই মনে হয়। কিন্তু এর বাইরে  ভিনদেশী পয়সায় নিজেদের ঘর বাড়ি করা, ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনা, বাবা-মায়ের চিকিৎসা,  সব মিলিয়ে মোটা ভাত মোটা কাপড়ের ব্যবস্থা গ্রামগুলোতে বাইরে কাজকরা পয়সাতে অনেকটাই সম্ভব হয়ে উঠেছিল। এই লকডাউনের আবহে গাঁ-ঘরের এইসব মানুষজনের রোজগারের সেই শক্ত অবলম্বন যেন মাত্র চার ঘন্টার নোটিসে ভেঙে চুরমার হয়ে গেল। তাই দোস্ত মহম্মদ আর আখের আলি সেদিন চাঁদ রাতে  খুব বিষন্নতা নিয়ে বলেছিল, “রাত পোহালেই ঈদ। প্রত্যেকবার কত প্রস্তুতি থাকে।  শিমাই, পায়েস, মাংস কত কিছু করা হয়। আর এবার সব যেন পানশে। ছোটো মেয়েটাকে একটা নতুন জামা পর্যন্ত কিনে দিতে পারলাম না। শিমাইও কিনতে পারি নি। একমাস ধরে কাজ না করে বসে বসে থেকে ধার করে ছ’হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে বাসে করে বাড়ি ফিরলাম, সেই টাকা এখনও শোধ দিতে পারলাম না। এতদিন এখানে আছি, কোনো কাজ নেই। কবে যে সব ঠিকঠাক হবে। বাঁচার কোনো রাস্তা দেখছি নে।”  তাই সুস্থ পরিবেশের জন্য আর অপেক্ষা করতে মন চাইছিল না। করোনা কতটা ভয়াবহ, এরা বুঝতে চায় না!  শুধু চায় খেয়ে পড়ে বাঁচতে। অভাবী সংসারের চাকাটাকে সচল রাখতে তাই মুখিয়ে থাকে কাজের জন্য। গ্রামে কোন কাজ নেই। কৃষকরা কাজ হারিয়েছে  চাষের জমি কমে যাবার জন্য। লকডাউন তাঁতিদের কর্মচ্যুত করেছে। রাজমিস্ত্রী জোগাড়েরা ঘরে বসা। ঘর করে পয়সা খরচ করার সাহস হারিয়েছে গ্রামীণ নিম্নবিত্ত বা নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষরা। তাই আর নয়,  কাজের পুরনো জায়গা থেকে কেউ কাজের খবর দিলেই পা তুলে দেবে তারা। ভয় একটুও হবে না করোনার জন্য। আখের আলি বলে, “এমনিতেই তো না খেয়ে মরছি, করোনা আর কী করবে?” তাই তারা আবার অনেকে মিলে ভিন রাজ্যে যাবার জন্য প্রস্তুতি শুরু করে দেয়। আমিনের নেতৃত্বে প্রায় ৪০জন শ্রমিক  ১লক্ষ ৪০হাজার টাকা দিয়ে বাস ভাড়া করে  হায়দ্রাবাদের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পরে গত ১৯ তারিখে।  জানা যায়, যারা লক ডাউনে বাড়ি ফেরেনি তাদের কেউ কেউ নাকি নির্মাণের কাজ ধরেছে। তাদের খবরেই ওরা পাড়ি দিল পথে।  জীবনের জন্য, উপার্জনের জন্য পথই যাদের ঘর, কার সাধ্য তাদেরকে ঘরের মধ্যে আটকে রাখে!

কৃষি ও গ্রাম করোনা, কাজের খোঁজ, ভিনরাজ্য ফেরৎ শ্রমিক, লকডাউন, সোশ্যাল ডিস্ট্যান্স

এই প্রতিবেদনটি প্রিন্ট করুন এই প্রতিবেদনটি প্রিন্ট করুন

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অনুসন্ধান করুন

সংবাদ মন্থন

  • ছিটমহল
  • মাতৃভূমি লোকাল

খবরের মাসিক সূচী

মেটা

  • Log in
  • Entries feed
  • Comments feed
  • WordPress.org

সাম্প্রতিক মন্তব্য

  • TG Roy on লোককবি গুরুদাস পালের আত্মজীবনী : জীবন ও শিল্প
  • Subrata Ghosh on স্বনির্ভরতায় উজ্জ্বল ‘শিশু কিশোর বিকাশ মেলা’
  • সুমিত চক্রবর্তী on ‘গুণগত মেশিন একটা মানুষকে মানসিক রোগী বানিয়ে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দিচ্ছে’
  • তীর্থরাজ ত্রিবেদী on লোককবি গুরুদাস পালের আত্মজীবনী : জীবন ও শিল্প

ফোরাম

  • আড্ডা
  • বিষয়ের আলোচনা
  • সংবাদ সংলাপ
  • সাংগঠনিক আলাপ

লে-আউট সহায়তা

সংবাদমন্থন প্রিন্ট >>
 
নমুনা ল্যাটেক>>

songbadmanthanweb [at the rate] gmail.com · যোগাযোগ · দায়দায়িত্ব · Log in