প্রান্তিক পাঠক। শান্তিপুর। ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১।#
সংখ্যাটা ২০৬!
শোভাযাত্রা, বিজয় মিছিল যে কোনো প্যারেডের জন্য যে রাস্তাটা বেছে নেন শান্তিপুরের মানুষ, সেই প্রসেশন রোডের একটি উল্লেখযোগ্য বিন্দু, ডাকঘর পাঁচমাথা মোড়ে, নেতাজী স্ট্যাচুর সামনে আজ একটি প্রতীকী পথ অবরোধ ও পরে ঘন্টাখানেক একটি সভা হল। কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবীতে দিল্লিতে চলা আন্দোলনের সমর্থনে ও সংযুক্ত কিষাণ মোর্চার দেশজোড়া চাক্কা জ্যামের প্রতি সংহতি জানিয়ে কিছু করার তাগিদেই এই সভা- বোঝা গেল বেলা বারোটার একটু আগে। ট্রলির উপর খুঁটি গুঁজে তাতে দুটো মাইকের চোঙ লাগিয়ে এমনই প্রচার হচ্ছিল তখন। এই প্রসেশন রোডের ধার দিয়ে স্কুল, পৌরসভা, ব্যাঙ্ক, নানা প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়। ফলে পাঁচমাথা মোড় ভারী, হালকা, অতিভারী নানা রকম যানবাহনের গতিতে পেরিয়ে যাবার তাগিদে অবরুদ্ধই ছিল। তার মধ্যে জনা পঞ্চাশ মানুষের পথ অবরোধের এই উদ্যোগ কার্যতই কঠিন ছিল। একটি অ্যাম্বুলেন্সকে এর মধ্যেই ছেড়ে দেওয়া হল। কিন্তু বারবার ঘোষণা সত্ত্বেও হর্ন বাজানো কিম্বা ফাঁক গলে বাইক, টোটোর ঢুকে পড়া ঠেকানো যাচ্ছিল না প্রথমটায়। এরপর সাধারণতন্ত্র দিবসে দিল্লিতে পুলিশের গুলিতে শহীদ হওয়া নভদীপ সিং হুন্দালের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন, গান, কবিতা, বক্তব্য, স্লোগান দিয়ে পনেরো মিনিটের অবরোধ ভরিয়ে তোলা হল। পাশাপাশি কয়েকটা ক্যানভাসে ছবি আঁকছিলেন স্থানীয় কিছু শিল্পী। হাতে হাতে বিলি হল লিফলেট। কয়েকজন এগিয়ে এসে খোঁজ করছিলেন কৃষক আন্দোলনের মুখপত্র ট্রলি টাইমসের অনুবাদ। স্থানীয় কয়েকটি নিউজ চ্যানেল বক্তাদের ধরে ধরে বাইট নিচ্ছিলেন। একটি নাট্যদলের তরফে এসেছিলেন কয়েকজন, সাথে হয়ে যাওয়া নাট্যমেলার বাতিল বিরাট একটা ফ্লেক্স। তার উল্টোদিকের সাদা অংশে কয়েকজন মিলে ছিয়াত্তর দিন ব্যাপী দিল্লির আন্দোলনে শহীদদের নাম লিখছিলেন। অবশ্যই সেই তালিকা পূর্ণাঙ্গ নয়। কারণ সংখ্যাটা আজ অবধি ২০৬!
ধর্মতলায় ছোট্ট জমায়েত ছিল আজ, কিন্তু কৃষক আন্দোলনের মেজাজটা ছিল না। বড্ড বেশি পার্টিবাজি, এতটাই যে কৃষকদের বিষয়টা নিয়ে পোস্টার ছিল না। একটা ব্যানার এল আধঘণ্টা পর। – জানিয়েছেন জমায়েতে অংশগ্রহণকারী জিতেন নন্দী।
একটি ফেসবুক পোস্ট ও কিছু তর্ক
১৯৪৬ সালে নৌবিদ্রোহের সমর্থনে সলিলের এই গান আজ যেন গোটা ভারতে আরও একবার প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠল, ঐতিহাসিক কৃষক আন্দোলনকে কেন্দ্র করে। দিল্লির সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা আজ গোটা দেশ জুড়ে দুপুর ১২টা থেকে ৩টে পর্যন্ত চাক্কাজ্যামের ডাক দিয়েছিল। সেই কর্মসূচী তথা গোটা আন্দোলনকে সংহতি জানাতে আজ নদিয়ার শান্তিপুরে আমরা ডাকঘর নেতাজী মোড়ে প্রতীকী ১৫ মিনিটের চাক্কাজ্যাম কর্মসূচী পালন করলাম। চলল পথসভা। তৎসঙ্গে শিল্পী বন্ধুরা ছবি আঁকলেন, আবৃত্তি পাঠ করলেন, গান গাইলেন।………
কৃষি আন্দোলনের সমর্থনে ও রাষ্ট্রের এই ফ্যাসিবাদী ভূমিকার বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলন লাগাতার চলবে
পোস্টের কমেন্ট থ্রেডে কেউ লিখেছেন ‘সাথে আছি দাদা’, কেউ জানতে চেয়েছেন ‘এই ‘আমরা’টা কারা?’ কেউ লিখেছেন,‘ইনকেলাব জিন্দাবাদ’ উত্তরে আরেকজন, ‘ইনকেলাব জিন্দাবাদ মানে কি ? আবার মরিচঝাঁপি হবে না তো ? এইটা তে বুক কাঁপে, coz আমরা বানগাল তো তাই’।
একজন লিখেছেন, ‘আমার একটু জমি আছে, একটু চাষবাসও করি। আমি যে পাট, ধান, সরিষা ফলাই , তার কিছুটা বাজারদরে বেচে দিই আর বাকিটা আমি কনজিউম করি। কিন্তু কৃষক কারে কয় আজও বুঝলাম না যে কৃষকদের জন্য অনেকে পথে নেমে বুক চাপড়াচ্ছেন আর সেন্ট্রাল গভর্নমেন্টের আনা কৃষি বিলের বিরোধিতা করছেন!! এনারা কৃষকদের মুখোশের আড়ালে কোনো ক্যাপিটালিস্ট নয় তো যারা ছোট ছোট কৃষকদের এমপাওয়ারমেন্টকে কোনো মতেই মেনে নিতে পারছেন না?’
অপর একজনের জবাব- ‘ প্রশ্নটা খুব স্বাভাবিক, উত্তরটাও আজ ইতিহাস। বাঙলার গ্রামে এই ঘটনা বিরল নয় – মশাগ্রাম, ভাতার বিভিন্ন অঞ্চলে চুক্তি চাষ হচ্ছে, আপনি বা আমি কেউ এই ইকনমিক সিষ্টেমের বাইরে নয়। আজ নয় কাল আমাদের গ্রাস করবে এই অর্থনীতি। আজই বিরোধ না করলে যত সহজে আপনি বললেন আপনি কী কী চাষ করেন তার সব সরঞ্জাম ওদের হাতে। ওদের কথায় চাষ না হলে আপনার চাষ বাস কিছুই থাকবেনা। আলু সাইজের চেয়ে ছোট বলে ওরা নেবে না। সোয়াবিন মজুত করে দাম ফেলে দেবে’।
এই সংলাপের সাথে বিভিন্ন প্রান্তের, বিভিন্ন পেশা ও বিশ্বাসের মানুষদের জুড়ে নিতে লাগাতার প্রচার কর্মসূচী নিয়েছেন শান্তিপুরের উদ্যোক্তারা।
Leave a Reply