দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়টি বন্ধ করে দেবার জন্য সওয়াল চালাচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকারের শাসক দলের অনুসারী ছাত্র সংগঠন এবিভিপি এবং আরএসএস। তাদের সাথে তাল মেলাচ্ছে মিডিয়া। ৯ ফেব্রুয়ারির একটি সভাকে কেন্দ্র করে এই দাবির সূত্রপাত। কোরা ডট কম-এ ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হর্ষিত আগ্রওয়ালের লেখা, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ তে। উল্লেখ্য, জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা এবং শিক্ষক শিক্ষিকারা অবশ্য এর বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছে হাজারে হাজারে।#
আমি দিল্লির জওহরলাল নেহরু ইউনিভার্সিটির (জেএনইউ) ছাত্র। কিছুটা দূর থেকে আমি কিছু ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। মূল ঘটনা, যা ঘটেছিল ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬। তাই ‘ঠিক কী ঘটেছিল’ তার উত্তর দেওয়ার ব্যাপারে জি নিউজ বা টাইমস নাও চ্যানেলের থেকে নিজেকে বেশি যোগ্য মনে করি।
৯ ফেব্রুয়ারি একটি ছাত্র সংগঠন ডিএসইউ (ডেমোক্রেটিক স্টুডেন্টস ইউনিয়ন) এর কিছু প্রাক্তন সদস্য একটি সাংস্কৃতিক সভা আয়োজন করেছিল। সভার উদ্দেশ্য ছিল, উদ্যোক্তাদের ভাষায়, ‘মকবুল ভাট এবং আফজল গুরু-র বিচারবিভাগীয় হত্যা’-র প্রতিবাদে এবং ‘কাশ্মীরি জনগনের আত্মনিয়ন্ত্রণের গণতান্ত্রিক অধিকারের সংগ্রাম’-এর সংহতিতে। প্রচুর কাশ্মীরি ছাত্র, তাদের মধ্যে কেউ ইউনিভার্সিটির, কেউ বা বাইরের, তাদের এই সভায় উপস্থিত থাকার কথা ছিল।
ডেমোক্রেটিক স্টুডেন্টস ইউনিয়ন একটি অতি-বামপন্থী ছাত্রগোষ্ঠী, এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই। তারা মাওবাদী আদর্শে বিশ্বাসী। এরা খুব ছোট্ট গোষ্ঠী, কিন্তু খুব পড়াশুনা করা। তারা কোনোভাবেই সন্ত্রাসবাদী বা নক্সাল নয়। আমি দুই বছর ধরে জেএনইউ ক্যাম্পাসে আছি, কখনো দেখিনি তাদের কোনো সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ করতে, এমনকি কখনো ঢিল ছুঁড়তে পর্যন্ত দেখিনি, সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ তো দূর অস্ত।
এবার এক এক করে আসা যাক প্রশ্নগুলোতে।
তারা কি কাশ্মীর নিয়ে সভা আয়োজন করে ভুল করেছিল? কাশ্মীর ইস্যু কি আমাদের কাছে এতই পবিত্র এবং আমাদের এতটাই মগজধোলাই হয়েছে নাৎসী-কায়দার জাতীয়তাবাদে, যে আমরা কাশ্মীর নিয়ে কোনো কথাবার্তা কাশ্মীরিদের কাছ থেকে শুনতে পর্যন্ত ভয় পাই?
আমি কি কাশ্মীরের ভারত থেকে বিচ্ছিন্নতা সমর্থন করি? না।
আমি অবশ্য রাজনীতির সূক্ষ মারপ্যাঁচ অতটা ধরতে পারিনি এখনো। কিন্তু আমি শুনতে প্রস্তুত। শিখতে প্রস্তুত। এবং সমস্ত ধরনের মতামত নিয়ে তর্ক চালাতে প্রস্তুত। বিশেষ করে যারা কাশ্মীরের অধিবাসী তাদের কাছ থেকে।
এখন, এই সভার উদ্যোক্তারা কি আফজল গুরু এবং মকবুল ভাটের ফাঁসি-কে ‘বিচারবিভাগীয় হত্যা’ বলে ভুল করেছিল? এবং এই প্রথমবারের জন্য কি প্রাণদণ্ড ও বিচারবিভাগের কোনো রায়ের বিরুদ্ধে কথা বলা হচ্ছে?
আফজল গুরুর ফাঁসির পর প্রচুর মানবাধিকার গোষ্ঠী এই ফাঁসির তীব্র নিন্দা করেছিল। বিজেপি জম্মু ও কাশ্মীরে যাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরকার গঠন করেছে, সেই পিডিপি পার্টি, তারা নিজেরাই আফজল গুরুর ফাঁসিকে বলেছিল ‘ন্যায়বিচারের বিকৃতি’। অরুন্ধতী রায় এর নিন্দা করেছিলেন। শশী থারুর বলেছিলেন, এটা ভুল। মার্কণ্ডেয় কাটজু এর ব্যাপক সমালোচনা করেছিলেন।
প্রবীন স্বামী, সাংবাদিক এবং আন্তর্জাতিক স্ট্র্যাটেজি ও নিরাপত্তা বিষয়ক পণ্ডিত, দ্য হিন্দু পত্রিকায় লিখেছিলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের রায় শেষ কথা হতে পারে না, হওয়া উচিত নয়। গুরু-র মামলার গভীর অস্বচ্ছতার কারণেই এই ফাঁসির সাজার পুনর্মূল্যায়ন হওয়া উচিত।’
দিল্লি হাইকোর্টের মুখ্য বিচারপতি, বিচারপতি এপি শাহ বলেছিলেন, ইয়াকুব মেমন এবং আফজল গুরুর ফাঁসি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
এবার বলুন, এরা সবাই কি সন্ত্রাসবাদী, জেহাদী, জাতিবিরোধী?
আমি আপনাদের জ্ঞানের ওপর ভরসা রাখি।
এবার আসি ‘জাতিবিরোধী স্লোগান’ দেওয়ার বিষয়ে।
ঐ অনুষ্ঠানটি শুরু হওয়ার ২০ মিনিট আগে, এবিভিপি, যারা নিজেদের মনে করে তারাই জাতীয়তাবাদের একমাত্র ধ্বজাধারী, তারা প্রশাসনকে চিঠি লিখে দাবি জানায়, এই সভার অনুমতি বাতিল করা হোক, কারণ এই সভা ক্যাম্পাসের পরিমণ্ডলের পক্ষে ‘ক্ষতিকর’। প্রশাসন, মারপিট হবে আশঙ্কা করে, সভার অনুমতি প্রত্যাহার করে নেয়। যারা জেএনইউ-এর ব্যাপারগুলো সম্পর্কে অবহিত নয়, তাদের জন্য বলি, জেএনইউ সমস্ত ধরনের মতামত শোনার জন্য, তা সে যত জঙ্গী মতামতই হোক না কেন, তার জন্য একটি চমৎকার গণতান্ত্রিক পরিসর। এবং এবিভিপি সেই পরিসরটিকে খর্ব করতে চাইছে।
ডিএসইউ সাহায্য চায় জেএনইউএসইউ (জওহরলাল নেহরু ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস ইউনিয়ন)-এর। এবং অন্যান্য বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলো, এসএফআই, এআইএসএ — এরা একজোট হয় গণতান্ত্রিক এবং শান্তিপূর্ণ উপায়ে সভা করার অধিকার রক্ষায়, এবং মনে রাখা দরকার, কখনোই কিন্তু ডিএসইউ-এর আদর্শ বা তাদের কাশ্মীর নিয়ে অবস্থানের সমর্থনে নয়। ডিএসইউ, জেএনইউএসইউ, এবং অন্যান্য ছাত্র সংগঠনগুলো ঠিক করে, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের কষ্টার্জিত গণতান্ত্রিক পরিসর খর্ব করার এবিভিপি-র অপচেষ্টাকে কিছুতেই সফল হতে দেবে না। এবং তারা ওই সভা সংগঠিত করবে।
সভাটি যেখানে হওয়ার কথা ছিল, সেই ব্যাডমিনটন কোর্টে প্রশাসন নিরাপত্তা কর্মীদের পাঠিয়ে দেয়। মাইক ব্যবহার করতে বারণ করে সভার উদ্যোক্তাদের। উদ্যোক্তারা রাজি হয়।
উদ্যোক্তারা ঠিক করে, তারা ধাবার কাছেই সভাটি করবে, এবং কোনো মাইক ছাড়াই। কিন্তু এবিভিপি তাদের ক্যাডারদের জড়ো করে এবং উদ্যোক্তাদের ও ছাত্রদের হুমকি দিতে শুরু করে। তারা কিছু বহুশ্রুত স্লোগান দিতে শুরু করে, যেমন, “ইয়ে কাশ্মীর হামারা হ্যায়, সারা কা সারা হ্যায়”।
সংগঠকরা তার প্রত্যুত্তরে এবং ছাত্রদের মধ্যে সংহতির জন্য স্লোগান দেয়, “হাম কেয়া চাহতে? আজাদি”
আপনি কি মনে করেন, এই বিবৃতিটিতে কোনো উস্কানিমূলক কিছু আছে? বিপজ্জনক কিছু আছে? ভাবুন। জাতি সবসময়ই ভাঙে গড়ে। আমরা ব্রিটিশ আমলে এই একই স্লোগান দিয়েছি। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গেছে। বিচ্ছিন্নতা ভালোও নয় খারাপও নয়। তা নির্ভর করে ঠিক কোন সময়ে ওই এলাকার বিচ্ছিন্নতার কথা বলা হচ্ছে তার ওপর। এবং মনে রাখবেন, আমি কিন্তু কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতার দাবি সমর্থন করি না। আমি মনে করিনা কাশ্মীরের অধিবাসীদের অবস্থা সম্পর্কে আমার পর্যাপ্ত জ্ঞান রয়েছে। তাই আমি এর পক্ষেও নই, বিপক্ষেও নই। তাই, আমার কোনো সমস্যা নেই, যদি একটা ছাত্রগোষ্ঠী তাদের এলাকার স্বাধীনতার দাবি নিয়ে কেবল স্লোগান দেয়, তাতে। তারা কিন্তু সরকার উৎখাত করার এবং কাশ্মীরকে ভারত থেকে দখল করে নেওয়ার কোনো ষড়যন্ত্র করছিল না। তারা সাধারণ ছাত্র, যারা পড়াশুনা করে, ঘুরে বেড়ায়, এবং শেখে বিভিন্ন সমাজ-রাজনৈতিক বিষয়, এবং বিভিন্ন বিষয়ে তাদের অবস্থান আছে।
পরবর্তী স্লোগান — “তুমি কতগুলো আফজলকে মারবে, প্রতি ঘর থেকে আফজল জন্মাবে”।
আমি মামলাটা খুব নিবিড়ভাবে পড়াশুনো করিনি, তাই, ভারতের বিচারব্যবস্থার ওপর ভরসা রাখি, তাই আমি বিশ্বাস করি, আফজল গুরু একজন সন্ত্রাসবাদী ছিল। যদিও নীতিগতভাবে আমি মৃত্যুদণ্ডের বিপক্ষে।
এই ছাত্রগোষ্ঠীটি মনে করে, আফজলের মৃত্যুদণ্ড হওয়া উচিত নয়। এবং সে পার্লামেন্ট আক্রমণে জড়িত ছিল কি না, তা নিয়েও তাদের সংশয় আছে। উইকিপিডিয়াতে এই নিয়ে কী লেখা আছে দেখুন, ‘এটা উল্লেখযোগ্য যে, ৫ আগস্ট ২০০৫ এর জাজমেন্ট-এ সুপ্রিম কোর্ট স্বীকার করেছিল যে গুরু-র বিরুদ্ধে প্রমাণগুলো কেবলমাত্র সারকামস্টেনশিয়াল বা আনুষঙ্গিক, এবং তার কোনো সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী বা সংগঠনের যোগের কোনো প্রমাণ নেই।’
এবং সুপ্রিম কোর্ট নিজে কী বলেছিল দেখুন, ‘ওই ঘটনা (পার্লামেন্ট আক্রমন), যাতে এতগুলো মানুষের প্রাণহানি হয়েছিল, তা গোটা জাতিকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল। সমাজের সামগ্রিক বিবেক তখনই সন্তুষ্ট হবে, যখন দোষীকে চরমতম সাজা দেওয়া যাবে।’
তাহলে? একটা ছাত্রগোষ্ঠী, তারা যদি মনে করে যে আফজল গুরুকে ফাঁসানো হয়েছিল, পার্লামেন্ট আক্রমণে তার কোনো ভূমিকা নেই, এবং মৃত্যুদণ্ড খারাপ, তাহলে কী তারা খুব কি হাতিঘোড়া কিছু বলেছে?
তাই স্লোগানটা ছিল, “হর ঘর সে আফজল নিকলেগা”
এবং মনে রাখবেন, এই ছেলেমেয়েগুলো কিন্তু কোনো অস্ত্রশস্ত্র বহন করছিল না, তারা আইডিয়া নিয়ে চলছিল।
তাহলে এইবার রাষ্ট্র কী করবে? তাদের রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র অভিযোগে অভিযুক্ত করবে? নাকি তাদের সঙ্গে কথাবার্তা চালানোর চেষ্টা করবে? তাদের সঙ্গে তর্ক করার চেষ্টা করবে, তাদের অন্যমতটা জানাবে?
এবং এটা কি কোনো গোপন সভা ছিল, যেখানে চোরাই বোম পিস্তল সহযোগে সরকার উৎখাতের কথা হচ্ছিল? না, এটা ছিল পাবলিক মিটিং। প্রত্যেকে আমন্ত্রিত ছিল। তুমি তাদের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করতেই পারো। তারা গোপনে কিছু করছে না। তারা যদি সন্ত্রাসবাদীই হতো, তাহলে তারা তো প্রকাশ্যেই আসত না। কিন্তু তাদের কি তুমি টিভি চ্যানেলগুলোতে দেখোনি, সাহসের সঙ্গে তারা নিজেদের মতামত ব্যক্ত করছে এবং অন্য মত পোষণের অধিকার নিয়ে তর্ক করছে? বলো আমাকে, সন্ত্রাসবাদীরা এসব করে?
এবার আসি সবচেয়ে বিতর্কিত বিষয়টাতে, ভারতবিরোধী স্লোগান।
সভাতে একটা বড়ো অংশ ছিল কাশ্মীরি ছাত্রছাত্রী যাদের মধ্যে অনেকেই বাইরে থেকে এসেছিল জেএনইউ-তে, কেবল এই সভাটিতে হাজির হওয়ার জন্য। যে ভিডিওটি ছড়ানো হয়েছে, সেটি যদি তুমি ভালো করে দেখো, তাহলেই বুঝবে, কেবল এই ছাত্ররাই ওই কেন্দ্রীয় জায়গাটায় ছিল। এবং বিশ্বাস করো, এরা কেউই কিন্তু জেএনইউ-এর নয়। আমি কিছুক্ষণ ওই ঘটনাটার সময় ছিলাম। এবং এদের একজনকেও আমি জেএনইউতে দেখিনি আগে।
এই ছাত্ররা, যারা কাশ্মীরের, তারা দশকের পর দশক ধরে ‘আফস্পা’র আওতায় আছে। তারা যখন দেখছে, এবিভিপি সভাটি বানচাল করতে এসেছে, তখন তারা ভয়ানক ক্ষুদ্ধ হয়। এবং ভারতবিরোধী স্লোগান দিতে থাকে, যেমন, ‘ভারত কি বরবাদি তক, জঙ্গ রহেগি, জঙ্গ রহেগি।’ ‘ইন্ডিয়া, গো ব্যাক।’
আমার আড়াই বছর জেএনইউ জীবনে, এই ধরনের স্লোগান কাউকে কখনো দিতে শুনিনি। ডিএসইউ বা অন্য কোনো বামপন্থী সংগঠনের মতাদর্শ এই মতাদর্শের ধারেকাছেও নয়।
আরো পরিষ্কার করে বললে, একজন কাশ্মীরি ছাত্র, যে জেএনইউ এর নয়, এবং যে ওই মিটিং-এ উপস্থিত ছিল না, সে তার ফেসবুক দেওয়ালে ওই স্লোগানগুলো নিয়ে লিখেছে। ইউটিউব থেকে শুনেছে সে স্লোগানগুলো।
কাশ্মীরি ছাত্রটির দেওয়াল থেকে —
“এবার বিতর্কিত স্লোগানগুলোর ‘কাশ্মীরি ডিকনস্ট্রাকশন’ করা যাক।
১। ভারত কি বরবাদি তক জঙ্গ রহে গি
১৯৯০ সালের পর জন্মানো কোনো কাশ্মীরি ছেলে বা মেয়ের কাছে ভারত মানে হলো ইন্ডিয়ান মিলিটারি এস্টাবলিশমেন্ট। ভারত রাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্বমূলক ছবিটাই হলো, জলপাই-পোষাক-হাতে রাইফেল-পুরুষ।
বরবাদি কথাটা ব্যবহার করা হয়, যেভাবে ভারতের যে কোনো সংগঠন কথাটা ব্যবহার করে। এর মানে হলো কাশ্মীরে মিলিটারি দখলদারির অন্ত।
জঙ্গ মানে হলো লড়াই। হতে পারে, শান্তিপূর্ণ, গান্ধীবাদী, মার্ক্সবাদী, গ্রামসিবাদী, অথবা হিংসাত্মক, যেভাবে তুমি শব্দটার ব্যাখ্যা করবে।
এবার কি একটু পরিষ্কার হলো? যাই হোক, এটি জেএনইউ-এ কানাচের স্লোগান হতে পারে, কিন্তু কাশ্মীরে এটি গণ-স্লোগান।
২। আজাদি
এই আজাদি শব্দটা ‘ভারতীয়’ কাছে সবচেয়ে বিভ্রান্তিকর। এটাকে একটু খোলসা করা যাক। এটা কোনো দেশদ্রোহী স্লোগান নয়, বিচ্ছিন্নতাবাদী স্লোগানও নয়। আজাদি — ঐতিহাসিকভাবে, সামাজিকভাবে, সাংস্কৃতিকভাবে, ধারনাগতভাবে, এবং নৈতিকভাবে এই স্লোগানটির শিকড় আছে দুটি রাষ্ট্রের দখলদারিতে পিষ্ট হতে থাকা একটি ভূখণ্ড, যাকে লোকে চেনে কাশ্মীর বলে, সেই এলাকার আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের মধ্যে।
আরো যোগ করি, আজাদি হলো প্রতিরোধের অনুশব্দ। এবং খুব গভীর আকাঙ্খার সাথে সংশ্লিষ্ঠ। “
পাকিস্তান জিন্দাবাদ স্লোগান সম্পর্কে আসি এবার। এই স্লোগানটা আদৌ দেওয়া হয়েছিল কি না তা নিয়ে তর্ক আছে। আমি যতক্ষণ ছিলাম, এই স্লোগান শুনিনি। একটা ভিডিওতে এই স্লোগানের কথা শোনা যাচ্ছে। কিন্তু কে দিচ্ছে বোঝা যাচ্ছে না। এটা কি কাশ্মীরি ছাত্ররা দিয়েছিল, নাকি এবিভিপি-ই দিয়েছিল ষড়যন্ত্র করে, নিচের ভিডিওটা সেটা বলবে।
এবার এটা যদি পরিষ্কার হয়ে যে জেএনইউ-এর কোনো ছাত্র ভারত-বিরোধী স্লোগান দেয়নি, তারপর সরকার কি করলো এটাতে এবার আসা যাক।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং-এর হস্তক্ষেপে পুলিশ আমাদের হোস্টেল এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে রেইড করে। তারা জেএনইউএসইউ এর সভাপতিকে তুলে নিয়ে যায় কোনো প্রমাণ ছাড়াই, এবং কোর্ট তাকে তিনদিনের পুলিশি হেফাজত দেয়। সে স্লোগানগুলো দেয়নি। সে এআইএসএফ (অল ইন্ডিয়া স্টুডেন্টস ফেডারেশন) এর সদস্য, যেটি কি না সিপিআই এর ছাত্র সংগঠন। সিপিআই বামপন্থীদের মধ্যে সবচেয়ে মোলায়েম। তাদের মাওবাদী বা বিচ্ছিন্নতাবাদী কোনো আদর্শ নেই।
গতকাল আবার, সাতজন ছাত্রকে ক্যাম্পাস থেকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ।
আমি বলি, কাউকে যদি তোমাকে গ্রেপ্তার করতেই হয়, তাহলে খুব বেশি হলে তুমি ওই কাশ্মীরি ছাত্রদের করতে পারো। কিন্তু ছাত্রদের এলোপাথারি তুলে নিয়ে যাওয়া ঘোরতর অন্যায় এবং এটা কখনোই একটা গণতান্ত্রিক সরকারের কাছ থেকে কাম্য নয়।
এবং শেষতঃ, আমি এবার একটু বেসুরো জায়গায় আঘাত করছি, কিন্তু কাউকে না কাউকে তো করতেই হবে।
আমরা কেন আমাদের জাতীয়তাবাদের ধারনা নিয়ে এত নড়বড়ে? আমরা কেন এটাকে ধর্মের মতো কিছু বলে ধরে নি? কেউ কিছু স্লোগান দিল আর সেটা ব্লাসফেমি হয়ে গেল? একটা বিশ্ববিদ্যালয় তো তর্কবিতর্ক করার, আলোচনা করার, এবং বিরোধিতার। স্লোগানের উত্তর স্লোগানে দাও। দেশদ্রোহিতার চার্জ দিয়ে নয়।
আমি এই বিষয়ে আমাদের প্রথম প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর কোটেশন দিচ্ছি, যার নামেই আমাদের এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম —
“একটি বিশ্ববিদ্যালয় দাঁড়ায় মানবতাবাদের পক্ষে। সহনশীলতার পক্ষে, যুক্তির পক্ষে, আইডিয়ার অ্যাডভেঞ্চারের পক্ষে, এবং সত্যের অনুসন্ধানের পক্ষে। মানবজাতির উচ্চতর লক্ষ্যগুলির প্রতি অভিযানের পক্ষে। যদি বিশ্ববিদ্যালয় সেই দায়িত্ব পালন করে যথাযথভাবে, তাহলে তারা জাতির সঙ্গে আছে, জনগনের সঙ্গে আছে।”
এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে যখন জেএনইউ মিডিয়ার কাছ থেকে যতরকম সম্ভব সাজানো মিথ্যে এবং গালাগালের সম্মুখীন হচ্ছে, আমি সবাইকে বলছি জেএনইউ-এর পাশে দাঁড়ান। এটা এমন একটা বিশ্ববিদ্যালয়, যা খুবই সুন্দর, মূল্যবোধ এবং ভূগোল — দুদিক থেকেই।
আমি আপনাদের সবাইকে বলছি, আসুন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো সময়। এটা সবাইকে স্বাগত জানায়, সবাইকে ধারন করে …।
AMITAVA SEN says
IS OUR POLITICS ALSO CIRCLING AROUND ANTI-PAKISTAN SLOGANS OR IS IT NEEDED AT ALL THROUGH OUR CIVIL LIFE ? THIS IS INDIA, AND WE DO HAVE LOTS OF PROBLEMS TO FACE EVERY DAY . BJP AND RSS SCHOOLS OF THOUGHT ARE SPREADING POISONOUS SMOKE AROUND . IS IT JUST FOLLOWING PAKISTAN’S POLITICAL TREND ?
SONJOY GHOSH says
Like the earlier Congress government BJP ,the political wing of RSS, government is intricated in corruption example Arun Jetley ,no 2 in central Ministrycharged by his owen partyman KIRTI AZAD.THEY CAN NOT PREVENT THE MASS SUICIDE OF FARMARS IN MAHARASTHRA, KARNATAKA EVEN IN PUNJAB.The market is very much down it is prooved in this years that the RSS the mentor of BJP government cannot show any other way than the earlier congress government to solve the Indian problems .Hariana and some other states the angry voice against the BJp is loder to loder .so they cannot tolerate any voices that are different from them .they dont take any lesson from history that the INDIAN Mass the mute spectator of their ugly activities throw them away in darkness like the earlier Congress government .actually they hammer their won coffin.