তিনটের দিকে কাউন্টারের পর্দা উঠল। তিনটে চল্লিশে জিয়াগঞ্জের বাস। আমার সামনের লোক যাবেন কৃষ্ণনগর। পেছনের জন ধুবুলিয়া। পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে জানি রাতের দিকে অনেক বাসই রানাঘাট থেকে ঘুরিয়ে বাদকুল্লার ভেতর দিয়ে কৃষ্ণনগর পৌঁছায়। একশ টাকার নোট হাতে নিয়ে ভাবছি কৃষ্ণনগর অবধি কেটে রাখি টিকিট। ওখান থেকে নাহয় কোনোভাবে শান্তিপুরে ফেরা যাবে। কাউন্টারের কাছাকাছি পৌঁছতেই শুনতে পেলাম, যেখানেই যাবেন টিকিটের দাম একশ ষাট টাকা। প্রায় এক ঘন্টা লাইনে দাঁড়ানোর পর কেন এত ভাড়া, সস্তায় কিছু আছে কিনা খোঁজ করার ফুরসৎ কোথায়? তাছাড়া এত বেলায় প্রাইভেট বাস পাওয়া যায় না। যারা এই আনলক পর্বে বাসে যাতায়াত করছেন, তাদের থেকে জেনেছি, সিট নিতে গেলে কলকাতা বহরমপুর রুটের প্রাইভেট বাসে শান্তিপুর অবধি ভাড়া মিনিমাম আড়াইশো টাকা। কেউ কেউ সময় সুযোগ বুঝে পাঁচশও নেয়। তাই সরকারি বাসের লাইনে দাঁড়ানো।
রেলের অন্দরেই বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছে কর্মচারিরা। বাইরে জনগণ উত্তাল রেল চালানোর দাবীতে।
রেলমন্ত্রক ২০১৯ সাল থেকে বিভিন্ন বিজ্ঞপ্তি জারি করছে, ঐসব বিজ্ঞপ্তিতে ১৯৭২ ও ১৯৮৭ সালের নিয়মের উল্লেখ করে কর্মচারীদের আগাম অবসরের বার্তা পাঠাচ্ছে। রেলের বিভিন্ন ডিভিশনে ও ওয়ার্কশপে কর্মচারীদের (যাদের বয়স ৫৫ বছর বা কর্মজীবন ৩০ বছরের) তালিকা ইতিমধ্যেই প্রস্তুত করা হয়েছে। অবিলম্বেই তাদের অবসর গ্রহণের চিঠি ধরানো হবে। এই আকষ্মিক অবসর গ্রহণে ঐসব কর্মচারী ও তাদের পরিবার যে আর্থিক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়বে সেকথা এই সরকারের ভাবনাতেই নেই। সরকার ১৯৭২ সালের নিয়মের সুযোগ নিচ্ছে যা পূর্বের কোনো সরকারই প্রয়োগ করেনি। আগের সরকার কর্মচারীদের স্বার্থের কথা ভেবে স্বেচ্ছাবসরের জন্য সুনির্দিষ্ট প্রকল্প অনুমোদন করেছিল। বর্তমান সরকারের কোনো ক্ষেত্রেই কোনো মানবিক মুখ দেখা যাচ্ছে না। সেটা শুধু সরকারি কর্মচারীদের ক্ষেত্রেই নয়, লকডাউন পিরিয়ডে ভিন্নরাজ্যে আটকে থাকা শ্রমিকদের ঘরে ফেরানো, কৃষকের ঋণ মুকুব, নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র সংগ্রহে দুর্দশাগ্রস্ত আবালবৃদ্ধবনিতা, নোটবন্দীর সময়ে ব্যাঙ্কের সামনে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়ানো বয়স্ক নাগরিক – কোনো ক্ষেত্রেই সরকারকে মানবিক ভূমিকা নিতে দেখা যায়নি।
এখনও কেন বন্ধ লোকাল ট্রেন ? – চরম ক্ষতির মুখে ফুলিয়ার ছানা ব্যবসায়ীদের প্রশ্ন একটাই।
কলকাতার মিষ্টান্ন তৈরির মূল কাঁচামালটা দূর মফস্বলের ফুলিয়া থেকে সাপ্লাই হয়। লোকাল ট্রেন না চালানোয় এই সাপ্লাই-এ প্রচন্ড অসুবিধার মধ্যে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। ট্রেন চালু থাকলে শান্তিপুর- শিয়ালদা লাইনে দুপুর ১-১২ ও ২-২২ -এর ট্রেনে অন্তত ৫০০ জন প্রতিদিন শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা ছানা নিয়ে যেতেন। রেলের একটা বিরাট রেভিনিউ থাকত। ৫৩৫ টাকা ভেন্ডার টিকিট ও মাল বুকিং সহ একটা বিরাট অঙ্কের টাকা আসত ছানা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে। ব্যবসায়ীদের মাল নিয়ে যাওয়ার কোনো চিন্তা থাকতো না।
পাঁচ মাস ছুরি কাঁচি তে সান দেওয়া বন্ধ থাকলেও মাথায় সান দেওয়া চলছে নিরন্তর
ট্রেন বন্ধ পাঁচ মাস। সমীরদা বাড়িতে বসে। কোন মতে দিন গুজরান করছেন। এখন অবশ্য সাইকেলে করে বিস্কুট, চানাচুর, চিড়ে ভাজা, বাদাম ভাজা ইত্যাদি ফেরি করছেন। বুঝতে পারি মানুষটাকে আর বেশিক্ষণ বসিয়ে রাখা উচিত হবে না। দৃঢ়চেতা ,জেদি ঋজু মানুষ টা উঠে দাঁড়িয়ে বলেন বৃষ্টি এলে মালগুলো পৌঁছতে পারবো না। সাইকেলে ওঠেন। হ্যান্ডেলের ব্যাগটাতে চোখ পরায় বুঝতে পারি পাঁচ মাস ছুঁড়ি কাঁচি তে সান দেওয়া বন্ধ থাকলেও মাথায় সান দেওয়া চলছে নিরন্তর।
সাম্প্রতিক মন্তব্য