• প্রথম পাতা
  • আন্দোলন
  • কৃষি ও গ্রাম
  • খবরে দুনিয়া
  • চলতে চলতে
  • পরিবেশ
  • শিক্ষা ও স্বাস্থ্য
  • শিল্প ও বাণিজ্য
  • নাবালকথা

সংবাদমন্থন

পাতি লোকের পাতি খবর

  • আমাদের কথা
    • যোগাযোগ
  • পত্রিকার কথা
    • পাক্ষিক কাগজ
    • জানুয়ারি ২০০৯ – এপ্রিল ২০১২
  • মন্থন সাময়িকী
    • মন্থন সাময়িকী নভেম্বর ডিসেম্বর ২০১৪
    • মন্থন সাময়িকী সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ২০১৪
    • সাম্প্রতিক সংখ্যাগুলি
    • সাম্প্রতিক পিডিএফ
    • ২০১২-র আগস্ট অব্দি
  • সংবাদ সংলাপ
  • বিষয়ের আলোচনা

‘সাবঅল্টার্ন কথা বলতে পারে, কথা বলছে; আপনারা শুনতে চান তো?’

July 20, 2016 Editor SS 2 Comments

হাল্লাবোল পত্রিকার উদ্যোগে ২০১৬ সালের জুন মাসে কলকাতার মহাবোধি সোসাইটি হলে হওয়া একটি আলোচনা সভায় ছাত্রনেতা রাহুল সোনপিম্পলে ভাষণ দেন, মূলতঃ হিন্দিতে। তার একটি অনুবাদ নিচে প্রকাশ করা হলো। ভাষণের শেষদিকটির অডিও ফাইলটি খুব অস্পষ্ট থাকায় শেষের দিকের কয়েক মিনিট বাদ গেছে। সাম্প্রতিক জেএনইউ ও হায়দ্রাবাদ ইউনিভার্সিটির ছাত্র আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ছাত্র আন্দোলনে বামপন্থী সংগঠন ও আম্বেদকরপন্থী সংগঠনগুলোর ঐক্যের কথা উঠেছিল। বেশ কিছু বামপন্থী সংগঠন তাদের সম্বোধনে ‘লাল সেলাম’ এর পাশাপাশি ‘জয় ভীম’ ব্যবহার করা শুরু করেছেন। অনেক বামপন্থী সংগঠনেই বাবাসাহেব ভীমরাও আম্বেদকরকে আলাদা গুরুত্ব দেওয়ার কথা উঠে এসেছে। বামপন্থীদের আম্বেদকরকে আপন করে নেওয়া, আম্বেদকরপন্থীদের সাথে ঐক্যের প্রস্তাব — এসবেরই সমালোচনা করেছেন রাহুল সোনপিম্পলে#

যখন আমি আজকের আলোচনার টপিকটা বোঝার চেষ্টা করছিলাম, তখন ভাবছিলাম, আমাদের দেশে এমন কোন বামপন্থী আছে, যারা এলিট নয়? হতে পারি আমি ভুল। কিন্তু আমার গোটা দেশে এমন কোনো বামপন্থী চোখে পড়েনি, যে এলিট নয়। এই দেশে বামপন্থীরা বলতেই পারে যে আমরা এলিট নই, কারণ আমরা গরিবদের মধ্যে কাজ করি। কিন্তু গরিবদের মধ্যে কাজ করলেই সে এলিট হবে না — এই প্যারামিটারটা একটা ধোঁকা। মহারাষ্ট্রে শিবসেনাও খুব গরীবদের মধ্যে ইউনিয়ন করে, তাদের সঙ্গে কাজ করে। বিজেপিরও শ্রমিক ইউনিয়ন আছে। সবাই দাবি করতে পারে যে তারা গরিবদের সাথে কাজ করে, কেবল বামপন্থীরা নয়।
আমি মনে করি আমাদের দেশে বামপন্থীরা এলিট এই কারণে, বাবাসাহেব আম্বেদকর যেমন মনে করতেন, এক, মতাদর্শের কারণে। দুই, তাদের গঠনের কারণে। ইতিহাস বলছে যে দেশের বামপন্থীরা, সে তারা সংসদীয় হোক বা অসংসদীয় হোক, এই দুটিতেই উচ্চবর্ণের আধিপত্য চলে আসছে। দলিতরা চিরকালই এর সমালোচনা করেছে। বাবাসাহেবও এর বেশ বড়ো সমালোচক ছিলেন।
আজ আলোচনার বিষয় : দলিত আন্দোলনকে কি বামপন্থীরা কব্জা করে নিচ্ছে, বিশেষ করে এলিট বামপন্থীরা? এই টপিকে যাওয়ার আগে আমি একটা কথা আপনাদের সামনে রাখতে চাইছি — এই দলিত আন্দোলন ব্যাপারটা কী?

‘মেকিং অফ আম্বেদকর’

১৯ জুলাই ২০১৬ মুম্বই-এ বিশাল র‍্যালি, মহারাষ্ট্র সরকারের আম্বেদকর ভবন ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে।
১৯ জুলাই ২০১৬ মুম্বই-এ বিশাল র‍্যালি, মহারাষ্ট্র সরকারের দাদার-এর আম্বেদকর ভবন ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে। ছবি নাগেশ যাদব-এর ফেসবুক পৃষ্ঠা থেকে।

দলিত আন্দোলনকে জানতে গেলে তার ইতিহাস জানতে হবে। দলিত আন্দোলনের কথা বললেই আসবে বি আর আম্বেদকরের নাম, দলিত আন্দোলনের সবচেয়ে বড়ো ইডিওলগ। আম্বেদকরের মৃত্যুর ষাট বছর হয়ে গেছে। এই ষাট বছরে আম্বেদকর দেশের এক বৃহত্তর টপিক হয়ে উঠেছে, আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। কিন্তু আমাদের জানা দরকার — মেকিং অফ আম্বেদকর, অর্থাৎ আম্বেদকর কীভাবে আম্বেদকর হয়ে উঠলেন। এই দেশে যখন আম্বেদকর নিয়ে আলোচনা হয়, তখন আম্বেদকরকে কে জনসমক্ষে তুলে ধরল, সে আলোচনাটা বাদ চলে যায়।
বাবাসাহেবকে গলি থেকে দিল্লি অবধি নিয়ে যাওয়ার ইতিহাস খুব লম্বা …। আমি যে রাজ্যের লোক, সেই মহারাষ্ট্রে কিছু লোক নিজেদের দলিত কমিউনিস্টও বলে। তাদের সঙ্গে আমার তর্ক হয়। তারা আমাকে বলে, বাবাসাহেবকে তার অনুসরণকারীরা তো ঈশ্বর বানিয়ে দিয়েছে। আমি মনে করি, ওরা ভুলে যায়, ওরা দেশের সেই অংশের লোকের সম্পর্কে কথা বলছে, যাদের কোনো ভগবান থাকার অধিকারটাও ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। ওরা যাদের কথা বলছে, তাদের তো ভগবানকে দেখারও অনুমতি নেই। তাই পঞ্চাশ বছর অপেক্ষা করা কি ত্রিশ বছর অপেক্ষা করা, কবে তারা নাস্তিক হয়ে উঠবে, এটা আমার মতে খুবই ভুল। এই ভুল পদক্ষেপটি করছে বামপন্থীরা, র‍্যাডিক্যাল বামপন্থীরা, এবং তথাকথিত দলিত কমিউনিস্টরা। তাই এই দেশের মানুষের আম্বেদকরের আম্বেদকর হয়ে ওঠার ইতিহাসটা জানা খুব দরকার।
আমি মহারাষ্ট্রের কথা বলছি, ওখানে আমার বাড়ি। ওই রাজ্যের ১৫ এপ্রিলের কাগজ পড়ুন। ১৪ এপ্রিল ডঃ বি আর আম্বেদকরের জয়ন্তী। দেখবেন, মহারাষ্ট্র, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থান সব জায়গায় আম্বেদকরের জয়ন্তীতে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার জন্য লোককে মারধোর করার খবর। দলিতদের বস্তি জ্বালিয়ে দেওয়ার খবর। দলিতদের গ্রাম জ্বালিয়ে দেবার খবর। এটা আজকের ব্যাপার নয়। এখন তো তাও খবরে আসে। আপনি যদি গ্রামে গ্রামে গিয়ে কথা বলেন, তাহলে শুনবেন, এই নিষ্ঠুরতার ইতিহাস বেশ লম্বা।
যাদের মন্দিরে গিয়ে দেবদর্শনের অনুমতি ছিল না। যাদের উচ্চবর্ণ যে রাস্তায় চলে সেই রাস্তায় চলার অনুমতি ছিল না। যাদের উচ্চবর্ণেরা যে স্কুলে পড়ে সেই স্কুলে যাওয়ার অনুমতি ছিল না। সেই সব মানুষ, যাদের কোনো পরিসর ছিল না, যাদের কোনো জমি ছিল না। এই সব লোক ইজ্জত চেয়েছিল। সম্ভ্রম চেয়েছিল। সেই সম্ভ্রম চেয়ে তারা  বি আর আম্বেদকরের সঙ্গে জুটেছিল। এবং ওই সম্ভ্রমের লক্ষ্যেই তারা বি আর আম্বেদকরের জন্য প্রাণ দিতেও প্রস্তুত হয়েছিল।
এই দেশে যখন বামপন্থীরা শ্রেণির কথা বলছিল, তখন এই দেশের দলিত বহুজন নিজেদের মৃত প্রতিমাগুলোকে মাটি থেকে তোলার চেষ্টা করছিল। সেই মৃত প্রতিমাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড়ো এই বি আর আম্বেদকর। সেই দিন থেকে শুরু করে এখনো পর্যন্ত দলিতদের ঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। প্রতি বছর ১৫ এপ্রিলের কাগজ খুলে দেখুন। আপনি উত্তরপ্রদেশের খবরের কাগজ পড়ুন, আপনি রাজস্থানের কাগজ পড়ুন, মহারাষ্ট্রের পড়ুন …। আপনি জানতে পারবেন, আম্বেদকর জয়ন্তী পালন করার জন্য কত দলিতকে মারা হয়েছে।
যে দলিতরা পড়তে লিখতে জানতো না, তারা মুম্বই-এর রাস্তায় ব্রিটিশ সরকারবিরোধী আন্দোলন করেছে। আমার বাবা যেমন, পড়তে লিখতে জানতো না। বাবা রিকশা চালাতো। আমার বাবার মতো লোকেরা ওই আন্দোলনের অংশ ছিল। তারাই আম্বেদকরকে গলি থেকে দিল্লিতে পাঠিয়েছে। ওই লোকেরা বলে, বাবাসাহেবের ওপর কারোর একচেটিয়া অধিকার নেই। আমি বলি, ঠিকই তো, নেই। কিন্তু এই কথা আপনারা গত ষাট বছরে একবারও বলেননি কেন? বাবাসাহেবের ওপর দলিত, ওবিসি, পিছিয়ে পড়া কারোরই কর্তৃত্ব চলে না, কিন্তু আপনারা কোথায় ছিলেন? এই দেশের আদিবাসী, এই দেশের পিছিয়ে পড়া অংশ, এই দেশের মুসলমান সবাই আপনাকে এই কথা জিজ্ঞেস করবে, যখনই আপনি এসব কথা বলবেন। ওরা আপনাকে জিজ্ঞেস করবে, হঠাৎ করে এই আলোকপ্রাপ্তির কারণ কি?
এই জন্যই তো আমি এখানে এসছি। দেশের দলিতরা তাদের ক্ষমতা বাড়িয়ে নিয়েছে। ওবিসিরা ক্ষমতা বানিয়ে নিয়েছে। আর আজকারল পিছিয়ে পড়া-রাও কথা বলছে। কী দুর্ভাগ্যের কথা, কিন্তু পিছিয়ে পড়া লোকেরাও আজ কথা বলছে। এরা ক্ষমতা বানিয়ে নিয়েছে। হতে পারে এদের কব্জায় ‘হিন্দু’ নামের কোনো পত্রিকা নেই, যেখানে জেএনইউ-এর কমরেডদের বড়ো বড়ো ছবি ছাপা হয়। হতে পারে এদের কাছে এনডিটিভি নেই, কোনো মিডিয়া নেই। হতে পারে এরা খুব সীমিত সামর্থ্যে এদের আন্দোলন চালায়। কিন্তু এদের জোর আছে। জোর আছে বলেই দেশের দক্ষিণপন্থীদেরও মানতে হয়েছে, বাবাসাহেব দেশের তো বটেই, দুনিয়ার সবচেয়ে বড়ো ইডিওলগ।
আমিও মানি বাবাসাহেব দুনিয়ার সবচেয়ে বড়ো ইডিওলগ। কারণ, দুনিয়ার ইতিহাস জানা সত্ত্বেও, ফরাসী বিপ্লব জানা সত্ত্বেও, রাশিয়ান বিপ্লব সম্পর্কে পড়াশোনা করা সত্ত্বেও, দুনিয়ার সাহিত্য পড়া সত্ত্বেও যখন ড: বি আর আম্বেদকর ভারতের কথা বলেন, যখন ভারতের ইতিহাস জানার কথা বলেন, যখন এখানকার সমাজব্যবস্থা বোঝার কথা বলেন, এখানকার সমাজ ও ইতিহাসকে বুঝে যখন এই দেশকে এই দেশের মতো সমাধান দেন। তিনি এখানে ফরাসী বিপ্লব তুলে এনে দেননি। তাই আমি মনে করি, আম্বেদকর সবচেয়ে বড়ো ইডিওলগ।
আমাদের মহারাষ্ট্রে একটা কথা চালু আছে। জীবিত আম্বেদকরের চেয়ে মৃত আম্বেদকর বেশি বিপজ্জনক। কারণ মৃত আম্বেদকরকে বুকে টেনে নিয়ে তার জন্য জান দিয়েছে মহারাষ্ট্রের দলিত, দেশের দলিত। যখন মারাঠাওয়াড়া রায়ট হয়, কোশিরাম কাম্বলে-কে যখন মারা হয়, কেন মারা হয়েছিল? কারণ সে জয় ভীম জয় ভীম বলছিল। ওকে বলা হয়েছিল, তুই জয় ভীম বলা বন্ধ কর। ওকে জীবিত জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সংরক্ষণকে কেন্দ্র করে মহারাষ্ট্রের গলি থেকে শুরু করে মুম্বইয়ের রাস্তায় আন্দোলনের এক নতুন ইতিহাস রচনা হয়েছিল। এই ইতিহাস, এই রক্ত, এই লিপিগুলিই আম্বেদকরকে তুলেছে।

‘এক উচ্চবর্ণ যখন আমাদের দলিত গ্রামগুলোতে আগুন দিচ্ছে, আর এক উচ্চবর্ণ তখন আমাদের বাচনগুলো মেরে দিচ্ছে।’
তা নাহলে এই দেশে যেখানে দাস ক্যাপিটালের কথা হতো, আপনাদের এই বাংলায় তো আরো বেশি হতো, যেখানে উৎপাদনের কাঠামো নিয়ে কথা হতো, সেখানে বাবাসাহেব আমাদের দেশের উৎপাদনের কাঠামোটা তুলে ধরেছিলেন। দেশের দলিত আম্বেদকরের বই কিনতে লাগলো। এক বেলা না খেয়েও আম্বেদকরের বই কিনতে লাগলো। আমরা গরীব পরিবার। কিন্তু আমার মা-কে যদি আমি বলতাম, দশ টাকা দাও, আমি আম্বেদকরের বই কিনব, মা কখনো না করেননি।
এই দেশে গত ষাট বছর ধরে আম্বেদকরের লেখা বইগুলো, যেখানে এই দেশের চাপা পড়া ইতিহাসের কথা আছে, যেখানে এই দেশের চাপা পড়া অর্থনীতির কথা আছে। আম্বেদকরের অনেক বই আছে, প্রবন্ধ আছে। সুন্দর লেখা। আমি যখন বাবাসাহেবের লেখা পড়ি, আমার কখনো মনে হয় সে অর্থনীতিবিদ, কখনো মনে হয় সে সমাজতত্ত্ববিদ। গত ষাট বছর ধরে আম্বেদকরের লেখালেখিগুলোর কথা কেউ তোলেনি। যখন দেখা গেল এই লেখালেখিগুলো উঠে আসছে, যখন দেখা গেল এই লেখালেখিগুলো নিয়ে কথাবার্তা শুরু হচ্ছে, যখন দেখা গেল এই লেখালেখিগুলো এই রাষ্ট্রের চরিত্র বদলে দিতে পারে, ব্রাহ্মণ আর ঠাকুরদের রাষ্ট্রের চরিত্র, তখন এই দেশের উচ্চবর্ণের ইন্টেলেকচুয়ালরা ঘাবড়ে গেল।
এক উচ্চবর্ণ যখন আমাদের দলিত গ্রামগুলোতে আগুন দিচ্ছে, আর এক উচ্চবর্ণ তখন আমাদের বাচনগুলো মেরে দিচ্ছে। দলিত বহুজনের বাচন। যখনই আমাদের দেশের বামপন্থীরা শ্রেণির কথা বলেছে, তখনই আমাদের দেশের বামপন্থীরা দেশের বাস্তবতাকে আড়াল করার চেষ্টা করেছে। … যখনই দলিত বহুজন আন্দোলনের কথা উঠেছে, তারা এর কোনো না কোনো নেতিবাচক দিক তুলে ধরেছে। এই আন্দোলনগুলো সম্পর্কে নেতিবাচকভাবে কথা বলেছে। দলিত বহুজন আন্দোলনের কথা উঠলেই ওরা মায়াবতী দেখাবে। আমি বলি, আমাদের আমাদের আন্দোলনের নেতিবাচক দিকগুলো নিয়ে আমরা যা করছি, তোমরা কখনো তোমাদের আন্দোলনের নেতিবাচক দিক নিয়ে সেরকম কিছু করেছ? আমাকে জেএনইউ বা অন্য কোনো কোথাকার কোনো এক বামপন্থী নেতাকে দেখান, যে সীতারাম ইয়েচুরিকে পাবলিক প্ল্যাটফর্মে সমালোচনা করতে পারে। রামদাস আটাওয়ালে রিপাবলিকান পার্টি অব ইন্ডিয়ার (মহারাষ্ট্রের দলিত পার্টি) অধ্যক্ষ ছিলেন। ওনাকে শ্রোতারা অনেকবার স্টেজ থেকে নামিয়ে পর্যন্ত দিয়েছে। আপনি এবার বলুন আপনার ইতিহাস। ১৯৫২ সালের লোকসভা নির্বাচনে আপনাদের ডাঙ্গে সেন্ট্রাল মুম্বই কনস্টিটুয়েন্সিতে আম্বেদকরকে ভোট না দিয়ে প্রয়োজনে ভোট নষ্ট করতে বলেছিলেন। উনি নির্বাচনে হেরে গিয়েছিলেন। লজ্জার ইতিহাস। আপনারা বাবাসাহেবকে বিচ্ছিন্নতাবাদী বলেছেন, কলোনিয়াল এজেন্ট বলেছেন। সবই তো লেখাজোখা আছে, যদি বিশ্বাস না হয়। আমি জিজ্ঞেস করছি, এদেশের দলিতরা তো তাদের নেতাদের ‘গদ্দার’ বলে স্টেজ থেকে নামিয়ে দিয়েছে বারবার। আপনারা জ্যোতি বসুকে কখনও স্টেজ থেকে নামিয়ে দিতে পারতেন? সবাই তো জানে, জ্যোতি বসুর আমলে দলিত মুসলমানদের কত না উন্নতি হয়েছিল! তাই আমি বলি, এদেশের উচ্চবর্ণের বামপন্থীদের কোনো নৈতিক অধিকার নেই দলিত বহুজন আন্দোলনের সমালোচনা করার।  …
আরেকটা কথা বাকি থেকে গেল। আপনারা বলেন, দেশের যত মিডিয়া, সব কর্পোরেট মিডিয়া। জানি না, কীভাবে দেশের কর্পোরেট মিডিয়া অ্যান্টি কর্পোরেট বামপন্থাকে জায়গা দেয়। কীভাবে তাকে হিরো বানায়। আমি বলি, দেশের মিডিয়া কর্পোরেট নয়। উচ্চবর্ণীয়। সেখানে ব্রাহ্মণ আর বানিয়ারা কব্জা করে রেখেছে সবকিছু। তাই দলিতদের রিপোর্ট কখন হয়? যখন দলিত মারা যায়। যখন দলিত সুইসাইড করে। …(অডিও অস্পষ্ট) কিন্তু তবুও সে দলিত থেকে যায়। আমি এই জন্য বলি যে মিডিয়া উচ্চবর্ণের, কারণ আমি জানি, আমাকে সেখানে দলিত নেতা হিসেবেই বলা হবে, চেনানো হবে। আম্বেদকরকে তো দলিত ইডিওলগ হিসেবেই দেখানো হয়। যদিও তিনি অর্থনীতি, রাজনীতি, ধর্ম — সব বিষয়েই লেখালেখি করেছিলেন। প্রায় সমস্ত ইস্যুর ওপরেই তিনি লিখেছেন। যা আজকের সময়ে খুবই প্রাসঙ্গিক।

বামপন্থী ও আম্বেদকরপন্থী ঐক্য প্রসঙ্গে
দ্বিতীয় কথা, আজকাল ঐক্য নিয়ে খুব কথাবার্তা হচ্ছে। আহ্বান জানানো হচ্ছে। চলো ঐক্য করা যাক, বলা হচ্ছে। দেশের বামপন্থীরা এই কথাটা খুব বলছে আজকাল। আম্বেদকরবাদীদের সঙ্গে ঐক্য। আমি জিজ্ঞেস করছি, আপনারা কোন ঐক্যের কথা বলছেন? প্রথমে তো জানা দরকার আম্বেদকরবাদ কী? আম্বেদকরবাদ মানে ঐ একটা বক্তৃতা নয়, যেটাতে আম্বেদকর বলেছিলেন, আমাদের দেশের দুটি শত্রু — ক্যাপিটালিজম এবং কংগ্রেস। তার পরেও বাবাসাহেব আরো অনেককিছু বলেছিলেন। তিনি আলাদা …(অডিও অস্পষ্ট) জন্য লড়াই করেছিলেন। তিনি আলাদা বসতির জন্য লড়াই করেছিলেন। এবং শেষ পর্যন্ত তিনি বৌদ্ধ হয়ে যান, এবং বৌদ্ধ হবার পর একটি দৃষ্টিভঙ্গীর কথা বলেছিলেন — প্রবুদ্ধ ভারত। এবার আপনারা বলুন, আপনি কি এই দৃষ্টিভঙ্গীর জন্য প্রস্তুত। এই হলো আম্বেদকরবাদ। নেবেন এই দৃষ্টিভঙ্গী? আমরা আম্বেদকরবাদীরা এই দৃষ্টিভঙ্গী মেনে চলি। কোনো ‘সাধারণ ন্যুনতম কর্মসূচী’তে চলবে না। আম্বেদকর মনে করতেন, এই দেশের ইতিহাস ব্রাহ্মণ্যবাদ আর বৌদ্ধ-র সংঘর্ষের ইতিহাস। তাই আম্বেদকরবাদ পরিপূর্ণভাবে সেটার মধ্যে সম্পৃক্ত। আমরা বিশ্বাস করি, রামদাসের স্বপ্ন, ফুলের …, (অডিও অস্পষ্ট) আর আম্বেদকরের প্রবুদ্ধ ভারত — এই নিয়েই আম্বেদকরবাদ। আমরা আম্বেদকরবাদ মানি। উচ্চবর্ণ বাম কি এই আম্বেদকরবাদকে মানে? তবেই ঐক্যের কথা আসতে পারে।
… জেএনইউ তে দুই ধরনের ডিপার্টমেন্ট আছে। সায়েন্স, আর সোস্যাল সায়েন্স। দুটোতেই উচ্চবর্ণের আধিপত্য। একটাতে আধিপত্য দক্ষিণপন্থী উচ্চবর্ণের। আরেকটাতে আধিপত্য বামপন্থী উচ্চবর্ণের। দুজনেই … (অডিও অস্পষ্ট) ইন্টারভিউতে দলিতদের শূণ্য দেয়। আমি তো দেখি সেখানে বামপন্থী আর দক্ষিণপন্থীর ঐক্য। কারণ আলাদা আলাদা, কিন্তু রেজাল্ট তো একই। রেজাল্ট যদি একই হয়, তাহলে তো বলব ঐক্য তোমাদেরই।  বেশিরভাগ দলিত আর আদিবাসী ছাত্র জেএনইউ-র পরীক্ষায় … (অডিও অস্পষ্ট)। … আর আজ সেই প্রফেসররা হিন্দু-তে বড়ো বড়ো আর্টিকল লিখছেন যে বাম আর আম্বেদকরপন্থীদের মধ্যে ঐক্য হয়ে গেছে। কী ধরনের ঐক্যর কথা বলছেন? ভাই, আমাদের যা সাংবিধানিক অধিকার, তা থেকে আমাদের দক্ষিণপন্থী বামপন্থী উভয়েই বঞ্চিত করছে। আর আপনি ঐক্যের কথা বলছেন? …(অডিও অস্পষ্ট) প্রথমে আপনি আপনার এলাকায় যান, আপনার হাভেলিতে যান, আপনার লোকজনদের শেখান। মানবতা শেখান তাদের, সম্ভ্রম শেখান তাদের, যারা এখনও গ্রামে দলিতদের ওপর অত্যাচার করে। … (অডিও অস্পষ্ট) যখন আপনি আপনার উচ্চবর্ণকে শিখিয়ে আসবেন এসব তখন ঐক্যের কথা বলতে আসবেন। ততদিন অবদি — কোনো ঐক্য নয়। …
দেশের আদিবাসী, দলিত, পিছিয়ে পড়া আপনার সাথে ঐক্যের জন্য অপেক্ষা করে আর বসে নেই। ওই দিন চলে গেছে। সময় চলে গেছে। আপনারা তো দ্বিধায় ভোগেন, ‘সাবঅল্টার্নরা কি কথা বলতে পারে’? আমি বলি, সাবঅল্টার্নরা কথা বলতে পারে। এবং তারা কথা বলতে পারে সম্ভ্রমের সঙ্গে। আপনারা কি শোনার জন্য তৈরি? আপনারা তো কখনোই শুনতে চাননি। … (অডিও অস্পষ্ট) আমার তো মনে হয়, কমিউনিস্টরা এই দেশে শ্রেণির কথা এই জন্যই তোলে, যাতে তারা তাদের জাতগত সুবিধা ঢাকতে পারে।
আমি অরুন্ধতী রায়ের ‘অ্যানিহিলেশন অফ কাস্ট’ পড়তে চাই না। আমি ‘অ্যানিহিলেশন অফ কাস্ট’ পড়েছিলাম, যখন আমি ক্লাস এইটে পড়ি। ^২ … (অডিও অস্পষ্ট) আমি পড়তে চাই না সেইসব উচ্চবর্ণের লেখা, যারা নিপীড়িতদের নিয়ে কথা বলে। আমি সেইসব উচ্চবর্ণের লেখা পড়তে চাই, যারা নিজেদের সুবিধা নিয়ে কথা বলে। আমি জানতে চাই, অরুন্ধতী রায় কী সুবিধা ভোগ করেন। তার নিজের সুবিধাগুলো নিয়ে কথা বলা উচিত। তিনি বলেন, তার অর্থ কষ্টার্জিত অর্থ। কেন, বাকিদের তা নয় নাকি? … (অডিও অস্পষ্ট) আমি জানতে চাই উচ্চবর্ণের লোকেদের সুযোগসুবিধাগুলো। আমি আমাকে, আমার সমাজকে তাদের গবেষণা, তাদের গল্প উপন্যাস, তাদের বই-এর চরিত্র হিসেবে দেখতে চাই না। আমি জানতে চাই, আপনার বাবা কেমন লোক ছিল। আমি জানতে চাই, আপনার কটা স্কুল আছে, আর সেই সব স্কুলে কটা দলিত আদিবাসী বাচ্চা পড়ে। আমি জানতে চাই মিস রায়, আপনার মায়ের স্কুল তো বেশ বড়ো, সেই স্কুলে ক’জন দলিত আদিবাসী ছাত্র আছে। রামদাস আটওয়ালের ওপর আঙুল তোলার আগে, ওঠানো অবশ্যই দরকার, ওই উচ্চবর্ণেরা কি নিজেদের সুবিধার ওপর একটা কাহিনী লিখতে পারেন না? … (অডিও অস্পষ্ট)
… …
…
টীকা
১) আম্বেদকরপন্থীদের অনেক ইন্টারনেট প্রকাশনা আছে, যেমন, http://roundtableindia.co.in এতে রাহুল সোনপিম্পলে লেখেন।
২) ‘অ্যানিহিলেশন অফ কাস্ট’ বাবাসাহেব আম্বেদকরের একটি লিখিত ভাষণ, যা আদতে দেওয়া হয়নি, উদ্যোক্তারা বাতিল করে দিয়েছিল। পরে বই হয়ে বেরোয় এবং বহু ভাষায় অনূদিত হয়। সম্প্রতি ২০১৪ সালে সেই ভাষণটি পুনঃপ্রকাশ করে একটি প্রকাশনা সংস্থা, লেখিকা অরুন্ধতী রায়ের একটি দীর্ঘ ভূমিকা সহ।

মানবাধিকার আম্বেদকর, উচ্চবর্ণ, ঐক্য, দলিত, দলিত আন্দোলন, বহুজন, বামপন্থী, মহারাষ্ট্র, রাহুল সোনপিম্পলে

এই প্রতিবেদনটি প্রিন্ট করুন এই প্রতিবেদনটি প্রিন্ট করুন

Comments

  1. Amitava Dutta says

    April 27, 2018 at 9:29 pm

    Mr.Rahul,comunist/ambedkarist is a high altitude controversy.
    On present day,what is happening?Do you know?
    Reservation Reservation and Reservation.
    Education -no matter,Skill-no matter,family incame – no matter,work experience- no matter,age- no matter, Only matter is either SC/ST/OBC. I like to ask that,if one/two person get Government job the entire Dalit society would upgrade? There are much much eligible candidates can not select because he is from Gen. Category.although he/she is much more eligible.And this way a wall created between Indians. Some Dalit leader has occupied crores of property.by playing Dalit card.Y ou know better than
    Mr.Rahul, do you know, if someone get something free,he cannot evaluate.and ask more and more and more.
    Where as a far more skilled,eligible Gen.Cast candidate have to do hard work,and a less skilled SC/ST offered a huge salaried Govt.job without any struggle.
    Mr.Rahul can you say, Was it Babasaheb’s dream? Is it justified? This way the Dalit community Wii upgrade themselves?
    Mr.Rahul,I am sure that you say- Yes. Because you also like to get some thing free.And obviously, someone else is actually eligible for that.But he can’t get. He is Gen.Cast.
    And you? – SC/ST or OBC.So called Dalit .and this is the only ability.
    So,enjoy free gift Mr. Dalit.We the General Cast have only to watch
    From a distance.

    Reply
    • Sasim Kumar Barai says

      September 15, 2020 at 4:07 pm

      Mr. Dutta whatever you told in the name of argument, is just like rotten smell emitting from dampen grounds.
      What you mean by merit? You have no positive reply in this regard, what you told that is the meritless conventional long uttered words by the privileged class since thousands years. Let me define the term of merit, it is the out put you enjoyed generation after generation, cultural accumulation you have, socio-economic religious reservation you enjoyed. As non-producer class you enjoyed delicious food at the cost deprived classes’ labour and pain. Do you know how to grow food grain for your lavish life? You have education from Doon School, South Point School, who determined your merit? it is the effect of money, you heaped exploiting the lower classes and socially backward classes. Caste matters everywhere in India, since no dalit, no tribe has the monitory power to get such education by virtue of money and mussel power. Thousands of dalits are being killed in India, why they are killed, as the rest have merit? Thousands of doctors, engineers, pilots are passing out every year from private school, college, universities, how many of the have the requisite merit for entrance? They have money, they can purchase high degree by obtaining 20-30% marks at the basic level. Almost all of the Hon’ble Judges of High Courts and Supreme are from so-called higher classes/castes, as there is no reservation but do you know who are they? Probably not. 35-40% of the them are relatives of existing or former judges. If you have the power to say something against such nepotism, becoming vocal. You will definitely keep your mum tight. Yes, the so-called meritorious like you get such education by dint of accumulated money power. How the only Brahmani’s son becomes the purahit? Yes, caste is the basic factor for enjoying such reserved facilities? According caste structure you like Vivekananda is simply a sudra. Probably you might have knowledge how much Vivekanada had to face social stigma for being a sudra. On the property of earth everybody must have equal share, same kind of right your brothers, sisters have on your paternal property. Yes the sub-alterns have learnt now to speak now, but you have no patience or merit to hear. You have no willing power to know the plight of the backward classes as it has risk factors of loosing long enjoyed benefits. Don’t think only you will say and the rest will keep mum tight.

      Reply

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অনুসন্ধান করুন

সংবাদ মন্থন

  • ছিটমহল
  • মাতৃভূমি লোকাল

খবরের মাসিক সূচী

সম্পাদকীয়

নীমা তেনজিনদের স্বপ্ন কি সার্থক হবে ?

একটি রাজনৈতিক সুইসাইড নোট

এই বিভাগের আরও

দেশের খবর

নিজেদের চাষের খবর দিলেন, দিল্লির আন্দোলনের খবর নিলেন সরবেড়িয়ার চাষিরা

গ্রামে বাড়ছে অভাবী বিক্রি। কৃষক মান্ডির হ্যাপার চাইতে চাষির ভরসা কাছের আড়ৎ।

এই বিভাগের আরও

সংস্কৃতির হাল

ঘরে রাখা শস্যের বীজ ভালো আছে কিনা দেখে নেওয়া হয় ‘শস’ পাতার মধ্যে দিয়ে

সর্নস্থলের মাটি চুরি করে, জোর করে হিন্দু পরিচয় দিয়ে রামরাজত্ব চালানোয় বিরক্ত আদিবাসী সমাজ

এই বিভাগের আরও

খবরে দুনিয়া

মার্কিন মুলুকে নির্বাচন : বার্নি স্যান্ডার্সের প্রচারের একজন সমর্থকের সঙ্গে কিছু আলাপ, কয়েক মাস আগে

“আমরা কোনো সালাফি নই, আমরা একটা ভালো পরিবার” : ফ্রান্সে নিস-এর গির্জায় ছুরি-সন্ত্রাসী অভিবাসী যুবকের তিউনিশিয়ান মা

এই বিভাগের আরও

পথের খবর

পথচলতি জটলা থেকে প্ল্যাটফর্মের সভা – সব পথ মিলে যাচ্ছে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে- দিল্লির কৃষক জমায়েতে

কর্পোরেট চাকরি ছেড়ে এক অন্য জীবনের খোঁজে সংকেথ

এই বিভাগের আরও

মেটা

  • Log in
  • Entries feed
  • Comments feed
  • WordPress.org

সাম্প্রতিক মন্তব্য

  • Aindrila Banerjee on শিল্পাঞ্চলের দূষিত জল আর মানুষের ভিড়ে প্রমাদ গুনছে বরতি বিলের পাখিরা
  • Debanjan Bagchi on শিল্পাঞ্চলের দূষিত জল আর মানুষের ভিড়ে প্রমাদ গুনছে বরতি বিলের পাখিরা
  • Jiten on পথচলতি জটলা থেকে প্ল্যাটফর্মের সভা – সব পথ মিলে যাচ্ছে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে- দিল্লির কৃষক জমায়েতে
  • যোগিন on শিল্পাঞ্চলের দূষিত জল আর মানুষের ভিড়ে প্রমাদ গুনছে বরতি বিলের পাখিরা

ফোরাম

  • আড্ডা
  • বিষয়ের আলোচনা
  • সংবাদ সংলাপ
  • সাংগঠনিক আলাপ

লে-আউট সহায়তা

সংবাদমন্থন প্রিন্ট >>
 
নমুনা ল্যাটেক>>

songbadmanthanweb [at the rate] gmail.com · যোগাযোগ · দায়দায়িত্ব · Log in