অদিতি। কৃষ্ণনগর। ২৪ জানুয়ারি, ২০২১।#
‘এইবার চাকরিটা হয়ে গেলে’ আর ‘বিয়েটা এবার দিতেই হবে’র মাঝখানে যেসব মেয়েরা দাঁড়িয়ে আছে, দ্বিতীয়টার সাথে প্রতিনিয়ত লড়াই করে চলেছে প্রথমটায় পৌঁছবে ব’লে আর ফেরত পাচ্ছে ব্যর্থতা, তাদের জন্যে আমাদের দীর্ঘশ্বাস ছাড়া আছেই বা কী? তেমনি দীর্ঘশ্বাস দিয়ে এলাম গতকাল। এমন লক্ষ মেয়ের একজনকে। গত জানুয়ারির ঊনিশ কৃষ্ণনগর কারবালা মাঠে আফগারি পুলিশের মহিলা বিভাগের লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ৭১৫ জন মেয়ের মাঠপর্ব অনুষ্ঠিত হলো। উচ্চতার কারণে, ওজনের কারণে বাদ গেলো প্রচুর মেয়ে। নদিয়ার প্রান্তিক এক গ্রাম থেকে সুতপা তাদেরই একজন। ওর সাথে কথা বলে শুনলাম সব। লিখিত পরীক্ষায় খুব ভালো ভাবে পাশ করেও শুধুমাত্র উচ্চতায় ০.৪ সেন্টিমিটার কম পড়ে যাওয়ায় বাদ পড়ে গেলো। এতদিন ধরে দৌড়ঝাঁপের ব্যাপারটা প্র্যাকটিস করে আয়ত্তে এনে এইভাবে ছিটকে যাওয়ায় যথেষ্টই ভেঙে পড়েছে সে। কিন্তু তার দুঃখের ভাগ নিয়েছে আরো প্রায় দু’শো জন। যাদের অনেকে এই নিয়ে তিনবার পরীক্ষা দিয়ে পাশ করার পর উচ্চতায় দশমিক একটা সংখ্যায় খাটো হওয়ায় বাদ হয়ে গেছে। সুতপার দাবী, যদি এতো খেটে পরীক্ষা দিয়ে শেষমেশ এমন কঠিন নিয়মের জালে আটকে পড়তে হয় তাহলে এই নিয়মের কাজটি আগে ঘটিয়ে পরে পরীক্ষার ব্যাপারটি ঘটালে ভালো হয় না? একটা কাজ সুষ্ঠুভাবে করার জন্যে যদি দেহের মাপজোক, বোধবুদ্ধির থেকে বেশি দরকারি হয়, তাহলে সেই দৈহিক সক্ষমতার হিসেব-নিকেশ আগে করলেই হয়। তাহলে অন্তত তাদের পরীক্ষা দেওয়ার চাপটা কমে যায়। সুতপা তো একা নয়। পুলিশের প্রায় সমস্ত চাকরিতেই এমন একই ব্যবস্থা। এই নিয়মের বেড়াজালে হাজার হাজার মেয়ে এবং ছেলেরাও প্রত্যেকটা সিজনে বাদ পড়ে পরীক্ষায় পাশ করার পরেও। তবুও ভবিষ্যতে আমরা আশা রাখতে পারি নিয়মে কিছু বদল হবে। এবং তা এমন হাজার হাজার ছেলেমেয়েদের পক্ষেই যাবে।
Leave a Reply