• প্রথম পাতা
  • আন্দোলন
  • কৃষি ও গ্রাম
  • খবরে দুনিয়া
  • চলতে চলতে
  • পরিবেশ
  • শিক্ষা ও স্বাস্থ্য
  • শিল্প ও বাণিজ্য
  • নাবালকথা

সংবাদমন্থন

পাতি লোকের পাতি খবর

  • আমাদের কথা
    • যোগাযোগ
  • পত্রিকার কথা
    • পাক্ষিক কাগজ
    • জানুয়ারি ২০০৯ – এপ্রিল ২০১২
  • মন্থন সাময়িকী
    • মন্থন সাময়িকী নভেম্বর ডিসেম্বর ২০১৪
    • মন্থন সাময়িকী সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ২০১৪
    • সাম্প্রতিক সংখ্যাগুলি
    • সাম্প্রতিক পিডিএফ
    • পুরনো সংখ্যাগুলি
  • সংবাদ সংলাপ
  • বিষয়ের আলোচনা

ওস্তাগরের দলিজে কামধান্দার খোঁজে বিহার থেকে ফিরছেন শ্রমিকরা

September 7, 2020 admin Leave a Comment

মহম্মদ সালাম, হাজিরতন, মেটিয়াবুরুজ। ৬ সেপ্টেম্বর ২০২০।#

আয়রনের কাজের ফাঁকে। শোভন চক্রবর্তীর তোলা ছবি।

পঞ্চাশ বছর ধরে আমরা হাজিরতনে এখানে ইস্তিরির কাজ করছি। আগে আমার বড়োভাই মতিয়ুর রহমান ছিল, তারপর আমি এসেছি। আমি এসেছি বিয়াল্লিশ বছর। ইস্কুলে পড়তাম ফটকে (আকড়া ফটকে), সাতাত্তর সালে। খোলার চালের ইস্কুলে। খেতাম আর ঘুরতাম তখন। বড়োভাই এখন ঘরে আছে, বয়স হয়ে গেছে। গত বছর অবধি কাজ করেছে। এখানে আসাযাওয়া আছে। ধরে নাও, দশ-বারো বছর বয়সে হাজিরতনে এসেছি। প্রথমে একসঙ্গে ছিলাম। পরে আলাদা হয়ে গেছি। বড়োভাইয়ের ছেলেরা পীরডাঙায় কাজ করে।

সমস্তিপুর জেলার কসৌর গ্রামে আমাদের ঘর। বড়োভাইকে এখানে এনেছিল ওর শ্বশুর। সে মরে গেছে। শ্বশুর আর শালারা এখানে থাকত। এখন কসৌরের পঞ্চাশ-ষাট আদমি এখানে আছে। সবাই আয়রনের কাজ করে।

লকডাউন হল। সমস্ত কামকাজ বন্ধ হয়ে গেল। ওস্তাগরলোগ চাল-ডাল দিল, আমরা খেলাম। পয়সাও কিছু দিয়েছিল। দু-হপ্তা দিল। কতদিন আর দেবে? দু-হপ্তা পর ঘর থেকে কিছু পয়সা আনিয়ে নিলাম। কিছুদিন চলল। তারপর আর পারলাম না। ঘরে গেলাম। আঠারোশো টাকা করে ভাড়া দিয়ে ছোটা হাতিতে করে গেলাম। গাড়িওয়ালা লালবাজার থেকে কাগজ বানিয়ে আনল। রাস্তায় পুলিশ আটকালে ওই কাগজ দেখানো হল। ঈদের দিন এখানে নামাজ পড়ে আমরা সন্ধ্যে নাগাদ বেরোলাম। পরেরদিন বিকেলে গ্রামে পৌঁছেছি। ঘরে যেতে দিল না। বারো রোজ আমাদের ইস্কুলে রাখা হল। ঘরের হালও খারাপ। তবে সরকার চাল-ডাল দিচ্ছিল।

গ্রামে তো কামধান্দা নেই। কারখানা-টানা নেই। খেতি থোড়াবহুত যা আছে তাতে আমাদের চলে না। সংসারে আমার আটজন। আমার তিন ছেলে। মহম্মদ আসলাম, মহম্মদ আসরাফ আর মহম্মদ নাসিম। সবাই আয়রনের কাজ করে। একজন আছে কারবালায়, একজন হাজিরতনে আর ছোটোজন আমার সঙ্গে এখানে। ঘরে থেকে লেখাপড়া তেমন করেনি। পড়তে পাঠালে খেলতে চলে যেত। তিনজন মেয়ে, সকলের শাদি হয়ে গেছে। দুই ছেলের বিয়ে হয়ে গেছে, ওদের বউরা ঘরে আছে। পোতা-পুতিও আছে।

আমি দুজন ওস্তাগরের (নতুন সেলাই করা জামাকাপড়) আয়রনের কাজ করি। এখানে কিরায়ায় থাকি, ওই জামানা থেকে বিশ রুপয়া ভাড়া ছিল। এখন চারশো টাকা ভাড়া। আমাদের আয়রনের কাজ হয় ফুরনে, ডজনের হিসাবে। এক-একজন বারোশো-পনেরোশো কামায়। আয়রনের কাজ কেউ করে মালিপাড়ায়, কেউ হাজিরতনে, কেউ বড়তলায়। বিহারের অনেক লোগ আছে এই কাজে। আমি প্রথমে কয়লার চুলায় আয়রন গরম করে কাজ করতাম, তারপর ইলেকট্রিক আয়রন এল। এখন চলছে মেশিন। আমার ছেলে নাসিম ওই মেশিনে কাজ করে, অনেক জলদি আয়রন হয়।

যারা গ্রামে গিয়েছিল অনেকেই ফিরে এসেছে। ওখানে কেউ কেউ রাস্তা বানানোর কাজ পেয়েছিল। ফেরার সময় রাতে একটা ছোটা হাতি ধরে সকালে পাটনা এলাম। ওখান থেকে ট্রেনে সকাল পাঁচটায় উঠে দুপুর দুটোয় হাওড়া পৌঁছালাম। নিজের পয়সায় রিজার্ভেশন করে এসেছি।

এখানে ফেরার পর মাঝে একদম কাজ ছিল না। এখন থোড়াবহুত আছে।



 

কথাবার্তার ফাঁকে। ছবি তুলেছেন শোভন চক্রবর্তী।

৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ মেটিয়াবুরুজের হাজিরতনের এক গোডাউনে আমি (জিতেন) আর শোভন কথা বলেছি চার যুবক বান্টিকুমার, কুনালকুমার, রুপেশকুমার আর কানহাইয়াকুমারের সঙ্গে। ওরা ওস্তাগরদের দলিজ থেকে ফুচরো বা ফুচরা সংগ্রহ করে। ওস্তাগরদের দলিজে পোশাক সেলাইয়ের পর বড়ো টুকরা কাপড় চলে যায় মেটিয়াবুরুজের টুকরাপট্টিতে। সেই টুকরা থেকে জামাকাপড়, ব্যাগ ইত্যাদি বানানো হয়। আর পড়ে থাকে এই ফুচরো বা ফুচরা। বিহারের মাধেপুরা জেলার ভারাইবাজার থেকে মেটিয়াবুরুজে এসেছে বান্টিকুমার। মাত্র এক বছর আগে ভাইয়া কুনালকুমার ওকে নিয়ে এসেছে। কুনালের এই কাজে দশ বছর হয়ে গেছে। ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ বছর আগে বড়তলায় আফিজুল নামে একজন প্রথম এসেছিল মাধেপুরা থেকে। তারপর একের পর এক অনেকে এসেছে। এরা চারজন মাধেপুরায় কাছাকাছি এলাকায় থাকে। এদের বক্তব্য এরকম :

আমাদের এখানে ফুচরার কাজ হয়। প্রত্যেক ওস্তাগরের ঘর থেকে খরিদ করে এখানে নিয়ে আসি ফুচরা। যেভাবে লোহালক্কর বিক্রি হয়, ওইভাবেই ওজন করে আমরা মাল কিনি। ওস্তাগরদের কাছ থেকে কাঁচা কাপড়ের কার্টুন নিয়ে আমরা বস্তা সেলাই করে মালটা ভরে নিই। তারপর আমরা কোম্পানির কাছে ওগুলো বেচে দিই। যেমন, অরবিন্দ শাহ একজন ডিলার। ওর পার্টি ধরা আছে, তারা ফ্যাকট্রিতে তুলো বানায়। মালদা, রানাঘাট, হাওড়াতে ফ্যাকট্রি আছে। সেই মেশিন সব জায়গায় আছে। আমেদাবাদ, দিল্লিতেও আছে। গদিতে যে রুই লাগে, এই ফুচরা থেকেই সেটা হয়। এখন আর গাছ থেকে রুই থোরি মেলে।

আমরা দশ-পনেরো দিন এখানে ফিরে এসেছি। মে মাসের দশ-বারো তারিখ নাগাদ আমরা এখান থেকে চলে গেছিলাম। ওস্তাগরদের ঘরে কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আমরা আর কাজ কোথা থেকে পাব? মাধেপুরার বিশ আদমি আমরা একটা ছোটা হাতিতে ঘরে গেছি। দু-হাজার টাকা ভাড়া নিয়েছে। ওস্তাগরদের কাছ থেকে কর্জ নিয়ে গেছি। পয়সা কামিয়ে ফেরত দেব। ওখানে যাওয়ার পর চৌদ্দ দিন কোয়ারান্টাইনে থাকতে হয়েছিল। বিহার সরকার খেতে দিয়েছিল।

লকডাউনের সময় যাদের অবস্থা কঠিন হয়েছিল, পয়সা ছিল না, খাওয়া জোটেনি। তারা ফিরে আসেনি। যারা ইস্তিরির কাজ করে, তাদের অনেকের অবস্থাও কঠিন হয়েছিল ওস্তাগররা এক মাস পর বলেছিল, আর কিছু দিতে পারব না।

এখানেই যে আসতে হবে সেটা জরুরি নয়। আমাদের ঘরে চার গার্জেন, কেউ এখানে কাজ করছে, কেউ অন্য জায়গায়, যেখানে আচ্ছা কাম মিলেছে, সেখানেই গেছে। যারা ফিরে আসেনি, মজদুরির কাজ করবে। সাড়ে তিনশো টাকা রোজ। হয়তো বিশ দিন পাবে, দশ দিন পাবে না। কী করবে?

আমরা পনেরো বছর ধরে এই লাইনে আছি, একটা তজরুবা হয়ে গেছে। যদি কাল আচ্ছা কাম কিছু পাই তো এটা ছেড়ে দেব। এক-একটা বস্তা সত্তর-আশি কেজি ওজন। আমরা ভ্যানে করে ওস্তাগরদের ঘর থেকে নিয়ে আসি, কোম্পানি লরিতে করে নিয়ে যায়। বয়স্ক লোক এই কাজ করতেই পারবে না। কেউ হয়তো এখান থেকে থোড়া পুঁজি বানিয়ে গ্রামে ছোটামোটা দোকান চালাচ্ছে।

হাজিরতনের এই জায়গাটা শুধু জমির হিসাবে বছরে পনেরো হাজার টাকা ভাড়া দিতে হয়। কামধান্দার ওপর মাসে পাঁচ হাজার থেকে দশ-বারো হাজার পর্যন্ত ইনকাম হয়। এখন কাজের পরিস্থিতি ভালো নয়। যারা বড়ো ওস্তাগর তাদের কিছু চলছে, ওরা ট্রান্সপোর্টে মাল লোড করে পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু মাঝের যারা তাদের অবস্থা এখনও খারাপ। আমরাও ধারদেনা করে চালাচ্ছি। কামাই হলে টাকা ফেরত দিয়ে দেব।

শিল্প ও বাণিজ্য ওস্তাগর, বিহারি শ্রমিক, মেটিয়াবুরুজ, লকডাউন

এই প্রতিবেদনটি প্রিন্ট করুন এই প্রতিবেদনটি প্রিন্ট করুন

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অনুসন্ধান করুন

সংবাদ মন্থন

  • ছিটমহল
  • মাতৃভূমি লোকাল

খবরের মাসিক সূচী

মেটা

  • Log in
  • Entries feed
  • Comments feed
  • WordPress.org

সাম্প্রতিক মন্তব্য

  • TG Roy on লোককবি গুরুদাস পালের আত্মজীবনী : জীবন ও শিল্প
  • Subrata Ghosh on স্বনির্ভরতায় উজ্জ্বল ‘শিশু কিশোর বিকাশ মেলা’
  • সুমিত চক্রবর্তী on ‘গুণগত মেশিন একটা মানুষকে মানসিক রোগী বানিয়ে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দিচ্ছে’
  • তীর্থরাজ ত্রিবেদী on লোককবি গুরুদাস পালের আত্মজীবনী : জীবন ও শিল্প

ফোরাম

  • আড্ডা
  • বিষয়ের আলোচনা
  • সংবাদ সংলাপ
  • সাংগঠনিক আলাপ

লে-আউট সহায়তা

সংবাদমন্থন প্রিন্ট >>
 
নমুনা ল্যাটেক>>

songbadmanthanweb [at the rate] gmail.com · যোগাযোগ · দায়দায়িত্ব · Log in