শমীক সরকার, ১৯ জুলাই#
কাশ্মীরে জনবিক্ষোভ থামছেই না। পুলিশ-সিআরপিএফ তো বটেই, টহলদার সেনাবাহিনীকেও বিক্ষোভ দেখাচ্ছে মানুষ।
সোমবার ১৮ জুলাই দক্ষিণ কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলার কাজিগান্দ-এর চুরহাট এলাকায় সেনাবাহিনীর গুলিতে মারা গেছে একজন ৫৫ বছর বয়সী মহিলা সাইদা বেগম (স্বামীর নাম ঘুলাম হাসান মির)। একজন ২৫ বছর বয়সী যুবকও মারা গেছে, নাম শওকত আহমেদ ইট্টু (বাবার নাম ঘুলাম হাসান)। আহত সাতজন, তাদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। কী ঘটনা পরম্পরায় এই গুলিচালনা, তা জানা যায়নি। কাজিগান্দ হাসপাতালে চিকিৎসাধীনদের এক আত্মীয়ের কথা অনুযায়ী, নিরস্ত্র প্রতিবাদের ওপর গুলি চালিয়েছে মিলিটারি। ঘটনাস্থলেই কপালে গুলি লেগে মারা যায় সাইদা বেগম। যুবকটি হাসপাতালে মারা যায়।
আর্মি সূত্রে একটি বার্তায় জানানো হয়েছে, একটি আর্মি পেট্রোল পার্টি দেবসারের দিকে যাওয়ার পথে চুরহাটের ব্যারিকেড সরাচ্ছিল। এই সময় দু-দিক থেকে ব্যাপক পাথর ছোঁড়া হয় তাদের লক্ষ্য করে। আর্মি তাদের সরে যেতে বলে। কিন্তু না সরে গিয়ে তাদের কেউ কেউ আর্মির হাত থেকে রাইফেল ছিনতাই-এর চেষ্টা করে এবং তাদের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেবার চেষ্টা করে। প্রাণ বাঁচাতে এবং সেখান থেকে পালিয়ে আসার জন্য আর্মি গুলি চালায়।
ওয়ানির মৃত্যুর পর এই নিয়ে দশ দিন ধরে চলা বিক্ষোভে কাশ্মীরে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ৪৬। যার মধ্যে দু-জন মহিলা। আহত দু-হাজারের ওপর। অন্তত একশো নব্বই জনের অবস্থা সঙীন।
১৭ জুলাই রবিবারও সেনাবাহিনী গুলি চালায় প্রতিবাদী জনতার ওপর। বান্দেপোরার সাদেরকোট গ্রামে সেনাবাহিনী গুলি চালালে তিনজন জখম হয়। পুলিশের বয়ান, মানুষ ওই গ্রামে অবস্থিত সেনাবাহিনীর ঘাঁটিতে হামলা চালানোর চেষ্টা করেছিল বলে তাদের ওপর গুলি চালানো হয়। সাংবাদিকদের চলাচলের ওপর প্রশাসনিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ হওয়ায়, এবং ইন্টারনেট মোবাইল ইত্যাদি সমস্ত রকম যোগাযোগের বন্দোবস্ত নিষিদ্ধ হয়ে যাওয়ায় গ্রামবাসীদের বয়ান পাওয়া যায়নি। এছাড়াও বারামুল্লার কুনজের এবং শ্রীনগরের ইদগাহ-তে বিক্ষোভ সংগঠিত হয়েছে।
এদিকে কেন্দ্র সরকার কাশ্মীরে আরো ২০০০ সিআরপিএফ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। উল্লেখ্য, গত সপ্তাহে ২৮০০ সিআরপিএফ পাঠানো হয়েছিল।
মোবাইল ইন্টারনেট, ব্রডব্যান্ড, মোবাইলের পর ল্যান্ডলাইন সংযোগও বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। সোমবারও কোনো সংবাদপত্র প্রকশিত হয়নি কাশ্মীরে। কাশ্মীরের ১০টি জেলা জুড়েই কার্ফু বলবৎ থাকছে।
এদিকে সোমবার সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং কাশ্মীরের ভাগ্য নির্ধারনে গণভোটের দাবি ‘সেকেলে’ বলে নাকচ করে দিয়েছেন। চীন কাশ্মীরের ঘটনায় উদ্বেগ ব্যক্ত করেছে।
কাশ্মীরের মানবাধিকার সংগঠন ‘জম্মু কাশ্মীর কোয়ালিশন অব সিভিল সোসাইটি’-র পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনারকে একটি চিঠি দিয়ে নিম্নলিখিত দাবিগুলি জানানো হয়েছে রবিবার :
১) অবিলম্বে পেলেট বন্দুক ব্যবহার বন্ধ ও নিষিদ্ধ করতে হবে
২) আন্দোলনকারী নাগরিকদের বিরুদ্ধে তাজা গোলা-বারুদ ও প্রাণনাশক অস্ত্র ব্যবহার এখুনি বন্ধ ও সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে
৩) চিকিৎসা পরিসেবার ওপর যে কোনও ধরণের হামলা বন্ধ করতে হবে এবং জম্মু কাশ্মীরের কোনও হাসপাতাল চত্বরে রাজ্য পুলিশের আধিকারিকদের প্রবেশ রদ করতে হবে
৪) অবিলম্বে বেআইনি কার্ফ্যু তুলে নিতে হবে এবং শান্তিপুর্ণ বিক্ষোভ, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া, স্মরণ অনুষ্ঠানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে হবে
৫) মোবাইল ফোন পরিষেবা এবং ইন্টারনেটের ওপর থেকে বেআইনি নিষেধাজ্ঞা এখুনি তুলে নিতে হবে
৬) সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা সুনিশ্চিত করতে হবে এবং এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে
৭) মানবাধিকার কাউন্সিলের বিশেষ প্রক্রিয়া এবং ইউনাইটেড নেশনের মানবাধিকার বিষয়ক উচ্চ কমিশনারকে জম্মু কাশ্মীরে অবিলম্বে অবাধ প্রবেশাধিকার দিতে হবে
৮) তথ্য সংগ্রহের জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বিশেষত যেগুলি ইতিমধ্যে জম্মু কাশ্মীরে আছে/কাজ করছে যেমন ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অফ দ্য রেড ক্রস, মেডিসিন সাঁস ফ্রন্টিয়ারস এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল– এদের অবিলম্বে প্রবেশাধিকার দিতে হবে
৯) রাজ্য পুলিশের দ্বারা সংঘটিত প্রতিটি হিংসার ঘটনার (চিকিৎসা পরিষেবার ওপর হিংসাসহ) বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করতে হবে এবং এইসব মামলার প্রচার করতে হবে এবং তদন্ত করতে হবে
১০) হিংসার বলি মানুষদের অবিলম্বে ক্ষতিপূরণ বাবদ অর্থ প্রদান করতে হবে
দাবিসনদ অনুবাদ : কৌশিক মুখার্জি
Leave a Reply