অলকেশ মণ্ডল, বীরগঞ্জ, নেপাল, ৩ নভেম্বর#

নেপালে আড়াই মাস ধরে বনধ্ চলছে। এই বিষয়ে সংবাদ মন্থনে দুবার রিপোর্ট দিয়েছিলাম। আগ্রহীরা পড়ে নিতে পারেন। মধেসী জনগণ যাঁরা তরাই অঞ্চলের বাসিন্দা তাঁরা নেপালের নতুন সংবিধানের বিরোধিতায় এই বন্ধের সমর্থনে রাস্তায় নেমেছেন। নতুন সংবিধানের তাঁদের নাগরিক অধিকার আরো খর্ব করা হয়েছে বলে বলা হচ্ছে। আন্দোলনকারীরা ভারত লাগোয়া সমস্ত রাস্তা মাসাধিক কাল অবরোধ করে রেখেছে।
ইতিমধ্যে নতুন রাষ্ট্রপতি হিসাবে একজন মধেসী মহিলা শপথ নিয়েছেন। কিন্তু অবস্থা তথৈবচ। স্থানে স্থানে তাই রাষ্ট্রপতি বিদ্যা দেবী ভাণ্ডারীর কুশপুতুলও পোড়ানো চলছে। মূল সমস্যা তেল ও গ্যাসের দুস্প্রাপ্যতা। ভারত দ্বারা অবরোধ হয়েছে এই দাবি করে নেপাল সরকার চীন থেকে তেল ও গ্যাস আমদানির প্রচেষ্টা করছে।
আজকে তাতপানি বর্ডার দিয়ে চীন থেকে তিন ট্যাঙ্কার পেট্রোলিয়াম পদার্থ এসেছে। মাঝে মাঝে ভারত বর্ডার থেকে পুলিশ প্রহরায় তেল ট্যাঙ্কার নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় তা যৎসামান্য। রাষ্ট্র যাতে পরনির্ভরতা কাটিয়ে স্বনির্ভর হতে পারে সর্বত্র তার চর্চা চলছে।
নেপালে গরিব মানুষের গ্যাস লাগে না। কিন্তু বর্ডার এলাকায় গাড়ি না চললেও দেশের ভিতর সবরকমের গাড়ি চলছে। তরাইএ প্রয়োজন না হলে কেউ বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন না। প্রাইভেট কার ও তার ড্রাইভারের প্রয়োজন হচ্ছে না। তরাই এর সিমরা ও বদ্রীবাস এই দুই জায়গা থেকে পাহাড়ের দিকে বাস বা অন্য গাড়ি চলছে। কিন্তু যাতায়াতে আমজনতার নাভিশ্বাস উঠছে। গাড়িভাড়া দ্বিগুণ হয়েছে। তেল গ্যাস সহ সবকিছুর কালোবাজারি চলছে। স্থানীয় পরিবহনে ঘোড়ায় টানা টাঙ্গার গুরূত্ব আবার নতুন করে মানুষ উপলব্ধি করছে। যদিও ইলেক্ট্রনিক রিকশাও চলাচল করছে। কারখানাগুলোতে কাঁচামালের অভাবে কাজ বন্ধ। মানুষের জীবিকা অনিশ্চিত।
অনেকে ভারতে গিয়ে দিনমজুরি করে রোজগার করছে। চাকরীজীবিদের উৎসবের বোনাস তো দূর মাইনে বাকি পড়ছে। গত পরশু পুলিশ প্রহরায় বীরগঞ্জ বর্ডার দিয়ে কিছু ভারতীয় খালি ট্রাক নেপাল থেকে বের করা হয়েছে। আড়াই মাস আটকে থাকা ট্রাক ড্রাইভারদের খুশির চেহারা টিভিতে সবাই দেখেছে।
আবার দুঃখজনক ঘটনাও ঘটেছে গতকাল। রক্সৌল বীরগজ্ঞ বর্ডারে অবরোধকারীদের হঠাতে গিয়ে পুলিশ পাথরবৃষ্টি, লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাসের সাথে গুলিও চালিয়েছে। গুলিতে ২২ বছরের এক ভারতীয় নিরীহ যুবকের মৃত্যুতে অবস্থা আরো সঙ্গিন হয়েছে। দুপুর তিনটে থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি হয়েছে।
অবশ্য তার জন্য আন্দোলনকারীরা থেমে নেই। রাস্তার মোড়ে মোড়ে গাড়ির টায়ায় জ্বালিয়ে বিরোধ প্রদর্শন চলছে। পুলিশের সাথে পাথরবৃষ্টির বিনিময় চলছে। ভারতীয় নাগরিকের মৃত্যু বিষয়ে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীদ্বয় ফোনে বার্তালাপ করেছেন বলে খবর। তরাইএ বেশিরভাগ স্কুল কলেজ বন্ধ। বাজার আগুন। কাজ বন্ধ।
ব্যবসাদাররা না হয় তাদের লক্ষ কোটি টাকার লস কয়েকদিন বা কয়েকমাসে পুষিয়ে নেবেন। কিন্তু আমজনতার এই লোকসান কোনওদিন পূরণ হওয়া সম্ভব নয়।
বন্ধ-কারফিউ-অবরোধের কিছু ছবি। দশ কিলোমিটার হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছনোর পথে প্রতিবেদকের তোলা।
Leave a Reply