রঘু জানা ও শুভময় ভট্টাচার্য। কলকাতা। ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২০।#
গত ১৪ই সেপ্টেম্বর মোটর গাড়ির ধাক্কায় আহত সঞ্জীব দাস ( বয়স ৫৫ বছর) পিজি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেলেন আজ। তিনি বড় বাজারে একটা কাপড়ের দোকানে নিরাপত্তা কর্মী ছিলেন। কোভিড পরিস্থিতিতে নিউ আলিপুর থেকে বড় বাজার সাইকেলে যাতায়াত করতেন। কাজে যাবার পথে ফোর্ট উইলিয়াম চার নম্বর গেটের সামনে দুর্ঘটনা টা ঘটে। পুলিশ এখনও মোটর গাড়ি কে সনাক্ত করতে পারে নি এবং চালক অধরা। আবার আজই ছিল world car free day। এই দিনটির প্রতীকী উৎযাপনে ই.এম. বাইপাসে রাস্তায় কর্তব্যরত পুলিশের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হল আমাদের। কোভিড পরিস্থিতিতে বাইপাসে সাইকেল চালকের সংখ্যা খুব বেড়েছে। ফলে রাস্তার কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশের সমস্যা তীক্ষ্ণ হয়েছে। জোরে গাড়ি ছোটানোর জন্য লোকে বাইপাস ব্যবহার করে, আবার দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা থেকে কাজের খোঁজে শহরে আগত গরীব মানুষেরা নিরুপায় হয়ে সাইকেল বেছে নেয়। কাজ নেই, রোজগার নেই, হাতে পয়সা নেই। বিপর্যস্ত মানুষ গাড়িভাড়া জোগাড় করবে কীভাবে? তাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে, লজঝরে সাইকেল নিয়ে বেড়িয়ে পড়েছেন। সাইকেলের কলকব্জা দড়ি নতুবা তার দিয়ে বাঁধা। সাইকেলে টিউবের পরিবর্তে শুকনো কলা গাছ। তিরিশ চল্লিশ এমনকি পঞ্চাশ কিঃমিঃ দূর থেকে পরিবারের মুখে একমুঠো ভাত জোগাড়ের জন্য হার না মানা জেদে এরা কলকাতায় আসছেন। কিন্তু কলকাতা শহরে রাস্তা সাইকেল চালানোর জন্য নিরাপদ নয়। সাইকেলের জন্য আলাদা লেন নেই। ফলে রাস্তায় কর্মরত ট্রাফিক পুলিশের অবস্থা অমানবিক হয়ে পড়ছে। ট্রাফিক শৃঙ্খলা তারা রক্ষা করবেন কী করে ? বাইপাসে প্রস্তাবিত সাইকেল লেন বাতিল হয়েছে। মেট্রো রেলের কাজকর্মের জন্য রাস্তার অবস্থা অগোছালো। KMDA-এর সাম্প্রতিক ভাবনা অনুযায়ী জরুরিকালীন অস্থায়ী সাইকেল লেন কলকাতা পুলিশ বাতিল করেছে। অথচ ফাইন করে সাইকেল বন্ধ করার চেষ্টা অসফল হয়েছে। এই ফাইন রোজগারহীন মানুষদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি করছে। পুলিশের সঙ্গে বাদানুবাদ, ঝামেলা বাড়ছে। এদিকে রাস্তায় দাঁড়ানো ট্রাফিক পুলিশ , সে তো মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান। মানবিক বিবেক বোধ তার হারিয়ে যায় নি। এই বিবেক বোধে একজন এ এস আই তার সঙ্গে দাঁড়ানো এস আই এর মৌন সম্মতিতে বললেন, ” গতকাল এক সাইকেল আরোহীকে ধরলাম, তিনি রাস্তায় সাইকেল চালানো অবস্থায় ফোনে কথা বলছিলেন। তার মুখে শুনলাম দক্ষিণ বারাসত থেকে ভাঙ্গা রাস্তায় চল্লিশ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে তিনি কর্মস্থলের কাছাকাছি পৌঁছে জানতে পারেন যে কাজের বরাত বাতিল। লোক লাগবে না। খালি হাতে ফিরবেন কি করে। অন্য কোনো কাজের মরিয়া চেষ্টায় তিনি ফোনে ব্যস্ত ছিলেন। গরীব মানুষটিকে নিয়ম না মানার জন্য কি উপায়ে শাস্তি দিতে পারি! এদের কাছে জরিমানা চাইলে ভাঙ্গা সাইকেল জমা রেখে চলে যেতে চায়। কিন্তু এই সাইকেল তার কাছে বন্যার জলে ভেসে যাওয়ার মত খড়কুটো, সেটা কি কেড়ে নেওয়া চলে। বাইপাসে যতটুকু সার্ভিস রোড আছে সেটা ব্যবহারের জন্য উপদেশ দিই ।”
রাস্তায় দাঁড়ানো এই ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে লাল বাজারে ঠান্ডা ঘরে বসা পুলিশ কর্তার বোধবুদ্ধির বড় তফাৎ হয়ে যাচ্ছে। সারা বিশ্বের পরিবেশবিদ, পেশাদার নগর পরিকল্পনাকারীরা যখন সাইকেল পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য জোর দিচ্ছেন তখন কলকাতায় সাইকেল কে নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা বড়ই বেমানান। সাইকেল লেন কি শুধুই সাইকেল চালকদের সুবিধা দেবে ! পরশুদিন রাজারহাট নিউটাউনে একটা সাইকেল কর্মসূচিতে আলাপ হলো এক যুবক সাইক্লিষ্টের সাথে। নাম মৈনাক মুখার্জি। তিনি সাইকেল চালান আবার মোটর গাড়িও চালান। বললেন তিনি যখন সাইকেল চালান তখন মোটর গাড়ির জন্য অসুবিধা হয়। আশঙ্কায় থাকেন এই বুঝি দুর্ঘটনার শিকার হলেন। আবার গাড়ি যখন চালান তখন কোন কোন সাইকেল আরোহী এমন ভাবে সামনে চলে আসেন যে সামলানো দায় হয়ে পড়ে। সাইকেল লেন থাকলে উভয়ের সুবিধা হবে বলে ওনার মত। তাই দুর্ঘটনা কমানোর জন্য সাইকেল লেন অপরিহার্য। বহু মানুষের যানবাহনের উপায় হিসেবে সাইকেলকে গুরুত্ব দেওয়া এবং তার উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। World car free day তে আমরা কলকাতা শহরে জরুরি ভিত্তিতে সাইকেল লেন তৈরির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরছি।
Leave a Reply