• প্রথম পাতা
  • আন্দোলন
  • কৃষি ও গ্রাম
  • খবরে দুনিয়া
  • চলতে চলতে
  • পরিবেশ
  • শিক্ষা ও স্বাস্থ্য
  • শিল্প ও বাণিজ্য
  • নাবালকথা

সংবাদমন্থন

পাতি লোকের পাতি খবর

  • আমাদের কথা
    • যোগাযোগ
  • পত্রিকার কথা
    • পাক্ষিক কাগজ
    • জানুয়ারি ২০০৯ – এপ্রিল ২০১২
  • মন্থন সাময়িকী
    • মন্থন সাময়িকী নভেম্বর ডিসেম্বর ২০১৪
    • মন্থন সাময়িকী সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ২০১৪
    • সাম্প্রতিক সংখ্যাগুলি
    • সাম্প্রতিক পিডিএফ
    • ২০১২-র আগস্ট অব্দি
  • সংবাদ সংলাপ
  • বিষয়ের আলোচনা

গণতন্ত্রে বিচারব্যবস্থার সমালোচনা নাজায়েজ? অনমনীয় প্রশান্ত ভূষণকে দন্ড দিতে হিমশিম সুপ্রিম কোর্ট

August 21, 2020 admin 2 Comments

টুইট, সাক্ষাৎকার ও আদালতের রায় অনুবাদ করে সাজিয়ে দিয়েছেন জীতেন নন্দী। ২০ অগাস্ট, ২০২০।#

আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণের আদালত অবমাননার অভিযোগের ওপর ১৪ আগস্ট ২০২০ রায়ের ভিত্তিতে সাজা ঘোষণার কথা ছিল আজ। জাস্টিস অরুন মিশ্রের নেতৃত্বে তিন বিচারপতির একটি বেঞ্চ, সুপ্রিম কোর্ট ও প্রধান বিচারপতিদের বিরুদ্ধে প্রশান্ত ভূষণের সমালোচনামূলক টুইটকে আপত্তিকর বলে মেনে নিতে পরামর্শ দিয়ে আগামী ২৪ তারিখ অবধি সময় দিলেন বিবৃতি ফিরিয়ে নিতে। দুর্নীতিমুক্ত বিচারব্যবস্থার জন্য দীর্ঘ লড়াইয়ের শরিক ভূষণ অবশ্য তাঁর অবস্থানে অনড়ই থাকলেন। উল্লেখ্য, তেহলকা ম্যাগাজিনের ২০০৯ সালের সাক্ষাৎকারের বয়ানে প্রশান্ত ভূষণের ওপর আদালত অবমাননার অভিযোগে আর একটি মামলার পরবর্তী তারিখ ২৪ আগস্ট ২০২০।   

 

প্রশান্ত ভূষণ টুইটারে কী লিখেছিলেন

২৯ জুন ২০২০

প্রধান বিচারপতি রাজভবন নাগপুরের এক বিজেপি নেতার ৫০ লক্ষ টাকার মোটরসাইকেলে চেপে রয়েছেন, মাস্ক বা হেলমেট ছাড়া, এমন এক সময়ে যখন তিনি সুপ্রিম কোর্টকে লকডাউন করে রেখেছেন যার জন্য নাগরিকেরা বিচারের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

অভিযুক্ত কনটেমনার-২ টুইটার-কর্তৃপক্ষ আদালতের নির্দেশে এই টুইট ব্লক করে দেয়

২৭ জুন ২০২০

যখন ভবিষ্যতে ঐতিহাসিকেরা গত ৬ বছরের দিকে তাকিয়ে দেখবেন যে কীভাবে কোনো আনুষ্ঠানিক জরুরি অবস্থা ছাড়াই ভারতে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করা হয়েছে, বিশেষত তাঁরা এই ধ্বংসে সুপ্রিম কোর্টের ভূমিকা এবং আরও নির্দিষ্টভাবে সর্বশেষ ৪ জন প্রধান বিচারপতির ভূমিকা চিহ্নিত করবেন।

খোলাখুলি সমালোচনা কি গণতন্ত্রের স্বাস্থ্যের লক্ষণ নয়?

তেহলকা ম্যাগাজিনের ৫ সেপ্টেম্বর ২০০৯ সংখ্যায় সোমা চৌধুরি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণের একটি সাক্ষাৎকার নেন। সেখানে তাঁর বক্তব্যের কিছু প্রাসঙ্গিক অংশ :

  • জুডিসিয়াল অ্যাকাউন্টেবিলিটির প্রশ্নে তর্ক যেভাবে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে, সেক্ষেত্রে চরম মুহূর্তের কোনো ঘটনা কি সেই তর্ককে উসকে দিয়েছে?

এর জবাবে প্রশান্ত ভূষণ দুটি ঘটনার উল্লেখ করেন — ‘প্রধান বিচারপতি সভরওয়াল মামলা (যেখানে একটা অভিযোগ ছিল যে প্রধান বিচারপতি ওয়াই এস সভরওয়াল-এর অর্ডারে দিল্লির কমার্শিয়াল আউটলেটগুলি ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ সরাসরি তাঁর ছেলেদের সুবিধা করে দেয়, যাঁরা কিছু মল-ডেভলপারের পার্টনার ছিলেন) এবং গাজিয়াবাদের প্রভিডেন্ট ফান্ড দুর্নীতি। এই দুটি ঘটনা ব্যাপক মিডিয়ার নজরে এসেছিল। ২০০৬ সালের ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ভারতের বিচার ব্যবস্থা পুলিসের পরেই সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান।’

  • জুডিসিয়াল অ্যাকাউন্টেবিলিটি ক্যাম্পেনে আপনি কেন সামনের সারিতে আছেন?

প্রশান্ত ভূষণ : ‘আদালতগুলোতে বিচার ব্যবস্থার দুর্নীতি আমি বহু সময় ধরে দেখে আসছি। আমি জানি বাইরের নানা বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, কিন্তু সেগুলোর সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া কঠিন। হাইপ্রোফাইল ইমপিচমেন্টের চেষ্টা হয়েছে, যেমন, বিচারপতি রামস্বামী, বিচারপতি পুঞ্চি এবং বিচারপতি আনন্দের ক্ষেত্রে। যদিও এঁরা সকলেই প্রধান বিচারপতি হয়েছেন। আমার নজরে, সর্বশেষ ১৬ থেকে ১৭ জন প্রধান বিচারপতির মধ্যে অর্ধেক দুর্নীতিগ্রস্ত। আমি এটা প্রমাণ করতে পারব না, যদিও পুঞ্চি, আনন্দ এবং সভরওয়ালের বিরুদ্ধে প্রমাণ আমাদের কাছে ছিল, যার ভিত্তিতে আমরা ওঁদের ইমপিচমেন্ট চেয়েছিলাম।’    

  • বিচার ব্যবস্থার দুর্নীতি কি অন্যভাবেও প্রতিভাত হয়?

প্রশান্ত ভূষণ : ‘এরকম অনেক রয়েছে। বিচারপতি কাপাডিয়া উড়িষ্যার নিয়ামগিরিতে মাইনিং লিজের মামলায় সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, বেদান্ত লিজ পেতে পারে না, কারণ নরওয়ের সরকার ওদের ব্ল্যাকলিস্টেড করেছে। কিন্তু বেদান্তের সাবসিডিয়ারি কোম্পানি স্টারলাইট লিজ পেতে পারে, কারণ তারা সরকারি তালিকাভুক্ত কোম্পানি। বিচারপতি কাপাডিয়া এটাকে সরকারি তালিকাভুক্ত বলেছিলেন কারণ এই কোম্পানিতে ওঁর নিজের শেয়ার ছিল আর তাই তিনি স্টারলাইটের পক্ষে একটা অর্ডার পাশ করে দিলেন! যেখানে স্বার্থের সংঘাত রয়েছে সেক্ষেত্রে বিচারপতিদের মামলা শোনার বিষয়ে একটা আইন আছে। কিন্তু ওঁরা সেটা এড়িয়ে গেলেন এবং আপনি সেটা নিয়ে অভিযোগ করতে পারবেন না। কারণ সেক্ষেত্রে কনটেম্পট বা আদালত অবমাননা হয়ে যাবে।

১৪ আগস্ট ২০২০ আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণের আদালত অবমাননার অভিযোগের ওপর রায়ের কিছু অংশ :

১। প্রশান্ত ভূষণের টুইটারে মন্তব্যের ওপর মাহেক মাহেশ্বরী সুপ্রিম কোর্টের কাছে একটি আবেদন/পিটিশন করেন।

২। যেহেতু মাহেশ্বরী অ্যাটর্নি জেনারেলের অনুমোদন ছাড়াই এই পিটিশন করেছেন, আদালতের প্রশাসনিক বিভাগ বিচার বিভাগের কাছে এই আবেদন তালিকাভুক্ত করার জন্য নির্দেশ দেয়। ২২ জুলাই ২০২০ এই আবেদন বিচার বিভাগে আসে। বিচার বিভাগ এই আবেদন আদ্যপান্ত দেখে আদালত অবমাননাকারী হিসেবে অভিযুক্ত প্রশান্ত ভূষণ এবং টুইটার-কর্তৃপক্ষের ওপর অর্ডার দেওয়ার নির্দেশ দেয়। ৫ আগস্ট এটি লিস্টে আসে। আদালত অবমাননাকারী হিসেবে অভিযুক্ত প্রশান্ত ভূষণ ৪৬৩ পৃষ্ঠার অ্যানেক্সার সমেত ১৩৪ পৃষ্ঠার লিখিত জবাব পেশ করেন।

৩। প্রশান্ত ভূষণের পক্ষে লেখা হয় : ‘গণতন্ত্রের অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য হল জুডিসিয়ারি সহ সমস্ত প্রতিষ্ঠান নাগরিক এবং দেশের জনসাধারণের জন্য কাজ করে এবং যে কোনো প্রতিষ্ঠানের বিষয় নিয়ে তাদের মুক্ত ও অবাধ আলোচনার সম্পূর্ণ অধিকার রয়েছে এবং সেই প্রতিষ্ঠানের সংস্কারসাধনের জন্য জনমত গঠনের পূর্ণ অধিকার রয়েছে। … এছাড়া প্রধান বিচারপতি সুপ্রিম কোর্ট নয়। … যেহেতু মি. মাহেশ্বরীর পিটিশনের ওপর এই মামলা, এটা সুও মোটু কনটেম্পট পিটিশন হিসেবে নেওয়া যায় না। অ্যাটর্নি জেনারেলের অনুমোদন ছাড়া মাহেশ্বরীর অভিযোগের ভিত্তিতে প্রসিডিং শুরু করা যায় না।

৪। ২২ জুলাইয়ের অর্ডারের পর টুইটারের কর্তৃপক্ষ প্রশান্ত ভূষণের ওই টুইট দুটি ব্লক করে দেয়। ফলে অভিযুক্ত কনটেমনার-২ টুইটার-কর্তৃপক্ষকে এই মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

১০৮ পৃষ্ঠার এই অর্ডারে বিচারপতি অরুণ মিশ্র, বি আর গাভাই এবং কৃষ্ণ মুরারির পক্ষ থেকে রায় দেওয়া হয় :

৫। অভিযুক্ত কনটেমনার-১ নিজেই স্বীকার করেছেন, তিনি গত তিরিশ বছর ধরে সুপ্রিম কোর্ট এবং দিল্লি হাইকোর্টে প্র্যাকটিশ করছেন এবং আমাদের গণতন্ত্রের স্বাস্থ্য ও তার প্রতিষ্ঠান বিষয়ক বহু জনস্বার্থের ইস্যুতে হস্তক্ষেপ করেছেন, বিশেষত আমাদের বিচার ব্যবস্থার ক্রিয়াকলাপ এবং আরও নির্দিষ্টভাবে তার অ্যাকাউন্টেবিলিটির বিষয়ে। অভিযুক্ত কনটেমনার বিচার ব্যবস্থার পরিচালনের অংশ হওয়া সত্ত্বেও আইনের মর্যাদা রক্ষার পরিবর্তে তিনি এমন এক কাজে যুক্ত হলেন যা বিচার ব্যবস্থার পরিচালনের প্রতিষ্ঠানকে অসম্মান করার দিকে যায়। … অমার্জিত সব অভিযোগ, যা বিদ্বেষমূলক এবং যা আদালতকে কলঙ্কিত করার ঝোঁক সম্পন্ন, তা কখনোই ৩০ বছরের প্রতিষ্ঠিত একজন আইনজীবীর কাছ থেকে প্রত্যাশিত নয়। … এই টুইট ভারতীয় গণতন্ত্রের এই গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভের ভিতটাকেই নড়িয়ে দিতে পারে। টুইটটি স্পষ্টভাবে এমন এক ধারণা দিতে উদ্যত যা দেশের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক আদালত সুপ্রিম কোর্ট গত ছয় বছরে ভারতীয় গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার ক্ষেত্রে এক অত্যাবশ্যক ভূমিকা পালন করেছে। … আমাদের বিবেচনাপূর্ণ দৃষ্টিতে, এই টুইট ভারতের সুপ্রিম কোর্ট প্রতিষ্ঠানটি এবং প্রধান বিচারপতির মর্যাদা ও কর্তৃত্বের হানি ঘটিয়েছে এবং আইনের মর্যাদাকে সরাসরি মুখের ওপর অপমান করেছে। … যারা নির্ভয়, পক্ষপাতহীন এবং অনমনীয় বিচারের উচ্চ মান বজায় রাখতে চায়, তাদের শক্তভাবে দাঁড়াতে হবে। যদি যথাযথ দৃঢ়তা নিয়ে এই ধরনের আক্রমণের মোকাবিলা না করা হয়, তাহলে তা হয়তো বিভিন্ন জাতির মধ্যে পরস্পরের আইন ও আচারব্যবহারের সৌজন্যমূলক স্বীকৃতির ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় সম্মান ও মর্যাদার ক্ষতি করতে পারে। নির্ভয় এবং পক্ষপাতহীন বিচারের আদালতগুলি এক স্বাস্থ্যকর গণতন্ত্রের প্রাকার এবং তাদের ওপর বিদ্বেষমূলক আক্রমণের দ্বারা তাদের ওপর আস্থাকে দুর্বল করে দেওয়ার অনুমোদন দেওয়া যেতে পারে না। … টুইটগুলি যে বিকৃত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে করা হয়েছে, আমাদের বিবেচনায় তা ‘অপরাধমূলক অবমাননা’র কাজের সমতুল্য।

সারা দেশ জুড়ে ১৮০০-র বেশি আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিং বলেছেন, ‘বাকস্বাধীনতার জন্য খারাপ খবর’।

 

Uncategorized টুইটার বিতর্ক, প্রধান বিচারপতি, বাক স্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সুপ্রিম কোর্ট

এই প্রতিবেদনটি প্রিন্ট করুন এই প্রতিবেদনটি প্রিন্ট করুন

Comments

  1. Surajit Banerjee says

    August 22, 2020 at 2:03 am

    সাল ১৯১৭। ১৪৪ ধারা লাগিয়ে চম্পারণে গান্ধীর প্রবেশ নিষিদ্ধ করল ভয়ভীত ব্রিটিশ সরকার। কিন্তু গান্ধী এর পরোয়া না করে চম্পারণে যান। মামলা কোর্টে উঠলো। গান্ধী বললেন, আমি আমার অন্তর্আত্মার কথা শুনে নীলচাষে মার খাওয়া চাষিদের কথা শুনতে চম্পারণে গিয়েছিলাম। আমি নিশ্চয়ই আপনাদের আইন ভঙ্গ করেছি। আপনি হয়তো আপনার দৃষ্টিকোণ থেকে ঠিক হতে পারেন, কিন্তু আমি ঠিক তা-ই করেছি যা আমার অন্তর্আত্মা আমাকে করতে বলেছে। তা সত্ত্বেও আমি আপনার রায় মাথা পেতে নেব, কিন্তু আমি ক্ষমা চাইবো না।
    ১০৩ বছর বাদে স্বাধীন ভারতের স্বাধীন সংবিধানের প্রধান রক্ষক এবং গণতন্ত্রের অন্তিম মন্দির-মসজিদ-গির্জা বলা হয় যাকে সেই সুপ্রিম কোর্টের সম্মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছেন এক নির্ভিক ব্যক্তি—প্রশান্ত ভূষণ। তিনি সম্ভবত গান্ধী নন; কিন্তু কিছুটা গান্ধী তাঁর রক্তেও নিশ্চয়ই বয়। অরুণ মিশ্রার নেতূত্বে তিন বিচারকের বেঞ্চ বলে ওঠে— ক্ষমা চেয়ে নাও—আমরা তোমাকে বাইজ্জৎ খালাশ করে দেব। গান্ধীর মতই অনড় তিনি। বললেন, ‘কর্তব্য পালন করেছি; আমি ক্ষমা চাইবো না; কিন্তু আপনারা যে শাস্তি দেবেন তা মাথা পেতে নেব।’
    প্রসঙ্গত, বাড়তি কোনো সময় দাবি না করা সত্ত্বে, সর্বোচ্চ আদালত এই বলে বর্তমান শুনানি (২১ আগস্ট) ২৪-২৫ তারিখ অব্দি পিছিয়ে দেন যে ভূষণ চাইলে ২৪ আগস্টের মধ্যে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে পারেন; যদি ক্ষমা চান তবে তা বিবেচনা করার জন্য ২৫ আগস্ট শুনানি হবে। এই সময় আদালত ভূষণকে দিলেন না নিজেদের দিলেন—এই প্রশ্ন থেকে যায়। মনে হয় আদালত চম্পারণের সেই স্থানীয় আদালতের মতই বেশ ঘাবড়ে গেছে।
    গত ত্রিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে হাই কোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টে প্র্যাক্টিস করে চলেছেন প্রশান্ত ভূষণ। শুনলেই বিশাল ক্ষমতাবান এবং পয়সাওয়ালা লোক বলে মনে হয়। সাধারণত সুপ্রিম কোর্টের উকিলের ফি প্রতি শুনানি পিছু ১১ থেকে ৫০ লাখ। কিন্তু ভূষণকে বলা যায়, যাকে বলে ‘থোড়া হটকে’। বহু জনস্বার্থ মামলা তিনি লড়েছেন কোনো ফি না নিয়েই। টু জি, কোল ব্লক, মাইনিং-এর মতো সরকার বিরোধি মামলা সুপ্রিম কোর্টে লড়ে জনস্বার্থের পক্ষে রায় হাসিল করেন। বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী কেয়ার্স ফান্ডকে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা তহবিলে স্থানান্তর করা হোক এই দাবির হয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে একটি জনস্বার্থ মামলার পক্ষ হয়ে লড়াই করেছেন তিনি। ইলেক্টোরাল বন্ড স্কিমকে চ্যালেঞ্জ জানানো অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্র্যাটিক রিফর্মস-এর হয়েও ওকালতি করছেন। ৯০ সাল থেকে তিনি জুডিশিয়ল অ্যাকন্ট্যাবিলিটি নিয়ে আন্দোলনে রত। কাশ্মীর থেক ৩৭০ ধারা বিলোপ এবং সিএএ আইনের বৈধতা নিয়ে কড়া সওয়াল করছেন সুপ্রিম কোর্টে। এই রকম বহু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নকে হিয়ারিং-এ না এনে কোর্ট যে এ-রকম বিচারে সময় নষ্ট করছে; এ দেখে সুপ্রিম কোর্টের প্রতি আস্থা রাখা মুশকিল হয়ে পড়ে।
    সকলেই জানেন, গত ১৪ আগস্ট, আদালত অবমাননার দায়ে এই প্রবীণ আইনজীবীকে দোষী সাব্যস্ত করেছে সুপ্রিমকোর্ট। কারণ তাঁর দু’টি টুইট। প্রথম টুইট: ভবিষ্যতে ইতিহাসবিদরা যখন গত ছ’বছরের দিকে ফিরে তাকাবেন, তখন দেখবেন জরুরি অবস্থা না হলেও কীভাবে দেশের গণতন্ত্র ধ্বংস করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের ভূমিকা ও চার জন বিচারপতির ভূমিকাটিও তাঁরা বিশেষভাবে চিহ্নিত করতে পারবেন। দ্বিতীয় টুইটে তিনি সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এস এ বোবদের হার্লে ডেভিডসন বাইকে চড়ার ছবি নিয়ে লেখেন, এমন একটা সংকটের সময় প্রধান বিচারপতি মাস্ক ও হেলমেট না পরে বাইকে চড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন৷ অথচ এই লকডাউনে দেশের নাগরিকরা বিচার পাচ্ছেন না। মাস্ক না পড়ে থাকলে সাধারণ মানুষকে পুলিশের কাছে কীরকম অপদস্থ হতে হয়—এ বলা বাহুল্য। অথচ প্রধান বিচারপতি মাস্ক না পড়ে থাকলে অভিযোগকর্তাকে আদালত অবমাননার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হতে হয়। সাবাস কোর্ট—সব নাগরিকের জন্য আইন নাকি সামান!

    Reply
  2. Surajit Banerjee says

    August 24, 2020 at 1:29 pm

    যা সাজা দিতে চাও, দাও; কিন্তু ক্ষমা আমি চাইব না: প্রশান্ত ভূষণ

    নাম প্রশান্ত ভূষণ, এক নির্ভীক প্রবীণ উকিল। ২০০৯ সালে এক সাক্ষাৎকারে বললেন, আগের ১৬ জন প্রধানবিচারপতির অর্ধেকই আচরণে নীতিনিষ্ঠ ছিল না। প্রাক্তন দুই প্রধানবিচারপতি এস.এইচ. কাপাদিয়া এবং কে. জি. বালাকৃষ্ণানের নামও নিলেন সরাসরি। তেলেবেগুনে জ্বলে উঠল সর্বোচ্চ আদালত। যত বড় মুখ নয় তত বড় কথা! রীতিনীতির বালাই নেই এমন রাজার মতো আদালত ডেকে পাঠাল ভূষণকে সেই বছরেরই শেষে। সর্বোচ্চ আদালতের একটা মর্যাদা আছে; তোমার এই কথায় আদালতের অপমান বা অবমাননা হয়েছে; আদালতের প্রতি জনগণের শ্রদ্ধায় চিড় ধরেছে। তা ২০০৯ সাল থেকে থেকে-থেকে এই মামলা চলতে থাকে, এবং ২০১২-র পর এর কোনো শুনানি হয়নি।
    চলতি বছরের ২৭ জুন, যাকে সোশাল মিডিয়ায় টুইটার বলা হয়, সেখানে প্রশান্ত ভূষণ একট টিপ্পনী বা টুইট করেন। তিন বললেন, “ভবিষ্যতে ইতিহাসবিদরা যখন গত ছ-বছরের দিকে ফিরে তাকাবেন, তখন দেখবেন জরুরি অবস্থা (যাকে এমার্জেন্সিও বলা হয়; ২৫ জুন, ১৯৭৫ থেকে ২১ মার্চ, ১৯৭৭ পর্যন্ত ২১ মাসব্যাপী ভারতের জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছিলেন ভারতের তদনীন্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী) না হলেও কীভাবে দেশের গণতন্ত্র ধ্বংস করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের ভূমিকা ও চার জন বিচারপতির ভূমিকাটিও তাঁরা বিশেষভাবে চিহ্নিত করতে পারবেন।” বুকের পাটা আছে বটে এই লোকটার। ২০০৯ সাল থেকে চলছে আদালত অবমাননা মামলা। তাও সত্যের প্রতি তাঁর এই আগ্রহ।
    দু-দিন না যেতেই, ২৭ জুন আরেকটি টিপ্পনীতে তিনি সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এস এ বোবদের ৫০ লাখের বাইকে চড়ার ছবি নিয়ে লেখেন, “এমন একটা সংকটের সময় প্রধান বিচারপতি মাস্ক ও হেলমেট না পরে বাইকে চড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন৷ অথচ এই লকডাউনে দেশের নাগরিকরা বিচার পাচ্ছেন না।” মাস্ক না পড়ে রাস্তায় বেরোলে সাধারণ মানুষকে পুলিশের হাতে কীরকম হেনস্থা হতে হয়—এ সবাই জানে। অথচ প্রধান বিচারপতি যে মাস্ক পড়ে নেই—এর কোনো বিচার নেই; অথচ নাকি বলা হয়, আইনের চোখে সবাই সমান!
    এখন করোনা চলছে। দেশ মায় বিশ্ব এ নিয়ে পেরেশান। কোর্ট চত্বর ফাঁকা; ছুটি চলছে। শুধু কিছু অত্যন্ত জরুরি মামলা কম্পিউটার যন্ত্রের সাহায্যে চলছে, যা না চললেই নয়। এই রকম অবস্থায় ডাক পড়ল প্রশান্ত ভূষণের। এই দুই টিপ্পনীতে আদালত অবমাননা হয়েছে। আদালতের মনে হল এর চেয়ে জরুরি আর কী আছে। দায়ের হল নতুন মামলা, তারিখ ২২ জুলাই। সঙ্গে জুড়ল ২০১২ সাল থেকে আজ অবধি কোনো শুনানি হয়নি সেই ২০০৯ সালের আদালত অবমাননা মামলা। যে দ্রুততার সঙ্গে এই পালা চলল তা এই দেশের বিচারব্যবস্থায় বেনজীর। এমনকী ২২ জুলাই যেভাবে মামলা দায়ের হল তাও নিয়ম-নীতি মেনে হয়নি। অরুণ মিশ্র সহ তিন জজ নিয়ে তৈরি হল বেঞ্চ, যাঁরা শুনানি করবেন ও রায় দেবেন।
    ১৪ আগস্ট। মামলা দায়েরের মাত্র ২৪ দিন পর। জজেরা বললেন, প্রশান্ত ভূষণ দোষী। সাজা ঘোষণার বিষয়টি ২০ আগস্ট অবধি মুলতবী থাকল। ভূষণের সত্যের আগ্রহে করা অভিযোগগুলিকে আদালত অবমাননা হিসেবে যেভাবে দেখছেন জজেরা, তা একদিকে যেমন বেমানানভাবে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখছেন বলে মনে হয়, অপরদিকে এক স্বাধীন গণতান্ত্রিক দেশে নাগরিক-স্বার্থের কোনো রকম ধার ধারে না এমন রাজা-মহারাজা-ব্রিটিশদের আমলের কথা মনে করিয়ে দেয়।
    সাল ১৯১৭। ১০৩ বছর আগেকার কথা। নীলচাষে নাকাল চম্পারণ জেলার গ্রামের পর গ্রাম। ১৪৪ ধারা লাগিয়ে চম্পারণে গান্ধীর প্রবেশ নিষিদ্ধ করল ভয় খাওয়া ব্রিটিশ সরকার। গান্ধী এর পরোয়া করবে, সে-রকম বান্দা তিনি নন। চম্পারণে গেলেন। যথারীতি মামলা কোর্টে উঠল। গান্ধী বললেন, আমি আমার অন্তর্আত্মার কথা শুনে নীলচাষে মার খাওয়া চাষিদের কথা শুনতে চম্পারণে গিয়েছিলাম। আমি নিশ্চয়ই আপনাদের আইন ভঙ্গ করেছি। আপনি হয়তো আপনার দৃষ্টিকোণ থেকে ঠিক হতে পারেন, কিন্তু আমি ঠিক তা-ই করেছি যা আমার অন্তর্আত্মা আমাকে করতে বলেছে। তা সত্ত্বেও আমি আপনার রায় মাথা পেতে নেব, কিন্তু ক্ষমা আমি চাইব না।
    ২০ আগস্ট, ২০২০। আশ্চর্য, এখানে আইন ভঙ্গও হয়নি! স্বাধীন ভারতের স্বাধীন সংবিধানের প্রধান রক্ষাকর্তা এবং গণতন্ত্রের পবিত্রতম মন্দির-মসজিদ-গির্জা বলা হয় যাকে সেই সুপ্রিম কোর্টের সামনে দাঁড়িয়ে সংবিধানের দেওয়া মুক্তমনে কথা বলার অধিকার বুকে নিয়ে এক নির্ভীক ব্যক্তি—প্রশান্ত ভূষণ। তিনি সম্ভবত গান্ধী নন; কিন্তু কিছুটা গান্ধী তাঁর রক্তেও নিশ্চয়ই বয়। অরুণ মিশ্রর নেতৃত্বে তিন বিচারকের বেঞ্চ বলে ওঠে—ক্ষমা চাও—আমরা তোমাকে বাইজ্জৎ ছেড়ে দেব। গান্ধীর মতই অনড় তিনি। বললেন, “কর্তব্য পালন করেছি; ক্ষমা আমি চাইব না; কিন্তু আপনারা যে শাস্তি দেবেন তা মাথা পেতে নেব।” অবাক কাণ্ড! আইনত অরুণ মিশ্র বিচারকের স্থানে বসতে পারেন না, সেই ২০০৯-এর সাক্ষাৎকারে (তেহলকা পত্রিকা) ঠিক এই প্রশ্নটাই প্রশান্ত ভূষণ তুলেছিলেন। প্রশ্নটা বিচারকের সততার প্রতি নিষ্ঠা নিয়ে। একই মত বহু বিশিষ্ট আইনজীবী ও প্রাক্তন বিচারপতিদেরও।
    শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে. ভেনুগোপাল। তিনি বলেন, “সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারক বলেছেন যে সুপ্রিম কোর্ট গণতন্ত্ররক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের নয় জন বিচারক বলেছেন যে উচ্চতর বিচার প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি রয়েছে। এঁদের মধ্যে দু-জন বিচারক থাকাকালীনই এই কথা বলেছেন। বাকি সাতজন অবসর গ্রহণের অব্যবহিত পরেই এই মন্তব্য করেছেন। আমি নিজেও এই দুর্নীতির ব্যাপারটা…।” কথা শেষ হওয়ার আগেই অরুণ মিশ্র তাঁকে থামিয়ে দিলেন। আবার অবাক হওয়ার পালা। যে ‘অপরাধে’ প্রশান্ত ভূষণ দোষী, সেই একই ‘অপরাধ’ তো ভেনুগোপালসহ এই নয় জন বিচারকও করেছেন। তাহলে তাঁদেরও কোর্ট দোষী সাব্যস্ত করুক। একই অপরাধে কেউ দোষী আর কেউ নির্দোষ—এ আবার কেমনতর আইন!
    শুনানী চলাকালীন প্রশান্ত ভূষণ বললেন, “আমি মহামন্য আদালতের রায় দেখেছি। আমি খুব কষ্ট পেয়েছি যে, আদালত অবমাননার জন্য আমাকে দোষী ঠাওর করা হয়েছে। তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে আমি এই মহামান্য আদালতের মহিমা ঊর্ধ্বে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি—তোষামদ করতে নয়—কিছু পাওয়ার আশায় নয়, বরং একজন বিনীত নম্র প্রহরী হিসাবে। আমি কষ্ট পেয়েছি এই ভেবে নয় যে আমার সাজা হতে পারে, বরং এই কারণে যে আমাকে একেবারেই ভুল বোঝা হয়েছে।”
    সাজা ঘোষণার বিষয়টি পিছিয়ে ২৪ আগস্ট করা হল। যদিও ভূষণ এই সময়ের দাবি জানাননি। কোর্টের বক্তব্য, ভূষণ চাইলে ২৪ আগস্টের মধ্যে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে পারেন; যদি ক্ষমা চান তবে তা বিবেচনা করার জন্য ২৫ আগস্ট শুনানি হবে। কিন্তু কে চেয়েছে শুনানি? কে চেয়েছে ক্ষমা? প্রশান্ত ভূষণ তো পরিষ্কার বলেছেন যে ক্ষমা তিনি চাইবেন না; সময় তাঁর এই মত বদলাবে না; আদালত শুধু শুধু তার সময় নষ্ট করছে। এই যে আদালত না চাইতে ‘তারিখ-পে-তারিখ’ দিল, তা দেখে মনে হয় চম্পারণের সেই স্থানীয় আদালতের মতই এই সর্বোচ্চ আদালতও বেশ ঘাবড়ে গেছে।
    গত ত্রিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে হাই কোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টে ওকালতি করে চলেছেন প্রশান্ত ভূষণ। সাধারণত সুপ্রিম কোর্টের উকিল প্রতি শুনানি পিছু ১১ থেকে ৫০ লাখ নেয়। কিন্তু ভূষণকে বলা যায়, যাকে বলে ‘থোড়া হটকে’। বহু জনস্বার্থ মামলা তিনি লড়েছেন কোনো পয়সা না নিয়েই। ৯০ সাল থেকে তিনি বিচারের নানা খুঁটিনাটি প্রশ্নে কৈফিয়তের দাবি জানিয়ে আসছেন, যাকে আইনি ভাষায় বলা হয় জুডিশিয়ল অ্যাকন্ট্যাবিলিটি, এ নিয়ে নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। কয়লা খনি দুর্নীতির তদন্তে সরকার, বড় বড় দেশি-বিদেশি পুঁজিপতি এবং সিবিআই-এর অসাধু চক্রকে তীক্ষ্ণতার সঙ্গে সর্বোচ্চ আদালতের সামনে এনেছেন। এই প্রসঙ্গেই শুনানির সময়ে সিবিআইকে ‘খাঁচায় বন্ধ তোতা’ বলেছিল সুপ্রিম কোর্ট। উল্লেখযোগ্য, করোনা বিপর্যস্ত আবহাওয়ায় বিরোধি কণ্ঠস্বরের কোনো রকম তোয়াক্কা না করে, সংসদে আলোচনায় না এনে লাভজনক রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা কোল ইন্ডিয়ার গুরুত্ব ঘটিয়ে দেশি-বিদেশি ব্যক্তিগত মালিকানার হাতে কয়লা উত্তোলন এবং খোলা বাজারে বিক্রি করার অবাধ ছাড়পত্র তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া জোরের সঙ্গে চালু করতে চলেছেন বর্তমান মোদি সরকার। ভূষণ প্রসঙ্গে ফেরা যাক। বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী কেয়ার্স ফান্ডকে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা তহবিলে স্থানান্তর করা হোক এই দাবির হয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে একটি জনস্বার্থ মামলার পক্ষ হয়ে লড়াই করেছেন তিনি। নির্বাচনের সময় পার্টিগুলো বিশেষ করে বড় বড় দু-একটি পার্টি যে অদ্ভুত এবং অভিনব কায়দায় টাকা-পয়সা জোগাড় করে, যার রাশভারী নাম ইলেকট্রল বণ্ড, সেই উপায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে একটি সংস্থা; তার হয়েও ওকালতি করছেন। চ্যালেঞ্জ জানান হয় ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭। এক হাজারেরও বেশি দিন পার হয়ে গেছে, আমরা যে তিমিরে সেই তিমিরেই। রোহিঙ্গাদের ভারতে আশ্রয় দেওয়ার দাবিতে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন প্রশান্ত ভূষণ। তাঁর বক্তব্য ছিল, মায়ানমারে ১০,০০০ মানুষের গণহত্যা করা হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে প্রচুর সম্পত্তি। ভারত ও বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন রোহিঙ্গারা। তাঁরা বেআইনি অনুপ্রবেশকারী নন, বরং শরণার্থী। কাশ্মীর প্রসঙ্গে একতরফাভাবে ৫ আগস্ট, ২০১৯-এ কেন্দ্রীয় সরকার ৩৭০ ধারা রদ করল। কাশ্মীরের মানুষ কিছু বলার সুযোগই পেল না। এর বৈধতা নিয়ে ভূষণ কড়া সওয়াল করছেন সুপ্রিম কোর্টে। সুপ্রিম কোর্ট কিন্তু স্থগিতাদেশ দিয়ে শুনানী চালিয়ে যেতে পারতেন, এরকম মত আইনি মহলের একাংশের। এক বছরেরও বেশি সময় কেটে গেল, কিন্তু ইন্টারনেট সুবিধা থেকে আজও বঞ্চিত কাশ্মীরি মানুষ। একদিকে কোর্টের এই আলস্য অন্যদিকে প্রশান্ত ভূষণকে নিয়ে ব্যস্ততা দেখিয়ে অমূল্য সময়ের অপচয়—এ দেখে সুপ্রিম কোর্টের প্রতি আস্থা রাখা মুশকিল হয়ে পড়ে।
    ‘নাগরিকত্ব (সংশোধনী) আইন ২০১৯’ (CAA) এইবছর ১০ জানুয়ারি থেকে কার্যকরী। আইন হওয়ার আগে থেকেই, অর্থাৎ বিল আকারে যখন ছিল তখন থেকেই দেশের বিভিন্ন জায়গায় তীব্র বিক্ষোভ দেখা যায়। দিল্লির শাহিনবাগে বিশেষভাবে মহিলারা এর প্রতিবাদে লাগাতার ধর্নায় বসে থাকে। কলকাতার পার্ক সার্কাসেও একই রকম ছবি দেখতে পাই। বেশ কয়েকজন এখনও গারদের পেছনে। ১২ ডিসেম্বর ২০১৯ সালে এর বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে পিটিশন দাখিল হয়। টালবাহানা, সরকারের চালাকি এবং সবার উপরে সর্বোচ্চ আদালতের নাগরিকত্বের মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সংবেদনশীল বিষয়কে পাশ-কাটানোর ইচ্ছা এই মামলার প্রথম শুনানীর অপেক্ষাকে দীর্ঘতর করছে। খেয়ালে রাখার মতো ব্যাপার যে পিটিশন দাখিল করা এক কথা আর কোর্টের তালিকায় সেটা অন্তর্ভুক্ত হওয়া আরেক কথা। কোর্টের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়াটা কোর্টের বিচক্ষণতার বিষয়। তাই কোন পিটিশন কত দ্রুত বা কত দেরিতে কোর্টের তালিকায় জায়গা করে নিচ্ছে, তা দেখে কোর্টের এবং সেই সঙ্গে সরকারেরও মনোভাব বোঝা যায়। যে নজিরবিহীন অল্প সময়ে এবং বেশকিছু আইনি পরম্পরার তোয়াক্কা না করে প্রশান্ত ভূষণকে দোষী সাব্যস্ত করা হল তাতে কোর্ট এবং একইসঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের মনোভাবকে ভাল চোখে নেওয়া যায় না।
    কেন্দ্রের বিরোধি দলগুলো, রাজ্য সরকারগুলো এবং সাধারণ নাগরিকদের সঙ্গে কোনো রকম শলা পরামর্শ, আলাপ আলোচনা, তর্ক বিতর্ক না করে হঠাৎ একদিন (৩ জুন, ২০২০) কেন্দ্রীয় সরকার হাজির করল নতুন কৃষি আইন। সংশোধিত আইনে নিত্য অত্যাবশ্যকীয় পণ্য তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হল খাদ্যশস্য, ডাল ও ভোজ্যতেল। এখন থেকে এই সমস্ত পণ্যের দাম যাচাই করে বিক্রি করতে পারবেন চাষিরা। মজুত করার ক্ষেত্রে রয়েছে অবাধ ছাড়। নোটবন্দী হোক বা লকডাউন, সবকিছুতেই নোটিশ আসে হঠাৎ করে এবং সামলে ওঠার কোনো অবকাশ না দিয়ে। এর জন্য কী দুর্গতির মধ্যে পড়তে হয়েছে সাধারণ মানুষকে। কত মানুষ মারা গেছে, কত মানুষ আত্মহত্যা করেছে, কত মানুষকে দুর্বিষহ জীবনর দোর গোড়ায় এসে পড়তে হয়েছে।
    ২২ আগস্ট, শনিবারে ছাত্র ও যুবদের আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রশান্ত ভূষণ বলেন, “আমরা খুব গুরুত্বপূর্ণ বাঁকের মুখে দাঁড়িয়ে। সংবিধানের প্রতিটা অধ্যায়ের উপরে আক্রমণ হচ্ছে। দেশকে হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা হচ্ছে, প্রতিবাদের অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। নাগরিকের যুক্তিপূর্ণ চিন্তা-ক্ষমতাকে ভেঙে দেওয়া হচ্ছে, কেউ যাতে কোনও প্রশ্ন না তোলেন। এই কাজটা করে ফেলতে পারলে তখন নিজেদের তত্ত্ব প্রচার করা সহজ হয়, সকলকে ভক্ত বানিয়ে নেওয়া যায়! ক্ষমতার স্পর্ধার সামনে দাঁড়িয়েই আমাদের কথা বলতে হবে। অন্যায়ের প্রতিবাদ করে আজ জেল-যাত্রা বা যে কোনও পরিণামের জন্য তৈরি থাকতে হবে। নইলে কাল বাঁচানোর মতো কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না।”
    এই রায়ের বিরুদ্ধে সরব দেশের হাজার হাজার আইনজীবী, আরো বহু মানুষ। দেশের গণ্ডী পেরিয়ে বিদেশের মানুষজনেরাও দাঁড়াচ্ছেন প্রশান্ত ভূষণের পাশে। সবাই এই রায়কে ‘সমালোচনা দমনের চেষ্টা’ বলে মনে করছেন। রায় ফিরিয়ে নেওয়ার আবেদন করেছেন সুপ্রিমকোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশনের প্রবীণ সদস্যরা। এই বিষয়ে আইনজীবীদের পক্ষ থেকে বলা হয়, যদি বার অ্যাসোসিয়েশন ভয়ে চুপ করে থাকে তাহলে স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশ করা যাবে না কোনও দিনও। এতে ব্যহত হবে দেশের স্বাধীনতাই। দিকে দিকে আওয়াজ উঠছে, বিচারকের সমালোচনা করা অপরাধ নয়, এমনকী কড়াভাবে হলেও। সংবিধান আমাদের এই অধিকার দিয়েছে। এই অধিকার আমরা ছাড়ছি না।

    Reply

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অনুসন্ধান করুন

সংবাদ মন্থন

  • ছিটমহল
  • মাতৃভূমি লোকাল

খবরের মাসিক সূচী

সম্পাদকীয়

নীমা তেনজিনদের স্বপ্ন কি সার্থক হবে ?

একটি রাজনৈতিক সুইসাইড নোট

এই বিভাগের আরও

দেশের খবর

নিজেদের চাষের খবর দিলেন, দিল্লির আন্দোলনের খবর নিলেন সরবেড়িয়ার চাষিরা

গ্রামে বাড়ছে অভাবী বিক্রি। কৃষক মান্ডির হ্যাপার চাইতে চাষির ভরসা কাছের আড়ৎ।

এই বিভাগের আরও

সংস্কৃতির হাল

ঘরে রাখা শস্যের বীজ ভালো আছে কিনা দেখে নেওয়া হয় ‘শস’ পাতার মধ্যে দিয়ে

সর্নস্থলের মাটি চুরি করে, জোর করে হিন্দু পরিচয় দিয়ে রামরাজত্ব চালানোয় বিরক্ত আদিবাসী সমাজ

এই বিভাগের আরও

খবরে দুনিয়া

মার্কিন মুলুকে নির্বাচন : বার্নি স্যান্ডার্সের প্রচারের একজন সমর্থকের সঙ্গে কিছু আলাপ, কয়েক মাস আগে

“আমরা কোনো সালাফি নই, আমরা একটা ভালো পরিবার” : ফ্রান্সে নিস-এর গির্জায় ছুরি-সন্ত্রাসী অভিবাসী যুবকের তিউনিশিয়ান মা

এই বিভাগের আরও

পথের খবর

পথচলতি জটলা থেকে প্ল্যাটফর্মের সভা – সব পথ মিলে যাচ্ছে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে- দিল্লির কৃষক জমায়েতে

কর্পোরেট চাকরি ছেড়ে এক অন্য জীবনের খোঁজে সংকেথ

এই বিভাগের আরও

মেটা

  • Log in
  • Entries feed
  • Comments feed
  • WordPress.org

সাম্প্রতিক মন্তব্য

  • Debanjan Bagchi on শিল্পাঞ্চলের দূষিত জল আর মানুষের ভিড়ে প্রমাদ গুনছে বরতি বিলের পাখিরা
  • Jiten on পথচলতি জটলা থেকে প্ল্যাটফর্মের সভা – সব পথ মিলে যাচ্ছে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে- দিল্লির কৃষক জমায়েতে
  • যোগিন on শিল্পাঞ্চলের দূষিত জল আর মানুষের ভিড়ে প্রমাদ গুনছে বরতি বিলের পাখিরা
  • জিতেন নন্দী on “আমরা কোনো সালাফি নই, আমরা একটা ভালো পরিবার” : ফ্রান্সে নিস-এর গির্জায় ছুরি-সন্ত্রাসী অভিবাসী যুবকের তিউনিশিয়ান মা

ফোরাম

  • আড্ডা
  • বিষয়ের আলোচনা
  • সংবাদ সংলাপ
  • সাংগঠনিক আলাপ

লে-আউট সহায়তা

সংবাদমন্থন প্রিন্ট >>
 
নমুনা ল্যাটেক>>

songbadmanthanweb [at the rate] gmail.com · যোগাযোগ · দায়দায়িত্ব · Log in