- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

ধানচাষের সঙ্কট ১ : জামবনির চাষি — ‘বৃষ্টি হয়নি, ধান না লাগিয়ে জমি ফেলে রেখেছি’

হরেন খামরুই, বেলিয়া, জামবনি, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১ নভেম্বর। শুনে লিখেছেন শমীক সরকার#

ফেলে রাখা বা নষ্ট হয়ে যাওয়া ধানজমিতে গরু চরছে। জাম্বনির খাটকুড়া গ্রামটির বেশিরভাগ জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে জলের অভাবে।
ফেলে রাখা বা নষ্ট হয়ে যাওয়া ধানজমিতে গরু চরছে। জাম্বনির খাটকুড়া গ্রামটির বহু জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে জলের অভাবে। ছবি শমীক সরকারের তোলা। ১ নভেম্বর।

গত দু-বছর ধরে বৃষ্টির পরিমাণ একদম কমে গেছে। গত বছর ধান লাগিয়েছিলাম সবটুকু জমিতে (মোট ছয় বিঘা)। কিন্তু হয়নি। নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। ধান কাটিও নি। এবছর এক বিঘা জমিতে লাগানো হয়েছে। বাকি জমি পড়ে আছে। পরের বার থেকে ভাবছি সব্জি লাগাবো। কারণ, ধানে যতটা যতটা জল লাগে, সব্জিতে তার চেয়ে অনেক কম জল লাগে। সবজি চাষ করে কেউ হয়তো বড়োলোক হতে পারবে না, কিন্তু চলে যাবে।
আমাদের এক জায়গায় ধরো তিন বিঘা মতো জমিন আছে। সেখানে পাঁচ ছয় জায়গায় শ্যালো (বসানোর চেষ্টা) করেছি। কিন্তু কোনোখানে লেয়ার ভালো না। একটা লেয়ার যদি পাওয়া গেল, কিন্তু সেখানে ছোট্ট লেয়ার। জলও ভালো নয়। ভাবছি আরেকটু গভীর করবো।
এখানে লেয়ার পাওয়া যায় সত্তর ফুটের পর থেকে। কিন্তু লেয়ার পেলে তো হবে নি। এভাবে বৃষ্টির পরিমাণ যদি কমতে থাকে, তাহলে সত্তর ফুটেই পাবে, কিন্তু ওয়াটার লেভেল কমে যাবে। এখন হয়তো তুমি পাঁচ ফুট বা দশ ফুটে ওয়াটার লেভেল দেখতে পাচ্ছ, কিন্তু সেটা চৈত্র মাসের দিকে বা বৈশাখ মাসের দিকে ওটা চলে যাবে প্রায় পঁচিশ তিরিশ-এ। তখন কিন্তু পাঁচঘোড়ার মেশিন (পাঁচ হর্সপাওয়ার) দিয়ে তোলা মুশকিল। তখন আবার হয় সাবমার্সিবল দিতে হবে, মানে জলে মেশিনকে ঢুকিয়ে দিতে হবে। তবেই জল উঠবে।
আমার শ্যালোটা নষ্ট হয়ে গেছে। লোকজন (রাজনৈতিক শত্রুতা করে) পাথর ঢুকিয়ে দিয়েছে। এখন একটা শ্যালো করতে যাওয়া মানে মোটর টোটর মিলিয়ে পঞ্চাশ ষাট হাজার টাকা লাগবে। আমরা তিনভাই মিলে চাষের কাজ করি। এখন এক ভাই রাজমিস্ত্রীর কাজ করে।
এক বিঘা এবারে চাষ করেছি, তাতে বাড়ির ধান টা তো উঠে আসবেই। এখানে বিঘাতে (৪২ ডেসিমেল) সাত কুইন্টাল পাওয়া যায় ধান। এই বছরে ধানের অবস্থা অবশ্য খুব বাজে। এবছর ধানের ফলন কম হবে। কারণ বৃষ্টি হয়নি। পুষ্ট হবে নি। ওজন কমে যাবে। অন্যান্য সময় আট কুইন্টাল অবধি আসে বিঘাতে, এবার ছ-কুইন্টালের মতো আসবে। ছ-কুইন্টাল মানে বিক্রি করে হবে ছ-হাজার টাকা।
ধান লাগাতে গেলে লাগানোর সময়ই তোমার তিন হাজার টাকা খরচ। যখন ধান গাছটা গাড়বে, তখনই তোমার তিন হাজার টাকা খরচ। তুমি যে চারা ফেলছ, সেগুলি আমি ধরছি নি। এক বিঘায় ধরো দশ কেজি ধান বীজ কিনিছ। মানে চল্লিশ টাকা করে চারশো টাকা। বীজই লাগছে চারশো টাকার। লাঙল আছে। মোট পাঁচশো ছশো টাকা কেবল চারা ফেলাই আছে। তা বাদ দিয়ে তিন হাজার টাকা গাড়ার সময় খরচ। এবার পরিচর্যা করলে ইউরিয়া দিলে খরচা আছে। তারপর ধানটাকে যখন আবার তুলবে, তখন খরচ আছে। সব মিলিয়ে প্রায় পাঁচ হাজার সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা মতো খরচ আছে।
এখানে লাঙল আছে, ট্রাক্টর আছে, হ্যান্ড ট্র্যাক্টরও আছে। কিন্তু খরচ কোনোটাতেই কম নেই। খরচ তুমি যেটাতেই করো ওই একই জিনিসই আসবে।
নিড়ানি এখন আর কেউ দেয় না। সব ওষুধ মেরে দেয়। একটা ওষুধের নাম আছে মেচিডি, একটা সাথী। আরো অন্য ধরনের আছে।