কল্লোল রায়। ব্যারাকপুর। ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১।#
‘অতুল্য গঙ্গা’ একটা সফর, গঙ্গা পরিক্রমা। মূলত সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মানুষেরা এতে রয়েছেন। আমার মনে হয় এটা সরকারের টাকায় হচ্ছে। দুটো ভাগে এটা চলছে : একটা দল পাঁচ কিলোমিটার অন্তর গঙ্গার দূষণ, পিএইচ ইত্যাদি মাপছেন, গাছ লাগাচ্ছেন; আর একটা দলে ছ’জন মতো টানা হেঁটে চলেছেন। সপ্তাহে ছ’দিন করে হাঁটছেন, ত্রিশ থেকে পঁয়তাল্লিশ কিলোমিটার করে।
৩০ তারিখ আমি আর তাপসদা দেখতে গেলাম। আমাদের ব্যারাকপুরে ধোবিঘাট থেকে গান্ধি সংগ্রহশালার দিকে এগোলে বাঁহাতে সেনাবাহিনীর কোনো একটা মেসে ওঁরা সেদিনের জন্য ছিলেন। সকাল ছ-টায় ওঁরা হাঁটা শুরু করেন। পরে অন্যরা বেরিয়ে অন্য কাজগুলো সারেন। ১৫ ডিসেম্বর ২০২০ এলাহাবাদ থেকে এই পরিক্রমা শুরু হয়েছে। ২০২১ সালের ১৫ আগস্ট অবধি চলবে, শেষ হবে প্রয়াগেই। প্রতিদিন শুরুতে ওঁরা গঙ্গা-শ্লোক পাঠ করে রওনা দেন। বিভিন্ন বয়সের মানুষ এই দলে রয়েছেন, একজন মহিলাও রয়েছেন। ২৩ বছর বয়সের একজন ছাত্র আছে, একজন টিভি-সাংবাদিকও রয়েছেন। আমরা কর্নেল মাইক নামে একজনের সঙ্গে কথা বললাম। বাইরের কেউ ওঁদের সঙ্গে হাঁটতে পারে। একদিন ব্যাপার না, কিন্তু টানা যোগ দিতে গেলে তাকে একটা প্র্যাকটিশ মডিউলের মধ্যে দিয়ে গিয়ে শারীরিকভাবে ফিট প্রমাণ করতে হবে।
কথা বলে জানলাম, মূল বিষয়টা হল রিজুভিনেটিং গঙ্গা অর্থাৎ গঙ্গার তারুণ্য বা সজীবতা ফিরিয়ে আনা। এটা তো বর্তমান ভারতে দাঁড়িয়ে বেশ কঠিন কাজ, যেখানে এত বাঁধ হচ্ছে, জলবিদ্যুৎ প্রকল্প হচ্ছে এবং আরও নদী-বিরোধী কাজ হয়ে চলেছে। এ নিয়ে কথা বলার সুযোগ সেদিন ছিল না। গঙ্গা নিয়ে যে হরিদ্বারের মাতৃ সদন আশ্রমে দীর্ঘ সময় ধরে একটা কাজ চলছে, সন্ন্যাসিরা আন্দোলন করে প্রাণ দিয়েছেন, এসব বিষয় ওঁদের নজরে আছে বলে মনে হল না। কথা বলা হয়নি। কিন্তু আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম যে এই যে সফর করছেন, এর কি কোনো রিপোর্ট প্রকাশ করা হবে? — এটা কোথায় জমা করবেন? ওঁরা বললেন — পিএমও-তে; অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে। — এটা কি আম জনতার কাছে প্রকাশ করবেন? — হ্যাঁ সেটাও করব।
২০২০ থেকে ২০৩০ পর্যন্ত দু-দফায় এরকম পরিক্রমা করার কথা আছে। বহু খ্যাতিমান মানুষ এই প্রকল্পে রয়েছে। এর মধ্য দিয়ে একটা সাধারণ সচেতনতাও তৈরির ব্যাপার রয়েছে। কিন্তু আম জনতার কাছে এটা কীভাবে আসবে বুঝতে পারলাম না। সবাই যে এটা জানে সেরকম মনে হল না। ব্যারাকপুরেও লোকে তেমন জানে না। ওঁরা নিজেদের দলের মধ্যেই আবদ্ধ আছেন বলে মনে হল। যেখানে ‘নমামি গঙ্গে’র বাইশ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প চলছে এতদিন ধরে, তারপর দুষণ তো কমেনি, বরং আরও বেড়েই চলেছে। নিকাশি নালা সাফ করার সিউয়েজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টগুলো বহু জায়গায় কাজ করে না। কথা বলে জেনেছি যে এই প্ল্যান্টগুলো কোথায় কোথায় আছে তথা নিচ্ছেন ওঁরা, মিউনিসিপাল নালার জল গঙ্গায় পড়ছে সেটাও দেখেছেন। এই পরিসংখ্যানগুলো দিয়ে যদি একটা ভালো কিছু করবেন মনে করেন, সেটা করা যায়। কিন্তু আমাদের অভিজ্ঞতায় তো তা দেখছি না কোথাও। অত অল্প সময়ে আর কথাবার্তার সুযোগ পাইনি।
Leave a Reply