• প্রথম পাতা
  • আন্দোলন
  • কৃষি ও গ্রাম
  • খবরে দুনিয়া
  • চলতে চলতে
  • পরিবেশ
  • শিক্ষা ও স্বাস্থ্য
  • শিল্প ও বাণিজ্য
  • নাবালকথা

সংবাদমন্থন

পাতি লোকের পাতি খবর

  • আমাদের কথা
    • যোগাযোগ
  • পত্রিকার কথা
    • পাক্ষিক কাগজ
    • জানুয়ারি ২০০৯ – এপ্রিল ২০১২
  • মন্থন সাময়িকী
    • মন্থন সাময়িকী নভেম্বর ডিসেম্বর ২০১৪
    • মন্থন সাময়িকী সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ২০১৪
    • সাম্প্রতিক সংখ্যাগুলি
    • সাম্প্রতিক পিডিএফ
    • ২০১২-র আগস্ট অব্দি
  • সংবাদ সংলাপ
  • বিষয়ের আলোচনা

 “লাশ নিয়ে  অনেক প্রাক্টিকাল হলো …”

August 7, 2021 admin Leave a Comment

সৌভিক গুহ। হাবড়া।#

আমার পায়ের তলায় নাকি চাকা লাগানো আছে , ছুটতে ছুটতে একদিন হঠাৎ নাকি একটা চাকুরি পেয়ে যাবো । হ্যাঁ , সেই বয়সটাও হয়েছে । যোগ্যতা বলতে ,  ওই ছুটে বেড়ানো ( রাষ্ট্র বিজ্ঞানের স্নাতক স্তরের  ছাত্র অথচ রাষ্ট্রের কথা তেমন  করে  বলতে পারিনা , অবার এমন অযোগ্যতাকে যোগ্যতা বলে চালাইও না )। ওই ছুটে চলা… সবসময় কে আর  ছোটে! মাঝে মাঝে হাঁটি , সাইকেল চালাই , পিছু নিই চুপি চুপি , পৌঁছে যাই , হারিয়ে যাই, থমকে দাঁড়াই , অবার ফিরে ফিরে আসি । কমবয়সে  বন্ধুদের সাথে মেয়েদেরও পিছু নিয়েছি , তবে হারিয়ে যাইনি কোনোদিনও । হারিয়ে গেছি সেইদিন ,  যেদিন পিছু নিলাম , উম্ হু , রূপসী অথবা সুন্দরীর মোহে নয় , এক ডোমের , – মধু। তিনি স্বয়ং এক বিস্ময় ।

সেদিনও যেন কোথাও একটা পৌঁছানোর ছিল কিন্তু হারিয়ে গেছিলাম অন্য কোথাও – অন্য কোনোখানে  । বড়ো রাস্তায় উঠে সেই বিস্ময় , মধু কাকাকে দেখে আর স্থির থাকতে পারিনি , পিছু নিয়েছি চুপিচুপি  । এরম পিছু নেওয়া  আমি অচেনা এক বন্ধুর থেকে শিখেছিলাম , যে পিছু নেওয়ার নাম ,  শেষযাত্রা  –।   আমার বয়সী এক ছেলে ভারী বৃষ্টি ভিজে একটি ভ্যানের  পিছন পিছন সাইকেল নিয়ে  চলছে , ভ্যানটির পুরো পরিধি চকোলেট রঙের   বিছানার চাদর দিয়ে ,  বেশ ভারী নরম কিছু ,  দড়ির সাথে কষে বাঁধা ।  কেবল একটি মানুষের একটি  পায়ের পাতা , ভগবান না করুক , ধরুন আমি ঠিক ওরকম ভাবে যদি তাঁর পাশে শুয়ে থাকতাম , তাহলে ওটি বাঁ পা হয় ,  ভ্যানটির ডান  অংশ থেকে চাদর ঠেলে বাইরে বেরিয়ে এসেছে ,  ভিজছে এবং  চাদর লেপ্টে গিয়ে তিনটে অদ্ভুত মুখাবয়বের অবভাস ,  হয়তো বাবা-সন্তান-মা অথবা  মা-সন্তান-বাবা এই ক্রমে সাজানো আছে ।  মধু কাকা বললো– বাচ্চা ছেলেটারে বিষ দিয়ে , বাপটারে বিষ খাইয়ে , শালি ফ্যানে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে পড়েছে … লকডাউন , খেতে পাচ্ছিলনা , ক্ষিদে … লাশ কাটার পর  সেলাই দেওয়ায় সময় ভিতরে কিছু রুটি ঢুকিয়ে দেব , লকডাউন চলছে না !

আমিও সেই অনন্য যাত্রার সাথি হয়েছি ভর দুপুরে ভরা বৃষ্টিতে  ।  

যারা  মনে করে , ডোমের কাজ মানে কেবল লাশ কাটা ঘরের কাজ , গ্রাম – মফস্বলে সেটা সত্য নয় । আমাদের মফস্বলে ডোমকে গাছের মগডালে পর্যন্ত উঠতে হয় – ন্যাশনাল হাইওয়েতে  বেলচা দিয়ে  এক শিশু ও তার মায়ের অবশিষ্ট অস্তিত্ব স্বরূপ মাংস পিণ্ড চেঁছে তুলতে হয় , এমনকি বালতি ভরে জল ঢেলে কালো রঙের স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনা … প্রশ্ন জাগে যেই পরিযায়ী শ্রমিকেরা রেল লাইন ধরে চলতে চলতে ক্লান্তিতে খিদেয় তৃষ্ণায় অবসাদে অনিশ্চয়তায় রেললাইনের উপর অচৈতন্য হয়ে পড়েছিল , পরদিন সকালে ট্রেনে কাটা দেহগুলি কে উদ্ধার করেছিল ? 

ছবি : প্রিয়াঙ্কা মজুমদার

 আমাদের এখানে অপমৃত্যু অথবা বেওয়ারিশ লাশের শেষ ভরসা – মধু কাকা এবং তার চেলারা , করোনার সময় তাকে কোনোদিন দেখিনি মুখে মাস্ক লাগিয়ে , পকেটে স্যানিটাইজার নিয়ে , হাতে গ্লাভস পরে কাজ করতে । তাড়া খেয়ে বেশ কিছুদিন একটা সবুজ কাপড়ের মাস্ক কপালে ফেট্টির মতন বেঁধেছিল । অথচ অসংখ্য মৃত দেহ  সেই সময় মধু কাকা স্ট্রেচারে করে বয়ে এনেছে , পেয়েছে  সামান্য কয়েকটাকা ! গভীর মানবিকতায় শেষবারের মতন পরিবারের লোকদের ছুঁতে দিয়েছে নিথর দেহগুলো। শান্তনা যুগিয়ে বলেছে , আমারে নেয় কেনো বলতো ! থাক , আর ওই নতুন  গামছা – সাবান দিতে হবেনা । কী করবো এত এত গামছা – সাবান নিয়ে?  সাহস হয়নি কথা বলার , বিনা কারণে ঘন্টার পর ঘন্টা  তার কথা শুনেছি , চেলাদের সঙ্গে ঝগড়া খিস্তি খেউড় শুনেছি , কখনও বিড়ি চাইলে দৌড়ে গিয়ে সিগারেট এনে দিয়েছি । জিজ্ঞেস  করেছে , কী হয়েছে ( হসপিটালে এসেছিস কেন ? ) – মিথ্যে বলি । একটি মিথও তৈরি হয়ে গেছে হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতাল জুড়ে – ওই মধু কাকা , পাঁচ ফুটের মতন উচ্চতা , দাঁত ফোকলা , সারাক্ষণ বসন্তের মতন মৃদু হাসি লেগে আছে , কখনো টাক কখনও গুড়ি গুড়ি কাঁচা – পাকা কদম ছাঁট চুল , একটি মলিন লুঙ্গি , ঢিলে গেঞ্জি , রাতের দিকে আকন্ঠ বাংলা গিলে থাকা মানুষটির একটি ফোন নম্বর যা হাসপাতালের ভিতর দেওয়ালে সাটানো , তার মৃত্যুর পরেও নাকি সেই নম্বরে ফোন আসলে মধু কাকা পৌঁছে যাবে । বিশ্বাস করতে ভালো লাগে , পথ চলার সময় অথবা বিষন্নতায় ভুগলে।

 সেদিন  বেলা সাড়ে দশটা হবে । মধু কাকার ভ্যান হনহন করে আমাকে টপকে গেলো । পিছু নিলাম । মধুর চলার রেশ রয়ে যায় পিছে ,  যেমন করে স্থির জলে ঢিল ছুড়লে তার ঢেউ পাড়ে এসে ধাক্কা খায় । রাস্তার দুপাশে মানুষজন তেমনি বলাবলি করে , কোথায় মরলো কে জানে ! ও মধু দা কোথায় … আমি বেশ খানিক  দুরত্বে তার পিছন পিছন , আমাদের দুজনের মাঝে অনেকই আসছে অবার মিলিয়ে যাচ্ছে , যেনো কেউ টের না পায় পিছু নেবার , এটাই পিছু নেবার নিয়ম । কতদূর যাচ্ছি ঠিক নেই , যে মফস্বলে বেড়ে উঠেছি এখনও তার শেষ সীমা চিনিনা । হাঁকাহাঁকি চলছেই , কেউ প্রণাম ঠুকছে , মৃতের শান্তির উদ্দেশ্যে । অন্যদিকে আমি এবং মধু অস্থির হয়ে উঠছি । ছোট্ট ফোনটা তুলে মধু কাকা বলছে — এইখানে , ওইখানে । আমার চেনা রাস্তা শেষ হয়ে আসে একসময় , হারিয়ে যেতে শুরু করেছি । আড়ালে চলতে চলতে চরম এক একাকিত্ব – ভয় বাসা বাঁধছে দুপায়ে । মাইলস্টোন দেখতে দেখতে বুঝি ১২ কিমি দূরে চলে এসছি । মাইলস্টোন একসময় শেষ হয়ে , এক গ্রামের গলিতে ঢুকলাম , জানলাম হাবড়ার পূর্বে সীমানায় এটাই শেষ গ্রাম – পঞ্চায়েত । রাগ হলো , এই মানুষটিকে এতদূর ভ্যান ঠেলে ঠেলে আসতে হলো ! অথচ অ্যাম্বুলেন্স ডাকলে অসুবিধা কি হতো ! কিন্তু মধু তো রিফিউজ করেনা । গ্রামের এক পাশে সবুজ ধানের মাঠ , পুকুর , অন্যদিকে এক মাদকতা লাগানো মানুষের ঔৎসুক্য দৌড়ে রাস্তায় উঠে আসছে , মধু কাকা এগিয়ে গেছে , তাই তারা আমার রাস্তা আটকে তাকে দেখার চেষ্টা করছে। আমি ভেবে চলেছি – বিষ খেয়েছে , গায়ে আগুন দিয়েছে , খুন হয়েছে বীভৎস ভাবে , ফ্যানের সাথে গলায় দড়ি অথবা গোয়াল ঘরের মাচার সাথে ! জিজ্ঞেস করতে করতে মধু কাকা গ্রামীণ সড়ক যোজনার রাস্তা ছাড়িয়ে বালি মাটির সাদা রাস্তায় নেমে গিয়েছে । গ্রামবাসী অমনি হই হুল্লোড় শুরু করে দিয়েছে । সোজা তাকালে দুপাশে ঝোপঝাড় রেখে দূরে একটি বিশাল আমবাগান , পুলিশের গাড়ি । পাশেই ঘোমটা দেওয়া মহিলারা বলাবলি শুরু করেছে – এই লোক ওই  গাছে উঠবে কী করে ! ওই ঝড় জলের রাতে কিভাবে যে মগডালে উঠলো ভাবা যায় ! আমার সমস্ত  অনুমান – অভিজ্ঞতা নিমেষে উবে গেল । মগডালে মধু কাকা ! পরলাম না আর । সাহসে কুলালো না  পাড়া পড়শীর ভিড়ে মিশে যেতে। থেমে গেলাম , আফশোশ রাগ বিষণ্ণতা গালাগাল ক্রমেই আমার দু’পা  অবশ করে দিতে লাগলো । এতদূর এসে তাকে একা রেখে চলে যাবো । এই ১২ – ১৩ কিমি মধু কাকা একা একা ওই মৃতদেহ টেনে নিয়ে যাবে । এই ভাবতে ভাবতে পুলিশ গাড়ি আমায় অতিক্রম করে চলে গেলো। তখনও হয়তো মগডালে মৃতদেহ ঝুলছে । তৃষ্ণায় বুক ফেটে গলা চিরে আসছিল । তবুও ক্ষোভে কোথাও জলের খোঁজে দাড়ালাম না । এইটুকু সাহস হলো না , কাছে যাবার … গভীর অনুশোচনায় ওই ১৩ কিমি পথ একা একা ফিরে এসেছিলাম । বসে পড়েছিলাম মাটিতে । মা জল এগিয়ে দিয়ে  বলেছিল – কি রে , পড়াতে যাসনি ? …

তখনও ভেবে যাচ্ছি  মধু কাকা কি ফিরলো !  চিন্তা হচ্ছিল , ওই অত দূরের রাস্তায় মধু কাকা ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে কোনো দুর্ঘটনা ঘটা্লো না তো !

 সেদিন বেলা অব্দি অপেক্ষা করে অবশেষে সন্ধ্যায় আবগারির সামনে তাকে খুজেঁ পেলাম ।

৫০০ টাকা পেয়েছে  ,  একটা বডি ৫০০ ,  মধু কাকার এই বিপুল পরিশ্রম , এই জার্নি …! মৃতদেহরা কি মধুর সাথে কথা বলে , নইলে ওভাবে আসা যায়না । মধু কাকা বহুবার আমায় দেখেছে , সেদিনও দেখেছে । বাংলা গিলে সেদিন আমায় প্রথম সম্মোধন করলো – কিরে কোথায় চলে গেলি হঠাৎ ? – আমি মাথা নিচু করে বলেছি , আমার সেই নার্ভ নেই মধু কাকা । অট্টহাসিতে মধু কাকা হেসে ওঠে। ” লাশ নিয়ে অনেক প্রাক্টিকাল হলো …”

 লাশ নিয়ে  অনেক প্রাক্টিকাল হলো …

আজ যদি মধু কাকার চেলারা শোনে , খবরের হেডলাইন –  ডোমের চাকরির লাইনে স্নাতক , ইঞ্জিনিয়ার , গবেষক, গোল্ড মেডেলিস্ট … ,

নিশ্চয়ই প্রধান চেলা বাবু উদাত্ত কণ্ঠে বলে উঠবে — বাইশ বছর ধরে আমি গাঢ় মাড়িয়ে চলেছি এইখানে , এই মধু,  ওরা কতদিনের? …

মানবাধিকার ডোম, লকডাউন, সমাজকর্মী, সাইকেল চালক

এই প্রতিবেদনটি প্রিন্ট করুন এই প্রতিবেদনটি প্রিন্ট করুন

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অনুসন্ধান করুন

সংবাদ মন্থন

  • ছিটমহল
  • মাতৃভূমি লোকাল

খবরের মাসিক সূচী

সম্পাদকীয়

নীমা তেনজিনদের স্বপ্ন কি সার্থক হবে ?

একটি রাজনৈতিক সুইসাইড নোট

এই বিভাগের আরও

দেশের খবর

নিজেদের চাষের খবর দিলেন, দিল্লির আন্দোলনের খবর নিলেন সরবেড়িয়ার চাষিরা

গ্রামে বাড়ছে অভাবী বিক্রি। কৃষক মান্ডির হ্যাপার চাইতে চাষির ভরসা কাছের আড়ৎ।

এই বিভাগের আরও

সংস্কৃতির হাল

মরজীবনের গান গাইতে মিলনের অপেক্ষায় থাকে আজাহার ফকিরের অমর মেলা

ঘরে রাখা শস্যের বীজ ভালো আছে কিনা দেখে নেওয়া হয় ‘শস’ পাতার মধ্যে দিয়ে

এই বিভাগের আরও

খবরে দুনিয়া

‘গান গাইবি না, খাবারও পাবি না’// ফ্রান্সের মেনিল আমেলো’র ডিটেনশন ক্যাম্প থেকে অভিবাসীদের এজাহার

মার্কিন মুলুকে নির্বাচন : বার্নি স্যান্ডার্সের প্রচারের একজন সমর্থকের সঙ্গে কিছু আলাপ, কয়েক মাস আগে

এই বিভাগের আরও

পথের খবর

সকালের ডাউন রানাঘাট লোকালে ‘জয় শ্রীরাম’ / ‘ভারতমাতা কী জয়’ গর্জন আর শোনা যাচ্ছে না

জাতীয় পতাকা নামিয়ে দিয়েছে লালকেল্লা থেকে, আপনি দেখেছেন?

এই বিভাগের আরও

মেটা

  • Log in
  • Entries feed
  • Comments feed
  • WordPress.org

সাম্প্রতিক মন্তব্য

  • Soumitra Seth on ময়দা কালীবাড়ি, বহরু
  • Suman mondal on চীনের সাথে চুলের ব্যবসা। বেলডাঙার বিদেশ-ব্যাপারী
  • রাজেশ মাহাতে on আদিবাসী কুড়মি সমাজের তিন জেলায় একদিনের অনশন
  • Dipanjan Das on নতুনহাটের মেছুড়ে জয়নালের কীর্তি

ফোরাম

  • আড্ডা
  • বিষয়ের আলোচনা
  • সংবাদ সংলাপ
  • সাংগঠনিক আলাপ

লে-আউট সহায়তা

সংবাদমন্থন প্রিন্ট >>
 
নমুনা ল্যাটেক>>

songbadmanthanweb [at the rate] gmail.com · যোগাযোগ · দায়দায়িত্ব · Log in