• প্রথম পাতা
  • আন্দোলন
  • কৃষি ও গ্রাম
  • খবরে দুনিয়া
  • চলতে চলতে
  • পরিবেশ
  • শিক্ষা ও স্বাস্থ্য
  • শিল্প ও বাণিজ্য
  • নাবালকথা

সংবাদমন্থন

পাতি লোকের পাতি খবর

  • আমাদের কথা
    • যোগাযোগ
  • পত্রিকার কথা
    • পাক্ষিক কাগজ
    • জানুয়ারি ২০০৯ – এপ্রিল ২০১২
  • মন্থন সাময়িকী
    • মন্থন সাময়িকী নভেম্বর ডিসেম্বর ২০১৪
    • মন্থন সাময়িকী সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ২০১৪
    • সাম্প্রতিক সংখ্যাগুলি
    • সাম্প্রতিক পিডিএফ
    • ২০১২-র আগস্ট অব্দি
  • সংবাদ সংলাপ
  • বিষয়ের আলোচনা

ঘরে রাখা শস্যের বীজ ভালো আছে কিনা দেখে নেওয়া হয় ‘শস’ পাতার মধ্যে দিয়ে

September 16, 2020 admin Leave a Comment

সঙ্ঘমিত্রা ঘোষ। রয়ান, বীরভূম। ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০।#

শ্রাবণ মাস। গর্ভবতী মেঘেরা এখানে সেখানে জন্ম দিচ্ছে বৃষ্টির। বীরভূমের মাটিতে এখন ভিজে হওয়ার গন্ধ। গ্রামগুলোর আশেপাশে বয়ে যাওয়া শুকনো কাঁদোর গুলোয় যৌবন এসেছে। প্রকৃতিতে সৃষ্টি হচ্ছে কতো কিছু। মাঠে মাঠে কলাপাতা রঙের নরম ঘাসের মতো ধানচারারা মাথা তুলছে। গ্রীষ্মের সেই ভৈরব মূর্তি কই! প্রকৃতিতে এখন সবাই সবুজ, শীতল, সজীব, স্বাস্থ্যবতী। শিবঠাকুর এসময় বেজায় খুশি। গ্রামের কুমারী মেয়েরা শুরু করেছে শিবব্রত। এই সব দেখে দেবরাজ ইন্দ্রের খুব দুঃখ। সব মেয়েরা শিব পুজো করে, তাঁর পূজা কেউ করেনা। যেমন ভাবা তেমনি কাজ। ইন্দ্র ডাক দেন অপ্সরা ভঞ্জাবতীকে। তাকে পৃথিবীতে পাঠানো হয় ইন্দ্রপুজো প্রচার করতে। ভঞ্জাবতী পৃথিবীতে এসে হন ভাঁজো।

ভাঁজো মা। দোনাইপুর। বীরভূম। ছবি-প্রতিবেদক।
এখানে তিন ফসলী জমি। উর্বর মাটিতে ফসলের বাড়বাড়ন্ত। বর্ষা এলে ছেলেরা মাঠে যায়, জমি চষে, বীজ বোনে, ফসল ঘরে আনে, আর সেই ফসল উঠোনে মেলে দেয় মেয়েরা। পাতে তুলে দেয় গরম ভাত। ফসলের কামনায় এখানকার মেয়েরা কতো ব্রত করে যুগ-যুগান্ত ধরে। ভাঁজো ব্রত তারই মধ্যে একটি।
শস্যের দেবী, ভাঁজোর ব্রত শুরু হয় ভাদ্রমাসের ইন্দ্র দ্বাদশীর দিন। ‘শস’ পাতা দিয়ে শুরু হয় এই পরব। শস্য পাতা থেকে শস পাতা। ‘শস’ পাতার দিন ভারি আনন্দ হয় কুমারী মেয়েদের। এসব দিনেই তো তাদের মুক্তি। পাড়ার সব কুমারী মেয়েরা মিলে একটা নিমের ডাল জোগাড় করে। নিম ডালে যত্ন করে মাখিয়ে দেয় তেল হলুদ। পুকুর থেকে তুলে আনে শালুক ফুল। শালুক ফুলের মালা জড়িয়ে দেয় নিমের ডালে। তারপর সবাই মিলে যায় গ্রামের পুকুরে অথবা নদীর ধারে। মেয়েরা সেই নিমের কাঠি নিয়ে ডুব দেয় জলে। ডুব দিতে দিতে মুখে মুখে বলে নানা আবোল তাবোল ছড়া। পুকুরের জলে ওঠে হাসির কল্লোল। ছড়ার মধ্যে গ্রামের ছেলেদের নিয়ে চলে রসিকতা। সেই রকমই একটা ছড়া :
ইঁন্দমামা, ইঁন্দমামা(ইন্দ্র)
কিসের গরব করো
আইবুড়ো ছেলেগুলোকে
গারে(গর্ত)ভরতে নারো।
অথবা
শালুক ফুলের কুবুদ্দি
রাতে ছাড়া ফোটে না।
যার সাথে যার লাগ আছে,
সে না এলে মেটে না।
এসব তামাসা মিটলে তারা ফিরে আসে ঘরে।
সেদিন সবাইকে একসঙ্গে খেতে দেওয়া হয়। পাতে থাকে শালুক ফুলের পদ।
তারপর শুরু হয় ‘শস’ পাতা। সার দিয়ে রাখা হয় ছোট ছোট মাটির পাত্র। মাটির হাড়ি ভর্তি করা হয় বালি ও মাটি দিয়ে। একটু একটু জল দিয়ে ভিজিয়ে দেওয়া হয় বালি মাটি। তার উপর ছড়িয়ে দেওয়া হয় নানা রকম শস্যের বীজ। ধান, সর্ষে, মাসকলাই,পাট ও আরো নানা শস্য দিয়ে সাজিয়ে ঢেকে দেওয়া হয় সরা গুলো।
এবার পর পর কয়েকদিন বাড়ির একজন মহিলা দায়িত্ব নিয়ে সন্ধ্যেবেলা ভিজে কাপড়ে, চান করে জল ছিটিয়ে দেন পাত্রে। অন্য আর কেউ দেখতে পায় না সেগুলো। ধীরে ধীরে কদিন পর বীজ থেকে গজায় অঙ্কুর। সেগুলো বেড়ে উঠলে অপূ্র্ব লাগে দেখতে। নির্দিষ্ট দিনে গ্রামের কোনো এক চাতালওয়ালা ঠাকুর তলায় একটা বেদী বানানো হয়। বেদীর উপর একটা লম্বা নিমের কাঠিতে চেলি কাপড় পরিয়ে রূপ দেওয়া হয় দেবীমূর্তির। গলায় দেওয়া হয় শালুকের মালা। বেদীর নীচে দেওয়া হয় সুন্দর আলপনা। এরপর সেই মাটির সরা নামিয়ে দেওয়া হয় বেদীর নীচে গোল করে।
এরপর বাজতে থাকে ঢোল, কাঁসর। গ্রামের মেয়েরা শাড়ি পরে সেজেগুজে কোমর দুলিয়ে বেদীর চারপাশে গোল করে ঘিরে ঘিরে নাচ শুরু করে। ঢুলি থামলে মুখে বলে নানা রকম ছড়া। ছড়া শেষ হলে আবার বাজে ঢোল,কাঁসর।
সেসব ছড়া কোনো বইয়ে লেখা থাকে না, মুখে মুখে ফোটে বছরের পর বছর।
যেমন-
১)” ভাঁজো লো কল কলানি
মাটি লো সরা
ভাঁজোর গলায় দোবো মোরা
পঞ্চফুলের মালা।”
২)”তাল গাছে জল পড়ে টপ টপ টপ
ভাঁজোর মা জল খায় গব গব গব।”
কদিন সন্ধ্যেবেলা এসব নাচ-গানের আসর চলার পর নির্দিষ্ট দিনে বিসর্জন হয় ভাঁজোর। সেদিন ছড়া কাটা হয়-
“কদিনই বা থাকলে ভাজো
আবার কাঁদিয়ে যাও
আবার এসো ভাঁজো মুখের পানে চাও।
নৌকো পাঠাবো মোরা
আসবে হাসিমুখে
তোমাকে ছেড়ে মোরা থাকবো নাকো সুখে।”
বিসর্জনের পর, সেসব মাটির সরার শস্যের টুকরো গুঁজে দেওয়া হয় ঘরের চালের মধ্যে। বৃষ্টি বা কৃষির দেবতা ইন্দ্র কে খুশি করার জন্যই এই পুজো। এছাড়া ঘরে রাখা শস্যের বীজ ভালো আছে কিনা সেটাও দেখে নেওয়া হয় ‘শস’ পাতার মধ্যে দিয়ে। মাটির সরাতে যত ভালো অঙ্কুরিত হয় বীজ, ধরে নেওয়া হয় তার ঘরে ফসল আসে তত বেশি।
‘শস’ পাতা।  ছবি- প্রতিবেদক
এই ভাঁজো নাচের আসরে নানা আদিরসাত্মক ছড়া কাটা হয়।ছোটবেলায় তাই আমার বাড়িতে ভাঁজো নাচ দেখতে যাওয়া বারণ ছিল। আমার বয়সের প্রায় সব মেয়েরা যখন ভাঁজো নাচ করত, আমারও খুব ইচ্ছা হতো নাচতে, সাহস হয়নি কখনো বাড়ির শাসনে। সন্ধেবেলা পড়তে বসলে যেই ঢোল কাঁসর বাজতো, রক্ত চঞ্চল হয়ে যেতো। পিছনের দরজা দিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে কতবার সেসব নাচ দেখতে গেছি। তবে আমাদের বাড়িতে ঠাকুমা শস পাততেন। ঢাকনা দেওয়া মাটির পাত্রগুলো আমার কাছে একটা বিরাট রহস্য ছিল। যেদিন ঠাকুমা সার দিয়ে রাখা মাটির সরা গুলোর ঢাকনা খুলে দিত আর দেখতাম কচি কচি অঙ্কুর বেরিয়েছে বীজ থেকে, কী অবাক যে লাগতো! যে বীজ থেকে যত বেশি অঙ্কুর বেরোতো ধরে নেওয়া হতো সেই ফসল বেশি হবে সেবার।দুর্গাপুজো কালীপুজোর মতো বড়-বড় পুজোর থেকে গ্রামের এইসব উৎসব গুলোর প্রতি আমার আকর্ষণ ছিল অনেক বেশি।আমার দেখা আমার অঞ্চলের এই উৎসবের কথা লিখলাম। এই উৎসব বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন ভাবে পালন করা হয়। কোন নির্দিষ্ট নিয়মের কড়াকড়ি নেই। শুনেছি বীরভূম ছাড়াও বাঁকুড়া বর্ধমানের বিভিন্ন অঞ্চলে এই পুজো হয়। কোনো কোনো গবেষক মনে করেন ভাঁজো শব্দটি এসেছে ভাদ্র শব্দ থেকে সমীভবন হয়ে- ভাদ্র>ভাজ>ভাজো>ভাঁজো।
আবার কেউ কেউ মনে করেন, এই নাচটি কোমর ভাঁজ করে দুলে দুলে নাচা হয়, এই কোমরের ভাঁজ থেকেই ভাঁজো শব্দের উৎপত্তি।

(আমাদের গ্রামে আর ভাঁজো নাচ হয় না। দু-তিন বছর আগেও হতো এই পুজো। আশপাশে কিছু কিছু গ্রামে এখনো হয় শুনলাম।আমার স্মৃতিতে আবছা হয়ে ছিলো ছবিগুলো, ভাঁজোর ছড়া ও ‘শস’ পাতার পদ্ধতিটি ভালো করে মনে পরিয়ে দিয়েছে আমার মাসি কল্পনা ঘোষ ও বৌদি লালটুকি ঘোষ।)

সংস্কৃতি

এই প্রতিবেদনটি প্রিন্ট করুন এই প্রতিবেদনটি প্রিন্ট করুন

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অনুসন্ধান করুন

সংবাদ মন্থন

  • ছিটমহল
  • মাতৃভূমি লোকাল

খবরের মাসিক সূচী

সম্পাদকীয়

নীমা তেনজিনদের স্বপ্ন কি সার্থক হবে ?

একটি রাজনৈতিক সুইসাইড নোট

এই বিভাগের আরও

দেশের খবর

নিজেদের চাষের খবর দিলেন, দিল্লির আন্দোলনের খবর নিলেন সরবেড়িয়ার চাষিরা

গ্রামে বাড়ছে অভাবী বিক্রি। কৃষক মান্ডির হ্যাপার চাইতে চাষির ভরসা কাছের আড়ৎ।

এই বিভাগের আরও

সংস্কৃতির হাল

মরজীবনের গান গাইতে মিলনের অপেক্ষায় থাকে আজাহার ফকিরের অমর মেলা

সর্নস্থলের মাটি চুরি করে, জোর করে হিন্দু পরিচয় দিয়ে রামরাজত্ব চালানোয় বিরক্ত আদিবাসী সমাজ

এই বিভাগের আরও

খবরে দুনিয়া

‘গান গাইবি না, খাবারও পাবি না’// ফ্রান্সের মেনিল আমেলো’র ডিটেনশন ক্যাম্প থেকে অভিবাসীদের এজাহার

মার্কিন মুলুকে নির্বাচন : বার্নি স্যান্ডার্সের প্রচারের একজন সমর্থকের সঙ্গে কিছু আলাপ, কয়েক মাস আগে

এই বিভাগের আরও

পথের খবর

সকালের ডাউন রানাঘাট লোকালে ‘জয় শ্রীরাম’ / ‘ভারতমাতা কী জয়’ গর্জন আর শোনা যাচ্ছে না

জাতীয় পতাকা নামিয়ে দিয়েছে লালকেল্লা থেকে, আপনি দেখেছেন?

এই বিভাগের আরও

মেটা

  • Log in
  • Entries feed
  • Comments feed
  • WordPress.org

সাম্প্রতিক মন্তব্য

  • Soumitra Seth on ময়দা কালীবাড়ি, বহরু
  • Suman mondal on চীনের সাথে চুলের ব্যবসা। বেলডাঙার বিদেশ-ব্যাপারী
  • রাজেশ মাহাতে on আদিবাসী কুড়মি সমাজের তিন জেলায় একদিনের অনশন
  • Dipanjan Das on নতুনহাটের মেছুড়ে জয়নালের কীর্তি

ফোরাম

  • আড্ডা
  • বিষয়ের আলোচনা
  • সংবাদ সংলাপ
  • সাংগঠনিক আলাপ

লে-আউট সহায়তা

সংবাদমন্থন প্রিন্ট >>
 
নমুনা ল্যাটেক>>

songbadmanthanweb [at the rate] gmail.com · যোগাযোগ · দায়দায়িত্ব · Log in