এস পি উদয়কুমারের কথাবার্তার শেষাংশ, ইংরেজি থেকে বাংলা অনুবাদ করেছেন জিতেন নন্দী#
কুডানকুলাম ১ ও ২ নং চুল্লি যে বিফল হয়েছে, এটা আমরা সেখানকার কর্মরত শ্রমিকদের কাছ থেকে জানতে পেরেছি। প্রথমত, তারা কোনোরকম ইন্সপেকশন বা তদন্ত না করে তাড়াহুড়ো করে কমিশনিংয়ের মাধ্যমে প্রজেক্টটা চালু করতে গেছে। এখন আর ইনস্টলেশন বা পার্টসগুলো পরীক্ষা করে দেখার সুযোগ নেই, কারণ ইতিমধ্যে চুল্লি অ্যাক্টিভেট করা হয়ে গেছে। সন্দেহ করা যায় যে কংগ্রেসের লোকজন কমনওয়েলথ গেমস ইত্যাদির মতো কুডানকুলাম প্রজেক্ট থেকেও প্রচুর চুরি করেছে। এখন ধীরে ধীরে তারা স্বীকার করতে শুরু করেছে যে চুল্লি দুটোর যন্ত্রাংশ নিয়ে সমস্যা রয়েছে। তারা এখন বলছে, অনেক দুর্নীতি এবং অনিয়ম হয়েছে। তারা রাশিয়ার একটা কলঙ্কিত কোম্পানি জিওপোটর থেকে যন্ত্রাংশ কিনেছিল। প্রথমে অস্বীকার করলেও এখন তারা বলছে, হ্যাঁ আমরা জিওপোটর থেকে কিছু যন্ত্রাংশ কিনেছি। ডিএই থেকে জনৈক এ পি জোশী সেন্ট পিটার্সবুর্গে গিয়ে জিওপোডলজ-এর কর্মকর্তাদের সঙ্গে মিটিং করেন। আমরা ডিএই এবং এনপিসিআইএল-এর কাছে আরটিআই করার পর তারা এটা স্বীকার করতে বাধ্য হয়। জিওপোডলজ নিচু মানের স্টিল কম দামে উঁচু দর দেখিয়ে কেনে এবং সেই স্টিল দিয়ে যন্ত্রাংশ তৈরি করে। এদের প্রকিওরমেন্ট ডাইরেক্টরের জেলও হয়েছে। কয়েক সপ্তাহ আগে ডিএই-র প্রধান রতন কুমার সিন্হা স্বীকার করেন, তাঁরা কুডানকুলামের টারবাইনের যন্ত্রাংশের কিছু পরিবর্তন করছেন। রোসাটম সেই টারবাইন বানিয়েছিল। রোসাটমের টারবাইন নিয়ে চীনের তিয়ানওয়ান চুল্লিতে সমস্যা হয়েছে। তারা ইরানের বুশহর-এ চুল্লি বানিয়েছিল। চীনারা অবশ্য রাশিয়ান কোম্পানিকে সেই টারবাইন বদল করে দিতে বাধ্য করে। আমাদের দেশের ক্ষেত্রে ডিএই, এনপিসিআইএল, রোসাটম, কংগ্রেস, বিজেপি, রাশিয়ান সরকার, ভারত সরকার সকলে ব্যাপারটা ধামাচাপা দিতে চাইছে। সকলেই এই প্রজেক্ট থেকে হাতিয়ে নিয়েছে।
প্রত্যেকেই সমস্ত তথ্য গোপন করতে চাইছে। একজন বলেছিল, আমরা ১০৫০ মেগাওয়াট উৎপন্ন করেছি। যেখানে চুল্লির উৎপাদনক্ষমতা ১০,০০০ মেগাওয়াট, সেখানে তারা ১০৫০ মেগাওয়াট তৈরি করেছে! তাহলে তো তাদের লোকসানই হচ্ছে। এখন ওরা বলছে, রতন কুমার সিন্হা সরকারিভাবে স্বীকার করেছেন যে আমাদের যন্ত্রপাতি নিয়ে কিছু সমস্যা রয়েছে। আমরা সেগুলো পালটে ফেলছি। রাশিয়ান যন্ত্রাংশের বদলে আমরা নিজেরাই ওগুলো তৈরি করে নিচ্ছি। সম্প্রতি ভাবা অ্যাটমিক রিসার্চ সেন্টারের শেখর বসু জানান, হ্যাঁ কুডানকুলাম প্রজেক্ট নিয়ে আমাদের কিছু সমস্যা রয়েছে। এটা পরমাণু শক্তি প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটা প্রথম সরাসরি স্বীকারোক্তি। এটা হল প্রথম চুল্লি সম্পর্কে বক্তব্য। দ্বিতীয় ইউনিট সম্পর্কে ওরা বলেছিল যে ওটা ক্রিটিকালিটিতে পৌঁছাবে ২০১৩ সালে, এরপর বলল ২০১৪, তারপর ২০১৫, ২০১৫-র সেপ্টেম্বর, এখন ওটা ২০১৫-র শেষে হওয়ার কথা হচ্ছে। অতএব ২নং প্রজেক্ট নিয়েও সমস্যা রয়েছে। সমস্ত দিক থেকেই জানা যাচ্ছে যে ১ ও ২নং ইউনিট নিয়ে ঝামেলা রয়েছে। এইভাবে মানুষকে ধোঁকা দিয়ে ওরা জনসাধারণের অর্থ লুঠ করে চলেছে। একটা জিনিস এইসব লোকগুলো বলে, কুডানকুলাম হল একটা বিশ্ববিদ্যালয়। এখান থেকে ভারতের পরমাণু প্রতিষ্ঠান মূল্যবান শিক্ষা লাভ করছে। একথার মানে হল, ওরা আমাদের টাকায় সমস্ত বোকামি করে শিক্ষা লাভ করে চলেছে! এটা ওদের কাছে একটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা। এখন রাশিয়ার চাপে ওরা আরও দশটা চুল্লি কিনতে চলেছে। আমি রাশিয়ার প্রতি ওদের কৃতজ্ঞতার মানে বুঝি না। মনমোহন সিং বলেছিলেন, এখন নরেন্দ্র মোদি আর ডিপার্টমেন্ট অফ অ্যাটমিক এনার্জির বহু কর্তাব্যক্তি বলছেন, যখন সারা দুনিয়া জুড়ে অনেকেই আমাদের পরমাণু শক্তি সংক্রান্ত কিছু বেচতে চাইছে না, তখন রাশিয়া এগিয়ে এসে আমাদের সাহায্য করছে। আর ওদের কৃতজ্ঞতার প্রতিদান স্বরূপ ওরা জনসাধারণের কষ্টার্জিত অর্থ ওদের হাতে তুলে দিচ্ছে। ওরা রাশিয়ার কাছ থেকে আইএনএস বিক্রমাদিত্য এয়ারক্রাফট কেরিয়ার কিনেছে বিপুল অর্থের বিনিময়ে। ৫ বিলিয়ন ডলারের ওপর খরচ করা হল, যা সম্পূর্ণ হাস্যকর। দেশের বিভিন্ন জায়গায় এইসব ফাইটার প্লেনগুলো প্রায়শই ভেঙে পড়ছে। অথচ ওরা আরও আরও চুক্তি করে আরও আরও সামরিক সরঞ্জাম কিনে চলেছে। ১২টা পরমাণু চুল্লি কিনে রাশিয়ার অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার চেষ্টা চলছে। যে অর্থনীতি টলটলায়মান তাকে এদেশের রাজনীতিবিদ এবং আমলারা চাঙ্গা করে তুলতে চাইছে। এমনই অবস্থা, রাশিয়ায় শ্রমিকদের মাইনে পর্যন্ত দেওয়া যাচ্ছে না।
নরেন্দ্র মোদি এইসব চুক্তির ব্যাপারে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছেন। তিনি অস্ট্রেলিয়ায় গেছেন প্লুটোনিয়াম কিনতে। নরেন্দ্র মোদি এবং বিজেপির দ্বিচারিতা উল্লেখযোগ্য। ২০১৪ সালের নভেম্বর মাসে শক্তিমন্ত্রী পীযুশ গোয়াল একটা বিবৃতি দেন, ‘পরমাণু প্রযুক্তি একটা বেমানান প্রযুক্তি, খুবই খরচসাপেক্ষ এবং বিপজ্জনক। কিছু রাষ্ট্র এই বেমানান প্রযুক্তি আমাদের চড়া দরে বেচতে চাইছে।’ এই বিবৃতি ‘দ্য হিন্দু’ পত্রিকার প্রথম পাতায় বেরিয়েছিল, যেটা পরমাণু শক্তির পক্ষের একটা কাগজ। আমরা অত্যন্ত অবাক হয়ে গেলাম। কন্যাকুমারী থেকে কাশ্মীর পর্যন্ত আমাদের ট্রেনযাত্রা চলাকালীন এই রিপোর্ট দেখে আমরা ভাবলাম, কী করে এমন একটা বিবৃতি দেওয়া হল! ঠিক দু-সপ্তাহ পরেই আমরা একটা শিক্ষা পেলাম। নরেন্দ্র মোদির অস্ট্রেলিয়া সফরে আদানি ছিলেন তাঁর সফর-সঙ্গী। আদানি একটা কয়লাখনি কেনার জন্য অস্ট্রেলিয়া যাচ্ছিলেন এবং ভারত সরকার তাঁকে এজন্য ১ বিলিয়ন ডলার ঋণ বরাদ্দ করে। এই ঋণের প্রথম কিস্তিতে ৬০০০ কোটি ডলার তাঁকে দেওয়া হয়েছে। সরকার আদানির কাছ থেকে এই কয়লা কিনতে চাইছে আর আদানি সেটা অস্ট্রেলিয়া থেকে কিনবে। এই কারণেই তারা পরমাণু চুক্তির ব্যাপারে একটু ধীরে এগোচ্ছে। আদানির পক্ষে খেলা ছাড়া এর অন্য কারণ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। এখন এই চুক্তির ব্যাপারে কী হবে আমি জানি না। কারণ অস্ট্রেলিয়ার মানুষ ওখানে কয়লাখনন চায় না। এই প্রজেক্টের তারা বিরোধিতা করছে। ফলে নরেন্দ্র মোদি ফের পরমাণু-ঐকতানে ফিরে এসেছেন। তিনি কাজাখস্তানে গিয়ে মনমোহন সিংয়ের করা চুক্তিকে পুনরুজ্জীবিত করে আরও প্লুটোনিয়ামের ব্যবস্থা করেছেন। ওরা চিন্তিত যে এইসব চুক্তি আর পরমাণু চুল্লি নিয়ে ওরা কী করবে। কিছু লোক আমাদের বলছে যে তোমরা এসব নিয়ে বেশি চিন্তা কোরো না, কিছুই হবে না। এরা ভাবছে যে মনমোহন সিং যেমন বিধানসভা-লোকসভাকে এড়িয়ে এইসব চুক্তি করে পরমাণু বিষয়টাকে নিজের সৎ-সন্তান হিসেবে বিবেচনা করে এসেছেন, আগামী পাঁচ-দশ বছরে নরেন্দ্র মোদিও সেই রাজনৈতিক ঐতিহ্যকেই রক্ষা করে চলবেন। তাই এরা এসব জিনিসকে কোনো গুরুত্ব দিতে চায় না। এটা হয়তো সত্যও হতে পারে। আমরা কিন্তু এই যুক্তিতে সন্তুষ্ট হয়ে বসে থাকতে পারি না। আমরা যদি তাৎপর্যপূর্ণভাবে এসবের প্রতিরোধ না করি, তাহলে তার মাঝেই ভ্রান্তিবশত খারাপ কিছু ঘটে যেতে পারে। আমরা একে গুরুত্ব দিয়ে জনসাধারণকে সমাবেশিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
দক্ষিণে তামিলনাশ্তু এবং কেরালায় আমরা ঘুরে ঘুরে স্কুল-কলেজের ছাত্রদের মধ্যে প্রচার করার চেষ্টা করেছি। মিডিয়া এতে খুব বেশি উৎসাহী না হলেও ততটা উদাসীনও নয়। তারা একেবারে ব্ল্যাকআউট না করে এসব কর্মসূচির কিছু কিছু রিপোর্ট করেছে। ‘পিপলস মুভমেন্ট এগেনস্ট নিউক্লিয়ার এনার্জি’র পক্ষ থেকে আমরাও ইস্যুটাকে জীবন্ত রাখার চেষ্টা করেছি। কেরালাতে সম্প্রতি রাজ্য স্তরে একটা কনভেনশনও হয়েছে ত্রিবান্দ্রমের কাছে। কেরলিয়ানরা নিজেদের রাজ্য সম্বন্ধে খুব সজাগ। তারা মনে করে যে কেরালা ঈশ্বরের নিজের দেশ। তারা জানে যে নিজেদের প্রাকৃতিক সম্পদ কীভাবে রক্ষা করতে হবে। তারা স্যান্ড-মাইনিং করতে দেয় না ওখানে। তামিলনাশ্তুতে কিন্তু তা চলছে। কেরালাতে ৪৫টা নদী আছে, অথচ ওদের বালি যায় তামিলনাশ্তু থেকে। ওরা খুব বুদ্ধিমান। কেউ কেউ মনে করে যে কুডানকুলাম হল বিদেশ! অথচ সেটা কেরালার খুব কাছেই। আমরা তাই ওদের বলি, যদি সরকার ৮-১০টা চুল্লি কুডানকুলামে চালু করে দেয় এবং যদি বাতাসে আয়নাইজিং পার্টিক্ল সিসিয়াম, আয়োডিন, স্ট্রনশিয়াম ইত্যাদি বাহিত হয়, এখানে সমুদ্র থাকার জন্য বাতাস খুবই আর্দ্র এবং যে তেজস্ক্রিয়তা ছড়াবে তা তোমাদের রাজ্যেও প্রবেশ করবে। সেই বাতাসে তোমরাও শ্বাস নেবে। দ্বিতীয়ত, সমুদ্রের জলের গতি তামিলনাশ্তু থেকে কেরালার দিকে চলে। ২০০৪ সালের সুনামির সময় যেসব মৃতদেহ তামিলনাশ্তু থেকে সমুদ্রে ভেসে গিয়েছিল, তার অনেকগুলোই কেরালার সমুদ্রতটে পাওয়া গেছে। অতএব যে কোনো জঞ্জাল যা কুডানকুলামের সমুদ্র উপকূল থেকে ভেসে যাবে, তা কেরালায় গিয়ে জমা হবে। এই দুটো বিষয় কেরালার মানুষকে ভাবিয়েছে।
দেশের অন্যপ্রান্তে গুজরাতের মিঠি ভিরদিতে কিছু কাজ হয়েছে। কৃষ্ণকান্ত কিছুটা কাজ করেছেন। মেঘালয়ে খাসি স্টুডেন্টস ইউনিয়ন ইউরেনিয়াম মাইনিং প্রজেক্টের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সংগঠিত করছে। এখনও পর্যন্ত তারা সেরকম শক্তিশালী নয়। পুনেতে একটা বড়ো সভা হয়েছে, যেখানে কলকাতা থেকে শান্তনু চক্রবর্তী এবং প্রদীপ দত্ত অংশ নিয়েছেন। আমিও এখানে এসেছি যাতে এখানকার আন্দোলনটা জোরদার হয়। কিন্তু কোভাডার অবস্থাটা ভালো নয়। এক-দুজন ব্যক্তি কাজ করছেন। হরিয়ানার ফতেহাবাদে যে দুটো চুল্লি তৈরি হচ্ছে, সেখানে ভাকরা শাখা ক্যানাল থেকে জল নেওয়া হচ্ছে। একটা জলসেচের খাল থেকে পরমাণু প্রকল্পের জন্য জল নেওয়া অত্যন্ত হাস্যকর একটা ব্যাপার। বৃষ্টি না হলে তো সেই খালে জল আসবে না। সেটা একটা বড়ো সমস্যা। অথচ ওরা এই প্রকল্পটাকে চালিয়ে যাচ্ছে। এখানেও কয়েকজন ব্যক্তি লড়াই চালাচ্ছেন। মধ্যপ্রদেশের চুটকা এবং রাজস্থানের রাওয়াতভাটা এবং কর্নাটকের কাইগাতে সেরকম প্রতিরোধ নেই। পুনাতে গিয়ে আমরা ‘ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স অফ অ্যান্টি নিউক্লিয়ার মুভমেন্টস’ (ন্যাম)-কে পুনরুজ্জীবিত করার কাজ করেছি যাতে জনসাধারণকে পরমাণু শক্তির বিরুদ্ধে জড়ো করা যায়। সমস্ত রাজ্যে গিয়ে আমরা পরমাণু শক্তি বিরোধী কর্মীদের সঙ্গে কথা বলছি। কন্যাকুমারী থেকে কাশ্মীর এবং কন্যাকুমারী থেকে ডিব্রুগড়, দুটো প্রচার অভিযান ভালো সাফল্য পেয়েছে। আমরা ইংরেজি আর আটটা ভারতীয় ভাষায় প্রচারপত্র ছাপিয়ে বিলি করেছি। আমরা যখনই কোনো স্টেশনে পৌঁছেছি, জনা কুড়ি কর্মী সেই প্রচারপত্র বিলি করেছি। দেখেছি লোকে সেই প্রচারপত্র পড়েছে। লোকে জানতে চাইছে, আমাদের গাফিলতি হল আমরা লোককে জানাতে চাইছি না। আমাদের রাজনৈতিক নেতারা মনে করে, মানুষ অশিক্ষিত, তাদের কিছু জানিয়ে লাভ নেই। এটা সত্য নয়। লোকে অশিক্ষিত হলেও বুদ্ধি রাখে। মাত্র দুটো দল কিছুটা ভূমিকা নিয়েছে, তৃণমূল কংগ্রেস আর শিবসেনা। এদের অবস্থানও স্পষ্ট নয়। আমি তৃণমূল কংগ্রেসের শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে কথা বলতে চেষ্টা করেছি। কুডানকুলাম বিরোধী আন্দোলনের সময় আমি মমতা ব্যানার্জিকে সেখানে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। কোনো ফল হয়নি। আমি ওঁর ভাই দিব্যেন্দু অধিকারীকে গতকাল হরিপুরের সভায় বলেছি যে আপনি কুডানকুলামে আসুন। তিনি বললেন, আমি পার্টিকে জিজ্ঞেস করব, অনুমতি পেলে অবশ্যই আসব। আমি শিবসেনার উদ্ধব ঠাকরের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছি। তিনি আমাকে মহারাষ্ট্র সরকারের মন্ত্রী সুভাষ দেশাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে বললেন। সুভাষ দেশাই আমাকে এসএমএস করে জানালেন, হ্যাঁ আমরা একই সমস্যা নিয়ে লড়ছি, আমরা দেখা করব। আমরা পুনায় যাওয়ার আগে মুম্বইয়ে ওদের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ওখানে বন্যা হওয়ায় আমরা যেতে পারিনি। আমরা কিছুটা দায়িত্ব নিয়েই বলতে পারি, ভারতের জনসাধারণ পরমাণু শক্তির পক্ষে নয়। আমরা যেখানেই গেছি, এই বার্তাটা পেয়েছি।
ইডিনথাকারাইয়ে কুডানকুলাম পরমাণু কেন্দ্রের বিরুদ্ধে এখনও অনশন চলছে। প্রত্যেকদিন ৫০ থেকে ২০০ জন পর্যন্ত মানুষ ওখানকার লড়াইয়ের ছাউনিতে জড়ো হয়। আমি, পুষ্পরায়ন আর অন্যান্য কয়েকজন বন্ধু গ্রামে থাকছি না। আমরা বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে কাজটা করছি। সারা দেশ জুড়ে কাজ করতে গিয়ে ইডিনথাকারাইয়ের ওপর নজরটা কম পড়ছে। আমরা ওখানে কিছু বড়ো কর্মসূচি নিচ্ছি, যেমন হিরোশিমা দিবসে ওখানে একটা জমায়েত হবে। দু-সপ্তাহ আগে আমি ওখানে গিয়েছিলাম। ছাউনির প্যান্ডেলটা আবার নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছে। স্থানীয় সক্রিয় মহিলা কর্মীরা প্রতিদিনই ওখানে আসেন। ১০-১২ জুলাই আমরা তামিলনাশ্তুতে ট্রেনে প্রচার করেছিলাম। ৩০,০০০ প্রচারপত্র আমরা বিলি করেছি। যেখানেই গেছি, আমরা অনেক মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পেরেছি। সমস্ত টিভি চ্যানেল এবং খবরের কাগজ আমাদের কর্মসূচির রিপোর্ট করেছে। ৩৮০টা মামলা আমাদের বিরুদ্ধে ছিল। তামিলনাশ্তু সরকার আরও ২১৩টা যোগ করেছিল। প্রথমে ২৩৫টা মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছিল। ২১৩টা নিয়ে ওরা লড়েনি, বাকি ২৩টা মামলায় আমরা মাদ্রাজ হাইকোর্টে গেছি। রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ, ষড়যন্ত্র ইত্যাদি অভিযোগ সহ আরও ১৪০টা মামলা আমাদের বিরুদ্ধে রয়েছে। এখন ওরা আদালতের শমন পাঠাতে শুরু করছে। আমার আইনজীবী জানিয়েছেন যে এরকম ৩০টা শমন ওরা পাঠাচ্ছে যাতে আমি স্বাধীনভাবে চলাফেরা না করতে পারি। সামনে অবশ্য রাজ্যের নির্বাচন আছে। আমরা সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাস নাগাদ প্রচার শুরু করব। কুডানকুলামের প্রসার পরিকল্পনা নিয়ে একটা অবস্থান ওদের নিতেই হবে।
কলপক্কমে ওরা তিনটে প্রোটো টাইপ ফাস্ট ব্রিডার রিঅ্যাক্টর বানাতে চাইছে, পৃথিবীর কোথাও এই চুল্লি চলছে না। এমনকী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও যেটা শুরু হয়েছিল, সেটা বন্ধ করা হয়েছে। আমাদের দেশের এই জোকাররা সেই জিনিস কলপক্কমে তিনটে বানাতে চাইছে। আমাদের তামিলনাশ্তুর ট্রেনযাত্রা আমরা কলপক্কমে গিয়ে শেষ করেছি। ওরা পুলিশ দিয়ে আমাদের কলপক্কমে ঢুকতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। আমরা ঢুকে গিয়ে গ্রামে যাই, সেখানে প্রচারপত্র বিলি করি এবং একটা বাড়ির সামনে গিয়ে সভা করি। দু-সপ্তাহ পরেই কলপক্কমে একটা বড়ো জনসভা সংগঠিত হয়। কলপক্কমের কর্তৃপক্ষ চিন্তায় পড়ে যায়।
এখন ওরা বলছে যে মধ্য তামিলনাশ্তুর থেনি জেলার পট্টিপুরমে ওরা নিউট্রিনো প্রজেক্ট করবে। নিউট্রন পার্টিকলগুলোকে উচ্চ গতিতে পরস্পরের সঙ্গে সংঘর্ষ ঘটানো এবং এর ফলাফলকে পরিমাপ করার এই পরীক্ষাকে মার্কিন সরকারের এনার্জি ডিপার্টমেন্টের ফার্মিল্যাবের পক্ষ থেকে সম্পন্ন করা হচ্ছে। ভারত সরকার ১৫০০ কোটি টাকা খরচ করছে এই প্রকল্পের জন্য। আমরা ওদের জিজ্ঞাসা করেছি, আমেরিকানদের কি এই প্রকল্প হাতে নেওয়ার মতো অর্থ নেই? আমরা কেন এটা হাতে নিয়েছি? এই পরীক্ষাতে তো আমেরিকার লাভ। কেরালার এক সিপিএম কর্মী উত্তর দিয়েছেন, না, এটা বিজ্ঞানের স্বার্থে করা হচ্ছে। আমরা বললাম, কেন আমরা সাম্রাজ্যবাদের সঙ্গে সমঝোতা করব? তাঁর যুক্তি হল, বিজ্ঞানের স্বার্থে। প্রকৃতিতে এই অদৃশ্য নিউট্রিনো পার্টিকল সমস্ত দিকে প্রবাহিত হয় এবং আমাদের দেহের মধ্যে দিয়ে যায় কোনোরকম আয়নাইজেশন না করেই। তার ফলে কোনো ক্ষতি আমাদের হয় না। আমাদের বিজ্ঞানীরা এখন কৃত্রিম নিউট্রিনো তৈরি করার চেষ্টা করছেন। …
এছাড়া নিউট্রিনো কর্তৃপক্ষ তামিলনাড়ু সরকারের কাছে পলিউশন কন্ট্রোল বোর্ডের ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেছিল। তারা সেখানে যা উল্লেখ করেছে তাতে নিউট্রিনো প্রজেক্ট না বলে একে বলেছে নিউক্লিয়ার ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্রজেক্ট। অর্থাৎ তারা এই তথাকথিত নিউট্রিনো প্রকল্প কয়েক বছর চালাবে। এরপর সমস্ত পরমাণু চুল্লি থেকে সমস্ত পরমাণু বর্জ্য একত্রিত করে সেখানে জমা করবে। যখন সুপ্রিম কোর্টে কুডানকুলামের মামলার শুনানি হয়েছিল, আদালত প্রশ্ন করেছিল যে কুডানকুলামের বর্জ্য কোথায় ফেলা হবে? ডিপার্টমেন্ট অফ অ্যাটমিক এনার্জি একটা এফিডেভিট করে জানিয়েছিল যে তারা কর্নাটকের কোলার গোল্ডফিল্ডে বর্জ্য ফেলবে। সঙ্গে সঙ্গে কর্নাটকের কংগ্রেস, বিজেপি, এডিএমকে সবাই এর বিরুদ্ধে সরব হয়। ক্যাবিনেট মন্ত্রী বীরাপ্পা মইলি বলেছিলেন, কর্নাটকের কোথাও এই বর্জ্য ফেলতে দেওয়া হবে না। কর্নাটকের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জগদীশ সেটার একই কথা বলেছিলেন। অতএব এফিডেভিট প্রত্যাহার করা হল। সুপ্রিম কোর্ট বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে এই প্রশ্ন এড়িয়ে গেল, যদি কোলার গোল্ডফিল্ডে না ফেলা হয় তো কোথায় সেই বর্জ্য যাবে? এত বড়ো প্রসার কর্মসূচির ফলে এত যে বর্জ্য তৈরি হবে, কোথায় যাবে সেই বর্জ্য? কিন্তু সেই প্রশ্ন বিচারপতিরা করলেন না। এখন আমরা সন্দেহ করছি যে এই নিউট্রিনো প্রজেক্ট আসলে ডিপ জিওলজিকাল রিপোসিটরি হিসেবে সমস্ত বর্জ্য ফেলার জন্য বিবেচিত হবে। আমাদের এই সন্দেহের পিছনে আর একটা কারণ হল, ওরা মাদুরাইয়ে একটা নিউক্লিয়ার ওয়েস্ট রিসার্চ সেন্টার তৈরি করেছে যেটা ওই নিউট্রিনো প্রজেক্ট থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে। আমাদের সন্দেহ যে মাদুরাই অফিস প্রশাসনিক সদর দপ্তর হিসেবে এই বর্জ্য জমা করার ব্যাপারে ভূমিকা নেবে। …
mitra chatterjee says
good reporting..