সংবাদমন্থন প্রতিবেদন। ৩১ অগাস্ট, ২০২০।#
১৯১৯ সালে গান্ধিজী আদালত অবমাননার দায়ে অভিযুক্ত হয়েছিলেন। ১৯২১ এ সুকুমার রায়ের ‘হ য ব র ল’ প্রকাশিত হয়। যার একটি অংশে লেখক বলছেন,
শেয়াল জিজ্ঞাসা করল, ‘তুমি মোকদ্দমার কিছু জান ?’ হিজিবিজ্বিজ্ বলল, ‘তা আর জানি নে ? একজন নালিশ করে, তার একজন উকিল থাকে, আর একজনকে আসাম থেকে নিয়ে আসে, তাকে বলে আসামী, তারও একজন উকিল থাকে । এক-একদিকে দশজন করে সাক্ষী থাকে । আর একজন জজ থাকে, সে বসে বসে ঘুমোয় ।’
প্যাঁচা বলল, কক্ষনো আমি ঘুমোচ্ছি না, আমার চোখে ব্যারাম আছে তাই চোখ বুজে আছি ।’হিজিবিজ্বিজ্ বলল, আরও অনেক জজ দেখেছি, তাদের সক্কলেরই চোখে ব্যারাম ।’ বলেই সে ফ্যাক্ ফ্যাক্ করে ভয়ানক হাসতে লাগল ।…
আজ বেলা সাড়ে বারোটায় অরুণ মিশ্র প্রশান্ত ভূষণের এক টাকা জরিমানা ঘোষণা করলেন। ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে না দিলে তিন মাস কারাবাস এবং তিন বছর ওকালতি করতে পারবেন না।
সাজার ফল হতে পারে, উনি শহিদ হবেন। দয়া করে সেটা করবেন না। উনি শহিদ হতে চান না।
জিতেন নন্দী। ২৫ অগাস্ট, ২০২০।#
আজ সকাল এগারোটা কুড়িতে উঠেছিল ২০০৯ সালের তেহলকা পত্রিকায় দেওয়া প্রশান্ত ভূষণের সাক্ষাৎকারে আদালত অবমাননা হওয়ার অভিযোগের মামলা। সামান্য শুনানির পর এই মামলা অন্য এক যথাযোগ্য বেঞ্চে স্থানান্তরিত করে ১০ সেপ্টেম্বর শুনানির দিন ঘোষণা হয়। বিচারপতি অরুণ মিশ্র বলেন, এই শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল ছাড়াও আরও কিছু বন্ধুর সহায়তা দরকার হতে পারে।
এরপর বারোটা আটত্রিশ থেকে ছিল প্রশান্ত ভূষণের দুই টুইটার মন্তব্যে আদালত অবমাননার অভিযোগে মামলার সাজার পরিমাণ ঘোষণার শুনানি। গতকাল লিখিত আবেদনে প্রশান্ত জানিয়েছিলেন যে তিনি ক্ষমাপ্রার্থী নন। প্রবীন বিচারপতি রাজীব ধাওয়ান লিখিত আবেদন করে এই মামলার রায়টি রিকল অর্থাৎ পুনরায় নতুন করে অন্য বেঞ্চে শোনার কথা বলেন। আজ প্রথমে বিচারপতি অরুণ মিশ্র অ্যাটর্নি জেনারেল ভেনুগোপালকে বলেন, ‘কী করা যায়? আপনি আমাদের গাইড করুন।’ ভেনুগোপাল মোদ্দা যা বলেন তা হল, ২০০৯ সালের মামলায় প্রশান্ত দুঃখপ্রকাশ করেছেন। তাহলে এবার তিনি তাঁর অভিযোগ তুলে নিন। মিশ্র তিরিশ মিনিট সময় দিয়ে বলেন, প্রশান্ত আর ওঁর পক্ষে ধাওয়ান ভেবে দেখুন।
এরপর রাজীব ধাওয়ান বলেন : “আপনারা ওঁর [প্রশান্তের গতকালের] বিবৃতিকে প্রশ্ন করতে পারেন না।https://songbadmanthan.com/supplementary-statement-by-prashant-bhushan/
তিনি বলেছেন যে তিনি এই আদালতের একজন আধিকারিক এবং তিনি নিজের আন্তরিক বিশ্বাসকে প্রকাশ করেছেন। …[প্রথম টুইট সম্বন্ধে]ভূষণ বলেননি যে আদালত কাজ করেনি। তিনি কেসগুলোর অগ্রাধিকার নিয়ে মন্তব্য করেছেন। … ‘অ্যাপলজি’ শব্দটার বিস্তৃত পরিসরে একটা আন্তরিক ব্যাখ্যা আসা উচিত। যদি ভূষণের বিবৃতিটা সামগ্রিকভাবে পড়া যায়, তিনি বলেছেন তাঁর বিচার ব্যবস্থা সম্বন্ধে উচ্চতম মর্যাদা রয়েছে। কিন্তু বিগত চারজন প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে একটা সমালোচনা রয়েছে। আমরা সকলেই গত ৬ বছরে এই আদালতে যা ঘটেছে তা নিয়ে অসুবিধায় পড়েছি। আমি এই আদালতের বহু রায় নিয়ে গর্বিত। কিন্তু একই সঙ্গে অন্য বহু রায় নিয়ে গর্বিত নয়। আদালত সমালোচনা থেকে মুক্ত নয়। আমাদের সকলের দায়িত্ব যাতে দায়িত্বপূর্ণ সমালোচনা হয়। [এরপর ধাওয়ান ‘ডেইলি মিরর’ পত্রিকা খুলে দেখান যে ‘স্পাইক্যাচার কেস’-এ ব্রিটেনের বিচারপতিদের ‘ইউ ফুল্স’ বলা হয়েছে।]যখন আপনারা অবসর গ্রহণ করবেন, তখন একগুচ্ছ সমালোচনা সহ লেখা আসবে, এবং কিছু প্রশংসাও আসবে। সেগুলো কি আটকানো যাবে? এই আদালত কেবল দায়িত্বপূর্ণ সমালোচনার মধ্য দিয়েই বেঁচে থাকতে পারে। এখনকার বিতর্কে বিচারপতি লোকুর, যোসেফ কুরিয়েন, অরুণ শৌরির মতো বহু মানুষ প্রকাশ্যে মন্তব্য করেছেন। তাঁরাও কি আদালত অবমাননা করেছেন? কনটেম্পটের রায়টা আদালতকে নিজে থেকেই [সুও মোটো] ফিরিয়ে আনা উচিত। ভূষণের বিবৃতি প্রত্যাহার করার কোনো প্রশ্নই নেই অথবা তাঁর নিজের ডিফেন্সের অংশ এফিডেভিট আদালতের রেকর্ড থেকে বাদ দেওয়ার প্রশ্ন নেই। [আদালত কি ভূষণকে দমন করবে?] আদালত ওঁকে কী বলবে? যখন আপনি ওঁকে বলবেন যে ‘এটা আর কোরো না’, তিনি আদালতকে জিজ্ঞাসা করবেন, ‘আমার আর কী করা উচিত নয়?’ আদালত কি ওঁকে আদালতকে সমালোচনা না করার জন্য বলতে পারে? আদালত কি ওঁকে চুপ করিয়ে দিতে পারে? এই মামলাটা বন্ধ করার জন্য যা আদালত করতে পারে, বলতে পারে, ‘আমরা ওঁর বিবৃতিটা গ্রহণ করেছি। উনি যা যা বলেছেন তার অনেকটার সঙ্গেই আমরা ভিন্নমত পোষণ করি, আমরা ওঁকে সাবধান করতে পারি, যেভাবে তিনি সমালোচনা করেছেন একটু সংযত হওয়ার জন্য এবং তথ্যাদি সম্বন্ধে নিশ্চিত হতে বলতে পারি। আমরা ক্ষমা চাইছি না। আমরা চাই আদালতের প্রাজ্ঞতা। [কী সাজা প্রশান্তকে দেওয়া যায়?] একটা সাজা দেওয়া যেতে পারে, যা কনটেমনারদের দেওয়া হয়ে থাকে, আদালতে দাঁড়াতে না দেওয়া। দ্বিতীয়, যা কনটেম্পট অফ কোর্টস অ্যাক্টে আছে। কিন্তু আমার বিনীত আবেদন, প্রশান্ত ভূষণকে শহিদ বানাবেন না। ওঁকে সাজা দিলে, একদল ওঁকে শহিদ বলে লিখবে, আর একদল লিখবে যে উনি উচিত সাজা পেয়েছেন। আমরা সকল এই বিতর্কের অবসান চাই। বিচার ব্যবস্থার প্রাজ্ঞতার মধ্য দিয়ে তা হতে পারে। সাজার ফল হতে পারে, উনি শহিদ হবেন। দয়া করে সেটা করবেন না। উনি শহিদ হতে চান না।”
প্রায় তিন ঘণ্টা চলার পর আদালত এই শুনানির সমাপ্তি ঘোষণা করে। রায় ঘোষণা মুলতুবি রাখা হয়।
প্রশান্ত ভূষণ নিয়ে এত হৈ চৈ কেন? আরো বিশদে জানতে নীচের লিংক
Leave a Reply