২৮ ফেব্রুয়ারি, শাকিল মহিনউদ্দিন, মেটিয়াবুরুজ#
গোলগাল চেহারার এক ষোড়শী কিশোরী। মুখে তার দৃঢ় প্রত্যয়ের ছাপ। অক্ষিগোলকের আঁখিতারায় জ্বলজ্বল করছে রঙবেরঙের স্বপ্ন। অক্ষরের পর অক্ষর জুড়ে সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার জাল বুনে চলেছে সে। যে জালে ধরা পড়বে সুখের দিন, তার মনের মণিকোঠায় ঝিলিক দিচ্ছে সেই বার্তা। আর সেই বার্তাকে সকলের কাছে পৌঁছে দিতে কাগজের বুকে ক্ষিপ্রগতিতে ছুটে চলেছে তার ডানহাতের কলম। শেষ হচ্ছে একের পর এক পৃষ্ঠা। পিছনে বা আশেপাশে কোনো উঁকিঝুঁকি নেই। নিঃশব্দে অতি সন্তর্পণে কিশোরী পেরিয়ে যেতে চাইছে সময়ের গণ্ডিকে। ইস্কুলের মাধ্যমিক পরীক্ষার ধাপকে হাসতে হাসতেই পেরিয়ে যেতে চায় এই মেয়ে। এরাই কি জীর্ণ মেটিয়াবুরুজের অধুনা নবজাগ্রত মহিলাসমাজ?
নাম কী? — তাবাসসুম। হেসেই উত্তর দেয় মেয়েটি। মেটিয়াবুরুজের জর্জ আব্দুল বারি হাইস্কুলের ছাত্রী তাবাসসুম। জানতে পারি, ওর বাবার নাম তাজ মোহাম্মদ এহেসান। তিনি এখন রিকশা চালান। গরম পড়লে মেটিয়াবুরুজের রাস্তায় তাঁকে আইসক্রিম বিক্রি করতে দেখা যাবে। বাবাকে নিয়ে কোনো কুন্ঠা নেই তার। রাজাবাগানের বস্তিবাসিনী তাবাসসুম কথাবার্তায় অকপট, পোশাক-পরিচ্ছদে সাদামাটা আর মুখে একটা মুচকি হাসি। মাথায় হিজাব পরিহিতা হলেও সে নিজেকে গুটিয়ে রাখতে চায় না। তাবাসসুম শব্দের অর্থ কী? — মুসকুরাহাট, মানে হাসি। সূর্য ডোবার আগেই সে শেষ করেছে তার পরীক্ষার লড়াই। পড়ন্ত বিকেলের কোলে মুখের মিষ্টি হাসিটুকুই তার এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ঘোষণা করে দিয়ে যায়।
Leave a Reply