পার্থ কয়াল, ফলতা, ৩১ মার্চ
পাশের ছবিটা ফলতা ব্লকের সুজাপুরে পঞ্চায়েত অফিসের সামনে ২৭ মার্চ তোলা। সরকারি ভাবে ক্যাম্প করে ধান কেনা হচ্ছে। তার আগে, গ্রামে ক্যাম্প হবে — এ খবর জানিয়ে মাইকে হেঁকে গেছে। স্থানীয়ভাবে যারা ধান ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে থাকেন এমন একজন ক্ষুদ্র চাষিকে জিজ্ঞাসা করলাম, ধান ওখানে বিক্রি করবেন কি না। তখন বললেন, তিনি ভাগ চাষ করেন, তাই শুনেছেন, যারা বিক্রি করতে যাচ্ছে, তাদের জমির পরচা চাইছে। উনি তা জোগাড় করতে পারবেন না। আর যারা জমির মালিক তারাই বা পরচা তাকে দেবে কেন? অন্য একজনকে জিজ্ঞাসা করতে বললেন, চেকে দাম দিচ্ছে, তার নগদে দরকার, টাকা অতদিন ফেলে রাখলে চলে?
তার কিছুক্ষণ আগেই মল্লিকপুর হাটে যেখানে বসে চা খাচ্ছিলাম, সেখানে একজন বসে ঘুষখোর নেতাদের শাস্তি বিধান কিভাবে করে যায়, তার পরিকল্পনা করছিল। আর অনেকক্ষণ ধরে তাই শুনে একজন বিরক্ত হয়ে তার মা বাপ তুলে গালাগালি করে চুপ করতে বলল। দোকানদার বলল, ওর সার কেনার পয়সা নেই, এদিকে খোরোর গাছে (ধানে) সার মারতে হবে। ওর ভায়রা ধান কিনেছিল, ও পয়সা পাবে, তাই ভায়রা বাজারে এলে পয়সার জন্য ধরবে বলে সকাল থেকে বসে আছে।
একজন চাল ব্যবসায়ী রাস্তায় জিজ্ঞাসা করল, ‘মাস্টার, সুজুপুরে যাচ্ছ, তা বিক্রি করতে গেলে পরচা লাগছে কিনা জেনে এস।’ সুজাপুরে গিয়ে দেখি একজন চেনা চাষি ধান বিক্রি করছেন, বললেন, ‘সরকার এরকম ভাবে ধান কিনলে চাষ করা যায়, এই গতকাল ৩৩ বস্তা ধান বিক্রি করেছি। আজও করছি।’ এই চাষিভাই অন্য একটা কারখানায় কাজও করেন। আরেকজনের সাথে আলাপ হল, তিনি স্থানীয় শ্যামসুন্দরপুর থেকে এসেছেন, দেড়শ বস্তা ধান নিয়ে। সরকার ১০০ কেজি বস্তায় দাম দিচ্ছে ১০৮০ টাকা, তাতে ২ কেজি বলন (এক্সট্রা বা অতিরিক্ত), বস্তার ওজন এককেজি, বস্তা সরকারের। হিসেব মত ৩ কেজি কুইন্টালে বলন। যারা ভাগ চাষি, তাদের পঞ্চায়েত সদস্যের কাছে থেক লিখিয়ে আনতে হচ্ছে, যদিও তা দেখছে না।
পরের দিন সেই চাল ব্যবসায়ী হাসি মুখে বললেন, ‘আমরা ৮০ কেজি গতকাল দিয়েছি, আজ আরও ৮০ কেজি দেব। ও পরচা দেখছে না। আমাদের ধরতে বললাম, সব ঘরের ধান। আগের দাম পরে যাওয়ায় বিক্রি করতে পারিনি। আর মাস্টার সত্যিই তো, এবারে নতুন নিয়মে বীজ কোম্পানি আর বীজ বিক্রি করতে পারবে না, তাই অদের কাছ থেক চাল কিনতে কিনতে মিল মালিক হাল্লাক, আমাদের ধান কে নেবে?’
Leave a Reply