পশ্চিমবাংলার হার্টের চিকিৎসার একমাত্র সরকারি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালটি হচ্ছে কল্যাণী গান্ধী হাসপাতাল। শুধু দক্ষিণবঙ্গই নয় উত্তরবঙ্গসহ বহু দূরদূরান্ত থেকে প্রতিদিন কয়েকশো রোগিকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে আসতে হয়। সেকারণে হাসপাতালটিতে চাপ খুব বেশি। অন্যদিকে অসুস্থ মানুষেরাও নিরুপায়। অতিসম্প্রতি প্রতিবেশী এক বন্ধুর পরিজনের চিকিৎসার ব্যাপারে কল্যাণী গান্ধী হাসপাতালে যেতে হল। প্রতিবারই কোনো না কোনো নতুন অভিজ্ঞতা হয়। এবারের অভিজ্ঞতাটি হল, গান্ধী হাসপাতালের কিছু কিছু চিকিৎসক রোগিদের এমন প্রেসক্রিপশন বানিয়ে দিচ্ছেন যা হয়তো হাসপাতাল সংলগ্ন একটি কি দুটি ওষুধের দোকানেই পাওয়া যাবে। কোনো রোগি হয়ত শান্তিপুর অঞ্চল থেকে গেছেন চিকিৎসা করিয়ে তিনি বাড়ি ফিরলেন, ভাবলেন ওষুধগুলো হয়তো স্থানীয় জায়গা থেকেই সংগ্রহ করবেন, কিন্তু সারা শান্তিপুর অঞ্চলে ওই প্রেসক্রিপশন নিয়ে ঘুরে কোনো ওষুধই সংগ্রহ করা গেল না। স্থানীয় ওষুধের দোকানদারেরা জানাচ্ছেন, তাঁরা ডাক্তারবাবুর করা প্রেসক্রিপশনের একটি শব্দও বুঝতে পারছেন না।
তেমনই একটি প্রেসক্রিপশন নিয়ে আমি ব্যক্তিওগতভাবে কলকাতার এনআরএস এবং মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সংলগ্ন ওষুধের দোকানগুলি থেকে ঘুরে একটিও ওষুধ সংগ্রহ করতে পারিনি। অর্থাৎ রোগি বাড়ি ফেরার পর কোন ওষুধ সংগ্রহ করার প্রয়োজনে কল্যাণীতেই রোগীর পরিজনদের ফের যেতে হচ্ছে।
অনুমান করাই যায় ওষুধগুলো কেন নির্দিষ্ট ণ্ণকোড’-এ লিখছেন কিছু কিছু ডাক্তার যা ওই হাসপাতাল সংলগ্ন অঞ্চল থেকেই সংগ্রহ করতে হবে। যে সমস্ত রোগি বহু দূরদুরান্ত থেকে চিকিৎসা করাতে গান্ধী হাসপাতালে আসছে তাদের কতটা অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে একারণে! সম্প্রতি ওষুধের দুর্নীতি নিয়ে গোটা দেশ জুড়ে শোরগোল উঠেছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সংসদের উভয় কক্ষে পেশ করা রিপোর্টে, দেশের বাজারে ওষুধ ছাড়ার পদ্ধতি নিয়ে দুর্নীতি চিহ্নিত করা হয়েছে। পাশাপাশি দেখা যাচ্ছে কিছু কিছু ডাক্তার অন্য এক ধরনের দুর্নীতির মধ্যে জড়িয়ে পড়ছেন। ডাক্তারবাবুদের কাটমানির কারণে প্রেসক্রিপশন এমনভাবে তৈরি করা হচ্ছে যা সকল ওষুধের দোকানদারদের বোধগম্য হচ্ছে না। সংসদীয় কমিটির এব্যাপারেও নজর দেওয়া প্রয়োজন।
সম্পাদকীয় সংযোজন : ডাক্তারবাবুদের সাথে কথায় কথায় জানতে চেয়েছিলাম মোটামুটি ৩৫৬টি জেনেরিক নামের ওষুধ যা প্রায় ৯৮ % রোগের প্রতিষেধক রূপে লিপিবদ্ধ রয়েছে সেই নামে কেন প্রেসক্রিপশন করা হয় না। উত্তরে তাঁরা জানিয়েছিলেন জেনেরিকের নামগুলি বেশ খটমট, মনে রাখা সম্ভব নয়। অথচ বাজারে ব্র্যান্ড নামে রয়েছে ৬০ থেকে ৭০ হাজারের বেশি ওষুধ। তাহলে ডাক্তারবাবুদের পক্ষে এত হাজার ওষুধের নাম মনে রাখা সহজ, ৩৫৬টি জেনেরিক নামের চেয়ে!
শমিত আচার্য, শান্তিপুর, ২৭ মে
Leave a Reply