৯-১০ জুনের টেলিমিডিয়া এবং প্রভাতী দৈনিকের বড়ো বড়ো হেডলাইনে মায়ানমারে গিয়ে ভারতীয় সেনার জঙ্গী ক্যাম্প ধ্বংসের খবর বেশ সারা ফেলেছিল। যদিও খবরে এনআইএ এবং ভারতীয় সেনাসূত্র ও ভারত সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্র ছাড়া অন্য কোনো সূত্র ছিল না, তথাপি সব বড়ো বড়ো দল, প্রতিবেশী দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা এই জাতীয় অভিযানের বিষয়ে মন্তব্য করে ফেলায় খবরটির সত্যতা সম্পর্কে কোনো সংশয় তৈরির অবকাশ ছিল না। সত্যি বলতে কি, প্রতিবেশী স্বাধীন দেশের মাটিতে ঢুকে গিয়ে সেনাবাহিনীর জঙ্গী খতম অভিযানে শঙ্কিতই হয়েছিলাম। কয়েক বছর আগে ভূটানে ভারতীয় সেনা ঢুকে পড়েছিল ভূটানী সেনাকে সাহায্য করার জন্য, আরও আগে শ্রীলঙ্কায় শান্তিবাহিনী হিসেবে গিয়েছিল ভারতীয় সেনা — এসব সত্ত্বেও মায়ানমার রাষ্ট্রকেও কিছু না জানিয়ে এই জঙ্গী খতম অভিযানের মধ্যে অতিরিক্ত এক তৎপরতা লক্ষ্য করেই ভয় লেগেছিল। তবে কি যুদ্ধবাজ হয়ে পড়ল আমার দেশ? যেসব চোখা চোখা গালিগালাজ আমেরিকা, ইংলন্ড, ফ্রান্স, চীনের জন্য বরাদ্দ — সেসব এবার নিজেদের দেশের বিরুদ্ধেই শানাতে হবে?
খানিক কৌতুহল নিবারণের জন্যই উত্তর-পূর্ব ভারতের মিডিয়া এবং ফেসবুক পৃষ্ঠাগুলোতে নজর বোলাতেই তো চক্ষুস্থির। নাগা ও মৈতেই জঙ্গী সংগঠনগুলো বলেছে, তাদের কেউ মারা যায়নি ভারতীয় সেনা অভিযানে। এমনকি ওসব জায়গায় তাদের কোনো ক্যাম্পই নেই। অন্য একটি সংগঠন বলেছে, হ্যাঁ, ৯ জুন সকালে ভারতীয় সেনাদের একটি দল তাদের একটি ক্যাম্পে হামলা চালিয়েছিল বটে, কিন্তু পাল্টা প্রতিরোধে গোলাবারুদ ফেলে রেখে পিঠটান দিয়েছে। সেসব গোলাবারুদের ছবিও দিয়ে দিয়েছে তারা। মায়ানমার রাষ্ট্রের প্রতিনিধিও ঘটনার একদিন পর বিবৃতি দিয়ে বলেছে, তাদের সীমানার মধ্যে ভারতীয় সেনা ঢোকেনি। দেরি হয়েছে তাদের বুঝতে, কারণ নাকি মণিপুর নাগাল্যান্ড লাগোয়া মায়ানমারের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে মায়ানমার রাষ্ট্রের কোনো কব্জা নেই। ওই দুর্গম অঞ্চল আঞ্চলিক কৌমাধিপতিদের দখলে। ভারতীয় সেনার মায়ানমারে ঢুকে জঙ্গী ক্যাম্প ধ্বংসের গোটা খবরটাই সম্ভবত মিথ্যা!!
ভারত সরকার বা রাষ্ট্রের নানা প্রকাশ্য বা গোপন স্বার্থ থাকতে পারে। ৪ জুন ডোগরা বাহিনীর আঠারো জন সেনার নৃশংস হত্যার পর ‘সেনাবাহিনীর মনোবল ফেরাতে’ এই ধরনের ঘটনা সাজানোও হতে পারে। কিন্তু মিডিয়া কেন এই নাটকের অস্ত্র করে তুলবে নিজেকে? সংবাদমাধ্যম থেকে প্রচারমাধ্যম হয়ে ওঠার মধ্যে দিয়ে তো নিজেরই কবর খোঁড়া হয়।
Leave a Reply