অমিত মাহাতো, শালবনী ও শমীক সরকার, কলকাতা, ১৫ ডিসেম্বর#
তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকারের ঢাক ঢোল পেটানো উন্নয়নের শরিক হতে চেয়েছিল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার প্রত্যন্ত পিছিয়ে পড়া ব্লক শালবনী। সে সময় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্লোগানই ছিল, কৃষি আমাদের ভিত্তি, শিল্প আমাদের ভবিষ্যৎ। তাই ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখতে গিয়ে জমি দিয়েছিল চাষিরা। কর্মহীন কিছু মানুষের অন্নসংস্থান হবে এই আশায়। (কিন্তু কথায় আছে, আশায় মরে চাষা, তা খণ্ডাবে কে!)।
এই আশায় গত ২ নভেম্বর ২০০৮ তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, রামবিলাস পাসোয়ান জিন্দালদের এই কারখানার শিলান্যাস করেন। ফেরার পথে ভাদুতলার জঙ্গলে মাওবাদীদের পেতে রাখা ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে অল্পের জন্য তাঁরা রক্ষা পান। এটাই ছিল শিল্প স্থাপনের প্রথম বাধা।
দ্বিতীয় বাধা ছিল তৎকালীন বিরোধী নেত্রী তথা বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সিঙ্গুর আন্দোলন, রতন টাটার বিতাড়ন। নন্দীগ্রামে কেমিক্যাল হাবও বাধাপ্রাপ্ত হল। সামগ্রিকভাবে বাংলা যে শিল্পবান্ধব নয় — এই ধারণা ছড়িয়ে পড়ল শিল্পপতি মহলে। অবশেষে জিন্দালদের জমি ফেরতের নোটিশ।
নোটিশের খবর পেয়ে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে বহু চাষি এবং গ্রামবাসী — শিল্প তথা কর্মসংস্থানের আশায় ছাই পড়াতে। গেটের সামনে জমায়েতকারীদের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। অন্য দিকে নবান্নের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়, চাষিদের কাছ থেকে নেওয়া ২৯৪ একর জমি জিন্দাল ফেরত দিতে প্রস্তুত। এবং তা দেবে পুরো বিনামূল্যেই।
কিন্তু বিক্ষুব্ধ চাষিদের অভিযোগ, সেসব জমি আজ আর চাষের উপযুক্ত নয়।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, জিন্দালরা মোট ৪২৬৮ একর (১ একর = ৩ বিঘা। ১ বিঘা = ২০ কাঠা) সরকারি জমি পেয়েছিল। বাকি ২৯৪ একর জমি তারা কিনেছিল চাষিদের কাছ থেকে, প্রতি একর তিন লাখ টাকা দরে। মোট ৪৮৫ জন জমি বিক্রি করা হয়েছিল জিন্দালদের। এই জমি কিনতে তাদের মোট খরচ হয়েছিল ৮.৮২ কোটি টাকা। যা গোটা প্রকল্পটির সম্ভাব্য খরচ, ৩৫ হাজার কোটি টাকা, তার তুলনায় একেবারেই নগণ্য। এই ব্যক্তি-চাষিদের কাছ থেকে কেনা জমি ফেরত দেবে বলে ঘোষণা করেছে জিন্দাল। সরকারের কাছ থেকে পাওয়া জমিটিতে কী করবে তা ঠিক করবে জিন্দালরাই।
শালবনীতে প্রস্তাবিত স্টিল প্ল্যান্ট স্থাপন বিশ বাঁও জলে চলে যায় এই স্টিল প্ল্যান্টের জন্য জলের দরে পাওয়া কয়লা ব্লকটি বাতিল হয়ে যাওয়ায়। কয়লা কেলেঙ্কারির জের ধরে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে কেন্দ্রীয় সরকারের কয়লা মন্ত্রক ২০১৩ সালে গৌরিংধি কয়লা ব্লকটি (যা বরাত পেয়েছিল জিন্দাল এবং এমটা গোষ্ঠী) ফিরিয়ে নেয়। এর ফলে কয়লা পাওয়া দুরূহ হয়ে যাওয়ায় এবং প্রকল্পের খরচ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় স্টিল প্ল্যান্টের আশায় ছাই পড়ে। কিন্তু সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়, আকরিক লোহা পাওয়ার অসুবিধার কারণেই ওখানে স্টিল প্ল্যান্ট করা যাচ্ছে না।
জিন্দালরা এর পর থেকেই ওই জমিতে একটি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র তৈরি করার কথা বলে যাচ্ছে। জিন্দালদের দাবি, শালবনীতে প্রকল্প করার জন্য ইতিমধ্যেই তারা ৬ হাজার কোটি টাকা খরচ করে ফেলেছে।
Leave a Reply