দীপঙ্কর প্রামাণিক, শান্তিপুর, ২৭ মে। ছবি শুভম পালের তোলা#
শান্তিপুরের বৈশাখী পূর্ণিমার বড়বাজারের ব্যবসায়ী সমিতি আয়োজন করে ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর পূজার। তৎসহ পূজিতা হন দেবতাত্রয়ের স্ত্রীরাও। যথাক্রমে গায়েত্রী-লক্ষ্মী-পার্বতী। এই পূজাকে তারা কল্পনা করেন প্রজাপতি ব্রহ্মার বিবাহ উৎসবরূপে।
ঐ পূজার পূর্বদিন রাত্রে বিবাহের জলসাধা আয়োজিত হয়। এতে শান্তিপুরের লোকসংস্কৃতির অন্যতম ময়ূর পঙ্খীর গান পরিবেশিত হয়। জলসাধার শুরুতে গরুর গাড়ীর ওপর নারদরূপে এক ব্যক্তি সজ্জিত হয়ে ঢেঁকি বাহনে চড়ে শোভাযাত্রায় নির্দিষ্ট রাস্তার মোড়ে মোড়ে পুরবাসীকে আমন্ত্রণ জানান। হাস্যরসাত্মক কবিতার মধ্যে দিয়ে কাল্পনিক খাদ্য খাবারের নাম, সমসাময়িক সমাজের বিভিন্ন সমস্যার কথা, রাজনৈতিক-সামাজিক বিভিন্ন দিক সংক্ষেপে তুলে ধরার চেষ্টা করেন। ঢেঁকি বাহন-নারদের নিমন্ত্রণ শেষ হলে ঐ স্থানে পরবর্তী ময়ূরপঙ্খীর গান পরিবেশিত হয়। গরুর গাড়ীর ওপর একটি বাঁশের ময়ূরাকৃতি নৌকা তৈরি করে তার ওপর এক ব্যক্তি ময়ূরপঙ্খীর গান পরিবেশন করেন। তাঁর সহযোগী গায়ক থাকেন দু-একজন এবং বাদ্য হিসাবে থাকে ঢোল কাঁশি। ময়ূরপঙ্খীর গান বিশেষ সামাজিক দিককে তুলে ধরে। এই গান অনেকটা প্রাচীন খেউর বা খেড়ুগানের মতো। কিছুটা আদি রসাত্মক বা অশ্লীল পর্যায়ভুক্ত। তবে বর্তমানে অশ্লীলতা বা আদিরসাত্মক শব্দ ব্যবহার যথেষ্ট পরিমানে কমানো হয়েছে। এছাড়া থাকে আলো বাদ্যসহ জলসাধার প্রক্রিয়া, যেখানে পুরুষেরা বেনারসী অলঙ্কার ইত্যাদি পড়ে মেয়ে সেজে কুলো ডালা মাথায় করে বের হয়। এছাড়াও পুতুল নাচ, বিভিন্ন জীবন্ত মডেল ইত্যাদি এই শোভাযাত্রায় সামিল করা হয়। শান্তিপুরের এই পূজা দুইশত বছরের বেশী প্রাচীন বলে দাবী করা হয়। পূজা চলে ছয়দিন ধরে। বহু মানুষের সমাগম পূজার ঐ দিনগুলিতে চোখে পড়ার মতো।
Leave a Reply