পর্ণব। শান্তিপুর। ২০ জুলাই, ২০২০। #
গতকাল রাত ১১টা থেকে শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হসপিটাল পুনরায় বন্ধ করে দেওয়া হল দুই কর্তব্যরত ডাক্তারের কোভিড টেস্ট রিপোর্ট ‘আন্ডার প্রসেস’ স্টেটাস পাওয়ায়। গত ১৬ জুলাই তাদের সোয়াব টেস্টের স্যাম্পেল পাঠানো হলেও আজ ২০ তারিখ বিকেল অবধি রিপোর্ট পাওয়া যায়নি। হাসপাতাল সুপার ডাক্তার জয়ন্ত বিশ্বাস জানান, ‘আন্ডারপ্রসেস’ স্টেটাসের অর্থ রিপোর্ট পজিটিভ বা বা নেগেটিভ দুই’ই হতে পারে। নেগেটিভ হলে আমরা হাসপাতাল স্যানিটাইজ করে সমস্ত পরিষেবা পুনরায় চালু করতে পারি। কিন্তু পজিটিভ হলে আমরা উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশাবলীর উপরই আস্থা রাখব। ডাক্তার বিশ্বাস আশঙ্কা করছেন ওই দুই ডাক্তারের রিপোর্ট পজিটিভ আসার সম্ভাবনাই বেশি। সেক্ষেত্রে শহরাঞ্চলের দেড় লক্ষ ও গ্রামাঞ্চল মিলিয়ে প্রায় আড়াই লক্ষ মানুষের স্বাস্থ্য পরিষেবার একমাত্র ভরসা এই সরকারি হাসপাতাল বন্ধ হলে বার্ধক্যজনিত ও শিশু রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্র প্রায় সম্পূর্ণ স্তব্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা। তাছাড়া প্রসূতি মায়েদের চিকিৎসার ক্ষেত্রও বিশ বাঁও জলে চলে যেতে পারে। ডাক্তার বিশ্বাস পত্রিকার মাধ্যমে শান্তিপুরবাসীকে জানাতে চান যাতে তারা ধৈর্য্য বজায় রেখে বাস্তবতাকে বুঝতে চেষ্টা করেন কেননা, তাঁর মতে ডাক্তারদের মাধ্যমে গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু হওয়া খুবই দুর্ভাগ্যজনক। ডাক্তার বিশ্বাস আরো জানান যে রিপোর্ট পজিটিভ হলে মোট তিনবার পরীক্ষা করাই রীতি। কিন্তু এক একটি স্যাম্পেল আটচল্লিশ ঘন্টার মধ্যে পরীক্ষা হওয়াই কার্যকরী। আক্রান্ত দুই ডাক্তারের সংস্পর্শে আসা সমস্ত স্বাস্থ্যপরিষেবাদাতাদের মোট সত্তরটি স্যাম্পেল কীভাবে আটচল্লিশ ঘন্টার মধ্যে পরীক্ষা হওয়া সম্ভব যেখানে এক একটি স্যাম্পেলের পরীক্ষা হতে সময় লাগে প্রায় ন’ঘন্টা – সেব্যাপারেও সন্দেহ প্রকাশ করেন তিনি। জয়ন্তবাবু মুখের এন নাইন্টিফাইভ মুখোশ সরিয়ে গুটখার পিক ফেলতে ফেলতে আরো বলেন যে, আমরা গতকাল ড. হালদারের সাথে মুড়ি তেলেভাজাও খেয়েছি। সেক্ষেত্রে আমাদের কোভিড পজিটিভ রিপোর্ট হওয়াও অসম্ভব কিছু না। কেননা মাস্ক পড়ে তো খাওয়াদাওয়া করা সম্ভব নয়।
শান্তিপুরের বিভিন্ন সামাজিক সক্রিয়তায় জড়িত মানুষ চাইছেন হাসপাতাল বন্ধ হলেও শান্তিপুরের তিনটি পৌর ক্লিনিকের মাধ্যমে স্বাস্থ্যপরিষেবার কিছুটা চালু করা হোক। আজ সন্ধ্যায় আক্রান্ত দুই ডাক্তারের একজন বর্ষীয়ান ড. হালদারের (যিনি গত সাতদিন জ্বরে আক্রান্ত হয়েও গতকাল অবধি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে এমনকি ও.টি. তেও পরিষেবা দিয়ে গেছেন) রিপোর্ট আসার অপেক্ষা করছেন তাঁরা। তারপর সমস্ত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর একচ্ছত্র আন্দোলনের মাধ্যমে স্বাস্থ্যপরিষেবার কোনো সাময়িক সুরাহার পথ খুঁজছেন তাঁরা। কোভিডে আক্রান্ত হওয়া আর অসুস্থ হওয়ার মধ্যে যে তফাৎ সেবিষয়ে জনসচেতনতা তৈরি করতেও উৎসাহী তাঁরা। অনেকেই মনে করেন, সুসংহত পরিকল্পনার বদলে করোনা আতঙ্ক তৈরির মাধ্যমে সরকার জনমানসে অবিশ্বাস ও ভয়ের সঞ্চার করতে চাইছে।
Leave a Reply