জি নিউজে ৮ মার্চ প্রকাশিত একটি সাক্ষাৎকারের বাংলা অনুবাদ করেছেন সৌম্য বসু, ৫ এপ্রিল#
আজ তেরো বছর হলো আপনার প্রতিবাদ। এখন পেছন ফিরে দেখলে কি মনে হয়?
এটি জনআন্দোলন । আমি জানি না কাল কি হবে, আমি বাস্তবে বিশ্বাসী। আমাদের এই আন্দোলন কিছুটা সাফল্য পেয়েছে ২০০৪এ। ভারতীয় সেনা কাঙলা দূর্গে অবস্থিত ছিল, যা আমাদের কাছে এক পবিত্র স্থান। সেনাবাহিনীর বন্দুক সেই পবিত্র স্থান অপবিত্র করে তুলেছিল। তাই যখন আসাম রাইফেলস ২০০৪–এর নভেম্বরে কাঙলা দূর্গ ছাড়ল সেই দিনটি আমাদের কাছে বড়ো সাফল্যের দিন ছিল।
কিছুটা হলেও এটা আপনার একারই লড়াই। যাবতীয় উৎসর্গ আপনারই। যখন শোনেন সারা পৃথিবীর লোক আপনার সমর্থনে এগিয়ে এসেছে, তখন কি আপনার ভালো লাগে না?
আমার আন্দোলনের কথা যদি লোকে নাও জানতে পারতো, তবুও আমি এই আন্দোলন চালিয়ে যেতাম। কিন্তু আমি খুশি যে মানুষ জাগছে। কেন্দ্রীয় সরকার আমাকে অনেক বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছে, তাদের মতে আমি আত্মহত্যার চেষ্টা করছি। কিন্তু তা কখনই নয়, আমি শুধু মাত্র অহিংসার দ্বারা আমার লক্ষ্যে পৌঁছতে চাইছি।
আপনি ১২ বছর আগে আফস্পা–র বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেছেন। সরকার কিন্তু এখনও তার অবস্থান বদল করেনি। আপনি কি হতাশ হন না তাতে?
আমি সাবসময় আমার বিবেকের কথা শুনে চলি। বিবেক আমার দেহ ও মনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখে। আমি কখনই কোন পরিস্থিতি খুব কঠিন বা খুব সোজা ভাবে বিচার করি না। আমার বিবেক বলে দেয় কোনটা ঠিক কোনটা ভুল। এটা জনআন্দোলন। তাদের এটা বোঝা দরকার। এটা সত্যিকারের আন্দোলনের শুরুয়াত। সরকার যতই এই আন্দোলনের প্রতি উদাসীন থাক তবুও আমি আশাহত হব না। যদি মানুষ জেগে উঠে এই আন্দোলনে যোগ দিলেই আমার আন্দোলনের সাফল্য।
আবার চারিদিকে আন্দোলনের কথা শোনা যাচ্ছে, অনেকেই হিংসাত্মক আন্দোলনের কথা বলছে। সেখানে আপনার লড়াই একক, এটাই কি আপনার বার্তার জোর?
গান্ধীজি ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে তার অহিংস আন্দোলনে সফল হয়েছিলেন, আমি তারই পথ অনুসরন করছি। সরকার আমার প্রতিজ্ঞাকে দুর্বল করার চেষ্টা করছে। আমি কখনই কাউকে বলি না, সে কোন পথে চলবে। হিংসার পথ না অহিংসার পথ। আমি শুধু আমার বিবেকের কথা শুনে চলি।
যখন মানুষ মেয়েদের বিরুদ্ধে হিংসার বিপক্ষে আন্দোলনে নামছে, তখন আপনি তাদের অনুপ্রেরণা হতে পারেন।
আমি তাদের বলতে চাই যে পৃথিবীর অর্ধেক নারী। তারা সবলতর লিঙ্গ। আমাদের উচিত নারী পুরুষ এক সাথে মিলে কাজ করা, কে বড়ো বা ছোটো তা কখনই বিচার করা উচিত নয়। আমাদের প্রকৃতি থেকে শেখা উচিত। পাখিরা যখন বাসা বানায়, তখন তারা কে বড়ো কে ছোটো বিচার করে না। মানুষ হল সবচেয়ে উন্নত প্রাণী, আমরা নিজেদের জীবন নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। তাই আমাদের প্রত্যেককে সমান চোখে দেখা দরকার।
আপনার লক্ষ্য পূরণ যখন হবে, তখন তো আপনি অনশন ভঙ্গ করবেন। তখন আপনি কি কি করবেন?
কি হতে চলেছে তা নিয়ে আমি ভাবি না। আমি ভগবানের কাছে নিজেকে সঁপে দিই। আমার ভবিষ্যত আমি জানি না। বর্তমানে বেঁচে থেকেই খুশি।
Leave a Reply