৩০ মার্চ, জিতেন নন্দী, রবীন্দ্রনগর, মহেশতলা#
২৫ তারিখ বুধবার ছিল এলাকার দর্জিশিল্পের ছুটির দিন। সেদিন হেডমাস্টারমশাই কাজি মাসুম আখতার স্কুলে অনুপস্থিত ছিলেন। পরেরদিন ২৬ মার্চ স্কুলে (মাদ্রাসায়) এসে গণ্ডগোলের আশঙ্কা করে তিনি থানায় খবর দেন। একটা উত্তেজনা আগেরদিন থেকেই তৈরি হচ্ছিল। এদিন সেটা আরও বেড়ে যায়। অবশেষে পুলিশ যখন তাঁকে নিয়ে স্কুল থেকে বেরিয়ে আসে, তখন তাঁর গায়ে হাত তোলে সেই উত্তেজিত জনতা। রাজাবাগান থানার আইসি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। স্কুলের সেক্রেটারি সিরাজুল ইসলাম মণ্ডলও উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু তাঁকে বাঁচানো যায়নি। তাঁর মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়।
২৭ মার্চ স্থানীয় একজন বন্ধুর কাছ থেকে ঘটনা জানতে পারি। তিনি সকালবেলা ‘দৈনিক স্টেটসম্যান’ পত্রিকায় খবরটা দেখতে পান। দুপুর আড়াইটা নাগাদ আমরা স্কুলে যাই। তখন সেখানে এক সাধারণ সভা চলছিল। ঘরভর্তি ছাত্র, অভিভাবক ও স্থানীয় মানুষের সামনে বক্তৃতা করছিলেন স্কুলের আরবি শিক্ষক পীরজাদা নুরুজ্জুমান। তিনি বলেন,
‘মেটিয়াবুরুজের মানুষকে অনেকে দর্জি দর্জি বলে ব্যঙ্গ করে, কুকুর-বিড়াল-শিয়াল বলে। আমি মাঝে মাঝে আকারে ইঙ্গিতে বলেছি, স্যার মেটিয়াবুরুজের মানুষকে মুর্খ বলুন আর যাই বলুন, এদের আল্লা যে জ্ঞান দিয়েছেন, আমার আপনার মতো দশটা মাস্টারকে ওরা মুখের কথায় পড়াতে পারে। লাখ লাখ কোটি কোটি টাকার হিসেব এরা মুখে রেখে দিয়েছে। এটা হল সুন্নতি ব্যবসা। তাদের আরও উৎসাহ দেওয়া দরকার। বাপ শিক্ষিত নাও হতে পারে। কিন্তু কোন বাপ চায় না যে আমি শিখতে পারিনি, আমার সোনার মাণিক একটু শিখুক! বাচ্চাকে বারবার যদি বলা হয়, তোর বাপ মুর্খ, তাহলে সে বলবে, তোর আর ইস্কুলে যেতে হবে না’
ইতিমধ্যেই গণস্বাক্ষর করে কাজি মাসুম আখতারের বিরুদ্ধে প্রস্তাব নেওয়া হয়েছিল। প্রস্তাবের সমর্থনে বক্তব্য রাখেন মৌলানা ইউনুস, মেহতাব হোসেন মোল্লা প্রমুখ। সভার শেষে প্রস্তাব গ্রহণ করা হয় যে হেডমাস্টারকে আর স্কুলে ঢুকতে দেওয়া হবে না। সভা চলাকালীন একজন শিক্ষক আমাকে দশম শ্রেণীর ২৭ জন ছাত্রছাত্রীর স্বাক্ষর করা একটি আবেদন-পত্র দিয়ে বলেন, আপনাদের কাগজে এটি ছাপাবেন। ঘটনার পরদিন ২৭ মার্চ তালপুকুর আড়া হাই মাদ্রাসার সেক্রেটারির কাছে লেখা সেই আবেদন-পত্রটি ছিল এই রূপ :
‘আমরা তালপুকুর আড়া হাই মাদ্রাসার দশম শ্রেণীর ছাত্রছাত্রী। আমাদের বিনীত নিবেদন এই যে গত ২১.৩.১৫ এবং ২৩.৩.১৫ তারিখে আমাদের প্রধানশিক্ষক মহাশয় ক্লাস নেওয়ার সময় পড়াশুনা বাদ দিয়ে অনেক কুরুচিকর মন্তব্য করেন। ইহা শুনে আমরা সকলেই ব্যথিত ও অসন্তুষ্ট বোধ করি।
নিম্নে মন্তব্যগুলি লেখা হল :
1. পড়াশুনার বিষয় বাদ দিয়ে সমস্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে বিশাল খারাপ মন্তব্য করেন, যেমন, তোমরা শিক্ষকদের রক্ত চুষে খাবে, কারণ আমি শিক্ষকদের বেতন দিই। তারা যদি ভালো ভাবে না পড়ায়, তাহলে আমি তাদের বেতন কমিয়ে দেব। কিন্তু সকল শিক্ষকগণ আমাদের সমস্ত বিষয়ে দায়িত্ব নিয়ে পড়ান। ইহা শুনে আমাদের মনে খুব আঘাত লাগল।
2. আমরা মাদ্রাসায় পড়াশুনা করি, কিন্তু তিনি কোরান সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করেন, যেমন, কোরান পড়ে কোনো লাভ নেই। নবী সম্পর্কে বলেন, নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) ছিলেন মুর্খ। ফলে আরবের লোকেরাও মুর্খ এবং মেটিয়াব্রুজের মানুষও মুর্খ, শুধুমাত্র গোস্ত খায় ইত্যাদি।
3. হাজিরা মক্কায় হজ করতে যায়। আসলে তারা বেড়াতে যায় এবং মিথ্যা শয়তানকে পাথর মারে।
4. দশম শ্রেণীর মাদ্রাসা বোর্ড কর্তৃক ইসলামিক ইতিহাস বই ভুলে ভরা। যারা লিখেছে তারা অশিক্ষিত মুর্খ। আর তারা কিছু জানে না।
5. তার চরিত্র সম্পর্কে যথেষ্ট খারাপ ব্যবহার পাই, যেমন, মেয়েদের দিকে খারাপ ভাবে দেখে, গায়ে হাত দেয়, ব্যাজ দেখার নাম করে ওড়না তুলে দেয় এবং ক্লাসের মেয়েদের কোমরের দিকে তাকিয়ে বলে, তোমরা কোমরটাকে হিট করে ফেলেছ।
অতএব মহাশয়ের নিকট আমাদের আবেদন এই যে, আমাদের কোনো শিক্ষক/শিক্ষিকাগণ কোনো সময় প্রধানশিক্ষক বা পরিচালন সমিতি সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করে না, বরং প্রশংসা করেন। এমতাবস্থায় প্রধানশিক্ষক আসার পরে মাদ্রাসার ভাবমূর্তি নষ্ট হতে চলেছে। তাই প্রধানশিক্ষক কাজি মাসুম আখতারকে আমরা চাই না।’
এরপর আমি আলাদা আলাদাভাবে স্কুলের প্রাক্তন টিচার-ইন-চার্জ ফয়জুল হক, শিক্ষক মোশারফ আলি, নিজামুদ্দিন আহমেদ এবং আরও কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলি। স্কুলের সেক্রেটারি সিরাজুল ইসলাম মণ্ডলের সঙ্গেও কথা বলেছি। এঁরা বলেছেন, ‘হেডমাস্টারমশাই বড্ডো নিজেকে জাহির করতেন। উনার কথা, তা যদি ঠিকও হয়, তা লোকে ভুল বুঝত। টিচারদের ক্ষোভ ছিল। অন্যদের গুরুত্ব দিতেন না। নিজেকে খুব বড়ো বলে দেখানোর চেষ্টা করতেন।’ আমি এঁদের প্রশ্ন করি, হেডমাস্টারমশাইয়ের গায়ে হাত তোলা কি ঠিক হয়েছে? এর উত্তরে সকলেই বলেছেন যে এটা নিন্দনীয়, ‘জনরোষ’-কে আমরা ঠেকাতে পারিনি। কিন্তু কেউই নিজের নাম পত্রিকায় প্রকাশ করে একথা বলতে রাজি হননি। নিকটবর্তী গাবতলা মসজিদের ইমামের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিলাম। ঘটনার পরদিন তিনি মুম্বইয়ে গেছেন ব্যক্তিগত কাজে। তাই তাঁর সঙ্গে কথা বলতে পারিনি।
এরপর ২৮ মার্চ আমি ছাত্রছাত্রীদের লিখিত অভিযোগ সম্পর্কে কাজি মাসুম আখতারের মতামত শুনতে চাই। তিনি বলেন,
‘ছেলেমেয়েদের ব্যাপারটা সম্পূর্ণ একটা চক্রান্ত, এটা তৈরি করা। এটা সবচেয়ে লজ্জার। যে কোনো সুস্থ বুদ্ধিসম্পন্ন লোক বুঝতে পারবে, সাড়ে তিন বছর ধরে এই স্কুলে শিক্ষকতা করছি, এতদিন কিছু বললাম না, হঠাৎ করে এই দুদিনই বলে ফেললাম। আর শুধু ক্লাস টেনকেই তা বলে ফেললাম। ফাইভ থেকে নাইন পর্যন্ত কোনো ক্লাসকে কোনোদিন বললাম না। আর এই কাজগুলো করলে তো সাড়ে তিন বছরে আমার নামে অভিযোগে অভিযোগে ভরিয়ে ফেলত। স্কুলের বিরুদ্ধে হামলা হত, প্রতিবাদ মিছিল হত। ছাত্রছাত্রীরা লিখিত অভিযোগ করত। কোনোদিন বিন্দুমাত্র এসব হয়নি। বরং ছেলেমেয়েরা, বিশেষত মেয়েরা, তাদের কাছে আমি আদর্শের মতো। তাদের কাছে আমি মুক্তির সন্ধান। আমি তাদের লিখিত চিঠি দেখাতে পারি, তারা বারবার বলেছে, ‘স্যার আপনি আমাদের নিরাপত্তা না দিলে আমরা স্কুলে আসতে পারব না। গেটের বাইরে ছেলেরা দাঁড়িয়ে থাকে, আমাদের কটূক্তি করে, আমরা ভয়ে আতঙ্কে থাকি …।’
এই সাড়ে তিন বছরে লেখাপড়ার অসাধারণ পরিবর্তন হয়েছিল। আজকে সকালে সেক্রেটারি আমাকে ফোন করেছেন, ‘আপনি স্কুলে ফিরে আসুন। আপনি আসার পরে স্কুলে অভাবনীয় পরিবর্তন হয়েছে। আপনি ফিরে আসুন। এটা গভীর চক্রান্ত। আমি এই চক্রান্তের বলি।’ অধিকাংশ শিক্ষক আমার যোগ্যতা ও কাজের প্রশংসাই করেন। শিক্ষকদের একটা অংশ আমার প্রতি ক্ষুব্ধ কেন? কারণ, আমি আসার আগে তাঁরা বেলা বারোটায় আসতেন এবং দুটোয় চলে যেতেন। আগে যিনি টিচার-ইন-চার্জ ছিলেন, ফয়জুল হক সাহেব, আমাকে এই কথা শিক্ষকদের সামনেই বলেছেন। কোনো পড়াশুনার চল ছিল না। আসা-যাওয়া মাইনে নেওয়া। আমি নিজে সকাল দশটা পঁয়ত্রিশের মধ্যে স্কুলে ঢুকে যাওয়ার চেষ্টা করতাম আর বিকেল সাড়ে চারটে-পাঁচটা অবধি থাকতাম। তারপর আমাকে রাত আটটা পর্যন্ত অফিসে কাজ করতে হত। স্কুলে পনেরো-কুড়ি বছরের বকেয়া কাজ পড়ে আছে। স্কুলে কোনো ক্লার্ক নেই। পাঁচ বছর অডিট হয়নি। আমি এই স্কুলে আসার কুড়ি দিনের মধ্যে মিড-ডে মিল নিয়ে আমার বিরুদ্ধে এখানে ষড়যন্ত্র হয়েছিল। কিছু লোকের আমার ওপর রাগ ছিল। প্রথম যেদিন মিড-ডে মিল এল, সেদিনই ঘটনা ঘটল। খাবারটাতে কিছু মেশানো হয়েছিল, কারা মিশিয়েছিল, সেসব প্রমাণিত হয়েছে।
কুড়ি দিন আগে ক্লাস টেনের কিছু ছাত্রী আশপাশের কিছু ছেলেকে উদ্দেশ্য করে আপত্তিকর কিছু চিঠিপত্র জানলা দিয়ে ছুঁড়েছিল। আশপাশের বাড়ির কিছু অভিভাবক আমার কাছে অভিযোগ করেছিলেন। আমি ক্লাস টেনে গিয়ে বলি যে আমি যদি কোনো প্রমাণ পাই, তাহলে কঠোর পদক্ষেপ নেব। যারা অন্যায় করছিল, তারা বুঝতে পারে যে হেডমাস্টারমশাই ছাড়বেন না। তারা আমাকে শায়েস্তা করার পরিকল্পনা করে। আমি সেক্রেটারি সাহেবকে এটা জানিয়েছি। এইভাবে আমার বিরুদ্ধে একটা চক্রান্ত করা হয়েছে।
আমি ছাত্রছাত্রীদের বলেছিলাম, তোমাদের সামনে পরীক্ষা, তোমরা শিক্ষকদের কাছ থেকে পড়া আদায় করে নাও, তোমরা আমাদের শুষে নাও। আমাদের জ্বালাতন করো। ওদের পড়াশুনায় উৎসাহিত করার জন্য এবং আমাদের ওপর চাপ দেওয়ার জন্য আমি এটা বলেছিলাম। অথচ আমার বিরুদ্ধে বলা হয়েছে, আমি শিক্ষকদের ‘রক্ত চোষার’ কথা বলেছি। কেন বলব? আমি নাকি বলেছি যে শিক্ষকদের বেতন কমিয়ে দাও। আমি কি শিক্ষকদের বেতন কমাতে পারি? এটা সম্পূর্ণ সাজানো গল্প।
গত ১৯ মার্চ ম্যানেজিং কমিটির মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে, যেসব মেয়ে জানলার পাশে বসে অসভ্যতা করে, তাদের ওখান থেকে সরিয়ে দেওয়া হোক।
আমি মাদ্রাসার ডায়েরি থেকে কিছু উদ্ধৃত করছি। ‘যে জাতি ও সম্প্রদায় নিজেদের উন্নতি চায় না, আল্লা তাদের উন্নতি করে না’ — আল কোরান; ‘জ্ঞানসাধকের দোয়া শহিদের রক্তের থেকেও পবিত্র’ — হজরত মহম্মদ; ‘পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ইমানের অঙ্গ’ —আল হাদিস … এই ডায়েরি তো আমি তৈরি করেছি। এখানে কোথায় কোরান সম্বন্ধে বিরূপ মন্তব্য রয়েছে? আমার ডায়েরি প্রমাণ করে আমি নবীর বিরুদ্ধে নই, আমি কোরানকে শ্রদ্ধা করি।
রোজার সময় আমাদের স্কুলে নামাজ পড়ানো হয়। আমাদের মৌলানা নুরুজ্জমান সাহেব নামাজের ইমামতি করেন। সেই সময় আমি প্রায় প্রত্যেকদিন ছেলেদের সঙ্গে নামাজ পড়েছি। আমি কখনই ইসলাম বিরোধী নই।
আমি বলেছিলাম, মক্কায় হজ করতে যায় স্বচ্ছল ব্যক্তিরা। এটা ইসলামে বলা আছে। কিন্তু যারা গরিব, তারা কী করবে? বাবা-মাকে সেবা করা হজ করার সমতুল্য। হজ করতে গিয়ে শয়তানকে পাথর মারা হয়। পাথর মেরে প্রমাণ করা হয়, আমাদের মনের মধ্যে যে পাপ আছে, তাকে পাথর মারা। এটা প্রতীকী মাত্র। হজ পবিত্র মনে করতে হবে। বেড়াতে যাওয়ার কথা আমি কোনোদিন বলিনি।
আমি বলেছি মাদ্রাসা বোর্ড শুধু কেন, মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বইয়েও অনেক ভুল আছে। আমি ইতিহাসের লোক।
আমি যতদিন স্কুলে গেছি, একদিনের জন্যও আমার চরিত্র নিয়ে কোনো প্রশ্ন ওঠেনি। সাড়ে তিন বছরে তাহলে আগেই আমার সম্বন্ধে অভিযোগ উঠত। আমি একদিনের মধ্যেই খারাপ হয়ে গেলাম?
এগুলো ছাত্রছাত্রীদের কথা নয়। বাইরে থেকে তৈরি করা। আজকে শিক্ষকদেরও একটা কাগজে সই করানো হয়েছে বলে আমি খবর পেয়েছি। একটা ত্রাসের মধ্যে ভয় পেয়ে অনেক শিক্ষক সই করেছেন। তাঁরা আমাকে জানিয়েছেন, আমরা ওটা পড়ে দেখতেও পারিনি। যে ২৭ জন সই করেছে, সাড়ে তিন বছরে একজনও তারা আমার বিরুদ্ধে একটা কোনো সামান্য অভিযোগও কোনোদিন করেনি। সেক্রেটারি সাহেব আমাকে শিক্ষারত্ন দেওয়ার জন্য ২০১৩ এবং ২০১৪ সালে দুবার সরকারের কাছে আবেদন করেছিলেন। তাঁর বক্তব্য ছিল, কাজি মাসুম আখতার এক অসাধারণ হেডমাস্টার। তাঁর সময়ে স্কুলের অভাবনীয় উন্নতি হয়েছে। সেই কাগজ আমার কাছে আছে।’
আমি মাসুম আখতারকে প্রশ্ন করেছিলাম, আমি শুনেছি আপনি ক্ষমা চাওয়ার জন্য স্কুল থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন। একথা কি সত্যি? তিনি জবাব দেন,
‘না আমি ক্ষমা চাওয়ার কথা বলিনি। আমি বলেছি, মানুষের ভাবাবেগে যদি কোনো আঘাত লেগে থাকে, কোনো ভুল বোঝাবুঝি হয়ে থাকে, তাহলে আমি দুঃখপ্রকাশ করেছি। আমাকে বাইরে নিয়ে আসা হচ্ছিল মূলত পুলিশ এসকর্ট করে নিয়ে যাওয়ার জন্য। পুলিশের পক্ষ থেকে বলেছিল, স্কুলের স্বার্থেই একটু ম্যানেজ করে নিন স্যার। আমি তখন বলেছিলাম, আমি জ্ঞানত কোনো ত্রুটি করিনি। খবরের কাগজে যে লেখাগুলো বেরিয়েছে, (‘মাদ্রাসা সম্পর্কে আগে জেনে নেওয়া ভালো’ ২১ অক্টোবর ২০১৪, আনন্দবাজার পত্রিকা এবং ‘ইতিহাসের আলোকে কারবালার যুদ্ধ’ ৪ নভেম্বর ২০১৪, বর্তমান পত্রিকা) সেগুলো ছাপার চারমাস পরে এগুলো বলা হচ্ছে। আপনাদের কোনো অভিযোগ থাকলে খবরের কাগজে চিঠি পাঠাতে পারতেন, প্রতিবাদ জানাতে পারতেন। আমাকে আমার ত্রুটিটা ধরালে আমি নিজেকে শুধরে নিতে পারতাম। কিন্তু আপনারা সে সুযোগ আমাকে কিচ্ছু দেননি। কোনোদিন আমাকে কমপ্লেনও করেননি। আজকে হঠাৎ করে দলবদ্ধ হয়ে আপনারা আক্রমণ করছেন। আপনারা আমার ভুল সংশোধন করার জন্য আসছেন না।
স্কুলের ছাত্ররা কেউ আমার গায়ে হাত তোলেনি। যারা তুলেছে, তারা দুষ্কৃতি। ১৭-১৮ থেকে ২৫-৩০-এর মধ্যে এদের বয়স। ওরা বলছিল, এই লোকটা ইসলাম বিরোধী, একে মার্ডার করতে হবে, কোতল করতে হবে ইত্যাদি। পুলিশকে আমি আগেই বলেছিলাম যে আমার ওপর হামলা হতে পারে। তাতে পুলিশ বলল, স্যার আপনাকে চিন্তা করতে হবে না। আমরা বার করে নিয়ে যাব। কিন্তু হামলাকারীরা আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। পুলিশ আমাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছে। কিন্তু ওরা পারেনি।’
প্রসঙ্গত একবছর আগে এই কানখুলি রোডের কাছেই বড়তলায় এইরকম ‘জনরোষ’-এর ঘটনা ঘটেছিল। ২ এপ্রিল বুধবার ফারুকুল ইসলাম নামে এক যুবককে তাঁর ফেসবুক পেজে একটি পোস্টের জন্য অভিযুক্ত করা হয়। তিনি দুঃখপ্রকাশ করা সত্ত্বেও পরদিন বৃহস্পতিবার ৩ এপ্রিল তাঁকে গণপ্রহার করা হয়। সশস্ত্র আক্রমণকারীদের হাতে তিনি মারাও যেতে পারতেন। কিন্তু স্থানীয় মসজিদে তাঁকে আশ্রয় দেওয়া হয় এবং তাঁর জীবন রক্ষা হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন স্থানীয় শিক্ষক বলেন, ‘ফারুক নাস্তিক ছিল, মাসুম আখতারের বিষয়টা আলাদা।’ কিন্তু নাস্তিক হলে কি তাঁর প্রাণ নিতে হবে? তিনি স্বীকার করেন, ‘না, এটা অবশ্যই অন্যায়’।
Leave a Reply