শাকিল মহিনউদ্দিন, হাজিরতন, মেটিয়াবুরুজ#
সৌন্দর্যচেতনা এক সহজাত প্রবৃত্তি। তবে এই নান্দনিক গুণাবলীকে অর্জনও করা যায়। প্রয়োজন হয় একটু রুচিবোধের। এই চেতনা জাগরিত হলে জীবনটাই হয়ে ওঠে সৃজনশীল — সর্বাঙ্গসুন্দর। একটু ভালোভাবে বাঁচবার তাগিদ থেকে, সুন্দর সুস্থ জীবনযাপনের আকাঙ্ক্ষা থেকে এই চেতনা মনের গভীরে উঁকি মারে। উঁকি দেওয়া ভাবনাকে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা একটু লালন করলেই ব্যক্তিমন সুন্দরের পূজারী হয়ে ওঠে। সুন্দরের ডাকে সাড়া দিলে দেহ-মন-পরিবার-পারিপার্শ্বিকতাকে নিষ্কলুষ আনন্দ দেওয়া হয়। পারিবারিক জীবন কলহহীন, সহমর্মিতাপূর্ণ হোক সকলেই কামনা করি। সেই সঙ্গে পরিবারের আস্তানা বাড়িঘরকে মনোরম ও আকর্ষণীয় করে তোলার ভাবনাকে একটু সাজিয়ে গুছিয়ে নিতে পারলে এক স্বর্গীয় পরিবেশ বাড়ির মধ্যেই খুঁজে পাওয়া অসম্ভব নয়। ব্যক্তির এই ইচ্ছা সর্বত্রই প্রশংসনীয়।
সুন্দরের ভাবনা রুচিবোধপ্রসূত। তাই আমরা নিজেদের সাজপোশাকে, ছেলেমেয়েদের পরিচ্ছদে, স্ত্রীকে দৈহিক অলঙ্করণে সাজিয়ে তুলি, আমাদের আবাসগৃহটি কৃত্রিম অলঙ্করণ না করে প্রকৃতির লতাপাতার জারিজুরিতে (মোড়কে) সাজিয়ে তোলা হলে বাড়িতেই তপোবনের শান্ত স্নিগ্ধ ছায়া, সুশীতল সমীরণের একটু ছোঁয়ায় প্রাণ জুড়ায়, পরিবেশবান্ধব এই প্রচেষ্টা প্রশংসাও কুড়ায়। খালধারীর নূর হোসেন মল্লিককে এই প্রচেষ্টার ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি সোজাসাপটা বলে ফেললেন, ‘বাড়িতে গাছপালা (ফুলের) লাগানো বা তার চর্চা করলে বাড়ির পরিবেশ প্রাণবন্ত, জীবন্ত হয়। কিন্তু পারিবারিক পরিস্থিতি সুখকর হলে সৌন্দর্যরক্ষার আগ্রহটা বহুগুণে বেড়ে যায় এবং তা সার্থকও হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘মানুষ ইচ্ছা করলে বাড়ির উঠানে, বারান্দায় বা দরজার পাশে গুটিকয়েক গাছ, ফুলের টব কিংবা পাতাবাহার গাছের সমাবেশে কংক্রিটের বাড়িকে পর্ণকুটিরের আদলে সজ্জিত করে গড়ে তুলতে পারে।’ রিজওয়ানা বেগমের কাছে শোনা গেল প্রকৃতির বার্তা। তিনি বলেন, ‘আশেপাশে গাছপালা থাকলে প্রকৃতি খুশি হয়, সেভাবে এরা এখনও আমায় ভোলেনি। সুতরাং সব মানুষ দোষী নয়।’
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা পবিত্রতার নামান্তর। এই পবিত্রতা চাই পারিপার্শ্বিক পরিবেশেও। বাড়ির সামনে দিয়ে বয়ে যাওয়া নর্দমাটা পরিষ্কারের অভাবে মাঝেমধ্যেই দুর্গন্ধ ছড়ায়। যদি একটু যত্ন নেওয়া যায় তাহলে ওই নিকাশিনালাই সুন্দর পরিচ্ছন্ন হয়ে ওঠে — এই অভিমত বেশ কয়েকজনের। সফির কাঠগোলার রিজওয়ান আলি থান্দার শোনালেন, ‘আমরা সপ্তাহে অন্তত একদিন যে যার বাড়ির সামনের নর্দমাটা যদি পরিষ্কারের উদ্যোগ নিই কিংবা অপরকে নোংরা আবর্জনা, কাপড়ের ছাঁট, সবজির খোসা ফেলতে বাধা দিই, তাহলে সারাবছর দুর্গন্ধে আমাদের নাভিশ্বাস ওঠে না।’
রাস্তাঘাট অপরিচ্ছন্ন থাকলে পদে পদে গতিরোধ হয়, ঘৃনায় সারা শরীর ঝিমঝিম করে। মশামাছির আতুরঘর এই পথঘাট পরিষ্কারের জন্য পুরসভার লোকজনের আপনি আপনার বাড়ির সামনের রাস্তা একটু ঝাঁট দিলেন বা বাড়ির কোনো সদস্যের দ্বারা তা করিয়ে নিলেন, দেখবেন আপনার দেখাদেখি অন্যরাও অনীহাকে পেছনে ফেলে পরিচ্ছন্নতার কাজে হাত লাগিয়েছে। সকলের উৎসাহে ও প্রচেষ্টায় আপনার পাড়ার পরিবেশ মনোরম হয়ে উঠবে। জনৈক পথচারী জানালেন, সংসারের চাওয়া-পাওয়ার সময় দিয়েও সুন্দর সুস্থ পরিবেশ গড়ে তোলা সম্ভব, যদি আমার ইচ্ছা থাকে। তিনি বলেন, ‘এক পাড়ার দেখাদেখি অন্য পাড়াও অংশগ্রহণ করবে। বড়োদের দেখাদেখি ছোটোরাও এগিয়ে আসবে। তারা বাড়ি বা পাড়া থেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠবে। এর মধ্য দিয়েই তাদের দেশ ও সমাজভাবনা জাগ্রত হবে’ হাজিরতনের লুনা ড্রেসেস-এর জয়নাল আবেদিন সাহেব দীর্ঘদিন ধরে তাঁর বাড়ির পরিবেশকে বিভিন্ন গাছপালা লাগিয়ে সুন্দর রেখেছেন। রবীন্দ্রনগরের ডি ব্লকের দেবু মুখার্জি গাছপালা ভালোবাসেন। বাড়ির আশেপাশের পরিবেশকে সুন্দর রাখার জন্য তিনি সদা সচেতন। এরকম মানুষ তো মেটিয়াবুরুজের অপরিচ্ছন্ন পরিবেশের মধ্যেই আশার আলো জাগিয়ে রেখেছেন।
বিধানগড়ের কেকা চক্রবর্তী একটু সমালোচনার সুরেই বললেন, ‘ফ্ল্যাটবাড়ির বাসিন্দাদের আর একটু সচেতন হওয়া উচিত। তারা অনেকসময় ওপরতলা থেকে নোংরা আবর্জনা, আনাজের খোসা ফেলে দেয় বা কখনো সিড়ির তলায় জমিয়ে রাখে। এটা সমর্থনযোগ্য নয়।’ তিনি আরও বলেন, পাড়ার ক্লাব-সমিতিগুলোকে উৎসাহদান করলে পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে তারা এগিয়ে আসবে। ‘এসো শ্যামল সুন্দর’ — কবির এই আহ্ববানে সাড়া দিয়ে আসুন না আমরাই চেতনার রঙে সবকিছুকে রাঙিয়ে তুলি। গোলাপ আরও সুন্দর হয়ে উঠুক।
Leave a Reply