টু সার্কেলস ডট নেট-এ প্রকাশিত রিপোর্ট থেকে, ১১ অক্টোবর খাগড়াগড় সরেজমিন পর্যবেক্ষণের পর#
খাগড়াগড় এলাকাটি বর্ধমানের বিহারী মুসলিমদের এলাকা বলে পরিচিত ছিল একসময়। এখন তা মুসলিম শিক্ষিত সমাজ, পেশাদার, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী এবং ব্যবসায়ীদের এলাকা বলে পরিচিত। বসবাসকারীদের প্রায় ৯০ শতাংশই মুসলমান।
২ অক্টোবর একটি শক্তিশালী বিস্ফোরণে খাগড়াগড়ের একটি ভাড়া করা দোতলা বাড়িতে দু-জন মারা যায়, শাকিল আহমেদ এবং শোভন মণ্ডল। পুলিশের মতে তারা সন্ত্রাসবাদী। তৃতীয় আরেকজন আবদুল হাকিম হাসান গুরুতরভাবে আহত হয়।
নিরাপত্তাবাহিনী মতে, এই দোতলা ভাড়াবাড়িটা ছিল অস্ত্র তৈরির কারখানা, এবং যারা মারা গেছে ও আহত হয়েছে, এবং গ্রেপ্তার হওয়া দুই মহিলা কোনো সন্ত্রাসবাদী দলের সদস্য। তবে খাগড়াগড়ের অধিবাসীরা জানালেন (যাদের বেশিরভাগই কথা বলতে চাইছিলেন না), ওরা সন্ত্রাসবাদী কিনা কে জানে, তবে শক্তপোক্ত অপরাধী নিশ্চিত।
স্থানীয় এক পাইপমিস্ত্রী শাহনাওয়াজ খান (ছোটু) পুলিশকে সাহায্য করেছিল মৃতদেহগুলিকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে। সে বিস্ফোরণের শব্দ শুনে ওপরে গিয়েছিল। তার দাবি, মহিলারা তাদের অবাক করে দিয়ে কেটে পড়তে বলেছিল, নইলে গুলি করে দেবে বলে ভয় দেখায়।
তবে স্থানীয় মানুষ মিডিয়ার বাড়াবাড়িতে বিরক্ত। বিস্ফোরণের এলাকা থেকে বিশ পা দূরত্বের ‘দ্বীনিয়া মাদানিয়া মাদ্রাসা’-র শিক্ষক শেখ আবদুর রহমান ক্ষোভের সঙ্গে জানালেন, মিডিয়া ভুলভাবে এই মাদ্রাসাকে জড়িয়ে বলছে, কিছু ছাত্রছাত্রী নাকি পালিয়ে গেছে। এমনকি আনন্দবাজার পত্রিকা আরেকটি গ্রামের এক ‘প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’-এর ছবি দিতে গিয়ে এই মাদ্রাসার ছবি ব্যবহার করেছে। এই মাদ্রাসা ১৯৬৮ সালে তৈরি, রাবিতা-ঈ মাদারিস-ই-ইসলামিয়া আরবিয়াতে নথিভুক্ত। ‘আমাদের মাদ্রাসা ২ অক্টোবর থেকে ১৭ অক্টোবর অবধি বন্ধ ঈদের জন্য। তাই ঘটনাচক্রে ওইদিন সকালেই ছাত্রছাত্রীরা বাড়ি গেছে।’ — জানালেন মৌলানা রেহমান।
যেভাবে এই এলাকা এবং মুসলিম সমাজকে দায়ী করা হচ্ছে মিডিয়াতে, বিশেষত টিভিতে, তাতে স্থানীয় অধিবাসীরা ক্ষুদ্ধ। ‘তারা আমাদের কিছু জিনিস জিজ্ঞেস করছে। আমরা সৎভাবে সেসব কথার জবাব দিচ্ছি। তারা কিন্তু জোর করে একটা গল্প বানাচ্ছে।’ অধিবাসীরা জানায়, তাদের ধারণাই সত্যি, ‘মিডিয়ার লক্ষ্যই হচ্ছে ইসলাম এবং মুসলিমদের খারাপ হিসেবে দেখানো’।
Leave a Reply