শের সিং সম্পাদিত মাসিক পত্রিকা ‘ফরিদাবাদ মজদুর সমাচার’ থেকে#
শ্রমিকদের কারখানা দখলের প্রতিশোধ নিল কোম্পানি
টানা তেরো দিন কারখানা শ্রমিকদের দখলে থাকার পর ১৮ জুন ২০১১ কারখানা খুলল বটে, কিন্তু কোম্পানি নতুন মতলব আঁটতে থাকল। ঠিকা শ্রমিকদের ওপর কাজের বোঝা এমনিতেই বেশি থাকে। বাড়তি কাজের জন্য ২৭ জুলাই ঠিকা শ্রমিকেরা কিছু অতিরিক্ত শ্রমিক চাইল সুপারভাইজরের কাছে। জবাবে সুপারভাইজর তাঁর পুরোনো অভ্যাসে গালিগালাজ দিলেন। কিন্তু স্থায়ী শ্রমিকেরা ঠিকা শ্রমিকদের পাশে দাঁড়িয়ে যেতেই সুপারভাইজর তথা শিফট ইনচার্জ ক্ষমা চেয়ে নিলেন।
২৮ জুলাই কারখানার ভিতর পুলিশ ঢুকে শপ থেকে ৪জন শ্রমিককে ধরে নিয়ে গেল। গোটা ফ্যাকট্রির শ্রমিকেরা একত্রিত হয়ে কাজ বন্ধ করে দিল। ম্যানেজাররা সেই ৪ জনকে নিয়ে এসে সমস্ত শ্রমিকদের আশ্বস্ত করলেন যে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়নি। আবার উৎপাদন শুরু হয়ে গেল। কিন্তু কোম্পানি বি-শিফটের শ্রমিকদের নিয়ে আসার বাস বন্ধ করে দিল। বি-শিফটের শ্রমিকদের মধ্যে যারা আশেপাশে থাকে, তারা হেঁটে চলে এল গেটে; দূরের শ্রমিকেরাও কোনো না কোনো ব্যবস্থা করে চলে এল। কোম্পানি তাদের প্ল্যান্টে ঢুকতে দিল না। এ-শিফটের শ্রমিকেরা কারখানার বাইরে বেরল না। এক ঘণ্টা কেটে যাওয়ার পর বি-শিফটের শ্রমিকদের গেটে ঢুকতে দেওয়া হল। পরে কোম্পানি চুপিচুপি সেই ৪ জনকে সাসপেন্ড করল।
শ্রমিকরা সেই খবরটা জানতে পেরেই কোম্পানিকে সাসপেনশন রদ করতে বলল। ম্যানেজমেন্ট জানাল, আগে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হোক, তারপর দেখা যাবে। ৮ আগস্ট শ্রমিকেরা কারখানার পরিস্থিতি এবং উৎপাদন স্বাভাবিক করল। কিন্তু কোম্পানি তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করল না। ১৭ আগস্ট তারা জানাল, সাসপেনশন তোলা হবে না। শ্রমিকেরা বলল, ঠিক আছে, আমরা ৪৮ ঘণ্টা সময় দিচ্ছি, আপনারা আর একবার ভেবে দেখুন। কিন্তু কোম্পানি তখন বদ মতলব এঁটে ফেলেছে। কানপুর, রেওয়া ইত্যাদি জায়গা থেকে নতুন শ্রমিক এনে ভর্তি করা হয়েছে। সাহেবদের মুখে আবার পুরোনো বুলি ফুটে উঠল, তুই-তোকারি শুরু হয়ে গেল।
শ্রমিকেরা উৎপাদন কমিয়ে দিল। ২৩ আগস্ট দুজন স্থায়ী শ্রমিককে সাসপেন্ড করা হল। ২৪ আগস্ট আরও দুজনকে। শ্রমিকেরা ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে কথাবার্তার মাধ্যমে মীমাংসার চেষ্টা করল। ২৫ আগস্ট থেকে উৎপাদন বাড়ানো শুরু হল। কিন্তু কোম্পানি তখন অন্য ফন্দি এঁটে ফেলেছে। কারখানার গেটের ভিতর পার্ক বা যে খোলা জায়গায় শ্রমিকেরা একত্রিত হত, সেই জায়গাটা কোম্পানি লোহার প্রাচীর দিয়ে ঘিরে দিল। ২৩ থেকে ২৬ আগস্টের মধ্যে ঠিকেদাররা যথাক্রমে ৪, ৩, ১৬ আর ১০ জনকে কাজ থেকে বসিয়ে দিল।
চলবে
Leave a Reply