২১ জুলাই কাফিলা ডটকম-এ অনুমেহা যাদবের রিপোর্ট থেকে নেওয়া
১৮ জুন বুধবার সন্ধ্যায় মারুতি গাড়ি কোম্পানির মানেসর প্ল্যান্টে এক হিংসাত্মক ঘটনা ঘটে। সেদিন সকালে ফ্যাকট্রির অ্যাসেম্বলি ফ্লোরে কর্মরত জিয়া লাল নামে একজন স্থায়ী শ্রমিককে কাজ থেকে সাসপেন্ড করা হয়। যতদূর জানা গেছে, সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ যখন জিয়া লাল এবং আরও কয়েকজন চায়ের বিরতির পর কাজের জায়গায় ফিরছিলেন, রাম কিশোর মাজি নামে একজন সুপারভাইজার তাঁদের দাঁড় করিয়ে বলেন, শিফ্ট শুরুর আগের মিটিংয়ে তাঁদের থেকে যেতে হবে। ওঁদের মধ্যে তর্ক হয়। তখন সেই সুপারভাইজার জিয়া লালকে চেঁচিয়ে জাত তুলে গালাগালি দেন এবং তাতে কিছুটা কথা কাটাকাটি হয়। জিয়া লাল একজন দলিত সম্প্রদায়ের মানুষ। তাঁকে সাসপেন্ড করলেও সুপারভাইজারকে তাঁর ব্যবহারের জন্য কোনো শাস্তি না দিয়ে কয়েকদিনের জন্য ছুটিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। শ্রমিকেরা জিয়া লালের সাসপেনশন তুলে নেওয়ার দাবি করে।
কয়েকদিন থেকেই শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ ছিল। গত এপ্রিল মাসে ইউনিয়নের নতুন নেতৃত্ব আসার পর থেকে ম্যানেজমেন্ট তাদের বিশেষ পাত্তা দিচ্ছিল না। ইউনিয়ন যে দাবিসনদ দিয়েছিল, তার ওপর মার্চ মাস থেকে ইউনিয়নের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা চলছিল। ম্যানেজমেন্টের বেতন সংক্রান্ত ঘোষণার পর সোমবার আলোচনা থেমে যায়। মারুতি প্ল্যান্টগুলিতে প্রত্যেক শিফট শুরুর আগে ২০ মিনিটের একটা সভা হয়, সেখানে শ্রমিক এবং বাবুরা সকলে কিছু ব্যায়ামও করে। আগের দিন অর্থাৎ ১৭ জুন মঙ্গলবার শ্রমিকেরা সকালে ওই মিটিংয়ে অংশ নিতে অস্বীকার করে।
দুপুর তিনটেয় বি-শিফ্টের শ্রমিকেরা যখন কারখানার গেটে পৌঁছাল, ইউনিয়নের নেতারা এ-শিফ্টের শ্রমিকদের কারখানার ভিতর থাকতে বলল। দুপুর সাড়ে তিনটেয় নেতারা ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে জিয়া লালের সাসপেনশন প্রত্যাহার নিয়ে কথা বলতে যায়। শপ ফ্লোরে গাড়ি তৈরির কাজ চলতে থাকে। বিকেল পাঁচটায় শ্রমিকেরা জানতে পারে, জিয়া লালকে কাজে ফিরিয়ে নেওয়া হবে না এবং এ ব্যাপারে ম্যানেজমেন্ট আর কথাও বলবে না। মানেসর প্ল্যান্টের কর্তারা জানিয়ে দেয়, বিষয়টা তাঁদের হাতে নেই, ওপরতলার কর্তারাই যা কিছু করবে।
দুপুরে যখন নেতারা ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে কথা বলতে যায়, তখন থেকেই শ-খানেক পুলিশ জড়ো হয় মেন গেটের সামনে। কিন্তু শ্রমিকদের বিক্ষোভ বাড়তে থাকে এবং সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ তা হিংসাত্মক রূপ নেয়। শ্রমিকদের হাতে চল্লিশ জন ম্যানেজার গুরুতরভাবে আহত হয়। লোহার রড এবং গাড়ির ডোর বিম নিয়ে শ্রমিকেরা ম্যানেজারদের আক্রমণ করে। হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজারের পা ভেঙে দেওয়া হয় এবং তিনি পুড়ে মারা যান। এরপরই শ্রমিকেরা পালাতে শুরু করে। পুলিশ পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলো থেকে ৯০ জনকে গ্রেপ্তার করে।
Leave a Reply