সুব্রত পোদ্দার, মেমারী, বর্ধমান; ২৫শে মে’১৩ – আজ সকালে আমরা চারজন বেরিয়েছিলাম –
‘চীট ফান্ড’ কেলেঙ্কারী-পরবর্তী-সময়ে আমাদের সাতগেছিয়া বাজারের হাল-হকিকত জানতে। কথা
হল প্রায় ৪০ জনের সঙ্গে। সবচেয়ে মর্মভেদী কথাটা উঠে এল হামুনপুরের সব্জি বিক্রেতা প্রৌঢ় বাদল
সরকারের মুখ থেকে। স্থানীয় সোসাইটিতে আমানত করতে চান কি না, এর উত্তরে গোমড়ামুখে অতি
সংক্ষিপ্ত ‘না’ শুনেই কেমন যেন মনে হল, ওঁর ভেতরে অনেক ক্ষোভ জমে আছে, আসলে ওঁ হয়তো
অনেককিছুই বলতে চান। তাই কথা বলতে শুরু করলাম, বললাম –
– কাকা, পাশবই না হয় করবেনই না; কিন্তু কারণটা কী একবারটি জানতে পারি?
– (বেশ বিরক্তির সুরে) না রে বাবা, মানুষের মেরুদন্ড ভেঙে গেছে, ঐসব কোম্পানীগুলো সব শেষ করে
দিয়ে গেছে … বাদল কাকুর চোখের কোণ কী চিকচিক করে উঠেছিল? হাটুরে ঐ পরিবেশে খেয়াল করিনি।
তবে কথাগুলো হাহাকারের মতোন শোনাল। সারদাকাণ্ড-পরবর্তী গ্রামবাংলার ছবি বেশিরভাগ এমনটাই।
যার গেছে অথবা যার যায়নি-নির্বিশেষে, সকলেরই সঞ্চয় করার মানসিক মেরুদণ্ডটাই ভেঙে গেছে; অথচ
এই গরীব মানুষগুলোরই সঞ্চয় করা – সবচেয়ে বেশী জরুরী, গরীবী ও মহাজনী সুদের ভয়ঙ্কর ফাঁদ থেকে
বাঁচার জন্য। কয়েক হাজার মানি-মার্কেট-ব্যবসায়ী, কর্মহীন কয়েক লক্ষ মানুষকে ‘ইজি মানি’র লোভ
দেখিয়ে, সরকারী নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে কোটি কোটি মানুষকে ধনে-প্রাণে-মনে ও মানে মেরে ফেলেছে। কোথাও
সঞ্চয় করতে গরীব মানুষ আর নুনতম ভরসা-বিশ্বাস পাচ্ছে না। এই অবস্থা চলতে থাকলে দেশের সামগ্রিক
অর্থনীতির ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়তে বাধ্য। তাই সরকারের আশু কর্তব্য গ্রামে-গঞ্জে-শহরে-অলিতে
-গলিতে গরীব মানুষকে ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রদানকারী যত সংস্থা আছে, আইন পাশ করে অবিলম্বে
তাদেরকে একটি নিয়ন্ত্রক সংস্থার অধীনে আনা। নাহলে খুব শীঘ্রই ভয়ঙ্কর দুর্দিন ঘনিয়ে আসছে!
Leave a Reply