- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

মহেশতলার ‘শব্দশহীদ’-এর প্রথম বার্ষিক স্মরণসভা

২৭ অক্টোবর, জিতেন নন্দী, রবীন্দ্রনগর, মহেশতলা#

দল বলতে আমরা অভ্যাসবশে তাকাই ‘নেতা’ অথবা তার ‘মহান শিক্ষক’দের দিকে। নেতাদের বাহাদুরিতে চমৎকৃত হই কিংবা তাদের গদ্দারিতে ক্ষুব্ধ হই। কিন্তু প্রতিটি দলের মধ্যেই অগণিতদের ভিড়ে থাকে এমন সব মানুষ, যাদের কাছ থেকে জীবনের পথে চলার কিছু শিখে নেওয়া যায়। এমনই একজন মানুষ প্রয়াত পীযূষ কান্তি সরকার। তাঁর বার্ষিক স্মরণসভা হল তাঁরই বাড়িতে আজ ২৭ অক্টোবর।

গতবছর কালীপুজোর পরদিন পীযূষ কান্তি সরকার শব্দবাজির প্রকোপে অসুস্থ হয়ে অভিযোগ জানাতে থানায় গিয়েছিলেন। থানার কর্তব্যরত কর্মচারীদের কোনো সাড়া না পেয়ে বাড়ি ফেরার পথে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান। তাঁর এই অকালমৃত্যুতে স্বতস্ফূর্ত প্রতিবাদ করে স্থানীয় মানুষ। আবার আসতে চলেছে কালীপুজো। তাঁর মৃত্যুর একবছর পর তাঁর পরিবার, আত্মীয়স্বজন এবং প্রতিবেশী-বন্ধুরা আজ মিলিত হয়েছিলেন তাঁর বাড়িতে।

স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তাঁর স্ত্রী বলেন, ‘তিনি সহজ সরল জীবনযাপন পছন্দ করতেন। এই উৎসবের সময় (দুর্গাপূজা) তিনি নিজে কখনো নতুন জামাকাপড় পড়তেন না। তিনি বলতেন, অনেক মানুষ আছে যাদের নতুন জামাকাপড় জোটে না। সবসময় অন্যদের কথাটা ভাবতেন। উৎসব বলতে তাঁর মনে পড়ে যেত ছোটোবেলার গ্রাম রাজশাহীর নওগাঁর উৎসবের কথা। উনি চাইতেন, তাঁর মৃত্যু যেন তাঁর জন্মভূমিতেই হয়। কিন্তু সেটা সম্ভব ছিল না। উনি আমাকে সবসময় বলতেন, জীবনে কী পাওনি আর কী পেয়েছ হিসেব মেলাতে যেও না। সমাজের দিকে তাকিও …’

ওঁদের বড়ো ছেলে পল্লব বলেন, ‘বাবা বলতেন, ভিতর থেকে ভালো হওয়ার চেষ্টা কোরো।’।

ছোটো ছেলে প্রবুদ্ধ বলেন, ‘বাবা আমাদের কখনো উপদেশ দিয়ে বা শাসন করে কিছু শেখাতেন না। তিনি তাঁর আচরণের মধ্যে দিয়ে আমাদের শিখিয়ে দিতেন। বাবা কথায় আর কাজে এক ছিলেন।’

তাঁর দীর্ঘদিনের বন্ধু বর্ষিয়ান অনিল তপাদার বলেন, ‘বামপন্থীদের মধ্যে কথা আর কাজের অমিল তাঁকে দুঃখ দিত। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ইউনিয়নের আলোচনায় গিয়ে নেতাদের দ্বিচারিতা তিনি সহ্য করতে পারতেন না।’ অথচ নিজে ছিলেন একজন শ্রমিক। মেটিয়াব্রুজ-তারাতলা অঞ্চলের বিখ্যাত কারখানা জিইসি-তে তিনি ছিলেন বামপন্থী ইউনিয়নের সক্রিয় সদস্য।

প্রতিবেশীরা তাঁকে সকলেই প্রতিবাদী হিসেবে চিনতেন। অনেকেই স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, এই জায়গাটা ছিল একটা ধানজলা। এটাকে বাসযোগ্য করার জন্য তিনি কঠোর পরিশ্রম করেছিলেন। বরাবর পাড়ায় সকলের খোঁজখবর নিতেন। উচ্চস্বরে কথা বলতেন না। কিন্তু হাসতেন হো হো করে উচ্চস্বরে। এরকম প্রতিবেশী আর পাওয়া যাবে না।