- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

মদনপুরের সাহেব বাগান রইল না

শমীক সরকার, মাজদিয়া গ্রাম, মদনপুর, নদীয়া, ২২ মার্চ। ছবি প্রতিবেদকের#

দিনেদুপুরে সাহেব বাগানের প্রাচীন গাছ সাফ করার ছবি প্রতিবেদকের সৌজন্যে।
দিনেদুপুরে সাহেব বাগানের প্রাচীন গাছ সাফ করার ছবি প্রতিবেদকের সৌজন্যে।

আমাদের গ্রামে কেউ বেড়াতে গেলে আমরা তাদের নিয়ে যেতাম সাহেব বাগান দেখাতে। গ্রামের কিলোমিটার খানেকের মধ্যে এই বিগান। বয়সা বিলের পাশে। সাহেব বাগান মানে শতাধিক বড়ো বড়ো গাছের বাগান। বাগানের মধ্যমণি যে বড়ো বটগাছ-টা, তার নিচে ছিল একটা বাড়ি। সাহেবের বাড়ি। আমরা তার ধ্বংসস্তুপ দেখেছি। বয়োজ্যেষ্ঠদের কাছে শুনেছি, ওই বটগাছটার শাখায় নাকি ছিল সাহেবের গাছবাড়ি।
তো সেই সাহেব বাগানের গাছগুলো বেশ কয়েকবছর ধরেই ধীরে ধীরে কে বা কারা কেটে নিয়ে যাচ্ছিল। প্রথমে একটা বোর্ড ঝোলানো হলো, কলকাতার কোনো এক বৃক্ষপ্রেমী সংস্থার। তারা চকখড়ি দিয়ে গাছগুলোর গায়ে দাগ দিয়ে দিয়েছিল। তারপর হাতবদল হয়ে এল কোনো এক গোশালা কর্তৃপক্ষের কাছে। তারপর এখন নাকি কোনো এক সংস্থা কিনে নিয়েছে গোটা বাগানটা — সেখানে আয়ুর্বেদিক হাসপাতাল হবে। বাকি যে কটা গাছ ছিল — সেগুলোও একে একে কাটা পড়ছে। আমরা বিশ্ব জল দিবসে (২২ মার্চ) সাইকেল র‍্যালি করতে করতে এখানে এসে সরাসরি পড়লাম এই গাছ কাটার মুখে। ইলেকট্রিক ট্রানসফর্মার বিকল করে গাছ কাটা হচ্ছে। কাটার এবং বেচার বরাত পেয়েছে আমাদের গ্রামের এক কাঠ ব্যাবসায়ী। গাছ কাটার ফটো তুলতে গিয়ে আমাদের বন্ধুবান্ধবরা গাছ কাটনেওয়ালাদের বিরোধিতার মুখে পড়ল।
উপস্থিত এক হোমরাচোমরা-কে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গেল, বন দপ্তরের অনুমতিক্রমেই এই গাছ কাটা হচ্ছে। একটি গাছের বদলে এগারোটি গাছ লাগানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে মিলেছে এই ছাড়পত্র। তবে অর্ডারের কোনো কপি তিনি দেখাতে পারলেন না।
মাজদিয়া গ্রামের সংলগ্ন হলেও, এই সাহেব বাগান সগুণা গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত। মাজদিয়া গ্রামের ছেলে বুড়ো মেয়েরা চুপচাপ দেখে যাচ্ছে, তাদের ঐতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছে। সকলেরই চোখেমুখে আক্ষেপ — তাদের সন্তান সন্ততি-রা জানবেও না, এখানে একটা বাগান ছিল, সাহেব বাগান। কিন্তু সবাই যেন জবুথবু, কারোরই যেন কিছু করার নেই।