অমিতাভ সেন, কলকাতা, ১৪ জানুয়ারি#
বুঝলি, ওই যে পুঁইডাঁটা দেখছিস, পুঁই মুচুড়ি শুদ্ধু; ওই ডাঁটাগুলো শুধু দিয়ে হাঁসের মাংস রাঁধতে হয়। দেশের বাড়িতে গিয়ে খাই। মাংসটা ভাল সিদ্ধ হয় আর ডাঁটাগুলো খেলেও মনে হয় মাংস খাচ্ছি। মাংসের মতো একই মশলা দিয়ে রাঁধবি আর ধনে জিরে গুঁড়ো একটু দিয়ে দিবি। মুচুড়িগুলো দিয়ে চুনো মাছ আর টমেটো লঙ্কা দিয়ে গা-মাখা চচ্চড়ি। ওই দিয়েই তোর এক থালা ভাত উঠে যাবে। তবে সেসব তো এখানে হবে না। আমাদের দেশের বাড়িতে গেলে হয়। ট্যাক্সি চালাতে চালাতে সুকুমার গল্প করছিল। আমাকে ও হাসপাতাল নিয়ে যাচ্ছে। গতমাসে গ্রামের বাড়ি গেছিল — ডায়মন্ডহারবার লাইনে ওর বাড়ি কলকাতা থেকে দক্ষিণে দু-আড়াই ঘণ্টার রাস্তা। গ্রামে খাবার জিনিসের দাম কলকাতার থেকে বেশি। ও চন্দনপুকুর হাটে আলু কিনেছে ২৫ টাকা কিলো দরে, আলু যখন কলকাতায় ১৮ টাকা কিলো। চারাপোনা প্রতি কেজি ১২০ থেকে ১৪০ টাকা কিলো অথচ ভবানীপুরে যদুবাবুর বাজারে দর ৮০ থেকে ১০০টাকা কিলো। কারণ হিসাবে সুকুমার বলল, ‘বুঝলি না, গ্রাম থেকে সব মাল শহরে চালান হয়ে যাচ্ছে। চাষিরা সব সবজি শহরে পাঠাচ্ছে বেশি লাভের জন্য, স্থানীয় বাজারে মাল কম, তাই দাম বেশি। সব সবজির দাম বেশি আমাদের ওখানে। মাছের অবস্থাও একই, ওই একই কারণে।’
বন্ধু সুকুমারের গল্পের একেবারেই উল্টোরকম গল্প লক্ষ্মীদার। লক্ষ্মীকান্তদা আমার ভায়রাভাই। হাওড়ার মাজুতে থাকে — একটু ভিতরের দিকের গ্রামে। ওদের ওখানে শাকসবজি সবসময় আমাদের কলকাতার বাজার থেকে হাফ দাম বা তিন ভাগের এক ভাগ দামে বিকোয়। বেশিরভাগ সময় লক্ষ্মীদা আমাদের বাড়িতে এলে হাতের ব্যাগে ফুলকপি, বেগুন, কুমড়ো ইত্যাদি কিছু তরিতরকারি নিয়ে আসে ওখান থেকে। লক্ষ্মীদার কথা শুনলে বোঝা যায় ওদের গ্রাম থেকে বড়ো শহরে শাকসবজি রপ্তানি যায় কম, সম্ভবত দূরত্বের কারণে বা পরিবহণের যথাযথ ব্যবস্থা না থাকায়। লক্ষ্মীদার গল্পগুলো মজার — ওখানকার বাজারে বাচা মাছ নাকি মাছ বিক্রেতা চেনে না। বড়ো শহরের বড়ো বাজারে যে মাছের দাম ২০০ থেকে ২৫০ টাকার থেকে কম নয় সে মাছ ৬০ টাকা কেজিতে বেচছে। তাও লোকে কিনছে না — অচেনা মাছ। মাছওয়ালাও ঠিক নামটা বলতে পারছে না। লক্ষ্মীদা মাছটার নাম জানে বউয়ের দৌলতে, সে কিনা নদীর ধারে বড়ো হয়েছে, তার বাপের বাড়িতে অনেক রকম মাছ খাওয়ার চল, লক্ষ্মীদাও শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে বাচা মাছ চিনেছে। মাছওয়ালার কাছে কেজি খানেক মাছ ছিল, সে লক্ষ্মীদাকে বলেছে, ‘ঠাকুরমশাই, সব কটা মাছ নিয়ে নাও ৫০ টাকায় দিয়ে দেব।’ লক্ষ্মীদা তো সঙ্গে সঙ্গে রাজি। বাড়িতে নিয়ে গিয়ে বাজারের থলি খুলতেই বউয়ের একগাল হাসিমুখ, ‘কোথায় পেলে, এখানে তো পোনামাছ ছাড়া বাজারে কোনো মাছই ওঠে না, ওই খেয়ে খেয়ে মুখ হেজে গেছিল।’ কথাটা অবশ্য পুরো ঠিক নয়। লক্ষ্মীদার বউ আগমনীদি আসলে সবরকম মাছ খায় না। ফলে মাজু বাজারে আর যা ওঠে লক্ষ্মীদা তা আনতে ভরসা পায় না।
Leave a Reply