সংবাদমন্থন প্রতিবেদন, কলকাতা, ৩১ মার্চ#
গত ২৩ মার্চ কোলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটির নির্দেশে পাটুলি থেকে রুবি পর্যন্ত বাইপাসের রাস্তার দু-ধারের প্রায় এক হাজারের বেশি অস্থায়ী দোকানঘর, বাড়ি-ঘর ভেঙে দেওয়া হয়। মাত্র ৪৮ ঘন্টা আগে মাইকে ঘোষণা করেই দোকানগুলি ভাঙা হয়। পাটুলির মোড়ে ২০০২ সাল থেকে গণেশ মণ্ডল চা কোল্ড ড্রিঙ্কসের দোকান চালিয়ে সংসার চালাতেন। এখানে সবজি, মাছ, ভাতের হোটেল, সাইকেল সারানোর দোকান, গ্যাস-ওভেন সারানোর দোকানও ছিল। তাঁর আসল বাড়ি ছিল জয়নগর। দোকানে তিনি রাতেও থাকতেন। চুরি হবার ভয় থাকায় দোকানেই থাকতেন। রাস্তার পারে দোকান করার সুবাদে বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক দলের হয়ে তিনি মিছিলেও গেছেন। প্রথম দিকে সিপিএমের মিছিলে, পরে তৃণমূলের মিছিলে। এখন কী করবেন জানতে চাইলে বললেন যে ভ্যান রিক্সা কিছু চালাব। কী করব? সবাই বলেছিল উচ্ছেদ হবে না, হলেও জায়গা দেবে। স্বাধীনভাবে কিছু করার চেষ্টা করব।
পাটুলি মোড় থেকে একটু এগিয়ে বাঘাযতীনের দিকে আসতে বাঁদিকে বেশ কতকগুলি ঝুপড়ি ভাঙা পড়েছে। এগুলি কোনোটা ছিল হোটেল-চায়ের দোকান, কোনোটা পান-বিড়ি-সিগারেটের দোকান, আবার এর পাশেই ছিল আয়লার পরে সুন্দরবনের গোসাবা থেকে আসা স্বপন সাধুখাঁর মতো ক্যাচড়া সংগ্রহের দোকানদার। বউ-মেয়ে নিয়ে ওখানেই তাঁরা থাকতেন। ওঁদের সাথে ছিলেন কুলতলি থেকে আসা তপন বৈদ্য। ওদের দোকান ভেঙে দেওয়ার পর ওরা রাস্তার উল্টোদিকে হুন্ডাইয়ের শোরুমের পিছনে জংলার মধ্যে ত্রিপল খাটিয়ে এখন থাকছে।
ডাবলু মণ্ডলের সাইকেলের দোকান ভাঙা পড়েছে। তাঁর জন্মস্থান গড়িয়া বোড়াল। ভাড়াই থাকেন দীর্ঘদিন ধরে। সিকিউরিটি গার্ডের কাজ করে আড়াই হাজার টাকা পান। তাতে করে সংসার চলে না। তাই একটা সাইকেল সারানোর দোকান দিয়েছিলেন অবসর সময় বাঁচিয়ে। ক্ষোভের সাথে জানালেন পাবলিকের পয়সায় এমএলএ, এমপিদের ভাতা বাড়ছে, আমরা চার-পাঁচ হাজার টাকা রোজগার করতে পারছি না। লোকের বাড়িতে কাজ করে আর ক’পয়সা হয়? তার ওপর প্রতিদিন জিনিসের দাম বেড়ে চলেছে। আমরা রাস্তার পাশে দোকান দিয়ে কোনোরকমে বেঁচে থাকতে চাইছি। সব পার্টিই বলেছিল আমাদের দিকে এসো। মুখ্যমন্ত্রী ভোটের আগে বলছিলেন উনি পুনর্বাসন ছাড়া হকার উচ্ছেদ করবেন না। এখন উনি কলকাতাকে লন্ডন বানানোর লক্ষ্যে শহর থেকে গরিব মানুষকেই হটিয়ে দিতে চাইছেন। এবারে দেখবেন এ অঞ্চলে কীভাবে চুরি-ছিনতাই বাড়ে। কাজ দিতে পারবেন না, অথচ কেউ স্বাধীনভাবে কিছু করে তাদের পেট চালাচ্ছে, গরিবের সরকার তাদের পেটে লাথি মারছে।
বাঘাযতীন বিগ বাজারের আশেপাশে ফুটের খাবার দোকান থেকে শুরু করে সমস্ত দোকানই ভেঙে দেওয়া হয়েছে। বাঘাযতীন রেলব্রিজের তলায় ছিল একটি বড়ো বাজার, সেটাকেও সম্পূর্ণ উচ্ছেদ করা হয়েছে। বাজারের অদূরে দাঁড়িয়ে ২৪-২৫ বছরের একটি ছেলে জানালো রবিবারের ঠিক আগে এভাবে ভেঙে দেওয়া একেবারেই উচিত হয়নি। অনেকের মালপত্র নষ্ট হয়েছে। তাই আজ রবিবার বাজারটা বসেছে। এই বাজারের ওপর অনেকগুলি মানুষ নির্ভর করে ছিল।
Leave a Reply