- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

ফের মার্কিন পুলিশের হাতে কৃষ্ণাঙ্গ যুবক খুন, হাজার হাজার মানুষের শান্তিপূর্ব প্রতিবাদ বাল্টিমোর-এ

কুশল বসু, কলকাতা, ২৯ এপ্রিল#

বাল্টিমোর-এ ২৫ এপ্রিলের প্রতিবাদের ছবি ' ব্ল্যাক ওয়েস্টচেস্টার' ওয়েবসাইটের থেকে পাওয়া।
বাল্টিমোর-এ ২৫ এপ্রিলের প্রতিবাদের ছবি ‘ ব্ল্যাক ওয়েস্টচেস্টার’ ওয়েবসাইটের থেকে পাওয়া।

মার্কিন বর্ণবিদ্বেষী পুলিশ প্রশাসনের হাতে ফের খুন হলো এক কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান, নাম ফ্রেডি গ্রে (২৫)। আমেরিকার মেরিল্যান্ড প্রদেশের বাল্টিমোর শহরে ১৯ এপ্রিল ঘটনাটি ঘটেছে। ১২ এপ্রিল পুলিশের হাতে সুস্থ সবল অবস্থায় গ্রেপ্তার হয় কৃষ্ণাঙ্গ যুবক ফ্রেডি গ্রে। তাকে হেফাজতে নিয়ে পুলিশ মেরে শিরদাঁড়া ভেঙে দেয় এবং কন্ঠনালী জখম করে এবং সে ওইদিনই কোমায় চলে যায়। ১৯ এপ্রিল সে গ্রে মারা যায়। ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় শহর জুড়ে বিক্ষোভ ঘনীভূত হলে ঘটনার সময় উপস্থিত ৬ জন পুলিশ অফিসারকে কাজ থেকে সরিয়ে দেয় বাল্টিমোর শহর প্রশাসন। কিন্তু মার্কিন মুলুকে গত কয়েক মাস ধরে পুলিশ প্রশাসনের হাতে পরপর কৃষ্ণাঙ্গদের খুন হওয়ার ঘটনা ঘটলেও এখনো পর্যন্ত কোনো পুলিশের বিরুদ্ধে খুনের মামলা হয়নি।
২৫ এপ্রিল কয়েক হাজার বাল্টিমোরবাসী, বেশির ভাগ কৃষ্ণাঙ্গ, একটি মিছিল করে বাল্টিমোর সিটি হল থেকে ইনার হারবার পর্যন্ত। হাতে হাতে ধরে সেই মিছিলে স্লোগান ওঠে ‘অল নাইট, অল ডে, উই উইল ফাইট ফর ফ্রেডি গ্রে’, ‘ঐক্যবদ্ধ জনতাকে কেউ হারাতে পারে না’ ইত্যাদি। সেই মিছিল শেষ হয়ে যাবার পর কতিপয় কৃষ্ণাঙ্গ যুবক পুলিশের দিকে ইট-পাটকেল ছুঁড়লে জনা ছয়েক পুলিশ সামান্য আহত হয় এবং প্রশাসন পঁয়ত্রিশ জনকে গ্রেপ্তার করে, যাদের মধ্যে কয়েকজন কিশোর।
মার্কিন মিডিয়া এই ব্যতিক্রমী হিংসার ঘটনাটির ছবি বারবার টিভিতে দেখাতে শুরু করে এবং শিরোনাম দিতে শুরু করে, ‘বাল্টিমোরে কৃষ্ণাঙ্গদের হিংসা’ প্রভৃতি। এবং তার আগের হাজার হাজার মানুষের শান্তিপূর্ণ মিছিল ও প্রতিবাদ সেখানে সামান্য উল্লিখিত হয়।
২৮ এপ্রিল ফ্রেডি গ্রে-কে সমাহিত করা হয়। সেই দিনও কয়েক হাজার মানুষ জমায়েত হয় এবং শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ জানায়। কিন্তু সন্ধ্যের পর ফের শ’খানেক যুবকের হিংসাত্মক কার্যকলাপ, লুঠপাঠ শুরু হয় এবং মিডিয়া সেইগুলিকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে হাজির করতে থাকে। বাল্টিমোর প্রশাসন যুদ্ধকালীন সাজে সজ্জিত হয়ে ওঠে। শহর জুড়ে কার্ফু জারী করা হয়। হাজার পাঁচেক সেনা নামিয়ে দেওয়া হয় শহরে। প্রশাসনের রণসাজে ব্যাপক শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ জমাট বাঁধতে পারে না।
মার্কিন বড়ো মিডিয়ার এই হিংসা-প্রেম ও বর্ণবিদ্বেষী মনোভাবকে তীব্র প্রতিবাদ জানায় কৃষ্ণাঙ্গ সংবাদমাধ্যমগুলি। বাল্টিমোর সান পত্রিকায় একটি প্রবন্ধে এক প্রতিবাদী কলেজ ছাত্রী লিয়া এলিজা বাল্টার লেখেন, ‘বিপ্লব টিভিতে দেখানো হবে না। ২৫ এপ্রিল শনিবার বাল্টিমোরের মানুষের প্রতিবাদ একটি বিপ্লব। … শনিবার সারাদিন স্লোগান দিয়ে গান গেয়ে সন্ধ্যেবেলা যখন আমি আমার বাচ্চা দেখাশোনার কাজ শুরু করেছি, তখন একের পর এক ফোন আসতে শুরু করল হিংসার খবর জানিয়ে। তখন এক অদ্ভুত ক্ষমতাহীনতা আমাকে ঘিরে ধরল। সারাদিন ধরে যে স্বর আমরা বাল্টিমোরবাসীরা শুনিয়েছি, এক মুহুর্তে তা ধুলিসাৎ হয়ে গেল। তা ধুলিসাৎ হলো এই জন্য নয় যে হিংসা হয়েছে বা তা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের তুলনায় বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়েছে। ধুলিসাৎ হলো, কারণ, আমরা সারাদিন ধরে জাতি, ধর্ম, বর্ণ বিভেদ ভুলে যে সত্যিকারের বিপ্লবাত্মক কাজ করলাম, টিভি সেসব দেখালো না, দেখালো হিংসাটা। … বিপ্লব টিভিতে দেখানো হবে না, কারণ টিভি-ভোক্তারা নিষ্ক্রিয়ভাবে সেটাই দেখতে চায়, যে নাটক টিভি তাদের দেখায়। …’