কুশল বসু, কলকাতা, ১৫ জুন#
পাকিস্তানের ইসলামাবাদ হাইকোর্ট ৫ জুন একটি অভুতপূর্ব ঘটনা ঘটিয়েছে। একটি রায়ে তারা পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছে, পশ্চিম পাকিস্তানের ওয়াজিরিস্তানে দ্রোণ হামলার অভিযোগে মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ-র ইসলামাবাদের স্টেশন চিফ জোনাথন ব্যাঙ্কস্ এবং সিআইএ-র আইনি পরামর্শদাতা জন এ রিযো-র বিরুদ্ধে এফআইআর করা হোক।
উত্তর ওয়াজিরিস্তানের মিরালি তেহশিলের মাছি খেল গ্রামের বাসিন্দা আবদুল করিম অভিযোগ জানিয়েছিলেন (২০১০ সালে) যে মার্কিন সংস্থা সিআইএ-র নির্দেশমতো দ্রোণ হামলা চালিয়ে তাঁর ভাই এবং পুত্রকে মেরে ফেলা হয়েছে (২০০৯ সালে)। ঘটনাটি ঘটেছে তাঁর গ্রামে। এই ঘটনার পর সংবাদে প্রকাশ পেয়েছিল, এক তালিবান নেতার সঙ্গে তাঁরা ছিল বাড়িতে, তাই মারা গেছে। কিন্ত ওখানে কোনো তালিবান নেতা ছিল না বলে জানা যায় পরে। এছাড়া আরো প্রকাশ পায়, গোটা পাকিস্তানে কাদের দ্রোণ হামলা চালিয়ে মারা হবে তার তালিকা তৈরি করে রিযো এবং ব্যাঙ্কস্। রিযো এ কথা দেশে ফিরে গিয়ে স্বীকার করে নেয়। ব্যাঙ্কস্-এর মুখোশ খুলে যাওয়ার পর তাঁকে তড়িঘড়ি দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু কিছুতেই এদের বিরুদ্ধে এফআইআর করতে চাইছিল না পাকিস্তান পুলিশ। আদালতের কাছ অজুহাত দেওয়া হচ্ছিল, উত্তর ওয়াজিরিস্তানের ঘটনায় ইসলামাবাদে এফআইআর করা যাবে না। কিন্তু এবার হাইকোর্টের জজ সাহেব স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, ইসলামাবাদেই যেহেতু থাকতেন ব্যাঙ্কস্, তাই পাকিস্তানের আইন অনুসারে সেখানেই তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর করা যাবে।
প্রসঙ্গত, এতদিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের সীমানার মধ্যে দ্রোণ হামলা চালিয়ে এসেছে, সন্ত্রাসীদের পাশাপাশিই কয়েক হাজার নিরীহ মানুষকেও খুন করেছে। কিন্তু কখনোই তাদের কেশস্পর্শ করেনি কোনো পাকিস্তানি সংস্থা। কিন্তু দেশের মানুষের মধ্যে দ্রোণ হামলার বিরুদ্ধে জনমত ক্রমেই জোরালো হচ্ছে। এতদিনে তা পাকিস্তানি প্রতিষ্ঠানগুলিকেও স্পর্শ করলো। বাদী আবদুল করিমের ওপর এই মামলা দায়ের করার জন্য হামলা হওয়ার পর করিম আত্মগোপন করে আছেন। তাঁর হয়ে মামলা চালাচ্ছে যে এনজিও, সেই ফাউন্ডেশন অব ফাণ্ডামেন্টাল রাইটস্-এর আইনজীবী জারমিনে রহিম জানান, ‘আজকের রায়ে দ্রোণ হামলায় নিহত সমস্ত পাকিস্তানি নিরীহ নাগরিকের জয় হয়েছে।’ তিনি আশা প্রকাশ করেন, এবার আরো যেসব মানুষের নিকটাত্মীয়রা এইভাবে দ্রোণ হামলায় মারা গেছে, তারাও এফআইআর রুজু করতে পারবে সিআইএ-র বিরুদ্ধে।
এদিকে মার্কিন দ্রোণ হামলা গত ছয় মাস বন্ধ ছিল পাকিস্তানে। কারণ পাকিস্তান সরকার জানিয়েছিল, তারা ওয়াজিরিস্তানের বিদ্রোহীদের সঙ্গে কথাবার্তা চালানোর প্রয়াস নিয়েছে। কিন্তু গত সপ্তাহে একটি বিমানবন্দরে হামলা চালায় পাকিস্তানি তালিবানরা, তারপর ফের মার্কিন দ্রোণ হামলা শুরু হয়েছে ওয়াজিরিস্তানে। প্রথম হামলায় দু-দিনে ১৩ জন পাকিস্তানি মারা গেছে গত সপ্তাহে। এদিকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীও হামলা শুরু করেছে। ১৫ জুন পাক বিমানবাহিনী আকাশ থেকে গুলি চালিয়ে ৫০ জন জঙ্গীকে মেরে ফেলেছে বলে ণ্ণদি নেশন’ পত্রিকার খবরে জানা যাচ্ছে।
Leave a Reply