দয়ামণি বারলা ঝাড়খণ্ডের ‘আদিবাসী মূলবাসী অস্তিত্ব রক্ষা মঞ্চ’-এর নেত্রী। এই মঞ্চের নেতৃত্বে ঝাড়খণ্ডের গুমলা ও খুঁটি জেলায় বিশ্বের অন্যতম সর্ববৃহৎ ইস্পাত কোম্পানি আর্সেলর মিত্তালের প্রস্তাবিত ইস্পাত প্রকল্পের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। তাঁর ২০১০ সালের একটি সাক্ষাৎকার পড়তে পারেন এখানে। এছাড়া এই সাধারণ ঘরের আদিবাসী মহিলার একটি ব্লগ-ও রয়েছে, ইংরাজি ও হিন্দীতে, দেখতে পাবেন এখানে। সাম্প্রতিক কালে নাগরির অধিবাসীদের জমি অধিগ্রহণ বিরোধী আন্দোলনের পুরোভাগে থাকার সময় পুরনো একটি মামলায় তাঁকে গ্রেফতার করা হয়, বোঝাই যায়, এটি আন্দোলন দমনের একটি রাষ্ট্রীয় কৌশল। সঙ্গের ছবিটি indiatogether.org থেকে নেওয়া — সম্পাদক।
২০১০ সালের হিন্দী সাক্ষাৎকারের অডিও ফাইলটিও শুনতে পারেন এখানে
ঝাড়খণ্ড সহ দেশের বিভিন্ন রাজ্যের কিছু সামাজিক সংগঠন ও ছোটো পত্রিকার প্রেস বিজ্ঞপ্তি#
সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী দয়ামণি বারলার অনৈতিক গ্রেপ্তারকে ধিক্কার জানিয়ে, তাঁর বিরুদ্ধে সাজানো অভিযোগ তুলে নিয়ে তাঁর নিঃশর্ত মুক্তির দাবী জানাচ্ছি আমরা, নিম্নলিখিত সংগঠনগুলির সমস্ত সদস্য।
২০০৬ সালের ২৫শে এপ্রিল গ্রামীণ শ্রমিকদের জব কার্ডের দাবিতে একটি সমাবেশের ভিত্তিতে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। অক্টোবরের ১৮ তারিখ রাঁচীতে স্থানীয় আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পান তিনি। কিন্তু ছাড়া পাওয়ার দিন জেল কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করে যে ‘সরকারি কাজে বাধা সৃষ্টি’র দায়ে একটি দ্বিতীয় ওয়ারেন্টের ভিত্তিতে তাকে পু্নর্বার গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। ২৯ অক্টোবর জানা গেল তিনি জামিন পাননি এবং কারারুদ্ধ হয়েই আছেন।
রাজ্যের রাজধানী শহর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত নাগরি-র উর্বর জমি অধিগ্রহণ করে আইআইটি, আইআইএম এবং ন্যাশনাল ল স্কুল তৈরীর বিরুদ্ধে গ্রামবাসীদের শান্তিপূর্ণ দৃঢ় প্রতিরোধের নেত্রী দয়ামণি বারলাকে এভাবে গ্রেপ্তার করার পেছনে অন্য অভিসন্ধি আছে বলে আমাদের বিশ্বাস। পরিসংখ্যান অনুসসারে ৫০০ মতো আদিবাসী পরিবার বাস্তুচ্যুত হবেন এবং জীবনযাপন ধ্বংস হয়ে যাবে যদি উল্লিখিত প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হয়। জানুয়ারি মাসে যখন শীতের ফসল (প্রধানত আলু ও ডাল) চাষ করার মরশুম তখন রাজ্য সরকার কৃষি খামারগুলোকে বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়। এর পরপরই ১২জন গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে পুলিশ কেস ফাইল (এফ এই আর) করে। প্রতিবাদী গ্রামবাসীদের অনেকেই, ওকানে যে প্রতিষ্ঠানগুলো তৈরি হওয়ার কথা সেগুলোকে গড়ে তলার পক্ষেই ছিল, তারা শুধু বলেছিল যে গ্রামবাসীদের জীবন-জীবিকার বিনিময়ে ওই প্রতিষ্ঠানগুলো গড়া উচিৎ নয় এবং এই দাবিতেই তারা শান্তিপূর্ণ ভাবে আন্দোলন চালাচ্ছিল। কিন্তু ঝাড়খন্ডের সরকার তাদের এই সংগ্রামকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করল এবং তাদের সঙ্গে অন্যায় ব্যবহার করল।
ঝাড়খণ্ডের মতনই ভারতবর্ষের বিভিন্ন জায়গায় বড় বড় কর্পোরেশন ও সরকার সাধারণ মানুষের জমি কেড়ে নিয়ে তাদের উদবাস্তু করে দেওয়ার যেসব ক্রিয়াকলাপ চালাচ্ছে তার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের একজন অন্যতম নেতা হলেন এই দয়ামণি বারলা। ‘ঝাড়খন্ডের লৌহমানবী’ হিসেবে পরিচিত এই মহিলা মেধা পটেকর ও আরো কয়েকজনের মতনই ‘ন্যাশনাল আলায়েন্স ফর পিপলস মুভমেন্ট’ বা সংক্ষেপে এন এ পি এম এর জাতীয় আহ্বায়ক মণ্ডলীর সদস্য। তাছাড়াও তিনি ‘ইনসাফ’ বা ইন্ডিয়ান সোশাল আকশান ফোরামের কার্যকরী সমিতির সস্য এবং আদিবাসী সমাজের প্রধাণ মুখপাত্রদের অন্যতম।
Leave a Reply