- সংবাদমন্থন - https://songbadmanthan.com -

চাষের মাঠের পাখি গো-শালিক বা গুয়ে শালিক

সম্রাট সরকার, মদনপুর, ৩০ এপ্রিল#

ছবি প্রতিবেদকের তোলা।
ছবি প্রতিবেদকের তোলা।

এবার লিখব এমন তিনটে পাখির কথা যারা আমাদের সঙ্গে ভীষণ পরিচিত। গ্রামবাংলার প্রাত্যহিক জীবনের সঙ্গে এদের আলাদা করা কঠিন। তদুপরি চাষের মাঠগুলোতেও এদের নিত্য আনাগোনা। অন্তত আমি আমাদের বয়সা বিল সংলগ্ন গ্রামগুলোতে যেরকম দেখছি সেই ছোটোবেলা থেকে। এরা কেউ কিন্তু সারা বছর চাষের মাঠেই জীবন কাটায় না। মাটির ওপর ‘হোটিটি’ বা ‘ভিরিরি’-র মতো ডিমও পাড়ে না। কিন্তু দিনের অনেকটা সময় খাদ্যের সন্ধানে চাষের মাঠগুলোতে এদের যাতায়াত। এদের মধ্যে দু-জন আমাদের ভারতবর্ষের স্থায়ী বাসিন্দা, একজন অতিথি। সেই সুদূর বালুচিস্তান থেকে। প্রথমে স্থায়ী বাসিন্দাদের কথা বলি।
গো-শালিক বা গুয়ে শালিক  
সাধারণ শালিকের মতো চেহারা হলেও রঙ সম্পূর্ণ আলাদা। প্রধানত সাদা কালো। মাথার ওপর দিক এবং গলা পেট কালো। তলপেট থেকে লেজের গোড়া অবধি সাদা। পাখনা, পিঠ, লেজের অধিকাংশ কালো। চোখের পেছন থেকে কাঁধ পর্যন্ত একটি সাদা ছোপ আছে। শরীরের অন্য অংশে রঙ বলতে চোখের চারপাশ এবং থুতনি উজ্জ্বল কমলা রঙের। ঠোঁট সম্পূর্ণ হলুদ। পা দুটি হলদে মেটে রঙের।
গ্রামবাংলার চাষের মাঠগুলোতে সারাবছর দলবদ্ধভাবে এদের দেখা যায়। দক্ষিণ ভারতের কিছু অঞ্চল বাদ দিলে ভূ-ভারতের সর্বত্রই প্রায় দেখা মেলে। চাষের মাঠে দেখেছি দল বেঁধে মাটির ওপর অথবা মাচার ওপর পোকামাকড় খায়। মাটির নিচ থেকে কেঁচো বার করে খাওয়া এবং একটি কেঁচো মিলে লড়াই আমাদের গ্রামের চাষের জমিগুলির পরিচিত দৃশ্য। দুটি বলিষ্ঠ এবং ছুঁচলো ঠোঁট দিয়ে কেঁচোর গর্তগুলো ফাঁক করে ফেলে। কখনো শুকনো গোবর ঘেঁটে কেঁচো তুলে নিয়ে আনে। মাটিতে গর্ত করে বাসা বাঁধা ঝিঁঝিঁ পোকা, গুবরে পোকা এদের প্রিয় খাদ্য। শুধু পোকা মাকড় নয়। মাঠের বা মাঠের আশেপাশের গাছের ফলও ওরা খায় বইকি। গরমের সময় মাঠের মাঝখানের খেজুর গাছগুলো যখন পোকা খেজুরে ভরে থাকে, তখন ওদের মোচ্ছব লেগে যায়। তবে প্রিয় জায়গা বোধহয় বয়সা বিলের মধ্যেকার চাষজমিগুলো। যেখানে কালো পাঁক, কচুরিপানার আধিক্য। চাষজমিগুলোর লাগোয়া গোয়ালঘরও এদের অবাধ বিচরণক্ষেত্র।
তবে বাসা বাঁধার জন্য শালিকের মতো গ্রামের ঘরবাড়ি এদের পছন্দ নয়। যেভাবে সহজে বাড়িঘরের মধ্যে চলেও আসেনা। সাধারণত চাষের মাঠের মতো খোলা জায়গায় আম, পিপুল, বাবলা জাতীয় বড়ো গাছের বাইরের দিকের ডালপালায় বাসা বাঁধে। বাসা বাঁধার সময় মার্চ থেকে কমবেশি সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত। বাসাটি খুব যে গোছানো এমন নয়, তবে বড়োসরো। শুকনো খড়, বিচালি, বড়ো ঘাসের শেকড় এই সব হলো বাসা তৈরির সরঞ্জাম। তবে বাসাটির ভেতরে বাচ্চাদের থাকার জন্য নরম ঘাসের গদি বানানো থাকে। আরেকটা ব্যাপার খেয়াল করেছি, প্রত্যেকটা বাসার কাছে একটি কাপড়ের বা প্লাস্টিকের টুকরো ঝুলিয়ে রাখে। একটি গাছের একসাথে অনেক কটি দম্পতি বাসা বাঁধে। হতে পারে প্রত্যেকের বাসাকে আলাদা আলাদা ভাবে চিহ্নিত করার জন্য ওরা কাপড়ের টুকরো ব্যবহার করে। একসঙ্গে ৪-৬ টি ডিম পাড়ে। বাবা এবং মা সমানভাবে বাচ্চাদের দেখভাল করে।
শোরগোল প্রিয় গ্রামবাংলার অতি পরিচিত এই পাখিটির প্রধান বিচরণক্ষেত্র হল কর্দমাক্ত জলাজমি ও চাষের মাঠ। তাই চাষের মাঠে অতিরিক্ত কীটনাশক প্রয়োগ করে পতঙ্গ নিধন এদের খাদ্য সঙ্কট তৈরি করতে পারে বই কি!