কাগজ খুলতেও হয় না। হাতে নিলেই ধর্ষণ, খুন আর আত্মহত্যা। প্রথম পাতাতেই বড়ো বড়ো করে এইসব অত্যাচার আর নিগ্রহের খবর। ইদানিং এটাই বড়ো কাগজগুলোর দস্তুর। সঙ্গে ফলাও করে ফটো আর ছবি। কোথাও পাথরের চাতালে থ্যাঁতলানো দেহ, কোথাও ঘরের কোণায় রক্তের দাগ, কোথাও আবার পেশাদারি শিল্পীর আঁকা স্কেচে অঘটনের খুঁটিনাটির বিশদ বৃত্তান্ত। দেখলে চোখের জল পর্যন্ত শুকিয়ে যায়।
কেন সকালে উঠে লোকে এসব পড়বে? পয়সা খরচ করে সংবাদপত্র কেনা কি ভয় পাওয়ার জন্য? ব্যাপারটা ভাবার মতো।
এমনিতেই সাধারণ মানুষ নানারকম অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটায়। কেউ ভাবে আজ কাজ চলে যাবে কিনা, কেউ ভাবে আজ কাজ পাবে কিনা। কেউ ভাবে কাল ধার শোধ করবে কীভাবে, কেউ ভাবে কাল ধার জোগাড় করবে কীভাবে? কেউ হাসপাতালে-ডাক্তারখানায় উদ্বিগ্ন মুখে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ডাক্তার কী বলবে, কেউ স্কুলের দরজায় বসে চিন্তা করছে, পরীক্ষার ফল ভালো হবে তো? গোটা দেশ, গোটা সমাজ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে — ব্যক্তিগত নিরাপত্তাহীনতা। সমষ্টিগত চেহারাও আছে তার। কিন্তু সে বড়ো আবছা। এমন আদল সে পাচ্ছে না যাতে অনিশ্চয়তার ভাবটা কিছু কাটে।
তাইতো সবাই ছুটছে ব্যক্তিগত সুরক্ষার জন্যে। সেটাকেই কি বাড়িয়ে তুলতে চাইছে বড়ো বড়ো খবরের কাগজগুলো? তাই কি ধর্ষণ-খুন-আত্মহত্যার খবরের এত রমরমা? দুঃখজনক ওই সমস্ত ঘটনাগুলো ভিতরের পাতার ছোটো জায়গা থেকে এতটা বড়ো করে সামনে নিয়ে আসা হচ্ছে আমাদের সন্ত্রস্ত জীবনে আরও বেশি আশঙ্কা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য? অথবা, মানুষের ভিতরের সুকুমার প্রবৃত্তিকে শুকিয়ে দিয়ে মর্ষকামী প্রবণতাকে বাড়িয়ে তোলার আরও কোনও ভয়ঙ্কর আয়োজন চলছে?
Leave a Reply