শনিবার একটা ছোট্ট খবরে চোখ আটকে গেল। চেন্নাই বিমানবন্দরে অবতরণের পর জাপানের তিন নাগরিককে দেশে ফেরৎ পাঠানো হয়েছে। এঁরা কুডানকুলামে যাচ্ছিলেন। তামিলনাড়ুর কুডানকুলামে এক দীর্ঘ এবং অহিংস প্রতিরোধ আন্দোলন চলছে। দাবি একটাই — পৃথিবীর পক্ষে চূড়ান্ত ক্ষতিকারক পরমাণু চুল্লি বসানো চলবে না।
এর আগেও জাপানের পরমাণু দুর্ঘটনার শহর ফুকুশিমা থেকে এক মহিলা ভারতে আসার অনুমতি চেয়ে প্রত্যাখ্যাত হন। গত ফেব্রুয়ারি মাসে ঠিক এইভাবেই এক জার্মান নাগরিককে দেশে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
কেন? এই বিদেশিরা কি আমাদের দেশের শত্রু? তাঁরা কি আমাদের কোনো ক্ষতি করতে আসছিলেন? এরকম কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। ভারত সরকারের গোয়েন্দা দপ্তরের একটাই তথ্য — এঁরা পরমাণু শক্তির বিপক্ষে। এঁরা পৃথিবী নামক গ্রহ এবং তার পরিবেশকে বিষাক্ত হতে দিতে চান না। এটাই এঁদের অপরাধ!
অথচ এটা কোনো অপরাধের বিষয় নয়। এ নিয়ে মনমোহন সিং বা তাঁর সরকারের কিছু বিজ্ঞানীর দ্বিমত থাকতে পারে। তাঁরা মনে করতেই পারেন যে, পরমাণু শক্তি এবং তার উৎপাদন-প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ নিরাপদ। কিন্তু এই মত সর্বসম্মত নয়। শনিবার জাপানিদের ফিরিয়ে দেওয়ার মাত্র চব্বিশ ঘণ্টা আগেই দেশের সর্বোচ্চ আদালত রায় দিয়েছে, কুডানকুলাম পরমাণু প্রকল্পের নিরাপত্তা সন্তোষজনক না হলে প্রকল্পটি বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে।
যেখানে খোদ সুপ্রিম কোর্টের পরমাণু প্রকল্পটির নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে, সেখানে মনমোহন সিং এবং তাঁর গোয়েন্দা বিভাগ এত নিশ্চিন্ত এবং আক্রমণাত্মক কেন? কেন তাঁরা বিতর্কিত রাশিয়ান চুল্লিটা চালু করার জন্য এত মরিয়া? তাঁদের অন্য কী বাধ্যবাধকতা আছে, জানি না। কিন্তু এটা জানি, তাঁরা পরমাণু শক্তি নিয়ে জাপানের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে চোখ ফিরিয়ে রাখতে চান। জাপানিদের সেই অভিজ্ঞতা থেকে তামিলনাড়ু, কুডানকুলাম কিংবা ভারতের মানুষ শিখুক, এটা তাঁদের মনঃপুত নয়।
বড়ো বাণিজ্যিক মিডিয়াকে ব্যবহার করে মনমোহন সিং অ্যান্ড কোম্পানি (নাকি কোম্পানি অ্যান্ড মনমোহন সিং!) একটা বিদেশি ধুয়ো তুলতে চাইছে, একটা চক্রান্তের গল্প ফাঁদতে চাইছে। পরমাণু শক্তির ভালোমন্দ নিয়ে দেশের মানুষ খতিয়ে দেখুক, এটা ওরা একদমই চাইছে না।
Leave a Reply