শোভা কুণ্ডু, সরবেরিয়া, ৪ ঠা মে, ২০১৪#
‘সুন্দরবন শ্রমজীবী হাসপাতালের পরিচালনায় আগামীকাল স্বেচ্ছায় রক্তদান শিবির। আপনারা সকলে এসে রক্তদান করুন। আপনার রক্তে আরেকটা জীবন বাঁচবে। রক্তদান মহৎ দান।’
— ৩ মে বিকেল পাঁচটার সময় এই প্রচারটি শিশুকন্ঠে প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল সরবেরিয়ার গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে।
সরবেরিয়ার ‘সুন্দরবন শ্রমজীবী হাসপাতাল এই রক্তদান শিবিরের আয়োজন করেছিল, ৪ মে হাসপাতাল প্রাঙ্গনে। এটা তাদের ১৩ তম রক্তদান শিবির। কলকাতা থেকে ৬৫ কিলোমিটার দূরে উত্তর চব্বিশ পরগণার প্রান্ত সীমায় সরবেরইয়া গ্রাম। কাছেই সুন্দরবন। গ্রামের মানুষজন হতদরিদ্র। সরকারি উন্নয়নের আওতা থেকে শতযোজন দূরে। সরকারি উদ্যোগে স্বাস্থ্য পরিষেবা সেখানে স্বপ্নের অতীত। এরকম অবস্থায় গ্রামের কিছু উদ্যোগী ও সচেতন মানুষ সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে এই হাসপাতালের প্রাণ পত্তন করেন। পাশে দাঁড়িয়েছিলেন কিছু শহুরে শুভাকাঙ্খী ও ডাক্তার পরিজন। সেই থেকেই পথচলা শুরু। কোনোরূপ সরকারি বা কর্পোরেট হাউসগুলোর সহযোগিতা ছাড়াই, হাসপাতাল কয়েক হাজার মানুষকে স্বল্পব্যয়ে স্বাস্থ্য পরিষেবা দিয়ে চলেছে।
৩ মে সন্ধ্যে থেকেই আকাশে মেঘের আনাগোনা। দ্রুত মেঘ ঘনীভূত হতেই উঠল ঝড়। বেজে উঠল কালবৈশাখীর দামামা। প্রাকৃতিক দুর্যোগের রোষ আছড়ে পড়ল গ্রামের মানুষের রুজি রোজগারের ওপর। ধান কাটা হয়েছিল আগের দিন। জমিতে বৃষ্টির জল জমে সেই ধান নষ্ট হওয়ার মুখে। এইরকম বিপর্যয়ের সামনে দাঁড়িয়েও গ্রামের ১৩১ জন মানুষ রক্তদান করেছেন এই শিবিরে। রক্তদান মহৎ দান — একথা আমাদের বহুবার শোনা। কিন্তু এই দানকে ঘিরে সরবেরিয়ার মানুষজনদের মধ্যে যে উন্মাদনা, তা আমাদের বারবার মোহিত করে।
Leave a Reply