ছন্দা বাগচী, ফার্ন রোড, কলকাতা, ২৪ জুন#
গোড়াতে জানাই ছিল না যে প্রার্থী হবো। রাজনীতিতে আছি বহুদিন, কিন্তু প্রার্থী হতে হল এই প্রথম আর শুরুতেই বেদম ধাক্কা!
যারা আমাকে প্রার্থী হবার জন্য জেদ ধরে সবরকম সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, নাম ঘোষণার পরই বেঁকে বসলেন — কিন্তু মিডিয়ায় প্রচার হয়ে যাওয়ায় পিছোনোর উপায় ছিল না, অন্য মানে হয়ে যাবে। তাই দলের দেওয়া যৎসামান্য পুঁজি নিয়েই ভোটের ময়দানে নামতে হল — না দেওয়া গেল পোলিং এজেন্ট, না করা গেল নির্বাচনী কার্যালয়। এমনকী বুথ ক্যাম্পও ছিল না ভোটের দিন — কেন না ভোটের অনেক আগেই প্রতিপক্ষ দলের ক্রমাগত হুমকিতে কাঁদো কাঁদো নির্বাচনী এজেন্ট উধাও — বাকি সতীর্থরা কেউ অন্য ওয়ার্ডে কেউ বা সরাসরি শাসক দলেই ভিড়ে গেলেন। ভয়ে না লোভে — তাঁরাই বলতে পারবেন!
ব্যক্তিগত শুভার্থীদের দেওয়া গুটি কয়েক ফ্লেক্সও রাতের অন্ধকারে সরিয়ে ফেলল কারা যেন, থানা অভিযোগ নিল না। কারণ শুনলাম, এই ওয়ার্ডে নাকি প্রকাশ্যে যুযুধান দুই শাসক দলের গোপন সমঝোতা হয়েছে — আমাকে হারাতেই হবে। তাই পুলিশ থেকেও নেই, প্রিসাইডিং অফিসার থেকেও নেই। খোদ মিউনিসিপ্যাল রিটার্নিং অফিসারও তথৈবচ! ভোটের দিন সকালে আমাকে হাসিমুখে অভ্যর্থনা জানাতে গিয়ে নিজেরাই যে কী সমস্যায় পড়েছিলেন। ভোটের পর সেই পোলিং অফিসারদের গোমড়া মুখ দেখে মালুম হল। তার আগেই অবশ্য কমজোরি বিরোধীপক্ষের কথা আগ্রহভরে শুনতে গিয়ে মহা বিপদে পড়েছিলেন ভোটদাতাদের বৃহদংশ। কেবল চেনা দুষ্কৃতিদের মিছিল থেকে জঙ্গি শ্লোগানের ঢঙে নয়, বাড়ি বসেই শাসকের শাসানি শুনতে হল যাঁদের — ভোটের দিন বুথমুখো হবার ভরসা পেলেন না তাঁদের অনেকেই, আর এদিকে আমি ‘প্রার্থীপদ তুলে নিয়ে শাসকের সঙ্গী হয়েছি’ — ক্রমাগত এই অপপ্রচার আর হরেক গুজবের জবাব দিতে শেষ মুহূর্ত অবধি বিনা জনবল অর্থবলে প্রচার করতে গিয়ে আমার প্রাণান্তকর অবস্থা! তবু তারই মধ্যে কানে আসত অলিগলি থেকে জনতার জয়ধ্বনি।
বস্তিবাসী থেকে বিত্তবানের উচ্ছ্বসিত মুখও চোখে পড়েছে — যাদের স্তব্ধ করতে নাকি শেষে ইভিএম লোপাট করতে হল রাজশক্তিকে! জনতার চাপে নির্বাচনী আধিকারিকদের কাছে নির্বাচন বাতিল, এমনকী আমার অভিযোগের নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানালেও দাবিপূরণ দূরের কথা, জবাবও মেলেনি এখনও! একটাই কারণ, ‘ওরা ভয় দেখিয়ে করছে শাসন জয় দেখিয়ে নয়’।
এখন দেখার, ‘বিচারের বাণী’ও ‘নীরবে নিভৃতে কাঁদে’ কি না?
Leave a Reply