শমীক সরকার, কলকাতা, ২ অক্টোবর#
আজ গান্ধী জয়ন্তীতে কলকাতা দেখল কয়েক হাজার টানা রিকশা, রিকশা, ঠেলাগাড়ি ও সাইকেলজীবীর জমায়েত। সকাল দশটা থেকে শুরু হয়েছিল জমায়েত। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সাইকেল নিয়ে যাদের জীবিকা নির্বাহ হয়, তারা আসতে থাকে কলকাতার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে, কেউ দল বেঁধে সাইকেল নিয়ে। কেউ বা আবার ম্যাটাডোরে করে। হাতে ছিল পোস্টার ‘চক্র আমাদের জীবন’। ঠেলা, রিকশার চেয়ে সাইকেলজীবীদেরই জমায়েত বেশি চোখে পড়লো। অনুষ্ঠানে কোনও মাইক বাজেনি। চৌরঙ্গীর স্টেটসম্যান হাউস / ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে একজন বাউলের গান ‘সাইকেলের দু-দিকে চাকা মধ্যে ফাঁকা’ এবং ছোট্ট পথ নাটিকায় কলকাতার রাস্তায় নিষিদ্ধ হয়ে যাওয়া সাইকেল-রিকশা-ঠেলা প্রভৃতির পুনরুত্থানের কাহিনী — এই নিয়েই ছিল আজকের অনুষ্ঠান। অনেকেই মুখে কালো বা সাদা কাপড় বেঁধে এসেছিল। কথা ছিল — এই ‘চক্র সত্যাগ্রহ’ হবে নীরব প্রতিবাদ — কলকাতা শহর থেকে সাইকেল-রিকশা-ঠেলা প্রভৃতি যন্ত্রবিহীন যানবাহনকে যেভাবে ধীরগতির যান বলে নিষিদ্ধ করে দেওয়া হচ্ছে — তার বিরুদ্ধে।
ওই চৌরঙ্গী এলাকাটি থেকে রোজ পেপার তুলে ভবানীপুরে ফিরি করতে নিয়ে যান প্রেম শঙ্কর দুবে। তিনি বললেন, প্রতি মাসে তাদের প্রত্যেককে ২০০ টাকা গুণ্ডা ট্যাক্স দিতে হয় পুলিশ-কে। এখন নতুন এখানকার দায়িত্বে এসেছে, আলম নামে একজন অফিসার — সে নির্লজ্জ। নিজের পকেটে সেই টাকা ঢোকায়। আগের কমিশনার বলত, ওই ফলওয়ালাকে দে, ওই দোকানদারকে দে। নিজের পকেটে ঢোকাতো না। প্রতি মাসের ১-২ তারিখ হলেই তাগাদা দিতে থাকে টাকাটা দেওয়ার জন্য। না দিলেই ধরবে। কিন্তু কাগজওয়ালাদের তো শুধু সকালে কাগজ নিলে চলে না, বিকেলের কাগজের জন্য নিষেধের সময়সীমার মধ্যে (সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যে ৭টা) এই এলাকায় সাইকেল নিয়ে আসতে হয়।
দুবেজি আরও বললেন, সপ্তাহ দুয়েক আগে নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে চৌরঙ্গী থেকে প্রেস ক্লাব অবদি যে মিছিল হয়, তাতে উপস্থিত ছিল চিৎপুরের জনা চল্লিশেক দুধওয়ালা। হিন্দি সংবাদপত্র প্রভাতখবর প্রভৃতিতে তাদের ছবিও বেরিয়েছিল। সেই অপরাধে এই দুধওয়ালাদের বেছে বেছে পুলিশ ধরেছে, সকাল সাড়ে সাতটায়। তাদের দুধের পাত্র ফেলে দিয়েছে রাস্তায়।
একজন দুধওয়ালা দুধের বালতি শুদ্ধ সাইকেল নিয়ে হাজির হয়েছিলেন সত্যাগ্রহে। তিনি জানালেন, আজই হাওড়া ব্রিজের কাছে একজন সাইকেল আরোহী পুলিশের ভয়ে পালাতে গিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে। তার ঘাড়ে পিঠে চোট লেগেছে।
চক্র সত্যাগ্রহের উদ্যোক্তা ছিল বেশ কিছু অসরকারী সংগঠন, যেমন গ্রীনপিস, রাইড টু ব্রিদ, সুইচ অন, ডবলু ডবলু এফ প্রভৃতি এবং কিছু ইউনিয়ন, যেমন পশ্চিমবাংলা আকবর বিক্রেতা সমিতি, হ্যান্ড কার্ট ইউনিয়ন। উপস্থিত ছিল সাইকেল সমাজ এবং কলকাতা সাইকেল আরোহী অধিকার ও জীবিকা রক্ষা সমিতি।
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নীরব প্রতিবাদের সীমা অতিক্রম করে সাইকেল-রিকশা-ঠেলাজীবী মানুষেরা সরবে প্রতিবাদ জানাতে শুরু করে। বেলা ১২ টায় অনুষ্ঠান শেষ হয়।
Leave a Reply