২২ এপ্রিল বুধবার পৃথিবী জুড়ে পালিত হয়েছে ‘বসুন্ধরা দিবস’। অনেক সময় দিবস পালনের আনুষ্ঠানিকতা আর হইচইয়ে তার আসল বার্তাটা হারিয়ে যায়। বসুন্ধরা দিবসের একটাই সহজ বার্তা, পৃথিবীর সমস্ত জৈব সত্তা তাদের পরিমণ্ডলের সমস্ত অজৈব বস্তুর সঙ্গে মিলে এক সংহত পরস্পর অন্বিত ও স্বনিয়ন্ত্রিত জটিল এক তন্ত্র হিসেবে বিদ্যমান। এতকাল আমাদের শিক্ষাদীক্ষার গর্বে আমরা প্রকৃতির ওপর প্রভুত্ব করতে চেয়েছি, মানুষ হিসেবে সমস্ত জীবজগৎকে বশে আনতে চেয়েছি। এমনকী সমুদ্র, পাহাড়, মরুভূমি, নদীনালাকেও নিজের ভোগের প্রয়োজনে কাটাছেঁড়া করতে পিছপা হইনি। আমরা দেশ হিসেব, জাতি হিসেবে, জাত-বর্ণ হিসেবে, পরিবার হিসেবে, এমনকী ব্যক্তি হিসেবে স্বার্থবুদ্ধিকে সবকিছুর ওপরে স্থান দিয়েছি। আজ এসেছে এক সতর্ক-বার্তা : মনে রেখো পৃথিবী একটাই।
২৫ এপ্রিল ২০১৫, শনিবার, বসুন্ধরা দিবসের তিনদিন পর ভূমিকম্পে ভয়ানক আলোড়িত হল আমাদের এই পৃথিবী। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলের ঠিক উপরিস্থ ভূপৃষ্ঠ, যাকে বলা হয় উপকেন্দ্র, তার অবস্থান ছিল নেপালের লামজুঙ-এর ৩৪ কিলোমিটার দূরে। মাত্র কুড়ি সেকেন্ডের মূল কম্পনের জের না কাটতেই পরপর আরও কয়েকটা ভূমিকম্প (আফটার-শক) হয়ে চলেছে এপর্যন্ত। ক্রমাগত বেশিসংখ্যক মানুষের মৃত্যুর খবর আসছে। মিডিয়া এই বিপর্যয়কে চিহ্নিত করছে ‘নেপালি ভূমিকম্প’ নামে। কিন্তু ভূমিকম্পের কি কোনো দেশ হয়? মাটির অতলে প্রায় ১৫ কিলোমিটার নিচে যে ঘটনাটা ঘটেছে, সমস্ত অর্থে তা আমাদের এই পৃথিবী নামক গ্রহটারই একটা বিপত্তি। সেভাবে আমরা দেখতে পারছি কই?
ধ্বংসের মুখে দাঁড়িয়েও আমরা পরস্পর নানা কৃত্রিম বিভাজনের ঠাঁটবাট নিয়ে লড়ে যাচ্ছি। ত্রাণে এগিয়ে কোন রাষ্ট্র — ভারত না চীন? আমেরিকা কাকে সার্টিফিকেট দিল? এই দুর্দিনেও মিডিয়ায় এইসব বড়াইয়ের তামাশা চলতে থাকে। যখন ত্রাণসাহায্য দিই, আমরা মনে করি যে নেপালকে আমরা দয়া করছি। অথচ একটু ভেবে দেখলে বোঝা যায়, মাটির গভীর অতলে যে কাণ্ডটা ঘটেছে, তার অবস্থানের সামান্য অদলবদলে আমরাও ছিন্নভিন্ন হতে পারতাম। উন্নয়ন, প্রযুক্তি, বিজ্ঞান ইত্যাদির দৌড়ে এগিয়ে বা পিছিয়ে থাকার কোনো আড়াল আমাদের রক্ষা করতে পারত না। শ্রেষ্ঠত্বের অভিমানে আমরা বারবার ভুলে যাচ্ছি : পৃথিবী একটাই।
Leave a Reply